শ্যামলাল গোসাঁই
আপডেট: ১৭:১০, ২৪ জুন ২০২৩
শরিকি কোরবানি : কার সঙ্গে শরিক হবেন কার সঙ্গে নয়?
আসছে কোরবানির ঈদ। প্রতিবছর ঈদে ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির পাশাপাশি শরিকি কোরবানিও দিয়ে থাকেন অনেকে। শরিকি কোরবানির ক্ষেত্রে ইসলামের বিশেষ কিছু সতর্কতা এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় অন্য সবকিছুর সঙ্গে বদলেছে মানুষের ধর্ম পালনের রীতি-নীতিও। কিন্তু ইসলামের দিক নির্দেশনাগুলো এর অনুসারীদের জন্য সার্বজনীন। তাই আজকে আই নিউজের এ লেখায় জানাবো শরিকি কোরবানি নিয়ে ইসলাম ধর্মের কিছু কথা এবং নির্দেশনার ব্যাপারে।
প্রথমে বুঝতে হবে শরিকি কোরবানি আসলে কী? আরবি শরিক শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ অংশীদাস বা ভাগীদার। অর্থাৎ ব্যক্তি উদ্যোগের বাইরে একাধিক ব্যক্তির সমন্বয়কে বলে শরীক হওয়া। তাই শরিকি কোরবানি বলতে একাধিক ব্যক্তির এক হয়ে আল্লাহর নামে কোরবানিকে বোঝায়। তবে এখানে কথা রয়েছে। যে কেউ চাইলেই যে কারো সঙ্গে শরিক হয়ে কোরবানি দিতে পারবেন না।
কোরবানি যেহেতু ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের একটি তাই এটি পালনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিধি-বিধান জানাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সময়ে যে কেউ একত্রিত হয়ে শরিকি কোরবানি দিলেও এসব কোরবানির কতোটুকু আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য তাও চিন্তার বিষয়। ভালো-খারাপ দুই রকমের মানুষ মিলেমিশে বর্তমান সময়ে কোরবানি দিচ্ছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির চেয়ে বর্তমান সময়ের কোরবানিতে যেন লোক প্রদর্শনই থাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোরবানির যথাযথ নিয়ম না মেনে ইচ্ছেমতো কোরবানি দিলে তা যে গ্রহণযোগ্য নয় তা ইসলামেই বলে দেয়া হয়েছে।
সামর্থ্যবান ব্যক্তির পক্ষে একা কোরবানি করা বিভিন্ন কারণে উত্তম। তবে শরিকে কোরবানির বিধান উম্মতকে দিয়েছে অবকাশ ও প্রশস্ততা। এ প্রশস্ততা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এ স্পষ্টভাবে রয়েছে।
শরিকি কোরবানির ক্ষেত্রে নির্দেশনা
যেহেতু শরিকি কোরবানিতে একাধিক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে কোরবানি আদায় করেন সেহেতু সকলের আয় রোজগার হালাল না হারাম তা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিশারদরা। সেই সঙ্গে সকলের নিয়ত এক কি-না। কেননা, শরিকদের মধ্যে একজন ব্যক্তিও শুধুমাত্র মাংস খাওয়ার আশায় কোরবানিতে শরিক হন তাহলে তাদের সবার কোরবানিই অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. বলেন, আমরা হজের ইহরাম বেঁধে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বের হলাম। তিনি আমাদের আদেশ করলেন যেন প্রতিটি উট ও গরু সাতজন করে শরিক হয়ে কোরবানি করি। (মুসলিম শরীফ: ১/৪২৪)।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (একটি) গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানি করা যায়)। (সুনানে আবু দাউদ: ২/৩৮৮)।
এ বিষয়ে ফকিহগণের মতামত হচ্ছেচ- ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. ও ইমাম শাফিঈ রহ. এ বিষয়ে মাসয়ালা দিয়েছেন, সাতজনের পক্ষ হতে একটি গরু অথবা একটি উট কোরবানি করা জায়েজ। (সূত্র: যাদুল মা’আদ, ইমাম ইবনিল কাইয়িম আল-জাওঝী হাম্বলী রহ.; তাহকিক: শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব হাম্বলী রহ.; পৃষ্ঠা ১২১)।
আলেম ও ফকিহগণ শরিকে কোরবানি সংক্রান্ত হাদিসের ব্যাপারে বুঝেছেন, শুধু সফর নয়, বরং সর্বাবস্থায় ৭ জন মিলে একটি গরু বা উট কোরবানী দিতে পারেন। এ সংক্রান্ত মাসয়ালায় তারা মোটেও সফরের কথা উল্লেখ করেননি।
তবে শরিক নির্বাচনে সতর্কতা কাম্য। আল্লাহর কাছে কোরবানি কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন দ্বারা কোরবানি করা। হাদিসে আছে, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র আর তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন। (মুসলিম: ১০১৫)।
তেমনি কোরবানি হতে হবে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টির জন্য। হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, সকল আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। (বুখারী: ১)।
কোরবানির সঙ্গে আকিকা দিলে হবে?
অনেকে কোরবানির সঙ্গে আকিকাও দিতে চান। কিন্তু ইসলাম এই বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করেছে বলেই মত ফুকাহায়ে কেরাম বিষয়টির। কোরবানি ও আকিকা আলাদাভাবেই করা উচিত। তবে কেউ একত্রে করলে কোরবানি ও আকিকা দুটোই আদায় হবে। কারণ আকিকাও এক ধরনের কোরবানি।
হাদীস শরীফে আকিকাকেও বলা হয়েছে ‘নুসুক’, যার অর্থ কোরবানি। (সূত্র: আল-মুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক: ৭৯৬১০। অর্থাৎ আকিকা এবং কোরবানি দুইটি আলাদা এবাদত। এ দুইটি আলাদা আলাদাভাবে করাই মুসলিমদের জন্য উত্তম। এতে করে আলাদা আলাদা সওয়াব লাভেরও সুযোগ হবে।
তাছাড়া বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ‘প্রকারের’ কোরবানি যে এক পশু দ্বারা আদায় হতে পারে তা স্পষ্টভাবেই বলেছেন বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম আতা ইবনে আবি রাবাহ (রঃ)।
ইসলামে যে কারণে কোরবানি দেওয়া হয়
ইসলাম ধর্মের ইতিহাস পড়লে জানা যায়, প্রাক ইসলাম যুগের নবী ইব্রাহীম আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আল্লাহ স্বপ্নে তাঁর সবথেকে প্রিয় বস্তুটি (তাঁর শিশু পুত্র সন্তান) আল্লাহর নামে কোরবানির আদেশ দেন। সেই আদেশ পাওয়ার পর নবী ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহকে খুশি করার জন্য তাঁর সবথেকে প্রিয় শিশুপুত্রকে তরবারি তলায় রেখে কোরবানি করেন। কিন্তু ঘটনা ক্রমে সেখানে অলৌকিকভাবে একটি দুম্বা কোরবানি হয়।
মূলত আল্লাহ সেদিন ইব্রাহীমের উপর কঠিন একটি পরীক্ষা নিয়েছিলেন এবং সেই পরীক্ষায় ইব্রাহীম (আ.) সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেই দিনটিকে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ হিসেবে সে সময় থেকে পালন করে আসছেন ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা।
ইসলাম ধর্মে কোরবানির তাৎপর্য
উপরে উল্লিখিত কোরবানি ও ইব্রাহীক (আ.) এর ঘটনা থেকেই সহজে বুঝা যায় ইসলাম ধর্মে কোরবানির তাৎপর্য। কোরবানি নিয়ে মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু আয়াত সংযুক্ত করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন- আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। যাতে জীবনোপকরণ হিসেবে যে গবাদি পশু তাদেরকে দেয়া হয়েছে, তা জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে আর সব সময় যেন মনে রাখে একমাত্র আল্লাহই তাদের উপাস্য। অতএব তাঁর কাছেই পুরোপুরি সমর্পিত হও। আর সুসংবাদ দাও সমর্পিত বিনয়াবনতদের, আল্লাহর নাম নেয়া হলেই যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে, যারা বিপদে ধৈর্যধারণ করে, নামাজ কায়েম করে আর আমার প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে দান করে। (সূরা হজ, আয়াত ৩৪-৩৫)
নফসের কোরবানি কী?
ইসলাম ধর্মে পশু কোরবানি নিয়ে প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগেই সপ্তাহব্যাপী পশুর হাট বসে দেশের প্রায় সব জেলায়। এসব হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে কোরবানি দেন মুসলমানরা। তবে হাট থেকে পশু কিনে কোরবানি দিলেও অনেকেই নিজের নফসের কোরবানি দিতে পারেন না।
নফসের কোরবানি মানে হলো নিজের দুশ্চরিত্র বা খারাপ মনোভাবনা, বাসনা, ইচ্ছার কোরবানি দেয়া বা আত্মশুদ্ধির পথে আসা। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য যা খুবই গুরুত্ববহ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বেশিরভাগ মানুষই কোরবানি দিতে গিয়ে সওয়াব লাভের বদলে শিরকের ভাগীদার হচ্ছেন।
আই নিউজ/এইচএ
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ