Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

শ্যামলাল গোসাঁই

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ২৭ জুলাই ২০২২
আপডেট: ১২:৫৯, ২৭ জুলাই ২০২২

৭ম মৃত্যুবার্ষিকী

এ পি জে আব্দুল কালাম: ‘দ্য মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’

এ পি জে আব্দুল কালাম। প্রতিকৃতি: আইনিউজ

এ পি জে আব্দুল কালাম। প্রতিকৃতি: আইনিউজ

শিক্ষিত সমাজ তাঁকে বলেন তিনি লাখ লাখ শিক্ষার্থীর চিরকালীন স্বপ্নদ্রষ্টা। যদিও তিনি ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে ছিলেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যেকারণে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ আখ্যাটিও লাভ করতে পেরেছিলেন। তিনি ভারতের পারমানবিক বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম। আজ (২৭ জুলাই) এই স্বপ্নদ্রষ্টা ব্যক্তির সপ্তম মৃত্যু বার্ষিকী। বিস্ময়কর জ্ঞানের অধিকারী ভারতের সাবেক এ রাষ্ট্রপতি চলে যাবার সাতটি বছর পূর্ণ হলো আজ।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তার অবদান অতুলনীয়। কালের পরিক্রমায় সুউচ্চ আসনে ঠাই করে নিতে পারা এ বিখ্যাত মানুষটি জন্মেছিলেন তামিলনাড়ুর মামুলি এক নৌকা মালিকের ঘরে। সবাই তাঁকে এ পি জে আব্দুল কালাম নামে চেনে, কিন্তু তাঁর পুরো নাম  আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম। জন্ম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের রামেশ্বরমের এক মুসলমান পরিবারে। তাঁর পিতার নাম জয়নুল আবেদিন আর মাতা অশিয়াম্মা।

এ. পি.জে. আবদুল কালামদের ছিলো তিন ভাই আর একবোনের সংসার । জালালউদ্দিন আর সামসুদ্দিনের সঙ্গে আবদুলের ছোটোবেলার দিনগুলি কেটে গিয়েছিল মধুরভাবে। যা প্রভাব রেখেছে তাঁর জীবনেও। পরবর্তীকালে আবদুল কালাম স্বীকার করেছেন, বেড়ে ওঠার এই ব্যস্ত প্রহরে দু – ভাইয়ের সান্নিধ্য এ.পি.জে. আবদুল কালামকে নানাভাবে উপকৃত করেছিল । তিন ভাই ছিলেন পিতার আদর্শে গড়া সততার প্রতিমূর্তি।

মেলামেশা করতেন রামনাথ শাস্ত্রী , অরবিন্দন আর শিব প্রকাশনের সঙ্গে , তাঁরা সকলেই ছিলেন সনাতনপন্থী হিন্দু পরিবারের সন্তান । আর আবদুল গোড়া মুসলমান । কিন্তু শৈশবে তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার ভেদ রেখা ছিল না । তখন তাঁরা সকলেই একসঙ্গে মেলামেশা করতেন ।

 ভারী সুন্দর ছিল শৈশবের এই অকলঙ্ক দিনগুলি । পৃথিবীর কোনো সমস্যার বোঝা তখন আমাদের মাথার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়নি । স্মৃতিচারণের মাধ্যমে বারবার এই হারিয়ে যাওয়া রঙিন দিনগুলির কথা শুনিয়েছেন এ.পি.জে. আবদুল কালাম । তখন সারা বছরের সবচেয়ে বড়ো উৎসব ছিল শ্রী সীতারাম কল্যানম্ উৎসব । গোটা পরিবার এই উৎসবে অংশ নিত । রাম সীতার মূর্তি মন্দির থেকে নৌকায় করে তুলে বিবাহমন্ডপে নিয়ে যাওয়া হত । আবার উৎসব শেষ হলে দুটি মূর্তিকে ফেরত নিয়ে যাওয়া হত মন্দিরে ।

 কাছেই একটি পুকুর ছিল রামতীর্থ । সেখানে এই দুটি মূর্তিকে শ্রদ্ধাসহকারে অবগাহন করানো হত । ভাবতে অবাক লাগে , আজ থেকে কত বছর আগে গোড়া মুসলমান পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও আবদুল পরম আগ্রহে ওই বাৎসরিক উৎসবে যোগ দিতেন ।

শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানের ছাত্র। কিন্তু ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর পরিশ্রমী।  শিক্ষাগ্রহণের তীব্র বাসনা ছিল কালামের। তাই আবদুল কালাম স্কুল-কলেজ পেরিয়ে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি বিষয়েও শিক্ষা নেন।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংগঠনে বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দিয়ে একটি ছোট হোভারক্রাফটের নকশা তৈরি করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় যোগ দেন। সেখানে তিনি ভারতের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণকারী যানের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ১৯৯৮ সালে ‘পোখরান-২’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায়ও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এটি ছিল ১৯৭৪ সালে ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ নামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-সংক্রান্ত উচ্চতর গবেষণার জন্য তিনি ‘ভারতের মিসাইল মানব’ হিসেবে পরিচিতি এ পি জে কালাম।

২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্নসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ২৭ জুলাই ২০১৫ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

নিজেকে রাজনৈতিক দলাদলির উর্দ্ধে রাখা , এমন অনেক আদর্শ স্থানীয় কাজ করে আজ কালাম এ ভারতীয় উপমহাদেশে এক মহান মানুষে পরিণত হয়েছেন । আজও মাঝে মাঝে তিনি বিভিন্ন জায়গাতে ভাষণ দিতে যান । যেখানেই যান , সেখানেই তাঁর শিক্ষকসুলভ দার্শনিকতা প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে ।

সব অর্থে এ পি জে আবদুল কালামকে ভারতীয় ঋষির সঙ্গে তুলনা করা অত্যুক্তি হবেনা। কেননা, তিনি জীবনে কারো দ্বার পরিগ্রহ করেননি । আজীবন ব্রহ্মচারী তাপসের মতো জীবন কাটিয়েছেন। ভারতীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে এ.পি.জে. আবদুল কালাম থাকবেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

মানুষ হত্যা করেছে মা হাতিকে, দুধের জন্য কাঁদছে বাচ্চা হাতিটি

৪০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হলো একটি মাছ, রাতরাতি ধনী জেলে

দুবাইয়ে লটারি জিতে একরাতে কোটিপতি বাংলাদেশী যুবক | দুবাই প্রবাসী

আদিবাসী জনগোষ্ঠির সংস্কৃতি । Indigenous Culture । Eye News

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়