ধর্ম
কোন স্ত্রীর ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন নবী মুহাম্মদ?
বলা হয় মৃত্যুর সময় নবী করিম (সা.) আয়েশা (রা.)-এর ঘরে ছিলেন
মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞাসা করতেন, আমি আগামীকাল কার ঘরে থাকব। আগামীকাল কার ঘরে? এর দ্বারা তিনি আয়েশা (রা.)-এর ঘরের পালার ইচ্ছা পোষণ করতেন। সহধর্মিণীরা নবী (সা.)-কে যার ঘরে ইচ্ছা অবস্থান করার অনুমতি দিলেন। তখন নবী করিম (সা.) আয়েশা (রা.)-এর ঘরে ছিলেন।
এমনকি তাঁর ঘরেই তিনি ইন্তেকাল করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) আমার জন্য নির্ধারিত পালার দিন আমার ঘরে ইন্তেকাল করেন এবং আল্লাহ তাঁর রুহ কবজ করেন এ অবস্থায় যে তাঁর মাথা আমার গণ্ড ও সিনার মধ্যে ছিল এবং আমার থুথু (তাঁর থুথুর সঙ্গে) মিশ্রিত হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, নবী (সা.) আমার ঘরে আমার পালার দিনে এবং আমার গণ্ড ও সিনার মধ্যস্থলে থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। নবী (সা.) অসুস্থ হলে আমাদের মধ্যকার কেউ দোয়া পড়ে তাঁকে ঝাড়ফুঁক করতেন। আমি নবী (সা.)-কে ঝাড়ফুঁক করার জন্য তাঁর কাছে গেলাম।
তখন তিনি তাঁর মাথা আকাশের দিকে উঠিয়ে বললেন, সুমহান বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই), সুমহান বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। এ সময় আবদুর রহমান ইবনে আবি বকর (রা.) আগমন করলেন। তাঁর হাতে মিসওয়াকের একটি তাজা ডাল ছিল। নবী (সা.) তখন সেদিকে তাকালেন। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে তাঁর মিসওয়াকের প্রয়োজন। তখন আমি সেটি নিয়ে চিবালাম, ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার করলাম এবং নবী (সা.)-কে তা দিলাম।
তিনি এর দ্বারা এত সুন্দরভাবে দাঁত পরিষ্কার করলেন যে এর আগে কখনো এরূপ করেননি। তারপর তা আমাকে দিলেন। এরপর তাঁর হাত ঢলে পড়ল আল্লাহ তাআলা আমার থুথুকে নবী (সা.)-এর থুথুর সঙ্গে মিলিয়ে দিলেন। তাঁর এই দুনিয়ার শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে।
আয়েশা (রা.) প্রায়ই বলতেন, আমার প্রতি আল্লাহর এটা নিয়ামত যে আমার ঘরে, আমার পালার দিনে এবং আমার গণ্ড ও সিনার মধ্যে রাসুলুল্লাহর (সা.)-এর ইন্তেকাল হয়। ...তাঁর সম্মুখে পাত্র অথবা পেয়ালা ছিল, তাতে পানি ছিল। নবী (সা.) নিজের দুই হাত পানির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে তার দ্বারা তাঁর চেহারা মুছতে লাগলেন।
তিনি বলছিলেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, সত্যিই মৃত্যুযন্ত্রণা কঠিন। তারপর দুই হাত ওপরের দিকে উঠিয়ে বলছিলেন, আমি সুমহান বন্ধুর সঙ্গে (মিলিত হতে চাই)। এ অবস্থায় তাঁর ইন্তেকাল হলো আর হাত শিথিল হয়ে গেল।
তিনি আরো বলেন, আবু বকর (রা.) ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়ে তার সুনহের বাড়ি থেকে আগমন করেন। ঘোড়া থেকে অবতরণ করে তিনি মসজিদে নববীতে প্রবেশ করেন, কিন্তু কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলে ‘আয়েশা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ইয়েমেনি চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। তখন তিনি চেহারা থেকে কাপড় হটিয়ে তাঁর ওপর ঝুঁকে পড়লেন এবং তাঁকে চুমু দিলেন ও কেঁদে ফেললেন।
তারপর বললেন, আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কোরবান হোক! আল্লাহর কসম! আল্লাহ তো আপনাকে দুবার মৃত্যু দেবেন না, যে মৃত্যু ছিল আপনার জন্য নির্ধারিত সে মৃত্যু আপনি গ্রহণ করে নিলেন।
সূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৪৫০-৪৪৫৩
নবী মুহাম্মদকে বিষযুক্ত খাবার দিয়ে হত্যাচেষ্টা
শোনা যায়, একের পর এক ইহুদী গোত্র ভিটেমাটি ছাড়া করা এবং কয়েকটি ইহুদী গোত্রের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালাবার কারণে ইহুদী গোত্রসমূহ নবী মুহাম্মদের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত ছিল। বিশেষ করে বনূ কুরাইযা গোত্রের ৬০০-৯০০ পুরুষকে একদিনে হত্যা করায় তারা ব্যাথিত ছিল, তারা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছিল। কিন্তু সংখ্যা এবং শক্তিতে কম হওয়ায় তারা কিছুই করতে পারছিল না।
খায়বারে আক্রমণের সময় নবী মুহাম্মদ যয়নব বিনতে হারিস নামক এক ইহুদী নারীর বাসায় খাবার খেয়েছিলেন। সেখানে তাদেরকে বিষযুক্ত ভেড়ার মাংশ খেতে দেয়া হয়। মাংশের সামান্য অংশ নবী মুহাম্মদও মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু একজন সাহাবীর মৃত্যুতে তিনি মুখে থাকা খাবারের অংশ ফেলে দেন এবং ইহুদী নারীকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি খাবারে বিষ মিশিয়েছেন কিনা।
ইহুদী নারীটি উত্তর দেয়, আপনি যদি সত্যি নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি যা করেছি তাতে এই বিষে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি কেবল আক্রমণকারী হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিলাম।
এ বিষয়ক তথ্যসমূহ উল্লেখ করছি, তার আগে কোরআনের একটি আয়াত পড়ে নেয়া দরকার। মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেন, এটা (কোরআন) বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ, সে (মুহাম্মদ) যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা/প্রধান ধমনী। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।
নবীর শরীরে বিষের লক্ষণ
নবী মুহাম্মদ যে বিষ খানিকটা মুখে দিয়ে ফেলেছিলেন, সেটি যে তার শরীরে প্রবেশ করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় আরেকটি সহিহ হাদিসে। তার শরীরে পরিষ্কার বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছিল। একজন প্রখ্যাত সাহাবীর সহিহ হাদিস অনুসারে, তিনি নবীর আলজিহবা এবং তালুতে এরপর থেকে বিষের ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করতেন।
সহীহ মুসলিম শরীফের অধ্যায়ঃ ৪০/ পরিচ্ছেদঃ ১৮তে বর্ণিত আছেচ ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ইয়াহুদী মহিলারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে বিষ মেশানো বকরীর গোশত নিয়ে এল। তিনি তা থেকে (কিছু) খেলেন। পরে তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হল।
তিনি তাকে এ বিষয় জিজ্ঞেস করলে সে বলল, আমি আপনাকে মেরে ফেলার ইচ্ছা করেছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ এ ব্যাপারে তোমাকে কিংবা তিনি বললেনঃ আমার উপরে ক্ষমতা দিবেন এমন নয়। তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি তাকে কতল করে ফেলব?
তিনি বললেন, না। রাবী বলেন, এরপর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আলজিভ ও তালুতে (তার ক্রিয়া) আমি প্রত্যক্ষ করতাম।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
- পোশাক নয়, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ