সাইফুর রহমান তুহিন
আপডেট: ১১:১৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
ঢাকার মাঠ মাতানো বিদেশি ফুটবলাররা
বাংলাদেশের ফুটবলে খেলা সাবেক বিদেশী খেলোয়াড়দের একাংশ। ছবি- সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ নামে আমাদের একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট তৎকালীন সময়ে ছিলো দারুণ জনপ্রিয়। এশিয়ার শীর্ষ সারির ফুটবল খেলুড়ে দেশের জাতীয় দল কিংবা শীর্ষ ক্লাব দলের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বেশ কয়েকবার খেলেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব দলও। বাংলাদেশের দুটি দল (লাল ও সবুজ কিংবা নীল ও সাদা) অংশ নিতো এই টুর্নামেন্টে।
পাকির আলী ও প্রেমলালকে দিয়েই শুরু করা যাক। প্রথমজন আশির দশকের শুরুর দিকে এবং পরের জন মাঝের দিকে খেলতে আসেন ঢাকার ফুটবলের পরাশক্তি আবাহনী ক্রীড়াচক্রে (বর্তমানে আবাহনী লিমিটেড)। নিজ দেশ শ্রীলংকা এশিয়ার ফুটবলের তলানির দিকে থাকলেও পাকির ও প্রেমলাল ঢাকায় খেলতে এসেই বুঝিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ জাতীয় দলে তারা খুব সহজেই সুযোগ পেতে পারেন।
সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রীতিমতো চীনের প্রাচীর হয়ে থাকতেন পাকির আলী, হতাশায় ডুবিয়ে দিতেন প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা ফরোয়ার্ডদের। আর ফরোয়ার্ড লাইনে প্রেমলাল গোল করতে এবং করাতে ছিলেন সমান দক্ষ। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮-৮৯ সাল পর্র্যন্ত শেখ মোহাম্মদ আসলামের সাথে প্রেমলালের জুটি ভীতিকর ছিলো যেকোনো রক্ষণভাগের জন্য। প্রেমলালের একটি অনন্য কৃতিত্ব ছিলো ১৯৮৬ সালের ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে মোহামেডানের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করা যা আর কাউকে করতে দেখা যায়নি দুই চিরপ্রতিদ্ব›দ্বীর লড়াইয়ে। তবে ১৯৮৮-৮৯ মৌৗসুমের পর আর ঢাকার মাঠ দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায়নি এই দুই লংকান তারকাকে। কারণটা একটু পরেবলা হবে।
ঢাকার ফুটবলের দুই চিরপ্রতিদ্বন্ধী আবাহনী ক্রীড়াচক্র ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যে বিদেশি ফুটবলার দিয়ে প্রথম চমক দেয় আবাহনীই। ১৯৮৬ সালের সিনিয়র ডিভিশন লিগের (তখন নামটা এমনই ছিলো) সুপার লিগে দুই সেরার লড়াইয়ের আগে আবাহনী আচমকা নিয়ে আসে কলকাতার ফুটবলের নাইজেরিয়ান তারকা চিমা ওকোরি, ভারত জাতীয় দলের গোলকিপার ভাস্কর গাঙ্গুলী এবং মিডফিল্ডার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্র্যকে। এদেরকে ছাড়াই আবাহনী ছিলো অনেক শক্তিশালী দল।
তবে লিগের প্রথম পর্বে মোহামেডানের কাছে ১-০ গোলে হারের বদলা নেওয়ার জন্যই ছিলো তাদের এই শক্তিবৃদ্ধি। কিন্তু দেশি খেলোয়াড়নির্ভর মোহামেডান সব হিসাব ভুল প্রমাণ করে ২-০ গোলের জয়ে শিরোপা জেতা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে। শেষ হয়ে যায় আরেকটি জমজমাট মৌসুম। তবে আসল চমক আসতে থাকে পরের মৌসুম থেকে।
প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ নামে আমাদের একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট তৎকালীন সময়ে ছিলো দারুণ জনপ্রিয়। এশিয়ার শীর্ষ সারির ফুটবল খেলুড়ে দেশের জাতীয় দল কিংবা শীর্ষ ক্লাব দলের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে বেশ কয়েকবার খেলেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব দলও। বাংলাদেশের দুটি দল (লাল ও সবুজ কিংবা নীল ও সাদা) অংশ নিতো এই টুর্নামেন্টে।
২০১৯ সালের শেষভাগে সবাইকে চমকে দিয়ে বসুন্ধরা কিংস নিয়ে আসে ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লিওনেল মেসির পাশে খেলা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হার্নান বার্কোসকে। রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিকে আসা বার্কোসের অভিষেক ঘটে মালদ্বীপের শক্তিশালী ক্লাব টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে (এএফসি কাপের ম্যাচ)। হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করে বার্কোস ভালো করেই বুঝিয়ে দেন তিনি কে।
১৯৮৭ সালের প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপে ভারত থেকে খেলতে আসে ইস্টবেঙ্গল ও কলকাতা মোহামেডান। দুটি দলই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিলেও কলকাতা মোহামেডানের নাইজেরিয়ান অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এমেকা ইউজিগো ছিলেন টুর্নামেন্ট সেরাদের একজন। ভালো বিদেশির সন্ধানে থাকা ঢাকা মোহামেডান তাকে দলে ভেড়াতে আদাজল খেয়ে লাগে এবং শেষ পর্যন্ত কৌশলে কলকাতা মোহামেডানের ডেরা থেকে তাকে ভাগিয়ে নিয়ে আসে।
তবে শুধু এমেকাতেই সন্তুষ্ট থাকার উপায় ছিলো না মোহামেডান ক্লাব কর্তাদের। এশিয়ান ক্লাব কাপের (বর্তমানে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগ) বাছাইপর্বে ইরাক, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের ক্লাবের সাথে লড়তে আরও গোটা দুয়েক বিদেশি দরকার ছিলো সাদাকালো শিবিরের। আর এই কাজে তাদের সহযোগী হন নতুন রিক্রুট এমেকা ইউজিগো। কলকাতা মোহামেডানে ট্রায়াল দিতে আসা ইরানি মিডফিল্ডার গোলাম রেজা নালজেগার ও ফরোয়ার্ড গোলাম রেজা বোরহানজাদেহকে এমেকার সহায়তায় দলভুক্ত করে মোহামেডান।
১৯৮৭ সালের মে মাসে ঢাকায় বসে এশিয়ান ক্লাব কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের আসর। এই টুর্নামেন্টের আয়োজক কিন্তু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ছিলো না। দেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাস রচনা করে টুর্নামেন্টটির আয়োজক হয় মোহামেডান। ইরাক জাতীয় দলের ৪/৫ জন খেলোয়াড় নিয়ে গড়া আল-রশিদ ক্লাব ছিলো টুর্নামেন্টের সেরা দল। ভারতের মোহনবাগানও ছিলো শক্তিশালী।
স্থানীয় তারকাদের সাথে তিন বিদেশি যোগ হওয়ায় মোহামেডানেরও শক্তি বেড়ে যায় অনেকখানি। নেপাল ও পাকিস্তানের ক্লাব দুটিকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেন এমেকা, নালজেগার ও বোরহানজাদেহ। জমজমাট লড়াই শেষে ২-২ গোলে ড্র হয় মোহামেডান ও মোহনবাগানের ম্যাচটি। ইরান-ইরাক যুদ্ধের কারণে ইরাকের আল-রশিদের বিপক্ষে মাঠে নামতে রাজি হননি মোহামেডানের দুই ইরানি তারকা। ফলে দলও হারে ৫-১ গোলে এবং গোল পার্থক্যে আসরে তৃতীয় স্থান পায়।
মোহামেডানের তিন বিদেশির মধ্যে এমেকা ও নালজেগার টুর্নামেন্টে দারুণ খেলেন। নালজেগারকে দিয়ে ভালো একজন প্লে-মেকারের অভাব দূর হয় মোহামেডানের। চমৎকার ড্রিবলিং ছিলো তার এক বড় শক্তি। আর এমেকার উচ্চতা ও সুঠাম শরীরের পাশাপাশি ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ছিলো নজরকাড়া।
এশিয়ান ক্লাব কাপের বাছাই পর্বে বদলে যাওয়া মোহামেডানকে দেখে নড়েচড়ে বসে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনী ক্রীড়াচক্র। আসন্ন লিগে এমেকার সাথে দুই ইরানিকে সামলানোর চিন্তা থেকেই আবাহনী পিছু নেয় চ্যাম্পিয়ন আল-রশিদ ক্লাবের বিশ্বকাপ (১৯৮৬) খেলা দুই ইরাকি সামির শাকির (মিডফিল্ডার) ও করিম মোহাম্মদের (স্ট্রাইকার) এবং ঠিকই তাদেরকে দলভুক্ত করে।
পাকির আলী ও প্রেমলালের সাথে এই দুজনের অন্তর্ভুক্তিতে শক্তি অনেক বেড়ে যায় আবাহনীর। এরপর ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরান জাতীয় দলের গোলকিপার নাসের হেজাজিকে কোচের আসনে বসায় মোহামেডান। আর হেজাজিও তার কৌশল দিয়ে খোলনলচে বদলে ফেলেন মোহামেডানকে, খেলাতে থাকেন আধুনিক পাসিং ফুটবল। লিগের শেষদিকে নালজেগার ও বোরহানজাদেহর সাথে যোগ দিয়ে মোহামেডানের ফরোয়ার্ড লাইনের শক্তি বাড়ান ইরানি স্ট্রাইকার মুর্তজা ইয়াকিহ।
উঁচুমানের বিদেশিদের সাথে দেশি তারকাদের নৈপুণ্য দেখতে ঢাকা স্টেডিয়ামে ( বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) দর্শকের ঢল নামে। ম্যাচ তো বটেই আবাহনী ও মোহামেডানের অনুশীলন দেখতেও ভিড় জমাতেন ফুটবলপ্রেমীরা। যেদিন এই দুই দল শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হয় সেদিন কোনো কোনো পত্রিকা এমন শিরোনামও করে যে, “ঢাকার মাঠে ইরান- ইরাক যুদ্ধ”।
অনেক নাটক শেষে মোহামেডান লিগ শিরোপা জিতলেও আবাহনীর খেলায়ও ছিলো সৌন্দর্যের ছোঁয়া। বিদেশিদের মধ্যে মোহামেডানের বোরহানজাদেহ ছিলেন গড়পড়তা মানের আর মুর্তজা লিগের শেষদিকে ৩/৪টি ম্যাচ খেলার কারণে তাকে কেউ সেভাবে মনে রাখেনি। কিন্তু সামির শাকির, এমেকা ও নালজেগার ছিলেন দুর্দান্ত এবং নিজ দলের সমর্থকদের অতি প্রিয়। স্ট্রাইকার করিম মোহাম্মদের স্কোরিং অ্যাবিলিটিও ছিলো চমৎকার।
১৯৮৮ সালেও এমেকা ও নালজেগারকে দলে রেখে মোহামেডান নিয়ে আসে ইরানি স্ট্রাইকার ভিজেন তাহিরিকে। খুঁব উচুমানের না হলেও প্রয়োজনের সময় ঠিকই গোল আদায় করে নিতেন তাহিরি, হেডে গোল করায় ছিলেন বেশ পারদর্শী। স্থানীয় তারকা উইংগার সাব্বিরের ক্রস কিংবা কর্নারে অনেক গোলই করেছেন তাহিরি। এমেকা তো সেই শুরু থেকেই প্রতিপক্ষের ভীতির কারণ ছিলেন আর নালজেগার হয়ে ওঠেন আগের চেয়ে আরও ক্ষুরধার। তার ডজ দেওয়ার ভঙ্গিটি খুবই উপভোগ করতেন দর্শকরা। মাঝমাঠে নালজেগার আর রাইট উইংয়ে সাব্বিরের ড্রিবলিং তটস্থ করে রাখতো প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে।
এদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে এশিয়ান ক্লাব কাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয় মোহামেডান, বাছাইপর্বে হারিয়ে দেয় ইরানের চ্যাম্পিয়ন পিরুজি ক্লাবকে। আবাহনীতে আগের মৌসুমের দুই ইরাকি না আসলেও পাকির আলী ও প্রেমলাল এবং স্থানীয়দের নৈপুণ্যে বছরের শেষভাগে মোহামেডানকে ফাইনালে হারিয়ে জিতে নেয় মর্যাদার ফেডারেশন কাপ।
লিগেও আবাহনী বাড়তি কোনো বিদেশি আনেনি। কিন্তু লিগের মাঝপথে নাটকের পর নাটক মঞ্চস্থ করে কলকাতার ইস্টবেঙ্গল থেকে নাইজেরিয়ান চিমা ওকোরিকে দলে ভেড়ায় মোহামেডান যা নিয়ে আবাহনীর সাথে তাদের বিবাদ ফিফা পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু খুবই সাদামাটা পারফর্ম করে সমর্থকদের হতাশ করেন মোটা পারিশ্রমিকে দলে আসা চিমা। লিগে দুইবার মুখোমুখি হয় আবাহনী ও মোহামেডান কিন্তু ফল আসেনি কোনোটিতেই। সর্বোচ্চ পয়েন্ট পেয়ে টানা তৃতীয় শিরোপা জিতে আবাহনীর গড়া রেকর্ড স্পর্শ করে মোহামেডান। ২৪টি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ভিজেন তাহিরি। তবে চোখ জুড়ানো ফুটবল খেলে আরেকবার দর্শক-সমর্থকদের হৃদয় জয় করেন এমেকা ও নালজেগার। লিগের সেরা খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কার থাকলে হয়তো এই দুজন যৌথভাবে সেটি জিততেন।
এই লিগ শেষ হওয়ার পরই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত নেয়। দেশি খেলোয়াড়দের স্বার্থরক্ষা করার নামে ঘরোয়া ফুটবলে বিদেশি ফুটবলার নিষিদ্ধ করে দেয় বাফুফে! ১৯৮৯- ৯০ মৌসুমে লিগ হয় শুধুই দেশি খেলোয়াড়দের নিয়ে। আর এর ফলে দর্শকরা হারান এমেকা, নালজেগার, ভিজেন তাহিরি, পাকির আলী ও প্রেমলালের মতো ভিনদেশি তারকাদের নৈপুণ্য উপভোগের সুযোগ। আসলাম, মুন্না, রুমিদের নৈপুণ্যে তিন মৌসুম পর লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার করে আবাহনী। তবে এর আগে ফেডারেশন কাপ জেতে মোহামেডান।
এক মৌসুম বিদেশিবিহীন ফুটবল চালিয়ে আবারও বিদেশিদের দরজা খুলে দেয় বাফুফে। ১৯৯১-৯২ লিগ মৌসুমের শুরুতে আবাহনী ক্রীড়াচক্র রাশিয়া থেকে নিয়ে আসে দুই মিডফিল্ডার সের্গেই ঝুকভ ও অ্যালেক্সি আরিফিয়েভকে। আরিফিয়েভ গড়পড়তা মানের হলেও ঝুকভের পায়ের শৈল্পিক কারুকাজ ছিলো দর্শকদের জন্য নির্মল বিনোদন। আর এই বিনোদনের স্বাদ পেতে আবাহনীর সাথে ছোট দলের ম্যাচও মিস করতে চাইতেন না সমর্থকরা। মাঝমাঠ থেকে একের পর এক ফাইনাল পাস দিয়ে প্রতিপক্ষ শিবিরে ভীতির সঞ্চার করতেন মস্কোর টর্পেডো ক্লাব থেকে আসা এই ফুটবল-শিল্পী। আবাহনীতে রুশ ফুটবলের জাদু দেখে টনক নড়ে চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী মোহামেডানের। কাঁটা দিয়ে কাঁটা
তোলার পলিসি নেয় তারা। বিদেশি ফুটবলার আনতে রাশিয়ায় যান কর্মকর্তা মরহুম এমএ মালেক। নিয়ে আসেন মিডফিল্ডার কুজনেৎসভ ও নভিকোভ এবং স্ট্রাইকার আজামত রহিমভকে।
প্রথম দুজন জাতিতে রুশ হলেও রহিমভ ছিলেন উজবেক। শুরুতে তিনজনই গড়পড়তা ফুটবল খেললেও লিগের মাঝপথে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন স্ট্রাইকার রহিমভ। টানা তিন ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে দর্শক-সমর্থকদের মাথা ঘুরিয়ে দেন তিনি। পেনাল্টি বক্সে রহিমভ ছিলেন রীতিমতো ডিফেন্ডারদের ত্রাস। তার দুর্দান্ত ড্রিবলিং অনেক দর্শক আজও ভুলতে পারেননি।
তবে নিজ দলকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পারেননি রহিমভ। চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী আবাহনীর বিপক্ষে কী এক অজ্ঞাত কারণে অনেকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলেন তিনি। আর সেই সুযোগে ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে টানা দ্বিতীয় লিগ শিরোপা ঘরে তুলে আকাশী নীলরা। মামুন জোয়ার্দারের দুই গোলের একটির উৎস ছিলেন ঝুকভ। তবে ঝুকভ ও রহিমভের মধ্যে কে লিগের সেরা ছিলেন তা নিয়ে আজও মতভেদ আছে। দুই বছর পর জাপানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমস ফুটবলে অভিষেকেই উজবেকিস্তানের সোনা জয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে রহিমভ নিজের জাতটা ভালো করেই চিনিয়ে দেন।
১৯৯২ সালের পর ১৯৯৩ সালেও ঢাকার ফুটবলে ছিলো রুশদের সরব উপস্থিতি। আবাহনীতে খেলেন ডিফেন্ডার জর্জি, মিডফিল্ডার সুদারিকভ ও স্টাইকার দজমারভ। মোহামেডানে ছিলেন রুশ স্ট্রাইকার জিভতনিকভ এবং উজবেক মিডফিল্ডার তেগুয়েভ মুরাদ ও ডিফেন্ডার শাপকিন রোমান। আর তৃতীয় শক্তি ব্রাদার্স ইউনিয়নের জার্সি পরেন রুশ মিডফিল্ডার ভ্যাসিলিয়েভ এবং স্ট্রাইকার কুদিনভ ও স্পিরিন। এদের মধ্যে স্পিরিন কয়েক ম্যাচ খেলেই দেশে চলে যান। বাকি আটজনের মধ্যে নজর কাড়েন মূলত: তিনজন- মোহামেডানের জিভতনিকভ, আবাহনীর দজমারভ এবং ব্রাদার্সের ভ্যাসিলিয়েভ।
তবে মানের বিচারে তারা রহিমভ কিংবা ঝুকভের পর্যায়ের ছিলেন না। আবাহনীর কাছে দুবার হেরে গিয়েও পয়েন্টে এগিয়ে থেকে দুই মৌসুম পর শিরোপা জেতে মোহামেডান। সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন জিভতনিকভ।
১৯৯৩ সালের পর থেকেই রং হারিয়ে বিবর্ণ হতে থাকে ঢাকা তথা বালাদেশের ফুটবল এবং এর সাথে তাল মিলিয়ে মানসম্মত বিদেশিদের উপস্থিতিও কমতে কমতে এক পর্যায়ে শূন্যে নেমে আসে। শারীরিক শক্তিনির্ভর আফ্রিকানদের দাপট ছিলো খুবই দৃষ্টিকটু।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ছিলো একটু ব্যতিক্রম। বসুন্ধরা কিংসের সৌজন্যে আমরা দেখেছি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলে আসা কোস্টারিকান উইংগার ড্যানিয়েল কলিনড্রেসকে। অভিষেকেই নিজ দলকে শিরোপা জেতানো কলিনড্রেস এখন খেলছেন আবাহনী লিমিটেডের হয়ে। বসুন্ধরা কিংসের কিরঘিজ মিডফিল্ডার বখতিয়ার দুশবেকভও নজর কেড়েছেন।
এছাড়া আবাহনী লিমিটেডের আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইগানি ও নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্র্ড সানডে চিজোবার কথাও বলতে হবে। তবে ২০১৯ সালের শেষভাগে সবাইকে চমকে দিয়ে বসুন্ধরা কিংস নিয়ে আসে ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে লিওনেল মেসির পাশে খেলা আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড হার্নান বার্কোসকে। রেকর্ড পরিমাণ পারিশ্রমিকে আসা বার্কোসের অভিষেক ঘটে মালদ্বীপের শক্তিশালী ক্লাব টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে (এএফসি কাপের ম্যাচ)। হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করে বার্কোস ভালো করেই বুঝিয়ে দেন তিনি কে।
কিন্তু এরপরই ঘাতক করোনাভাইরাস ওলটপালট করে দেয় সবকিছু। বাংলাদেশের দর্শকরা হারায় বার্কোসের আর্জেন্টাইন জাদু দেখার সুবর্ণ সুযোগ। বর্তমানে বসুন্ধরা কিংসের পক্ষে মাঠ মাতাচ্ছেন একসময় ইরান জাতীয় দলে খেলা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার রেজা খানজাদেহ। এদের মানের বিদেশিরা নিয়মিত খেলতে আসলে হয়তো রংহীন বাংলাদেশের ফুটবলে আবার কিছুটা রংয়ের ছোঁয়া লাগতে পারে।
দল পরিচালনায় বসুন্ধরা কিংসের মতো পেশাদারিত্ব অন্যরা অনুসরণ করলে ভালো কিছু আশা করাই যায়। তবে দেশি প্রতিভাদের সুযোগ দেওয়ার স্বার্থে বিদেশিদের একটি কোটা রাখা প্রয়োজন। আর এর ফলে যারা বিদেশি খেলোয়াড় আনবে তারা চেষ্টা করবে মানের সাথে আপোষ না করার। বিশ্লেষকদেরও বার বার আশি ও নব্বইয়ের দশকের স্মৃতিচারণ করে মন খারাপ করতে হবে না।
লেখক: সাইফুর রহমান তুহিন, সাংবাদিক ও ক্রীড়া লেখক।
দেখুন আই নিউজ ভিডিও গ্যালারী
হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ