সীমান্ত দাস
আপডেট: ১৪:৩৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
বাংলাদেশে চা শিল্পের প্রবেশ ও বঙ্গবন্ধুর অবদান
চা বাগানে ব্যস্ত দুই চা-শ্রমিক (ফাইল ছবি)
চা তো ভালোবাসেন অবশ্যই? তবে জানেন কি কিভাবে এই চায়ের উৎপত্তি? কিভাবে ভারতবর্ষ হয়ে বাংলাদেশে শুরু হয় চায়ের বাণিজ্য?
দেশে প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান
১৮০০ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভারতবর্ষের আসাম ও তৎসংলগ্ন এলাকায় চা চাষ শুরু হয়। তারই ধারাবহিকতায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর তীরে চা আবাদের জন্য ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দে জমি বরাদ্দ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেখানে চা চাষ বিলম্বিত হয়। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম শহরের বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় একটি চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা কুন্ডদের বাগান নামে পরিচিত। এই বাগানটিও প্রতিষ্ঠার পরপরই বিলুপ্ত হয়ে যায়। অতঃপর ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে মতান্তররে ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট রোডের কাছে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলতঃ মালনীছড়াই বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান।
সিলেট-চট্টগ্রামই দিতো চায়ের জোগান
দেশ স্বাধীনের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে শুধুমাত্র দুইটি জেলায় চা আবাদ করা হতো, একটি সিলেট জেলায় যা ‘সুরমা ভ্যালী’ নামে পরিচিত ছিল, আর অপরটি চট্টগ্রাম জেলায় যা ‘হালদা ভ্যালী’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের সুরমা ভ্যালীকে ছয়টি ভ্যালীতে ভাগ করা হয়েছে যথাক্রমে: লস্করপুর ভ্যালী, বালিশিরা ভ্যালী, মনু-দলই ভ্যালী, লংলা ভ্যালী এবং নর্থ সিলেট ভ্যালী। এবং হালদা ভ্যালীকে চট্টগ্রাম ভ্যালী করা হয়েছে৷
চায়ের দেশ মৌলভীবাজারে স্বাগত জানায় 'চা-কন্যা'
চা শিল্পে বঙ্গবন্ধুর অবদান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪ জুন ১৯৫৭ খ্রি. হতে ২৩ অক্টোবর ১৯৫৮ খ্রি. পর্যন্ত প্রথম বাঙালি হিসাবে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থেকে বাঙালি জাতিকে সম্মানিত করেন। বঙ্গবন্ধু চা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ১১১-১১৩, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকায় সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত ০.৩৭১২ একর ভূমির ওপর চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয় নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত হয়।
তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টি রিসার্চ স্টেশনের গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করে উচ্চ ফলনশীল জাতের (ক্লোন) চা গাছ উদ্ভাবনের নির্দেশনা প্রদান করেন। চায়ের উচ্চফলন নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি এবং শ্রীমঙ্গলস্থ ভাড়াউড়া চা বাগানে উচ্চফলনশীল জাতের চারা রোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তিনি “টি অ্যাক্ট-১৯৫০” সংশোধনের মাধ্যমে চা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) চালু করেছিলেন যা এখনও চালু রয়েছে।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চা বাগানসমূহ প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শিল্পকে টেকসই খাতের উপর দাঁড় করানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীনতার পর “বাংলাদেশ টি ইন্ডাস্ট্রিজ ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BTIMC)” গঠন করে যুদ্ধোত্তর মালিকানাবিহীন/পরিত্যাক্ত চা বাগান পুনর্বাসন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এছাড়াও যুদ্ধে বিধ্বস্ত পরিত্যক্ত বাগানগুলোকে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাগান মালিকদের নিকট পূনরায় হস্তান্তর করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত চা কারখানাগুলো পুনর্বাসনের জন্য “ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া” থেকে ঋণ গ্রহণ করতঃ চা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। চা শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় বঙ্গবন্ধুর সরকার চা উৎপাদনকারীদের নগদ ভর্তুকি প্রদান করার পাশাপাশি ভর্তুকি মূল্যে সার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। উক্ত সার সরবরাহ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে।
চা পছন্দ করতেন জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানও
তিনি চা শ্রমিকদের শ্রমকল্যাণ নিশ্চিত করেন; যেমন-বিনামূল্যে বাসস্থান, সুপেয় পানি, বেবি কেয়ার সেন্টার, প্রাথমিক শিক্ষা এবং রেশন প্রাপ্তি নিশ্চিত করেন। তিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ টি রিসার্চ স্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটে উন্নীত করেন। বর্তমানে তা বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BTRI) নামে পরিচিত।
বর্তমান সরকারের আমলে চা শিল্পের উন্নতি
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে চা শিল্পের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে চা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩১.৩৮ মিলিয়ন কেজি। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ৮২.১২ মিলিয়ন কেজি এবং ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে রেকর্ড পরিমাণ ৯৬.০৭ কেজি এবং ২০২০ খ্রিস্টাব্দে ৮৬.৩৯ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়।
এছাড়া ২০২০ খ্রিস্টাব্দে রেকর্ড পরিমাণ ২.১৭ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে চা আমদানির প্রয়োজন হবে না বরং রপ্তানির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে চা বাগানের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫০ টি, বর্তমানে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। এছাড়াও ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে চা বোর্ড কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় ক্ষুদ্রায়তন চা আবাদ শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে।
এছাড়া বর্তমান সরকার চা শিল্পের উন্নয়নে ‘উন্নয়নের পথনকশা: বাংলাদেশ চা শিল্প’ শিরোনামে একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে যা আগামীতে দেশের চা শিল্পকে আরও এগিয়ে নিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
সূত্র: বাংলাদেশ চা বোর্ড
আইনিউজ/এসডি
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ