হেলাল আহমেদ
টাইটান কাহিনী : সাবমেরিন দুনিয়ার বড় অঘটন
সাগরের নিচে ভাসছে জলযান টাইটান।
সারাবিশ্ববাসী বর্তমান একমাত্র আলোচ্য এবং দুশ্চিন্তার বিষয় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গিয়ে নিখোঁজ য়ে যাওয়া টাইটান ও তাঁর যাত্রীরা। হারিয়ে যাওয়া দৈত্যাকায় জলযান টাইটানিকের হারিয়ে যাওয়া দুইটি টুকরো দেখার বাসনায় সাগরতলে অভিযানে নেমেছিলেন তারা। কিন্তু এই অভিযান শেষপর্যন্ত সাবমেরিন দুনিয়ার লোমহর্ষক এক ঘটনায় রূপ নিয়েছে গত কয়েকদিনের মধ্যেই। আই নিউজের আজকের এই লেখায় আলোকপাত করার চেষ্টা করবো টাইটানিক দেখতে যাওয়া সাবমেরিন টাইটান কাহিনীতে।
বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে সেই, ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল, যাত্রীসমেত ডুবে গিয়েছিল আভিজাত্য আর স্বপ্নেঘেরা টাইটানিক। যে জাহাজটি সহজে ডুববার কথা নয় তা ডুবে গিয়েছিলো যাত্রার কয়েকদিন পর। ডুবে যাওয়ার জায়গাটা ছিল কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের তীর থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে। সাগরের সাড়ে বারো হাজার ফুট বা ৩.৮১ কিলোমিটার নিচে।
এ দুর্ঘটনার কয়েক দশক পর ১৯৮৫ সালে টাইটানিকের দুইটি ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো মূলত টাইটানিকের দুটো বিশাল টুকরো। বিশাল সাগরের নিচে টুকরো দুটো একে অন্যের থেকে ২০০০ ফুট দূরে পড়ে আছে।আর এই টুকরো দুইটি দেখার জন্যই সাবমেরিন টাইটানে চড়ে সাগরতলে পাড়ি জমিয়েছিলেন বাপ-ছেলেসহ কিছু মানুষ। যারা এখন পর্যন্ত সাগরের গহীন গর্ভে নিখোঁজ আছেন। চলছে তাদেরকে খুঁজে বের করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা।
সাগরের নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ টুকরো দুটি দেখার এই প্রাইভেট ট্যুরের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক সাবমেরিন কোম্পানি ওশানগেইট ইনকরপোরেটেড (ওশানগেইট এক্সপেডিশন্স)। ২০২১ সাল থেকে টাইটানিক দর্শন প্যাকেজ অফার করা শুরু করে ওশানগেইট। উদ্দেশ্য ছিল, স্পেসএক্স বা ব্লু অরিজিন যেমন বড়লোকদের মহাকাশে নিয়ে যাওয়ার বিনোদন দেয় তেমনি মানুষকে সাগরতলে টাইটানিক দেখার মতো উত্তেজনাকর এক বিনোদন দেয়ার। এ কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও স্টকটন রাশ ২০১৭ সালে বলেছিলেন যে, গত ৩৫ বছরে সিরিয়াস কোনো অঘটন ঘটেনি সাবমেরিন দুনিয়ায়; সেই হিসেবে, পরিসংখ্যানগতভাবে, সাবমেরিন হলো দুনিয়ার নিরাপদতম যান।
উল্লেখ্য, লেখায় সাবমেরিন লিখলেও আসলে এটি হবে সাবমার্সিবল Submersible বা ডুবোযান। সাবমার্সিবল এমন
এক ধরনের জলযান যেটি কিনা পানির নিচে চলে, কিন্তু আশপাশে সাপোর্ট হিসেবে থাকে কোনো সার্ফেস জলযান। অর্থাৎ যা পানির ওপর থাকে, কিংবা সাপোর্ট হিসেবে কোনো তীরবর্তী লোকদল থাকতে পারে, বা কোনো বড় সাবমেরিন।
কিন্তু গত ১৮ জুনের পর থেকে সাবমেরিনকে ঘির প্রশ্নের যেন শেষ নেই হাজারো মানুষের কাছে। আর কতোসময় সাবমেরিনটির ভিতরে এর যাত্রীরা বেঁচে থাকতে পারবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন গোটা বিশ্ববাসী। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সাবমেরিনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে।
সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর থেকে যতোটুকু জানা যায়, ১৬ জুন ২০২৩ নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে যাত্রা করে জাহাজ এমভি পোলার প্রিন্স। ১৭ জুন টাইটানিক ডুবে যাওয়ার ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায় প্রিন্স। ১৮ জুন অতলান্তিক সময় সকাল ৯টায় সাবমার্সিবল টাইটান সাগরে ডাইভ দেয়। প্রথম এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সব ঠিকই ছিল। এরপরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় জলযানটি। ১১টা ৪৭ মিনিটের দিকে শেষ কথা হয়েছিল। সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে টাইটানের আবার উঠে আসার কথা থাকলেও আর ভেসে ওঠলো না জলযানটি।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ জুন); টাইটানে ৯৬ ঘণ্টার জন্য মজুদ করে রাখা অক্সিজেন ফুরিয়ে যাবে আজ। বলা যায় আজকে পর্যন্ত টাইটানের যাত্রীরা বেঁচে থাকলে সুস্থ থাকবেন। কিন্তু বেঁচে থাকলেও যদি আজকের ভেতরে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব নাহয় তাহলে মারা যেতে পারেন টাইটানের ভেতরে থাকা যাত্রীরা।
টাইটানের যাত্রীদের মধ্যে আছেন দাউদ-হারকিউলিস করপোরেশনের ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ। বয়স তার ৪৮। সুলেমান দাউদ। যিনি কিনা শাহজাদা দাউদের ১৯ বছর বয়সী পুত্র। ব্রিটিশ ধনকুবের, অ্যাডভেঞ্চারার, বিমানচালক, এবং মহাকাশ-পরিব্রাজক হ্যামিশ হার্ডিং। হার্ডিং ২০১৯ সালে সবচেয়ে কম সময়ে মেরু বরাবর উড়ে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে আসার রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। তার বয়স ৫৮ বছর। আর আছেন পল-অঁরি নার্জোলে। তিনি একজন ফরাসি নেভি কমান্ডার, ডাইভার, তিনি নিজেও সাবমার্সিবল চালাতে পারেন। যে এই সাবমার্সিবলকে সবচেয়ে নিরাপদ যান বলে আখ্যায়িত করেছিলেন সেই স্টকটন রাশও আছেন জলযানটিতে।
জানা যায়, টাইটানের সার্টিফিকেশন যথেষ্ট ছিল না অত নিচে অভিযান পরিচালনা করার। এর আগেও অন্য অভিযানে দেখা গিয়েছে, ৫ ঘণ্টার জন্য টাইটান যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। সিইও রাশ এই যান পরীক্ষণে রাজি ছিলেন কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা শোনা যায় ৩৮ জন মেরিন বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন রাশকে; ২০১৮ সালে কোম্পানির এক প্রাক্তন কর্মী নিরাপত্তা ইস্যুতে মামলাও ঠুকে দিয়েছিলেন।
এছাড়া যে অ্যাক্রিলিকের ভিউপোর্ট দিয়ে আপনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখবেন, সেটা ১৩০০ মিটারের মাঝে ঠিকঠাক কাজ করার মতো, এর নিচে গেলে রিস্কি।
এখন মার্কিন কোস্ট গার্ড, নেভি, ও কানাডিয়ান কোস্ট গার্ড মিলে তাদের খোঁজ করছে, কিন্তু তারা খুব একটা আশাবাদী না, বরং একে আখ্যায়িত করা হয়েছে খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজা হিসেবে; প্রায় ২০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে খোঁজা হচ্ছে। এখনও অবশ্য উদ্ধারাভিযান চলছে।
আটলান্টিকের ওখানে এক স্থানে 'শব্দ' (ব্যাংগিং সাউন্ড) পাওয়া গিয়েছে শোনার পর সেখানে খোঁজ বাড়ানো হয়, তবে কোনো আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। নিরাশার কারণটা কী জানেন? একে তো খুঁজেই পাওয়া যায়নি এখনও যে কোথায় আছে সেই টাইটান, তার ওপর খুঁজে যদি এক সময় খুঁজে পাওয়াও যায়- তারপর সেটাকে উঠিয়ে এনে হ্যাচ খোলার সময় হবে কি? নাকি নিচে গিয়ে অক্সিজেন দেয়া হবে? সেটাই বা করবে কীভাবে এবং কারা?
বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে একটি সংবাদের আশায়; হঠাৎ খবর আসবে সাবমার্সিবাল বা ডুবো জলযানটির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর যাত্রীরা নিরাপদ আছেন। আর যদি না এমন ঘটে, তাহলে দেবতা এটলাসের পূত্র আটলান্টিকের অতল গর্ভে লিখিত হবে সাবমেরিনের ৩৫ বছরের ইতিহাসের সবথেকে বড় অঘটনের ঘটনা।
আই নিউজ/এইচএ
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ