হেলাল আহমেদ
ইলা মিত্রের জবানবন্দি
ইলা মিত্রের জবানবন্দী
রাজশাহীর আদালতে বন্দি অবস্থায় তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র ইংরেজিতে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তা পরবর্তীতে বাংলা রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণভাবে ঠাই পায়। আলোচিত হয়ে ওঠে ইলা মিত্রের জবানবন্দি। তার সে জবানবন্দিতে ফুটে ওঠেছিলো কারাগারে তাঁর সাথে হওয়া অমানবিক নির্যাতন আর অত্যাচারের নির্মম দৃশ্য।
ইলা মিত্রের সেই বহুল আলোচিত জবানবন্দির বাংলা অনুবাদ আইনিউজের পাঠকদের জন্য তোলে ধরা হলো-
আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পর্কে আমার বক্তব্য হচ্ছে, আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ এবং আমি এই মামলার ব্যাপারে কিছুই জানি না। গত ৭ অক্টোবর ১৯৫০ তারিখে আমাকে বোরহানপুরে গ্রেফতার করা হয় এবং পরদিন আমাকে নাঁচল থানা হেড কোয়ার্টারে পাঠানো হয়। কিন্তু পাহারাদার পুলিশরা আমার ওপর অত্যাচার করে। নাঁচল পুলিশ আমাকে একটা সেলের মধ্যে রাখে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে এ মর্মে ভীতি প্রদর্শন করে যে, হত্যাকান্ড সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ স্বীকারোক্তি না করলে ওরা আমাকে উলঙ্গ করবে। জবাবে বললাম, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। এটুকু বলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ আমার পরনের সমস্ত কাপড় খুলে নিল এবং আমাকে সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় থানার হাজতে আটকে রাখল!
আমাকে কোন খাবার দেয়া হয়নি, এমনকি এক ফোঁটা পানি পর্যন্তও না। একদিন সন্ধ্যায় স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য সিপাহীরা এসে বন্দুকের কুঁদা দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে শুরু করে এবং পুলিশের সেই দারোগার সামনে আমার নাক দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। এরপর ওরা আমার পরনের কাপড় ফেরত দেয়। রাত প্রায় ১২ টার দিকে আমাকে সেল (হাজত) থেকে বের করা হয় এবং আমাকে সম্ভবত পুলিশের দারোগার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। অবশ্য এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।
আমাকে যে কামরায় নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আমার স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য ওরা নৃশংস ধরনের পন্থা অবলম্বন করে। আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে ওরা আমার পা দু’টাকে লাঠির মধ্যে রেখে ক্রমাগতভাবে চাপ দিতে শুরু করে। ওদের ভাষায় আমার বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তানী ইনজেকমন’ পন্থায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল। এই ধরনের অত্যাচার চলার সময় ওরা রুমাল দিয়ে আমার মুখ বেঁধে রেখেছিল এবং আমার চুল ধরেও টান দিচ্ছিল। কিন্তু আমাকে দিয়ে জোরপূর্বক কিছুই বলাতে সক্ষম হয়নি।
এতসব অত্যাচারের দরুণ আমার পক্ষে আর হেঁটে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় ওরা আমাকে ধরাধরি করে সেলে নিয়ে গেল। এবার পুলিশের সেই দারোগা সিপাহীদের ৪টা গরম ডিম আনার নির্দেশ দিয়ে বলল যে, এবার মেয়েটাকে কথা বলতেই হবে। এবার শুরু হলো নতুন ধরনের অত্যাচার। ৪-৫ জন সিপাহী মিলে জোর করে আমাকে চিৎ করে শুতে বাধ্য করল এবং তাদের একজন আমার গোপন অঙ্গ দিয়ে একটা গরম ডিম ভিতরে ঢুকিয়ে দিল। সে এক ভয়াবহ জ্বালা। প্রতি মুহূর্তে অনুভব করলাম, আমার দেহের ভিতরটা আগুন দিয়ে পুড়ে যাচ্ছিল। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।
১৯৫০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সকালে জ্ঞান ফিরে এলো। একটু পরে জনাকয়েক পুলিশ সঙ্গে করে আমার আবার সেই দারোগার আগমন হলো। সেলে ঢুকেই সে আমার তলপেটে বুট দিয়ে প্রচন্ড জোরে লাথি মারল। আমি দারুণ ব্যথায় কুঁকড়ে গেলাম। এরপর ওরা জোর করে আমার ডান পায়ের গোড়ালিতে একটা লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দিল। আমি তখন অর্ধ-চৈতন্য অবস্থা মেঝেতে পড়ে রয়েছি। কোনরকম স্বীকারোক্তি না পেয়ে দারোগা তখন রাগে অগ্নিশর্মা। যাওয়ার আগে বলে গেল, “আমরা আবার রাতে আসব। তখন তুমি স্বীকারোক্তি না দিলে একের পর এক সিপাহী তোমাকে ধ র্ষ ণ করবে।”
গভীর রাতে ঐ দারোগা আর সিপাহীরা আবার এলো এবং আমাকে হুমকি দিল স্বীকারোক্তি দেয়ার জন্য। কিন্তু আমি তখনও কিছু বলতে অস্বীকার করলাম। এবার ৩/৪ জন মিলে আমাকে মেঝেতে ফেলে ধরে রাখল এবং একজন সিপাহী আমাকে রীতিমতো ধ র্ষ ণ করতে শুরু করল। আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললাম।’
পরদিন ১০ নভেম্বর ১৯৫০ তারিখে যখন আমার জ্ঞান ফিরে এলো তখন দারুণভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং আমার কাপড়-চোপড় ছিল রক্তে ভেজা। এই অবস্থাতেই আমাকে নাঁচল থেকে মহকুমা সদর চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হলো। এখানে জেলের সিপাহীরা জেল গেটেই আমাকে কিল-ঘুষি মেরে অভ্যর্থনা জানালো।
আমার শারীরিক অবস্থা তখন খুবই শোচনীয়। কোর্ট ইন্সপেক্টর এবং জনা কয়েক সিপাহী মিলে আমাকে ধরাধরি করে একটা সেলে নিয়ে এলো। তখনও আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল এবং শরীরে প্রচন্ড জ্বর। সম্ভবত সরকারী হাসপাতালের একজন ডাক্তার আমার দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে ১০৫ ডিগ্রী নোট করলেন। তখন ডাক্তার জানতে পারলেন যে, আমার দারুণভাবে রক্তক্ষরণ হয়েছে, তখন তিনি আমাকে এ মর্মে আশ্বাস দিলেন যে, শুশ্রুভার জন্য একজন মহিলা নার্স পাঠানো হবে। তিনি কিছু ওষুধ দেয়া ছাড়াও দুটো কম্বলের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- ২০ হাজার গানের জনক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও তার কীর্তি
- প্রেম-ভালোবাসার ১০ উপকারিতা : শ্রেষ্ঠ কিছু প্রেমের গল্প
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News
যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News
চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems
পায়খানা ও প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখলে যে ক্ষতি হয়??
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ