লাবণ্য চৌধুরী
বড়পীর আবদুল কাদির জিলানী | Eyenews
প্রতিকৃতিতে বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (র.)
বড়পীর হজরত আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) ইসলাম ধর্মে একজন প্রভাবশালী সুফি সাধক। এই মহান আত্মজ্ঞানী ওফাতের (প্রয়াণের) দিনটি মুসলিম সুফিগণের কাছে ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ নামে পরিচিত। ‘ফাতেহা’ বলতে দোয়া অনুষ্ঠানকে বোঝানো হয়। মারেফাতের এই আউলিয়া ভারতবর্ষ তথা এশিয়ার মুসলিম সুফি সাধকসহ সকল ধর্মাবলম্বীর মানুষের পরমপূজ্য।
আজ সোমবার (৭ নভেম্বর) ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ অর্থাৎ বড়পীর আবদুল কাদের জিলানি (র.) এর প্রয়াণ দিবস। ‘ইয়াজদাহম’ ফারসি শব্দ, এর অর্থ এগারো। আর ‘ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম’ বলতে রবিউস সানি মাসের এগারোতম দিনকে বোঝানো হয়; যেদিন বড়পীর আবদুল কাদির জিলানি (রহ.) মৃত্যুবরণ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে আজ বাদ জোহর ১টা ৩০ মিনিটে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে হজরত আবদুল কাদির জিলানি (রহ.)-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন রাজধানীর গাউসুল আজম জামে মসজিদের খতিব হযরত মাওলানা আবদুর রাজ্জাক আল আযহারী।
ওলিকুল শিরোমণি ১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৪৭০ হিজরি সালের ১ রমজান ইরাকের বাগদাদের প্রায় ৪০০ মাইল অদূরে জিলান নগরের সুবিখ্যাত সাইয়্যেদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হজরত সাইয়্যেদ আবু সালেহ মুসা। মাতার নাম উম্মুল খায়ের ফাতেমা।
বড়পীর জিলানির বাবার বংশ হজরত ইমাম হাসান (রা.) এর সঙ্গে এবং মায়ের বংশ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এর সঙ্গে মিলিত বলে তাকে ‘আল-হাসানি ওয়া আল-হোসাইনি’ বলা হয়।
পিতৃকুল-মাতৃকুল উভয় দিক থেকেই হজরত আলী (রা.) এর বংশধর অর্থাৎ মহানবী (সা.) এর বংশধর। ইসলামকে নতুন জীবন দেয়ার জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে হজরত মুহিউদ্দিন আবদুল কাদের (র.) নামে পরিচিতি লাভ করেন। জিলান শহরের অধিবাসী বিধায় তার নামের শেষে ‘জিলানী’ উপাধি সংযুক্ত করা হয়েছে।
শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের অধিকারী। কৈশোরের একটি সত্যবাদিতার বাস্তব ঘটনা তার অসাধারণতার প্রমাণ দেয়।
আবদুল কাদের জিলানি এবং ডাকাতদল
একদা তার মা লেখাপড়ার জন্য বিদেশ গমনের সব ব্যবস্থা করে ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা গোপনে সংরক্ষণ করে দিয়ে বললেন, ‘বাবা আবদুল কাদের, বিপদ যতই কঠিন হোক না কেন, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখবে। সদা সত্য কথা বলবে, কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।’ তিনি বাগদাদের উদ্দেশে বণিক কাফেলার সঙ্গে পথ চললেন।
একপর্যায়ে বণিক কাফেলা ডাকাত দলের কবলে পড়লে সব মালপত্র লুণ্ঠিত হয়। ডাকাত দল যাত্রীদের সব অর্থকড়ি কেড়ে নিয়ে বালক হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র.) এর কাছে এসে বলল, ‘এই ছেলে! তোমার কাছে কী আছে?’ বালক উত্তর দিল, ‘আমার জামার আস্তিনের ভেতর ৪০টি স্বর্ণমুদ্রা আছে।’ বালক অত্যন্ত শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে ডাকাতদের বলল, ‘আমার আম্মা আমাকে বিদায়কালে উপদেশ দিয়ে বলেছেন, ‘বাবা, কখনো মিথ্যা কথা বলবে না, সদা সত্য কথা বলবে।’ তাই আমি আপনাদের কাছে সত্য কথা বলে দিয়েছি। আমার মাতৃ-আজ্ঞা পালন করেছি।’
বালকের মুখে এমন জবাব শুনে ডাকাত-সর্দার দারুণ ভয় পেল। এক অদৃশ্য মহাসত্তার ভয়ে তার অন্তর কেঁপে উঠল। ডাকাত-সর্দার বালকের পায়ে লুটিয়ে পড়ল, অনুনয়-বিনয় করে ক্ষমা চাইল। ডাকাত-সর্দার তার সত্যবাদিতার পরিচয় পেয়ে যাত্রীদের প্রত্যেকের অর্থকড়ি ও মালামাল ফিরিয়ে দেয় এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মুসলমান হয়ে যায়।
আল্লাহর বাণী ও মিষ্টভাষী বক্তৃতা দিয়ে বড় পীর কোটি কোটি মানুষকে ইসলামের পথে ফিরিয়ে আনেন এবং সমকালীন বিশ্বে আউলিয়া কিরামের ওপর সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করেন। সারা বিশ্বের মধ্যে তার ভক্ত ও মুরিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে খ্যাতি ছিল। আল্লাহ তাকে সব ওলির চেয়ে অধিক কারামতি দান করেছিলেন। ফলে তিনি আল্লাহর দ্বীনকে দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।
ইসলামের চির আলোকময় পথে ডাকার জন্য তিনি অনেক ওয়াজ-নসিহতও করেছেন; যাতে ছিল বিস্ময়কর প্রভাব। তার প্রতিটি কথা মানুষের হৃদয়ে দারুণভাবে গেঁথে যেত, তাদের পরকালের চিন্তায় বিভোর করে তুলত।
সারা জীবন পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়ে আল্লাহ প্রেমিক মহান সাধক, ওলিকুল শিরোমণি ১১৬৮ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৫৬১ হিজরির ১১ রবিউস সানি ৯১ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
আবদুল কাদের জিলানির অলৌকিক ঘটনা
হযরত আবু হ্যফস ইবনে উমর (রঃ) বড়পীর আবদুল কাদের জিলানির সময়ের একজন ধার্মিক ব্যক্তি। তিনি একদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমি প্রায় সব দিনই হযরত বড় পীর সাহেবের ওয়াজ মজলিলে যোগদান করিতাম এবং হিথায় প্রায় প্রত্যহই বিশেষ আশ্চর্য ঘটনা দেখিতে পাইতাম।
আমি দেখিতাম যে হযরত বড় পীর সাহেব তাঁহার ওয়াজের মিম্বরে উপবেশন করিলে আসমান হইতে একটা বেলাওয়ারের ফানুস কমে নিচের দিকে নামিয়া আসিত এবং সেই ফানুস হইতে উজ্জ্বল জ্যোতি বিকশিত হইয়া
হজরত বড় পীর সাহেবের পত্রির চেহারা আলােকিত করিয়া দিত। একদিন আমি এই ঘটনার কথা সভায় উপস্থিত সকলকে জানাইর মনে করিয়া উঠিয়া দণ্ডায়মান হইলাম। হযরত বড় পীর সাহেব বােধ হয় তখনই বুঝিতে পারিলেন যে, আমি কি বলিতে দাঁড়াইয়াছি, তাই তিনি হাতের ইশারায় আমাকে বসিয়া থাকিতে আদেশ করিলেন আমি অত্যন্ত তত হইয়া বসিয়া পড়িলাম।
৪০ বছর এশার ওজু দিয়ে ফজর পর্যন্ত নামাজ পড়েছেন জিলানি!
শোনা যায় বড়পীর একবার নিজের ওয়াদার ব্যাপারে নসিয়ত করতে গিয়ে এরশাদ করেন- আমি চল্লিশ বছর পর্যন্ত ফজরের নামাজ, এশার অজু দ্বারা পড়তে থাকি। পনেরো বছর পর্যন্ত এশার নামাজ আদায় করার পর কোরআন মজীদ তেলাওয়াত করতে থাকি এইভাবে যে, এক পায়ের ওপর দাঁড়াতাম এবং এক হস্ত দ্বারা দেয়ালের খুঁটি ধরে কোরআন তেলাওয়াত শুরু করতাম এবং সকাল পর্যন্ত খতম করতাম।
তিন থেকে চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে যেতো, পানাহার বিশ্রাম এবং ঘুম হতে বঞ্চিত থাকতাম। এগারো বছর পর্যন্ত বুর্জে বাগদাদ আমার অবস্থান কেন্দ্র হওয়ায় তাকে বুর্জে আজমী বলা হতো। সেখানে আমি আল্লাহর স্মরণে আত্মনিয়োগ করি।
এসময়, আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিলাম যে, যতক্ষণ পর্যন্ত গায়েব হতে খাবার আসবে না, আমি কিছুতেই কোনো বস্তু আহার করবো না। এ অবস্থায় অনেক দিন অতিবাহিত হয়ে যেতো এবং আমি অঙ্গীকার রক্ষায় স্থির থাকতাম। আমার দাবি, আমি আজ পর্যন্ত আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করিনি।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
- ‘গাছ হেংলানেছে- পয়সা মিলেগা’ : চা শ্রমিক ও চা শিল্প
- পোশাক নয়, নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ জরুরি
বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ