ফিচার ডেস্ক
আপডেট: ২৩:৫১, ১৪ মে ২০২১
যে দেশে হানা দিয়েছিল ‘হাসি’ মহামারি
করোনাভাইরাস মহামারীতে আজ গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। প্রতিদিনই মৃত্যু ও শনাক্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন নাম। বর্তমানে যেমন করোনা নিয়ে সবাই আতঙ্কিত তেমনিই বিভিন্ন সময়ে বিশ্ব সম্মুখীন হয়েছে নানা মহামারি রোগে।
১৯৬২ সালে বিশ্ব দেখেছিল এক মহামারী। যার নাম ‘হাসি’ মহামারি। পরিস্থিতি এমনই তৈরি হয়েছিল যে সামনের জনকে হাসতে দেখে উপস্থিত সবাই হাসতে শুরু করছিলেন। থামতে পারছিলেন না কেউই।
এই মহামারি বিশ্ব জুড়ে পরিচিত ‘টানগানইকা লাফটার এপিডেমিক’ হিসাবে। তানজানিয়ার আগে নাম ছিল টানগানইকা। সে সময় জাঞ্জিবারের সঙ্গে যুক্ত ছিল তানজানিয়া। উগান্ডার সীমান্তে অবস্থিত তানজানিয়ার ওই গ্রামের একটি স্কুল থেকে সূত্রপাত হয়েছিল এই মহামারির।
১৯৬২ সালের ৩১ জানুয়ারি কাশাশার একটি বোর্ডিং স্কুলের তিন ছাত্রীর মধ্যে প্রথম এই সংক্রমণ দেখা যায়। বিনা কারণে হাসতে শুরু করে তারা। তাদের থেকে দ্রুত স্কুলের বাকি পড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। স্কুলের ৯৫ জন পড়ুয়া যাদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে তারা সকলেই সংক্রামিত হয়ে পড়ে এই রোগে।
তবে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে বা অন্যান্য শিক্ষক এবং কর্মীদের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েনি। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সিদের মধ্যেই শুধুমাত্র ছড়িয়ে পড়েছিল রোগটি। সংক্রমণ আটকাতে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখান থেকে নসাম্বা নামে একটি গ্রামের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। জানুয়ারিতে শুরু হওয়া রোগটিতে ৪-৫ মাসের মধ্যে ২১৭ জন আক্রান্ত হন।
মে মাসের ২১ তারিখে কাশাশা গ্রামের স্কুলটি ফের চালু হয়। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যেই আবার তা বন্ধ হয়ে যায়। পাশের গ্রাম বুকোবার কাছে আরও একটি স্কুলেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। সেই স্কুলের ৪৮ জন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়।
আক্রান্তরা টানা ১৬ দিন ধরে শুধু হাসতেই থাকত। এই ভাবে ১৮ মাস চলতে থাকে। কিন্তু তার পর আর কারও মধ্যে অকারণে হাসির বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু তখন অন্য এক সমস্যা শুরু হয়, অন্য এক লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে। আচমকা জ্ঞান হারানো, শ্বাসকষ্ট, শরীরে র্যাশ হওয়া, হঠাৎ হঠাৎ কেঁদে ওঠা, পরক্ষণেই আবার ভয়ে আর্তনাদ করা হাসি। আক্রান্তদের মধ্যে এবার এসব লক্ষ্মণ দেখা দিতে শুরু করে।
তবে এই রোগে কারও মৃত্যু হয়নি। সব মিলিয়ে তানজানিয়ার মোট ১৪টি স্কুলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। এক হাজার জন সংক্রমিত হয়েছিল। কী এই রোগ? কেন তা ছড়িয়ে পড়েছিল তানজানিয়ায়? ইন্ডিয়ানার পারডিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক এর কারণ সামনে আনেন। মনের উপর অত্যধিক চাপের কারণেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন ছাত্ররা, দাবি করেছিলেন তিনি।
সে সময় দেশটি সবে মাত্র স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতা আনন্দের, চাপমুক্তির। কিন্তু দেশের পড়ুয়াদের উপর খুব মানসিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল সে সময়। কারণ দেশ স্বাধীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পড়ুয়াদের প্রতি আশা বেড়ে গিয়েছিল অভিভাবক এবং শিক্ষকদের। সে কারণেই মূলত পড়ুয়াদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে মনে করা হয়।
আইনিউজ/এসডিপি
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ