ফিচার ডেস্ক
এক রাতেই পরিবারের ৬ সদস্যসহ ৮ খুনের সেই ঘটনা আজও রহস্যে ঘেরা
১৯১২ সালের ৯ জুন রাতের ঘটনা। ১০ জুন ভোরেই পাওয়া গেলো কুঠারের আঘাতে হত্যা করা মুর পরিবারের ৬ সদস্যসহ আট জনের হীমশীতল মৃতদেহ। ঘটনাটি আমেরিকার আইওয়া রাজ্যের ভিলিস্কা শহরের মুর পরিবারের। ওইদিন মৃতদের মধ্যে ছিল শিশুও।
কে খুন করল? কীভাবে ঘটল এই ভয়ঙ্কর ঘটনা? ১১০ বছর পরেও রহস্য ভিলিস্কা কুঠার হত্যাকাণ্ড। ১০ জুন মুর পরিবারের ছয় সদস্য এবং দুই অতিথির দেহ তাদের বাড়ির ভেতর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। মৃত আট জনের মাথাতেই কুড়ুলের আঘাত ছিল।
- আইনিউজে আরো পড়ুন : রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
দীর্ঘ তদন্ত চালানোর পরেও এই খুনের ঘটনার কোনো কিনারা করতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হলেও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তাদের সবাইকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ১১০ বছর পরেও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য অমীমাংসিত। কী হয়েছিল মুর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে? তদন্তে কীই বা উঠে এসেছিল? কীভাবেই বা খুন হতে হয়েছিল এই আটজনকে? মুর পরিবারে ছিলেন মোট ছয়জন সদস্য। মুর পরিবারের কর্তা হোসে বি মুর (৪৩), কর্ত্রী সারা মুর (৩৯) এবং তাদের চার সন্তান হারম্যান মন্টগোমারি মুর (১১), মেরি ক্যাথরিন মুর (১০), আর্থার বয়েড মুর (৭) এবং পল ভার্নন মুর (৫)।
এলাকায় মুর পরিবারের বেশ নামডাক ছিল। ব্যবহারের জন্য সম্ভ্রান্ত মুর পরিবারকে এলাকার সবাইকেই খুব পছন্দ করতেন। ঘটনার দিন মেরি তার দুই বন্ধু ইনা মে স্টিলিঙ্গার (৮) এবং লেনা গার্ট্রুড স্টিলিঙ্গার (১২)-কে রাতে তাদের বাড়িতে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। ইনা এবং লেনা সম্পর্কে দুই বোন। সন্ধ্যায় ইনা এবং লেনাকে নিয়ে মুর পরিবার প্রেসবিটেরিয়ান গির্জায় শিশু দিবস উপলক্ষে হওয়া একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তারা সবাই গির্জা থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন এবং রাত ১০টা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছান। ১০ জুন সকালে তাদের দেখা না পেয়ে প্রতিবেশী মেরি পেকহ্যাম মুর পরিবারকে ডাকাডাকি শুরু করেন। তিনি দেখেন মুরদের বাড়ির মূল দরজা ভেতর থেকে বন্ধ রয়েছে। অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না মেলায় পেকহ্যাম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
- আরও পড়ুন : বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন ও প্রাচীন পাঁচ মসজিদ
এরপর পেকহ্যাম হোসের ভাই রস মুরকে ডেকে আনেন। রস-ও চিৎকার করে এবং দরজায় ধাক্কা দিয়েও কোনো সাড়া পাননি। এরপর রস তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে সদর দরজা খুলে দেন। রস বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সামনের ঘরে বাড়িতে আসা দুই অতিথি ইনা এবং লেনার মৃতদেহ দেখতে পান। রস সঙ্গে সঙ্গে পেকহ্যামকে ভিলিস্কার শান্তি অফিসার হেনরি হর্টনকে ডেকে নিয়ে আসতে বলেন।
- আরো পড়ুন : দেশের সবচেয়ে দরিদ্র যে এলাকা
কিছুক্ষণের মধ্যেই হেনরি ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন। এরপর বাড়ির তল্লাশি করে একে একে মুর পরিবারের সব সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করেন হর্টন। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে, একটি কুঠার দিয়ে হোসেদের সবাইকে খুন করা হয়েছিল। ইনা এবং লেনার মৃতদেহের পাশে থেকে পুলিশ কুঠারটি উদ্ধার করে। কুঠারটি হোসেদেরই বাড়িতে ছিল। ময়নাতদন্তের পর উঠে আসে, নিহত সবাইকে রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে খুন করা হয়। ঘরের ছাদের নিচের কুঠুরিতে দুটো পোড়া সিগারেটের অংশও খুঁজে পায় পুলিশ।
- আরো পড়ুন : বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ
পুলিশের ধারণা, মুর পরিবারের সবাইকে যখন গির্জায় গিয়েছিলেন, ঠিক তখনই আততায়ী এই কুঠুরিতে আশ্রয় নেয়। মুর পরিবার রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সে এই কুঠুরিতেই লুকিয়ে ছিল বলেও পুলিশ মনে করে। পুলিশের অনুমান, আততায়ী প্রথমে হোসে এবং সারার ঘরে প্রবেশ করে। সেই মুহূর্তে হোসে এবং সারা ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুমের মধ্যে আততায়ী তাদের ওপর কুঠারের হামলা চালায়। মৃতদের মধ্যে হোসের উপরেই সবচেয়ে বেশি কুঠারের আঘাত করা হয়। হোসের মুখ এমনভাবে কাটা হয়েছিল যে, তার চোখ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
- আরো পড়ুন : ডিম আগে না মুরগি আগে, গবেষণায় মিললো উত্তর
পুলিশ জানিয়েছিল, আততায়ী একমাত্র হোসেকেই কুড়ুলের ধারালো দিক দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। বাকি সবাইকে খুন করা হয় কুঠারের ভোঁতা দিক দিয়ে। হোসে এবং সারার পর আততায়ী হারম্যান, ক্যাথরিন, আর্থার এবং পলকে মাথায় আঘাত করে খুন করে। পরে খুন করা হয় ইনা এবং লেনাকে। তদন্তকারীরা মনে করেছিলেন যে খুন হওয়ার সময় লেনা ছাড়া বাকি সকলেই ঘুমাচ্ছিলেন। লেনা মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আততায়ীর হাত থেকে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করে। তার মৃতদেহ বিছানায় আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল এবং তার হাতে একটি ক্ষত ছিল। লেনার ঊর্ধ্বাঙ্গ আনাবৃত ছিল এবং তার পোষাক কোমর পর্যন্ত নামানো ছিল। তদন্তকারীরা অনুমান করেছিল, হত্যাকারী তাকে যৌন নিগ্রহ করার চেষ্টাও করেছিল।
- আরো পড়ুন : আমাজনের রহস্যময় নিঃসঙ্গ এক মানুষের গল্প
তদন্তে নেমে পুলিশ রেভারেন্ড জর্জ কেলি, ফ্রাঙ্ক এফ জোনস, উইলিয়াম ম্যানসফিল্ড, লাভিং মিচেল, পল মুলার এবং হেনরি লি মুরসহ অনেককে অভিযুক্তের তালিকায় রেখেছিল। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য কেলিকে দুবার বিচারকদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রথমবার এই মামলা আদালতে উঠলে জুরি সদস্যেরা কোনো সিদ্ধান্তে আসেননি। দ্বিতীয়বার এই মামলা আদালতে উঠলে প্রমাণের অভাবে সব অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়।
- আরও পড়ুন: মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ এবং যেভাবে ছড়ায়
তবে এই হত্যার ঘটনায় অলৌকিকতার তত্ত্বও খাড়া করা হয়। উঠে আসে অশরীরী যোগও। অনেকেই মনে করেন কোনো অশরীরীর নজর ছিল ওই পরিবারের ওপর। সেই প্রেতাত্মার প্রতিহিংসারই শিকার হতে হয়েছিল মুর পরিবার। বেঘোরে প্রাণ গিয়েছিল অতিথি দুই বোনেরও। ঘটনার ১১০ বছর পরও এই হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারা হয়নি। তবে আমেরিকার অনেক শো এবং সিনেমার পটভূমি তৈরি হয়েছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
সূত্র: আনন্দবাজার অনলাইন
আইনিউজ ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন আকর্ষণীয় সব ভিডিও
বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দৌড়ে অন্ধ শিক্ষার্থীদের ক্ষিপ্রগতি দেখে সবাই মুগ্ধ
বাজারে নদীর বিশাল চিতল মাছ
বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হলো অবৈধ স্থাপনা-দোকানপাট
বৃদ্ধ বয়সে নামাজ পড়তাম, ঘরে বসে খাইতাম, কে খাওয়াবে!
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ