শ্যামলাল গোসাঁই
আপডেট: ১৭:৪৩, ৭ আগস্ট ২০২৩
বাংলাদেশের গ্রামের ছবি | আই নিউজ
বাংলাদেশের গ্রামের ছবি
বাংলাদেশের গ্রামের ছবি যেন চোখ জুড়ানো। বাংলাদেশের কথা বললেই চলে আসে সাধুঋষির মাথার জটার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তেরোশত নদী, ফসলি সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠ আর আঁকাবাঁকা মেঠোপথের জনপদ। হাওর-বাওরের পানি, টারশিয়ারি যুগের পাহাড়, মনোরম চা বাগান সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদশের ছবি বললে যা আমাদের সামনে ফুটে ওঠে তার বেশিরভাগটাই প্রকৃতিঘেরা। একারণেই প্রতিবছর বহুলোক নেটদুনিয়ায় সার্চ দিচ্ছেন বাংলাদেশের গ্রামের ছবি লিখে।
বাংলাদেশের মূল সৌন্দর্য এদেশের গ্রামে-গঞ্জে, হাঁটে, ঘাটে, মাঠে এমনকি মানুষেও। বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনব্যবস্থার সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে ছয়ঋতুর এ দেশের প্রকৃতি। শীতে এই দেশের গ্রামের মানুষ একরূপ নিয়ে হাজির হন। গ্রীষ্মে সে রূপ বদলে যায়।
আষাঢ়-শ্রাবন মাসে নদী আর হাওর ভরা রূপালি পানি কিংবা হাওরের বুকে শৃঙ্খল সেনাবাহিনীর মতো এগিয়ে যাওয়া হাঁসের দল। গ্রামের মানুষের সাধাসিধে জীবন যাপন ছবির মতোই যেন সুন্দর। আই নিউজের পাঠকদের জন্য আজকের এই প্রতিবেদনে থাকছে বাংলাদেশের গ্রামের ছবির কিছু ভাগ। যে ছবিগুলো আই নিউজের ফটোগ্রাফার শ্যামলাল গোসাঁই বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেঘুরে সংগ্রহ করেছেন। সেই সঙ্গে সংগ্রহ করেছেন সেসব ছবির পেছনের ছোট ছোট গল্পও।
১. মহিষের সাথে একটুক্ষণ
সেদিন সবুজ বৃক্ষের ছায়াঘেরা একটি পথ ধরে হাঁটছিলাম আনমনে। অনেকটা লক্ষ্যহীন যাত্রা। হঠাৎ করেই চোখে পড়লো পাশের সবুজ ক্ষেত মাড়িয়ে আসছে একপাল মহিষ। বিশাল শিং আর দৈত্যের মতো বপুখানা তার হেলিয়ে দুলিয়ে রাজার মতো হেঁটে যাচ্ছিলো। চট করে ক্যামেরার বাটনে মেরে দিলাম দুু’চার ক্লিক। মহিষের এই ছবিটি তুলেছিলাম সিলেটের মৌলভীবাজার উপজেলার শহরতলীর এক অখ্যাত গ্রাম বরমান থেকে।
বাংলাদেশে হাল-চাষ ও গাড়ি টানার জন্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার চরাঞ্চলে এবং দেশের উত্তর এলাকার রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর এবং বগুড়া জেলায় মহিষ পালন করতে দেখা যায়। তবে দুধ উৎপাদনের জন্য উন্নত মানের মহিষের জাত বাংলাদেশে নেই বলে মত প্রাণী বিশেষজ্ঞদের।
২. এক জোড়া রাজহাঁস
রাজহাঁস, রাজার মতোই তাঁর চলন, বলন। গলা খ্যাঁকিয়ে যখন খ্যাঁক খ্যাঁক করে ডেকে ওঠে মনেই হয় যেন দলপতি নির্দেশনা দিচ্ছেন; না মানলেই শাস্তি। এই রাজহাঁস যুগলের ছবিটি তুলেছিলাম সিলেটের ইতিহাস সমৃদ্ধ এক জনপদ লক্ষীপাশা গ্রামে। যেখানে নদীর সেই গৌর নিতাই মামার বাড়ি বলে সাধারণত প্রতিবছর হাজারো ভক্ত এখানে সমাগম হোন। আমিও আমার এক বন্ধুকে নিয়ে ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলাম নিতাইর মামার বাড়ি দর্শনে। পথিমধ্যে পেয়ে গিয়েছিলাম এই রোমান্টিক হংসযুগলকে।
বাংলাদেশে এখনো প্রচুর পরিমাণে রাজহাঁস দেখা যায়। সাধারণত অনেকেই বাসা-বাড়িতে শখ করে এই হাঁসটি পালন করেন। আবার অনেকের কাছেই রাজহাঁস আভিজাত্যের প্রতীক।
রাজহাঁসের ডিম পাড়ার সময় সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্রে। প্রথম বছরের তুলনায় ৩য় ও ২য় বছরে এরা বেশি ডিম দেয় এবং ডিমের আকার বড় হয়। রাজহাঁসের ডিমের ওজন ১৪৪ থেকে ১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে, যা সাধারণ হাঁস ও মুরগির ডিম থেকে প্রায় ৩ গুণ বেশি ওজনের।
৩. ক্লান্ত অপরাহ্ন
এই ছবিটি তোলার আগে বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জলের ভেতরে জেগে থাকা ওই কলাগাছটির দিকে। মনে হচ্ছিলো যেন সারাদিনের ভার বয়ে এনে এখন যতোটা ক্লান্ত হলে নুয়ে পড়া যায় সেভাবেই দিঘীর জলের গর্ভে প্রোথিত হবার নেশায় নুয়ে পড়েছে গাছটি। তাৎক্ষণিক নিসর্গের কবি জীবনানন্দ দাশের ‘‘রুপসী বাংলা” কবিতার কিছু লাইন মনে পড়লো। কবি কী এমন ক্লান্ত অথচ কোমল, স্নিগ্ধ একটি বিকেল কাটাতে ফের আসতে চেয়েছিলেন এই বাংলায়? বাংলার এই চিরায়ত রূপই কি কবিকে বারবার স্মৃতিতে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল তেপান্তরের মাঠে?
অথবা এই যে দিঘী, দিঘীকে ঘিরে যতো উপাখ্যান, কেচ্ছা-কেতাব এসবকিছুই কী কিছু কিছু মানুষের নাগরিক মোহ কাটিয়ে দিয়ে আসছে হাজার বছর ধরে? এসব ভাবতে ভাবতেই দিঘীর জলে দৃশ্যমান কলা গাছের ছবিটি তুলে নিজের বোবাবাক্সে জমা করে রাখি।
৪. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে....
বাংলার শ্যামল, স্নিগ্ধ রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন-
এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে – সবচেয়ে সুন্দর করুণ :
সেখানে সবুজ ডাঙা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;
সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল;
সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ;
সেখানে বারুণী থাকে গঙ্গাপসাগরের বুকে, - সেখানে বরুণ
কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল;
সেইখানে শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল,
সেইখানে লক্ষ্ণীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ.... (এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে, জীবনানন্দ দাশ, সংক্ষেপিত)
৫. সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
বাল্যকালে আমাদের প্রায় সকলেই বিদ্যালয়ে রাজিয়া খাতুন চৌধুরানীর “চাষী” ছড়াটি পড়েছি। যেখানে কবি যথার্থই বলেছিলেন- সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা/দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।
কৃষকরাই আমাদের দেশের প্রাণ। তাদের চেয়ে বড় সাধক আর কেউ নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কঠোর পরিশ্রম করে তারা আমাদের অন্নের যোগান দেয়। তাদের উদ্দেশ্য দেশ ও দশের কল্যাণসাধন। শ্রম, সাধনা, আর ত্যাগ-তিতিক্ষার মহান আদর্শকে ধারণ করে সকলের ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান।
পৃথিবীর প্রায় সকল সভ্যতার ভিত যারা গড়ে দিয়েছে তারা কৃষক ছিলেন। কৃষি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একদিন পৃথিবীতে এসেছিলো আমূল পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন এসেছিলো সাধা-সিধা কৃষক মজুরদের হাত ধরে।
৬. বাংলার গ্রাম
আজকাল বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই বিদেশী পর্যটকরা বাংলাদেশে ঘুরতে আসছেন। তাদের কেউ কেউ ইট, প্রস্তরের নগর না দেখে ছুটে চলের বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে-গঞ্জে। তারা আসেন এদেশের গ্রামের মানুষদের সহজসরল জীবন ব্যবস্থা দেখতে। বাংলার গ্রামের রূপ দেখে তারা মুগ্ধও হচ্ছেন।
শ্যামল বাংলার কথা বললেই যে বাংলার দৃশ্য আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে সেই দৃশ্যটিই যেন এই ছবিতে প্রকাশ পেয়েছে। বৃষ্টিবাদলমাখা দিনে ছাতা হাতে ক্ষেতের আইল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন মানুষ। অনতিদূরে কলাগাছের ঝোপ; সেই কলাগাছের পাতা থেকে টুপটাপ করে ঝরে পড়ছিলো বৃষ্টির পানি। দেখে মনে হয়েছিলো এইতো আমার বাংলাদেশ, এই তো বাংলার চিরায়ত সেই শ্যামলিমা।
ছবি তুলেছেন ও লিখেছেন- শ্যামলাল গোসাঁই, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ