Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

লাবণ্য চৌধুরী

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৪ মে ২০২৩

ধৈর্য ও সাফল্য

গৌতম বুদ্ধের গল্প | Eye News

আজ বুদ্ধ পুর্ণিমা। ‘জগতের সব প্রাণী সুখী হোক’ এ অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব দিবস আজ। এই দিনেই তিনি বোধিপ্রাপ্তি আর মহাঅনির্বাণ লাভ করেছিলেন। তাই আজকের এই দিনটিকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে কাটান বৌদ্ধরা। এই দিনে বৃদ্ধ বৌদ্ধরা শিশুদেরকে বুদ্ধের প্রাচীন গল্পগুলো শুনান। 

আই নিউজের ফিচার পাতায় আজকে তেমনি একটি বুদ্ধের গল্প লিখবো বলে ভেবেছি। গল্পটা ধৈর্য নিয়ে এবং ধৈর্য ধরার ফল সফলতা বা সাফল্য নিয়ে। যা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধৈর্য ছাড়া সফলতা আসে না- এটাই যে গল্পের সারমর্ম। গল্প শুরু করা যাক। 

অনেককাল আগের কথা। তখন বুদ্ধ বেঁচেছিলেন। বোধিপ্রাপ্ত হবার পর বুদ্ধ তাঁর সাথে আরও অনেক মানুষকে দোসর হিসেবে পেয়ে যান; যারা বুদ্ধকে গুরুদেব বলে মানতো। গৌতম বুদ্ধও তাদেরকে শিষ্যের ন্যায় দেখতেন এবং সময়ে সময়ে উপদেশ, নির্দেশ, সমাধান দিতেন। 

একবার বুদ্ধ এবং তাঁর দুই শিষ্য বিস্তৃত প্রান্তর অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তারা বুদ্ধের দেশনা প্রচার করার জন্য বের হয়েছিলেন। পথিমধ্যে অনেক লোকের সাথে কথা বলে এবং দেশনা প্রচার করতে করতে একসময় গৌতম বুদ্ধের প্রচণ্ড তৃষ্ণা পায়। গৌতম তাঁর দুই ছাত্রকে নিয়ে একটি গাছের ক্ষীণছায়ায় বসলেন। তাঁর একজন ছাত্রকে বললেন- আমাদের তিনজনেরই তৃষ্ণা পেয়েছে। তুমি পানি নিয়ে আসো। আমরা এ গাছের নিচে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। 

গুরুদেব বুদ্ধের আদেশ পালনে তাঁর ছাত্র তড়িৎগতিতে পানির খোঁজে বের হলেন। কিছুদূর যাওয়ার পর সে একটি নদী দেখতে পেলো। কিন্তু সেই নদীটির পানি পানযোগ্য ছিলো না। কারণ, সেই নদীর পানিতে কেউ কাপড় ধৌত করছিলো, কেউ গবাদিপশু পরিষ্কার করছিলো কেউ ময়লা-আবর্জনা এনে নদীর পানিতে ফেলে দিয়ে যাচ্ছিলো। নদীর এমন দৃশ্য দেখেই ছাত্রটি আবার বুদ্ধের কাছে চলে গেলেন। 

ছাত্রটিকে পানিশূন্য হাতে দেখতে পেয়ে গৌতম বুদ্ধ তাঁকে পানি আনার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। এবং তাঁর ছাত্রটিও তাঁকে বিশদভাবে নদীর ঘটনাগুলো বললো। তাঁর কথা শুনে গৌতম বুদ্ধ মুচকি হাসলেন এবং দ্বিতীয় ছাত্রটিকেও একই উপদেশ দিলেন। দ্বিতীয় ছাত্রটিও যখন পানির খোঁজে ওই নদীর কাছে গেলো সেও একই দৃশ্য দেখলো। নদীতে কেউ দৈনন্দিন কাজ করছে, কেউ গবাদিপশু ধৌত করছে আবার কেউ ময়লা-আবর্জনা এনে ফেলছে। তবে দ্বিতীয় ছাত্রটি প্রথম ছাত্রটির মতো খালি হাতে ফিরে গেলো না। 

দ্বিতীয় ছাত্রটি অপেক্ষা করলো অনেকক্ষণ। এরপর সে পানি নিতে গুরুদেব গৌতম বুদ্ধের কাছে ফিরে গেলো। গৌতম ছাত্রটিকে পানি সাথে নিয়ে আসতে দেখে খুব খুশি হলেন। তিনি তাঁর দুই ছাত্রকে নিয়ে পানি পান করলেন। এবং পরিশেষ, দ্বিতীয় ছাত্রটির কাছে জানতে চাইলেন- তুমি কীভাবে পানি পেলে?

দ্বিতীয় ছাত্র তখন বুদ্ধকে বললো- গুরুদেব, নদীর পাড়ে গিয়ে আমিও আমার বন্ধুর মতো অনেক মানুষকে কাজ করতে দেখি এবং নদীতে পশুকে গোসল করানো বা আবর্জনা ফেলতে দেখি। তবে আমি তখনই ফিরে না এসে অপেক্ষা করতে থাকি সবার কাজ শেষ হবার। সবার কাজ যখন শেষ হলো, ধীরে ধীরে নদীর পানি স্থির হয়ে আবারও পরিষ্কার হয়ে এলো। তখন আমি পানি নিয়ে এসেছি।

তখন গৌতম বুদ্ধ তাঁর কথা শুনে হাসলেন আর অনেক খুশি হয়ে তাঁকে অভিবাদন জানালেন তাঁর ধৈর্য ধরার মানসিকতার জন্য। সেই সঙ্গে তিনি প্রথম পানির জন্য পাঠানো ছাত্রটিকেও ধৈর্যের একটি পাঠ শিক্ষা দিলেন। তিনি তাঁকে বললেন- ধৈর্য সহকারে যেকোনো কাজ করলে, সেই কাজে সফলতা আসে। কিন্তু সফলতার জন্য প্রধান শর্ত হলো ধৈর্য। ধৈর্য ধরতে না জানলে কোনো কাজেই সফলতা আসে না। 

গৌতম বুদ্ধ এবং তাঁর দুই শিষ্যের এই গল্প থেকে আমরা ধৈর্যের শিক্ষা নিতে পারি। বুদ্ধের প্রথম শিষ্য অধৈর্য থাকায় সে পানি অপরিস্কার দেখেই চলে আসে। এতে তাঁর কাজ সফল হয়নি। অন্যদিকে দ্বিতীয় ছাত্রটির ধৈর্য আছে বলে সে পানি পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে শেষে পানি নিয়ে আসলো। 

আই নিউজ/এইচএ 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়