তনিমা রশীদ, মৌলভীবাজার
আপডেট: ১৩:৪৮, ২ জানুয়ারি ২০২২
মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থান
মৌলভীবাজার, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক জেলা। হাওড়, পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, চা বাগান আর সমতল বৈচিত্র্যময় এর গঠন প্রকৃতি। এই মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থান নিয়ে একসাথে জানুন আইনিউজে।
সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রাঃ) এর ভাইয়ের ছেলে হযরত ইয়াছিন (রাঃ) এর উত্তর পুরুষ মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ মনু নদীর তীরে ১৮১০ সনে যে বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই বাজারটি কালক্রমে অনেক সুনাম অর্জন করে। ১৮৮২ খ্রীস্টাব্দে পহেলা এপ্রিল মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাজারটিকে কেন্দ্র করে ২৬টি পরগনা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীহট্ট নামে এক মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ খ্রীস্টাব্দে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা সাউথ সিলেট নামের বদলে এ মহকুমার নাম রাখা হয় মৌলভীবাজার। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়।
মৌলভীবাজারকে চায়ের দেশ বলা হয়। এখানের দর্শনীয় স্থান হলো চা-বাগান। দেশের অধিকাংশ চা বাগান এই জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের মোট ১৬৭ চা বাগানের মধ্যে ৯১ টি চা বাগান মৌলভীবাজারে অবস্থিত (২০২০ তথ্য অনুযায়ী)। তাই যখনি মৌলভীবাজারের কথা পর্যটকদের মাথায় আসে তখন তারা শুধু চা বাগানের কথা চিন্তা করে। অনেকের মতে মৌলভীবাজারে দেখার মতো দর্শনীয় স্থান মধ্যে শুধু চা বাগান'ই রয়েছে। কিন্তু এই চায়ের দেশে চা বাগান ছাড়া আরো অনেক নানান দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আজ মৌলভীবাজারের সেই দর্শনীয় স্থানগুলো সম্পর্কে জানাব।
তবে চায়ের দেশের চা বাগানের কথা আজ বলব না। চা-বাগান ছাড়া বাকিসব সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য তুলে ধরবো। সর্বপ্রথম বলি বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধের কথা।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ অবস্থিত। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে অক্টোবর মাসে তিনি সিলেটের শ্রীমঙ্গল এলাকায় যুদ্ধ করেন। ২৮ অক্টোবর সকালে হালকা একটি মেশিনগান নিয়ে ধলই বিওপি-তে পাকিস্তানের ঘাঁটি দখলের জন্য অগ্রসর হন। তিনি একাই দুটি পাকিস্তানি ট্যাঙ্ক ধ্বংস করেন। এতে শত্রুঘাটির অধিনায়ক ও বেশ কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়। একসময় যোদ্ধারত অবস্থায় শত্রুদের পাল্টা আক্রমণে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। কিন্তু এমতাবস্থায়ও হার মানেননি এই বীর সন্তান। গুলিবিদ্ধ অবস্থায়ও মেশিনগান পোস্টে গিয়ে দুই পাকিস্তানি সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ করেন। আক্রমণের একসময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে আসে এবং শত্রুর উপর হামলা চালায়। বীর যোদ্ধার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হারিয়ে সীমানা ফাঁড়িটি দখল করে নেয়। ফাঁড়ি দখলের পর মুক্তিযোদ্ধারা বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে। তিনি ১৮ বছর বয়সে শহীদ হন। হামিদুর রহমানের লাশ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দাফন করা হয়। কবরটি নিচু স্থানে অবস্থিত হওয়ায় একসময় পানির নিচে ডুবে যায়। ২৭শে অক্টোবর ২০০৭ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার হামিদুর রহমানের দেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ই ডিসেম্বর ২০০৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা থেকে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করে, যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে কুমিল্লার বিবির হাট সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মার্যাদায় বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
এই মহান বীরের প্রতি সম্মান জানিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ধলই চা বাগানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। মাতৃভূমির মুক্তির জন্য জীবনদানে গল্প বহন করছে এই স্মৃতিসৌধ। চা বাগান পরম মমতায় আগলে রাখছে এই স্মৃতিসৌধ। এখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের ছোটবেলার ছবি রয়েছে পারিবারিক ছবি। স্মৃতিসৌধের একপাশে বিজিবির ক্যাম্প, অন্যদিকে চা-বাগান, দক্ষিণে ভারত সীমান্ত।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
বাংলাদেশের সাতটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও দশটি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। এটি একটি সংরক্ষিত উদ্যান। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় এটি অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল থেকে এর দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। ১২৫০ হেক্টর বিশিষ্ট এই উদ্যানকে দেখলে মনে হবে প্রকৃতির জাদুঘর।
কি নেই এই বন, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই উদ্যান। সুন্দরবনের পর লাউয়াছড়া বনের অবস্থান। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালে এ বনকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। উল্লুক ছাড়াও এ বনে রয়েছে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। জাতীয় তথ্যকোষের হিসেবে এই উদ্যানে রয়েছে ৪৬৯ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। এরমধ্যে ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৪০ প্রজাতির পাখি ও ০৬ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে।
বন্যপ্রাণীর মধ্যে হরিণ, লজ্জাবতী, বানর, মুখপোড়া হনুমান, বনরুই গন্ধগোকুল, বাঘডাশ, বনমোরগ, সজারু, অজগর সাপ, গুইসাপ, হনুমান, শিয়াল, মেছোবাঘ, চিতাবিড়াল, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালি ও বন্যকুকুর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে পাহাড়ি ময়না, মাথুরা, ধনেশ, সবুজ ঘুঘু সহ বিচিত্র নানান ধরনের পাখি। বনে প্রবেশের সাথে সাথে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়।
বনের সৌন্দর্যকে কাছ থেকে দেখার জন্য রয়েছে ৩টি ট্রেইল। ট্রেকিং এর সহায়তা জন্য রয়েছে গার্ড।
লাউয়াছড়া উদ্যানের ভেতরেই আছে খাসিয়া পুঞ্জি, পানের বরজ ও চা-বাগান। বনে মাঝ দিয়ে চলে গেছে ঢাকা-সিলেট রেললাইন। রেললাইনের দু’দিকে গাছগাছালি। এই জায়গাটি দর্শনার্থীর কাছে খুব প্রিয়।
এছাড়া লাউয়াছড়া যাবার পথে চা-বাগান, উচু-নিচু টিলা, আনারস লিচু ক লেবুর বাগান চোখে পড়ে।
হাকালুকি হাওর
হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মিঠা পানির জলাভূমি। এটি শুধু বাংলাদেশের নয় এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি। এর আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর আর শুধুমাত্র বিলের আয়তন ৪,৪০০ হেক্টর। এটি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া এবং সিলেটর ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার জুড়ে বিস্তৃত।
এই হাওরে ২৩৮ টি ছোট বড় মাঝারি আকারের বিল ও ১০ নদী রয়েছে। শীত কালে এসব বিল প্রচুর অতিথি পাখি আসে। হাকালুকি হাওরকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা বিবেচনা করা হয়। জলাভূমির সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক গুরুত্ব এবং টেকসই ব্যবহারের জন্য রামসার এলাকা হিসেবে এটি সংরক্ষিত।
হাকালুকি হাওরে ৫২৬ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪১৭ প্রজাতির পাখি এর মধ্যে ১১২ প্রজাতির অতিথি পাখি ও ৩০৫ প্রজাতির দেশীয় পাখি। অনান্য বন্যপ্রাণী রয়েছে ১৪১ প্রজাতির, ১০৭ প্রজাতির মাছ রয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় ১৫৯ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ, ১২০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও ২০ প্রজাতির সরীসৃপ।
হাকালুকি হাওর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। বর্ষাকালে এই হাওরটি যেন একটি বিশাল সমুদ্রের রূপ নেয়। সমুদ্রের মতো বিশাল বিশাল ঢেউ, চারিদিকে পানি আর পানি। তখন মানুষজন নৌকার ব্যবহার করে যাতায়াতের জন্য।
হাকালুকি হাওর শীতে খুব সুন্দর রূপ ধারণ করে। এসময় হাওরের চারপাশে অতিথি পাখির কোলাহল থাকে। এই দর্শনীয় স্থানের অপরূপ সুন্দর দৃশ্য দেখতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস হচ্ছে উত্তম।
পাথারিয়া পাহাড়
পাথারিয়া পাহাড় স্থানীয়দের কাছে আদম আইল নামে পরিচিত। প্রায় ১০০০ বছর আগে এই অঞ্চলটি গভীর অরণ্যে ভরপুর ছিল। সেসময় এখানে পাথরি নামক নাগা জনগোষ্ঠীর একটি উপশাখার অধিবাসীরা বসবাস করে ছিলো। আর এই জনগোষ্ঠীর নামের সাথে মিল রেখে এই অরণ্যের নাম হয় পাথারিয়া। এই পাহাড়ের উপর থেকে আসা পানিতেই সৃষ্টি হয় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের।
পাহাড়টি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত। বড়লেখা থেকে ভারতের পূর্ব সীমান্তবর্তী খাসিয়া-জয়ন্তীয়া উচ্চভূমির আসম অংশের ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পাহাড়টি বিস্তৃত।
উঁচু নিচু টিলা আর সবুজ বৃক্ষে ঘেরা পাথারিয়া পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসে ঝর্ণা। এই পাহাড়ের চূড়া থেকে ভারতের করিমগঞ্জ জেলা দেখা যায়। এখানে আগপ প্রচুর কমলা লেবুর গাছ ছিলো। এখন তা কমে গেছে। এই বনাঞ্চলটি আগর-আতর কাঠ গাছের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এখানে প্রচুর পরিমাণে আগর, নাগকেশর, পালান কালাকস্তরী বা মুশকদানা ও বনঢ্যাড়শ চাষ হয়।
পাথারিয়া পাহাড়ের সবুজ প্রকৃতি ও শান্ত ঝর্ণায় মুগ্ধ হয়ে অনেকে এখানে ঘুরতে আসে।
হাইল হাওর
মৌলভীবাজার জেলা সদর, শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা জুড়ে অবস্থিত হাইল হাওর। এই হাওররে আয়তন দশ হাজার হেক্টর। ১৪ টি বিলে ঘেরা এই হাওর। স্থানীয়দের কাছে এটি লাতাপাতার হাওর নামে পরিচিত। কারণ হাওরটি প্রচুর লতাপাতা ও গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ থাকে। এই হাওরে জীববৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও অন্যান্য প্রাণী দেখা যায় এখানে। পাখিদের মধ্যে কুড়া পাখি প্রধান। এককালে এই হাওরে ৯৮ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে তাদের মধ্যে ২১ প্রজাতি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং আরো ১১ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়।
বিলুপ্ত মাছগুলো হলো: বাচা, ঘারুয়া, ছেপচালা, বাঘাইড়, ঢেলা, রিটা, বাঁশপাতা, রানী, নাফতানি, নাপিতকই, তারা বাইম, বড় বাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা, একথুটি, চাকা, শ্বেত সিংগি, শ্বেত মাগুর মাছ। বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো হলো: পাবদা, আইড়, বেদা, মিনি, ফলি, গজার, গুলশা, দাড়কিনি, চিতল, টাটকিনি ও তারা বাইন।
হাওর এলাকায় ভ্রমণ করার উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল। আর পাখির কলকাকলী শুনতে চাইলে এই দর্শনীয় স্থানে আসার উপযুক্ত সময় হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাস।
মাধবপুর হ্রদ
মাধবপুর হ্রদ একটি কৃত্রিম হ্রদ। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে এ হ্রদ অবস্থিত।
চা চাষের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই পার্বত্য অঞ্চলের বৃষ্টিবহুল এলাকগুলো চা চাষের জন্য উপযুক্ত। বৃষ্টির পরিমাণ অধিক হলেও ঢালু ভূমির কারণে পানি বেশিক্ষণ অবস্থান করে না। তাই পানির প্রয়োজনে বাগান কর্তৃপক্ষ একাধিক জলাধার তৈরী করেন। চা শ্রমিকরা এ-সব জলাধারাকে “ডাম্প” বলে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৬৫ সালে মাধবপুর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ বাগানের মধ্যস্তিত তিনটি টিলাকে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে রেখে গড়ে তুলেন মাধবপুর হ্রদ। প্রায় ৫০ একর আয়তনে মাধবপুর হ্রদের দৈর্ঘ্য তিন কিলোমিটার এবং স্থান বিশেষ ৫০-৩০০ মিটার পর্যন্ত। মাধবপুর হ্রদের শোভা বাড়ায় হ্রদের জলে ভাসমান নীল সাদা পদ্ম আর বেগুনী শাপলা ফুল, তার সাথে সৌন্দর্য বাড়াতে জলে নামে বিভিন্ন জাতের হাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, জলপিপি প্রভৃতি জলচর ও পাখিরা। টিলার ঝোপঝাড়ে রয়েছে নানা বর্ণের বুনো ফুল, যাদের মধ্যে ভাঁট ফুল প্রধান।
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও চা-বাগানের ব্যবস্থাপনার কথা বিবেচনা করে মাধবপুর হ্রদে সকাল ৮ হতে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত ভ্রমণকারীদের অবস্থান করতে দেওয়া হয়।
মণিপুরী পল্লী
বাংলাদেশে অসংখ্য নৃ-গোষ্ঠী বসবাস করে। এই নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে বেশির ভাগ মণিপুরী নৃ-গোষ্ঠী মৌলভীবাজারে বসবাস করে। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জ উপজেলায় আদমপুর ইউনিয়নে মণিপুরী সম্প্রদায়ের কাপড় ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে মণিপুরী পল্লী। পর্যটকদের মৌলভীবাজারের চা-বাগান যতটা আকৃষ্ট করে তার চেয়েও বেশি আকৃষ্ট করে মণিপুরীদের জীবন প্রণালী। বিশেষ করে মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ ও রাস মেলা পর্যটকদের খুব বেশি আর্কষিত করে।
প্রতি বছর নভেম্বর মাসে অগ্রহায়ণের শুরুতে মণিপুরী পল্লীতে বসে রাস মেলা। এই মেলায় দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন। এই মেলায় মণিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী খামি, হাতের তৈরী বোনা শাল, চাদর, শাড়ী, সেলোয়ার-কামিজ, ব্যাগ, ফতুয়া, পঞ্জাবী ইত্যাদি পাওয়া যায়। যদিও শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় দোকানেও এসব মণিপুরী পন্য পাওয়া যায়।
তারপরও মেলা থেকে কিনার অনুভূতিই আলাদা। মণিপুরী সম্প্রদায়ের নাচেরই রয়েছে আলাদা খ্যাতি। এ নাচের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য প্রতিফলিত হয়। মণিপুরীদের সুখ্যাতি তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মধ্যে। প্রায় প্রতিটি মণিপুরী পরিবারেরই রয়েছে নিজস্ব কাপড় বোনার যন্ত্র। নিজেদের কাপড় তৈরী করাটা মণিপুরী সংস্কৃতিরই একটি অংশ। এছাড়া মণিপুরী সংস্কৃতিকে আরো ভালোভাবে জানার জন্য মাধবপুরে মণিপুরী পল্লীর সাথেই রয়েছে একটি মণিপুরী সাংস্কৃতিক একাডেমি।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
পাথারিয়া পাহাড় থেকে তৈরী হয় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় এই জলপ্রপাত অবস্থিত। পাথারিয়া পাহাড়ের উপর দিয়ে গঙ্গামারা ছড়া প্রবাহিত হয়। এই ছড়া মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত হয়ে নিচে পড়ে হয়ছে মাধবছড়া। অর্থাৎ গঙ্গামারা ছড়া হয়ে বয়ে আসা জলধারা (১২ অক্টোবর ১৯৯৯- এর হিসাবমতে) প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু থেকে নিচে মাধবছড়া হয়ে বয়। মাধবকুণ্ডে যাওয়ার জন্য কোনো উপযুক্ত সময় এর প্রয়োজন নেই। কারণ একটি মূল ধারায় এই পানি সব সময়ই পড়তে থাকে। তবে বর্ষাকালে এর মূল ধারার পাশেই আরকটি ছোট ধারার সৃষ্টি হয়। জলের এই ধারা পড়তে পড়তে নিচে একটি বিরাট কুণ্ড তৈরী হয়।
কুণ্ডের ডানপাশে পাথরের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে একটি গুহা, যার না কাব। এই কাব দেখতে অনেকটা চালাঘরের মতো। এই মাধবছড়ার পানি পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হতে হতে গিয়ে মিশেছে হাকালুকি হাওরে।
সরকারি উদ্যোগে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্টে। ২০০১ সালে ২৬৭ একর এলাকা নিয়ে মাধবকণ্ডে গড়ে তোলা হয় মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক। ইকোপার্কের মেইন গেইট থেকে আাধা কিলোমিটার পথ হেটে গেলে দেখা মিলে মাধবকুণ্ডে ঝর্ণার। মাধবকুণ্ডের ইকোপার্কে আছে শ্রী শ্রী মাধবেশ্বরের তীর্থস্থান, চা-বাগান, খাসিয়া পল্লী, পান সুপারি, কমলা ও লেবুর বাগান। আবার কোথাও কোথাও জুম চাষের দেখা মিলে। চৈত্র মাসে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত সংলগ্ন কুণ্ডে হিন্দুদের বারুনী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। তখন সেখানে মেলা বসে।
হামহাম জলপ্রপাত
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এ ঝর্ণা। ২০১০ সালে এ ঝর্ণা আবিষ্কৃত হয়। পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার ও তার সাথে একদল পর্যটক এ জলপ্রপাত আবিষ্কার করে। গভীর জঙ্গলে অবস্থিত এই ঝর্ণাটি উচ্চতা ১৩৫ বা ১৪৭ কিংবা ১৭০ ফুট। তবে ঝর্ণার উচ্চতা বিষয়ে কোনো পরিক্ষিত মত নেই। কিন্তু গবেষকেরা মত প্রকাশ করেন যে এর ব্যাপ্তি মাধবকুণ্ডের ব্যাপ্তির প্রায় তিনগুণ বড়।
স্থানীয়দের কাছে এ ঝর্ণা চিতা ঝর্ণা নামে পরিচিত, কারণ তাদের মতে একসময় এ বনে চিতা বাঘ থাকতো।
হামহাম যাবার পথে রয়েছে সারি সারি কলাগাছ, জারুল, চিকরাশি কদম গাছ। এর ফাঁ ফাঁকে উড়তে থাকে রং-বেরঙের প্রজাপতি। এখানে দেখা মিলবে চশমাপরা হনুমানের। এছাড়াও রয়েছে ডলু, মুলি, মির্তিঙ্গা, কালি ইত্যাদি বিচিত্র নামের বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ। বর্ষাকাল হামহামের বন্য সৌন্দর্য দেখার উপযুক্ত সময়।
বাইক্কা বিল
হাইল হাওরের পূর্ব পাশে বাইক্কা বিল অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে বাইক্কা বিল ২০ কিলোমিটার দূরত্বে। বাইক্কা বিলকে মাছের জন্য অভয়াশ্রম হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ২০০৩ সালের ১লা জুলাই বাইক্কা বিলকে ঘিরে আর্কষণীয় পর্যটন স্থান তৈরী করা হয়। প্রতি শীতে এ বিলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখার জন্য দূর দূরান্তে থেকে দেশ বিদেশের বহু পর্যটক এখানে ভীড় জমায়। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, হাজারো পাখির কলকাকলি আর রয়েছে বালি, বুনোহাঁস এর বসতি, গরু মহিষের বিশাল চারণভূমি। এই হাওরটি ৮০ হাজার প্রজাতির মাছ, ১৮ হাজার প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ এবং ১৬০ প্রজাতির পাখির বসবাসস্থল। প্রতি বছর বাইক্কা বিলে পাখিশুমারী অনুষ্ঠিত।
শীত মৌসুমে এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। ২০১১ সালের এক গবেষনায় এই বিলে ২০৩ টি প্রকার পাখি শনাক্ত করা হয়েছে এদের মধ্যে ১৫৩ টি পরিযায়ী পাখি আর স্থায়ী বসবাসকারী পাখি ৫০টি। বাইক্কা বিলে পাখিদের উপর গবেষণা করার জন্য তাদের পায়ে রিং পরনো হয়। ২০১১ সালে এ বিলে নতুন ৪টি প্রকার পরিযায়ী পাখির দেখা মিলে। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের পাখি পর্যবেক্ষকদের মতে এগুলো হলো,নবড়ঠুঁটি নলফুটকি, উদয়ী নলফুটকি, বৈকাল ঝাড়ফুটকি ও সাইক্সের ফুটকি।
মৌসুম ভেদে নতুন নতুন রূপে সাজে বাইক্কা বিল। বিলের বিশাল জলরাশি ভরপ উঠে হিজল, কমলি, নয়নকারা, পানা, শপলা, নীল পদ্ম ইত্যাদি জলজ উদ্ভিদে। পর্যটদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার সুবিধার জন্য বিলের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে দু’তলা অবজারভেশন টাওয়ার। এই টাওয়ার থেকে পুরো বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কালা পাহাড়
কালা পাহাড় হচ্ছে সিলেটের সর্বোচ্চ চূড়া। এটি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কার্মদা ইউনিয়নে বেগুন ছড়া পুঞ্জিতে অবস্থিত। এর উচ্চতা ১০৯৮ ফুট। এই চূড়াটি ২০১৫ সালে আবিষ্কার করা হয়। বিডি এক্সপ্লোরার নামক একদল এ পাহাড় খুঁজে পায়।
স্থানীয়রা এ পাহাড়কে লংলা বলে। বাংলাদেশ জিওগ্রাফিক সোসাইটির মতে, পাহাড়টি হাটারগঞ্জ পাহাড় নামেও পরিচিত।
এই পাহাড়ে কিছু খাসিয়া নৃগোষ্ঠি বসবাস করে যেমন:- নুনছরা পুঞ্জি,পানাইছরা পুঞ্জি,পুটিছরা পুঞ্জি এবং বাইগঞ্ছরা পুঞ্জি। খাসিয়া ভাষায় 'গ্রামকে' 'পুঞ্জি' বলা হয়।
দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় অবস্থান করা এই পাহাড়ের ৬০% বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় অবস্থিত। ত্রিপুরায় পাহাড়টি রঘুনন্দন নামে পরিচিত। এই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ধর্মীয় স্থান ঊনকোটি। শরৎকালে আকাশ পরিষ্কার হলে এই পাহাড় থেকে হাকালুকি হাওরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়।
পৃথিমপাশার জমিদার বাড়ি
পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় ৩৫ একর জায়গায়জুড়ে এ বাড়ির মতো জীবন্ত জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ আর একটিও নেই। এই বাড়ি জমিদার ছিলেন গাউস আলী খান। পরবর্তীতে জমিদার হন আলী আমজাদ খান। এই বাড়িতে এখনও জমিদারের উত্তরসূরীরা বসবাস করে। প্রায় দু'শ বছর পুরনো এই জমিদার বাড়ির আজও সাজানো গোছানো। জমিদার বাড়ির ভেতরের সবকিছু পুরনো আমলের কারুকাজ খচিত হলেও সেগুলো পরিষ্কার ঝকঝকে আছে এখনও। জমিদারের ব্যবহারের জিনিসপত্র রয়েছে এ বাড়িতে। জমিদার বাড়িটির স্থাপত্য শিল্পের কারুকার্য এখনও নজর কাড়ে দর্শণার্থীদের। এই বাড়ির আকর্ষণীয় দিক হলো এখানকার ইমামবাড়া (ইমামের বাসভবন)। জমিদার নির্মিত শিয়া সম্প্রদায়ের চমৎকার নকশা খচিত এই ইমামবাড়া।
এর পাশেই রয়েছে চমৎকার শান বাঁধানো ঘাটসহ একটি সুবিশাল দীঘি। সুপেয় পানির জন্য এই দীঘি খনন করেন আলী আমজাদ খাঁন। তিনি জমিদার বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রাখতে মৌলভীবাজার ও কুলাউড়ায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজ তৈরী করেন। এই জমিদার বাড়ি দেখার জন্য এখনও অনেক মানুষের ভিড় জমে এখানে।
কমলা রাণীর দীঘি
কমলা রাণীর দীঘি বাংলাদেশের বৃহত্তম দীঘি। এ দীঘি নিয়ে কল্প গল্প কাহিনি রয়েছে। রয়েছে বাংলা ছায়াছবিসহ রেডিও মঞ্চ নাটক। মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানায় এ দীঘি অবস্থিত। এ দীঘিকে সাগর দীঘিও বলা হয়। ৬৬ একর জমির উপর নির্মিত এই দীঘিটি। এই দীঘি খনন করান স্থানীয় সামন্ত রাজা পদ্মনাভ। এটি রাণী কমলাবতীর দীঘি বানিয়াচং-এর সাগরদীঘি, কমলারাণীর দীঘি নামে দেশ বিদেশে পরিচিত।
প্রচলিত আছে, দ্বাদশ শতাব্দীর রাজা পদ্মনাভ প্রজাদের পানির সমস্যা দূর করতে বানিয়াচং গ্রামের মধ্য ভাগে এই দীঘি নির্মাণ করেন। দীঘি খননের পর পানি না উঠায় রাজা তার রাণী কমলাবতীকে এ দীঘিতে আত্মবিসর্জন দেন। এ দীঘি জনপ্রিয়তা লাভ করে কবি জসীমউদ্দিন এর কবিতা ‘রাণী কমলাবতীর দীঘি' থেকে।
এ দীঘির পশ্চিম পাশে রয়েছে হযরত কুতুবউদ্দিন (রাঃ) এর মাজার শরিফ। প্রতিবছর ৬ ফালগুণ হযরত কুতুব উদ্দিনের বার্ষিক জলসা অনুষ্ঠিত হয়। এ জলসায় প্রচুর ভক্তরা আসেন। কুতুবউদ্দিন (রাঃ) এর দরগাহের খাদেম জানান কমলা রাণীর মৃত্যুর পর রাজা সম্ভবত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। দীঘির পশ্চিম পাশে রাজা ও তার দুই পুত্রের কবরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
দেখলেন তো এই চায়ের দেশে চা ব্যাতিত দেখার মতো আর অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান রয়েছে। প্রতি বছর পর্যটকরা যখন এখানে ঘুরতে আসে তখন তারা শুধু চা-বাগান দেখবে বলে আসে। কিন্তু আসার পর তাদের ধারণাটা ভুল প্রমাণিত হয়। যখন তার চা ছাড়াও এখানের আরো নানাধরণের দর্শনীয় স্থান দেখে। তবে এইখানের সকল পর্যটক স্থানগুলোর মাঝে কিন্তু চা-বাগানের চিটে ফুটা রয়েছেই। তা যাবার সময় চোখে পড়ুক বা স্থানেই থাকুক। এই শহরের দর্শনীয় স্থানসহ সব কিছুতে চা ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে আছে। চা-বাগানই এখানের দর্শনীয় স্থান গুলোকে ফুটিয়ে তুলেছে।
আইনিউজ/এসডি
আই নিউজ ভিডিও
ঘুরে আসুন মৌলভীবাজারের পাথারিয়া পাহাড়
হাইল হাওরের বাইক্কাবিলে পর্যটক আর পদ্মটুনার ভিডিও ভাইরাল
জলময়ূরের সাথে একদিন | বাইক্কা বিল | ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক উৎসবে মুগ্ধ বিদেশিনী
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ