Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, বুধবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ২ ১৪৩২

শ্যামলাল গোসাঁই

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২

সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?

স্বর্ণের শহর বলে খ্যাত কল্পনার শহর এল ডোরাডো

স্বর্ণের শহর বলে খ্যাত কল্পনার শহর এল ডোরাডো

বর্তমান বাজারে স্বর্ণের রেকর্ড পরিমাণ ভরি প্রতি দাম, স্বর্ণের চোরাচালানসহ নানা কারণে আলোচনায় থাকে স্বর্ণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আলোচনা হয়েছে অল্প ব্যবধানে স্বর্ণের উত্তরোত্তর দাম বৃদ্ধি নিয়ে। অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য আর চকচকে বর্ণের এই ধাতুটির বিশ্বব্যাপী চাহিদা ব্যাপক। তা কেবল আজকের সময়েই নয়, অতি প্রাচীনকালেও হলুদ রঙের এই ধাতুটি ছিলো সমানভাবে জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে।

এটি অতি মূল্যবান ধাতু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সোনা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার তৈরির প্রথা এখনও সমানভাবে প্রচলিত। যার দরুণ বাজারে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির ফলেও কমেনি স্বর্ণের চাহিদা। তবে স্বর্ণের ব্যাপারে আজকে কিছু তথ্য তোলে ধরবো যা সাধারণত আমরা জানিনা বা জানার দরকার মনে করিনা।

যেভাবে এলো স্বর্ণ ও এর নামকরণ
স্বর্ণের রাসায়নিক নাম ‘Aurum’, যা লাতিন শব্দ Aurora থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

বলা যায় স্বর্ণ মানুষের আবিষ্কৃত প্রাচীনতম মৌলগুলোর একটি। সেই নব প্রস্তর যুগে যখন মানুষ সবে মাত্র পাথরের নানাবিধ ব্যবহার শিখতে শুরু করেছে তখনো সোনার তৈরি দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হতো এমন তথ্যও পাওয়া যায়। সেই প্রাচীন যুগের খননকৃত অনেক নিদর্শনে পাথরের জিনিসের সাথে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

জার্মানির বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল মার্ক্সও সোনাকে মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম ধাতু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে বর্তমান সময়ে স্বর্ণ মূলত গয়না বা অলংকার তৈরির কাজে ব্যবহৃত হলেও পূর্বে বিনিময় মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করা হতো স্বর্ণ। এইতো, আমাদের সেদিনকার ইতিহাস ঘেটে রাজারাজদের গল্প পড়লেই সেসব তথ্য পাওয়া যাবে।

স্বর্ণ উত্তোলনের কথা...
যখন থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হতে শিখেছে এবং ধীরে ধীরে সামাজিক শ্রেণীবিভাগের সূচনা হয়েছে তখন থেকেই মানুষ খনি থেকে সোনা উত্তোলন করতে শুরু করে। তখন থেকেই অলঙ্কার তৈরীতে সোনা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

আদিকালে সোনা বিশুদ্ধিকরণের পদ্ধতিগুলো মানুষের তেমন জানা ছিল না। এ কারণে তখন মূলত সোনা-রুপার সঙ্কর ধাতু তৈরি করা হতো যা অ্যাজেম নামে পরিচিত ছিল। এছাড়া সোনা-রুপার আরেকটি প্রাকৃতিক সঙ্কর ধাতু বিদ্যমান ছিল যার নাম ইলেকট্রুম।

স্বর্ণ নিয়ে হয়েছে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ
সোনার সাথে পৃথিবীর অনেক বেদনা বিধুর ও ভয়ংকর কাহিনী জড়িত। সোনা অধিকারের লক্ষ্যে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে অগণিত মানুষ। আবার সোনার মালিক হয়েও কেউ শান্তি পায়নি। কারণ পাওয়ার পরই এসে যেতো সোনা হারানোর ভয়।

স্বর্ণ উত্তোলনের শুরুর দিকে তাই স্বর্ণখনিগুলোতে ঘিরে হত্যা, মারামারির ঘটনা ছিলো নিত্যদিনের। তবে দুঃখের বিষয় হলো যারা স্বর্ণের খনিতে মজুর হিসেবে কাজ করতেন তারা কিন্তু স্বর্ণের সুখ কিঞ্চিতও পান নি। তারা থেকে গেছেন অবহেলিত, সুখ কিনেছেন খনি মালিকরা।

ঐতিহাসিক কিছু স্বর্ণ অভিযান
মিশরীয় সম্রাটদের দ্বারা নির্মিত পিরামিডগুলো খনন করে প্রচুর স্বর্ণের অলঙ্কার ও জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। অনেককাল ধরেই মিশরীয়রা স্বর্ণ নিয়ে গবেষণা করেছে।

চতুর্থ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত কিমিয়াবিদরা স্বর্ণ অনুসন্ধানের আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পরশ পাথর অনুসন্ধান। তাদের বিশ্বাস মতে, পরশ পাথরের মাধ্যমে ক্ষার ধাতুকে স্বর্ণে রুপান্তরিত করা সম্ভব। কিমিয়াবিদদের এই ধারণার পিছনে আরও কারণ ছিল।

তামার খনিতে অনেকদিন লোহা পড়ে থাকলে তার উপর তামার আস্তরণ পড়তো। কিমিয়াবিদরা মনে করেছিল লোহা তামায় রুপান্তরিত হয়েছে। এ থেকে তারা এ ধারণাও করেছিল যে অন্য ধাতুকেও এভাবে স্বর্ণে পরিণত করা সম্ভব। তারা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

তবে এই কাজে সর্বোচ্চ উন্নতি করতে পেরেছিল মিশরীয়রা। তারা স্বর্ণ নিষ্কাষণের গুপ্তবিদ্যা জানতো। মিশরীয় ঐতিহ্যের সাথে স্বর্ণের সম্পর্ক সুগভীর।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের চোখে ‘আ ত্ম হ ন ন’

পৃথিবীতে স্বর্ণ এলো কোথা থেকে?
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে মহাকাশে অনবরত বৃষ্টির মতো স্বর্ণের কণা ঝরছে। পৃথিবীর সব স্বর্ণে ও এ ধরনের প্রাচীন মহাজাগতিক সোনাবৃষ্টি থেকেই পাওয়া। দুটি নিউট্রন তারার সংঘর্ষ বা কৃষ্ণগহ্বরের সঙ্গে নিউট্রন তারার একত্রীকরণে যে বিস্ফোরণ হয়, তাকে বলে কিলানোভা।

এই কিলানোভার মাধ্যমে মহাকাশে অনবরত স্বর্ণ ও প্লাটিনামের মতো ভারী ধাতু সৃষ্টি হচ্ছে বলে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা যায়। এসব ধাতু বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে মহাকাশে। পৃথিবীতে যত স্বর্ণ ও প্লাটিনাম রয়েছে, তা প্রাচীন একটি নিউট্রন তারার সংঘর্ষ থেকে পাওয়া।

কোন দেশে সোনার দাম সবচেয়ে কম?
২০২০ সালের শেষে সোনার দামের উপর ভিত্তি করে sovereignman-এর প্রকাশিত এক তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত অভিহিত মূল্যের মূল্য অনুসারে হংকং হতে পারে স্বর্ণ কেনার জন্য সবচেয়ে সস্তা দেশ।

হংকং-এ সহজেই অন্যান্য দেশের তুলনায় কম প্রিমিয়ামে স্বর্ণ কেনা সম্ভব। তবে হংকং ছাড়াও সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ কেন এসব দেশ থেকেও সস্তায় স্বর্ণ কিনে নিয়ে আসেন।

এসব দেশের মধ্যে আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত দেশগুলো অন্যতম। এসব দেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ বাংলাদেশি প্রবাসীরা স্বর্ণের অলংকার, স্বর্ণ নিয়ে আসেন।

গত ৮ মাসে ৩৬৪ শিক্ষার্থীর ‘আ ত্ম হ ত্যা’!

কোন সোনা ভালো?
স্বর্ণের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ধরণ। বাজারে অনেক রঙের, বর্ণের স্বর্ণ পাওয়া যায়। এরমধ্যে কোন সোনাটি ভালো?

24k গোল্ড হল অন্যান্য ধাতুর চিহ্ন ছাড়াই সমস্ত অংশ সোনা। এই কারণে, এটি একটি অনন্য সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল হলুদ আভা আছে। এই বিশুদ্ধতা এবং বিরল রঙ 24k সোনাকে অত্যন্ত আকাঙ্খিত করে তোলে, সবচেয়ে ব্যয়বহুল, এবং প্রায়শই সূক্ষ্ম গয়নাতে ব্যবহৃত হয়।

কোনো একটি সংকরে যদি ১৪ ভাগ সোনা এবং ১০ ভাগ খাদ মেশানো হয় তাহলে প্রাপ্ত সোনাকে বলে ১৪-ক্যারেট সোনা, ১৮ ভাগ সোনা ও ৬ ভাগ খাদ থাকলে বলা হয় ১৮-ক্যারেট সোনা... এরকম।

এটাকে অনেকসময় ভগ্নাংশের অনুপাত আকারেও প্রকাশ করা হয় যেমন, ১৪/২৪ সমান ০.৫৮৫ (রাউণ্ড অফ) এবং ১৮/২৪ সমান ০.৭৫০। সোনার এরকম হাজারো সংকর সম্ভব, কিন্তু সাধারণত সোনার সাথে রূপা মেশালে সবুজাভ রঙ ধারণ করে, এবং তামা মেশালে লালচে। খাদ হিসাবে ৫০/৫০ তামা ও রূপার সংকর ব্যবহার করলে বাজারে আমরা সাধারণত যে হলদে সোনালি স্বর্ণ দেখি সেটা পাওয়া যায়।

দেশের বাজারে সোনার বর্তমান দাম কতো?
দেশের বাজারে এর আগে স্বর্ণের দাম এতো উচ্চতায় পৌঁছায়নি। রীতিমত রেকর্ড করলো বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের নির্ধারিত দাম। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ভরিতে দাম বেড়েছে ১ হাজার ২৮৩ টাকা। ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকায় উঠেছে।

অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও প্রায় একই হারে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

গতকাল শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি - বাজুস। ফলে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম নির্ধারিত হয়েছে ভরিতে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা। আজ রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) থেকে এই নতুন দর কার্য‌কর হবে বলি জানিয়েছে বাজুস।

এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৬ আগস্ট স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় উঠেছিল। এতোদিন দেশের বাজারে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ দর।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-


দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News

যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News

চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems

পায়খানা ও প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখলে যে ক্ষতি হয়??

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়