শ্যামলাল গোঁসাই
যেকারণে পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছিলেন হযরত উসমান (রা.)
ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এর আগে সুইডেনে উগ্র ডানপন্থীদের হাতে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এপ্রিলেও রমজানে পালুদানের কোরআন শরীফ পোড়ানোর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।
যতোবারই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে গোটা মুসলিম বিশ্ব এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে যেকোনো ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ পোড়ানোর বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানিয়েছে।
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরআন পোড়ানোর এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে রাজনীতি। মূলত ন্যাটোতে সুইডেনের যুক্ত হওয়া এবং একে কেন্দ্র করে তুরস্ক-সুইডেনে দ্বন্দ্বের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছে। এতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।
পবিত্র কোরআন পোড়ানো সুইডিশ পুলিশ পালুদান
তবে অতীতেও একাধিকবার ইসলাম ধর্মের এই পবিত্র গ্রন্থটি মুসলিমদের হাতেই পোড়ানোর নজির আছে! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি সত্যি। তবে সেসময় ইসলাম ধর্মের প্রয়োজনের পোড়ানো হয়েছিলো আল কোরআন। আইনিউজের আজকের পাঠকদের জানাবো মুসলমানদের কোরআন পোড়ানোর কিছু আদি ইতিহাস।
হযরত উসমান (রা.) কে অনেকেই পবিত্র কোরআন শরীফের সংকলক মনে করেন। আবার আরেক পক্ষের দাবি উসমান নয় হযরত আবু বকর (রা.) কোরআনের প্রথম সংকলক। হযরত আবু বকর (রা.) এর শাসনকাল পর্যন্ত কোরআন শরীফ নিয়ে কোনো রকমের সমস্যা দেখা যায়নি। কোরআন শরীফ নিয়ে নবী মুহাম্মদের মৃত্যুর পর প্রথম সমস্যা দেখা দেয় হযরত উসমান (রা.) এর শাসনকালে। এসময় কোরআন শরীফের নানা কপি গড়ে ওঠে রাতারাতি। যাদের মধ্যে কিছু ছিলো আসল কোরআনের কপি আবার কিছু ছিলো নকল বানানো আয়াত।
এই সমস্যাটি তৎকালীন আরব সমাজের প্রকট আকার ধারণ করেছিলো। এর কারণ ছিলো পূর্বে কোরআন শরীফের কোনো ভালো কপি সংগ্রহ করে রাখা ছিলো না। ফলে ভুলশুদ্ধ মিলিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলো কোরআন। এই সময় উসমান (রা.) করণীয় নির্ধারণে তিনি মুহাজির ও আনসারী সাহাবীগণকে একত্রিত করে বৈঠকে বসেন।
তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে দেয়া যায় না, মুমিনদের অন্তরে কোন প্রকার সন্দেহ-সংশয় যেন প্রবেশ না করতে পারে। তাঁরা হাফসা (রা.)-এর কাছে রক্ষিত সাহীফাগুলো হতে অনুলিপি প্রস্তুত করে কুরআনের বিশুদ্ধ কপি ইসলামী খিলাফাতের নানা স্থানে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
উসমান (রা.) চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করলেন, যার সদস্যরা ছিলেন: যায়িদ ইবনু সাবিত (রা.), 'আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রা.), সা'ঈদ ইবনুল আস (রা.) ও ‘আবদুর রহমান ইবনুল হারিস ইবনি হিশাম (রা.)। তাদেরকে আবূ বাকর (রা.)-এর সাহীফাগুলোর আলোকে কুরআনের অনুলিপি প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলেন।
‘উসমান (রা.)-এর আমলে সংকলিত আল কুরআনে আয়াত বা সূরার ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে কোনরূপ পরিবর্তন আনা হয়নি। আবূ বাকর (রা.)-এর সংকলনে যে ধারাবাহিকতা ছিল সেটিই হুবহু বহাল ছিল উসমান (রা.)-এর সংকলনে। তাছাড়া কোন শব্দে কোনরূপ পরিবর্তন আনা হয়নি, সেটি সম্ভবও ছিল না।
পবিত্র কোরআন
গ্রন্থাকারে কুরআনের অনুলিপি তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে ‘উসমান (রা.) মূল কপির পৃষ্ঠাগুলো হাফসা (রা.)-এর কাছে ফেরত পাঠালেন এবং অনুলিপিকৃত কুরআনের এক একটি কপি দূরবর্তী অঞ্চলগুলোতে প্রেরণ করলেন। এই কপিগুলোতে হারাকাত বা স্বরচিহ্ন এবং নুক্তা ছিল না।
ফলে কুরআনের শব্দগুলো বিভিন্নভাবে তিলাওয়াত করার সুযোগ ছিল। এ কারণে উসমান (রা.) কুরআনের অনুলিপি প্রেরণের পাশাপাশি কারীও প্রেরণ করেন, যাতে তারা জনগণকে একই পদ্ধতির কিরাআতের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।
হযরত উসমান (রা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে কুরআনের বিশুদ্ধতম ও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি তৈরি করার পর ব্যক্তিগত কপিগুলো বহাল রাখার উপায় ছিল না। কারণ এতে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ ছিল। প্রয়োজনে স্টান্ডার্ড কপি হতে অনুলিপি করার সুযোগ ছিল।
তাই ‘উসমান (রা.) নির্দেশ দিলেন মাদীনা হতে প্রেরিত মুসহাফ ব্যতীত কুরআনের অন্যান্য কপিগুলো যেন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনো কোনো ইসলামি গবেষক বলেন যে, কুরআনের কপিগুলো জ্বালিয়ে দেওয়ার পূর্বে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা হয়েছিল। আর এটিই ছিলো রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে মুসলমানদের হাতে পইত্র গ্রন্থ আল কোরআন পোড়ানোর প্রথম ঘটনা।
আই নিউজ/এইচএ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
৭১ বছরের এক তরুণ, যার কাছে দৌড়ে যুবকেরাও হার মানে
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ