হেলাল আহমেদ
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে গাজা উপত্যকা। ছবি- জাপান টাইমস
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। গেল ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের গাজা সীমান্তে হামলা চালায়। সেই হামলার জের ধরে ইসরায়েল বাহিনীও ৮ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাঁজা উপত্যকায় ধারাবাহিক ভাবে হামলা চালিয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ইসরায়েলর যুদ্ধ ২০২৩ এ ৪ হাজার দুইশোর বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের এক তৃতীয়াংশই শিশু।
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ মধ্যপ্রাচ্যের এই দশকের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্বের বড় বড় রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দার্শনিকরা। এখন পর্যন্ত অবরুদ্ধ গাজাবাসীর উপর ইসরায়েলি বাহিনীর ধারাবাহিক হামলার যে দৃশ্য বিশ্ববাসী দেখেছেন তা সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। কেননা, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল, আশ্রয়শিবিরও। যাকে অনেক বিশ্ব নেতারাই 'যুদ্ধাপরাধ' বলে বিশেষায়িত করেছেনে।
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী অবরুদ্ধ গাজাবাসীর জন্য মিশরের রাফাহ সীমান্ত খিলে দেয়া হয়েছে সাময়িক সময়ের জন্য। এসময় ত্রাণবাহী ২০টি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। তবে, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে কোনো ফিলিস্তিনি বা গাজাবাসীকে অতিক্রম করতে দেয়া হয় নি।
কম শক্তি নিয়েও হামাস কেন হামলা করলো?
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ সম্পর্কে বর্তমানে অনেকের মনে একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটি হচ্ছে, ইসরায়েলের চেয়েও ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস কম শক্তিশালী এটি তারা জেনেও কেন হামাস ইসরায়েলে হামলা করলো? তাছাড়া, হামাসের হামলার পর বলতে গেলে শুরুর দিকে বেশকিছু সময় ইসরায়েলের গোয়েন্দারা এতোবড় ঘটনার কিছুই যেন আঁচ করতে পারছিলেন না।
যাহোক, ধারণা করা হচ্ছে এবছর হামাস ইসরায়েলের সীমান্তে সর্বশেষ এমন ভয়াবহ হামলা করার কারণ, ফিলিস্তিনকে পাশ কাটিয়ে আরব দেশগুলোর ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমেরিকার ইন্ধনে সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের অনেক দেশের সাথেই নিজেদের কূটনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল। যা আদতে পছন্দ হয়নি ফিলিস্তিনবাসীর বিশেষ করে, হামাসের। কেননা, এতে করে দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়াটি অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল হয়ে পড়ে বিশ্বের কাছে।
তাই আরব বিশ্ব এবং ইসরায়েলের সম্পর্কের এই যাত্রা ঠেকাতে এবং নিজেদের অস্তিত্বের হুঁশিয়ারি জানান দিতে হামাস এই হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আপাতত, এমনটাই মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে গবেষণা করা দার্শনিকরা। হামাস দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে যাচ্ছে। বর্তমান গাজাবাসীর সমর্থনও আছে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রতি।
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ বিশ্ববাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ইতিমধ্যে মনে করা হচ্ছে ইসরায়েল হামাসের এই সংঘাত বা যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে বদলে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিসহ ইউরোপের রাজনীতিরও অনেক কিছুই। কেননা, সম্মুখ সমরে ইসরায়েল হামাস থাকলেও পরোক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে আমেরিকাও। আমেরিকার এই যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ায় বিষয়টি আরো ব্যাপক ভাবে গুরুত্ব লাভ করেছে।
যদিও আমেরিকা তাঁর বন্ধু রাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে যেভাবে তাৎক্ষণিক যুদ্ধ সহায়তা করতে দাঁড়িয়েছে সেভাবে ফিলিস্তিনের পাশে এখনো দাঁড়াতে পারে নি সৌদি আরব। ইরান সামনাসামনিভাবে হামাসকে সমর্থনের কথা না বললেও, হামাসের ইন্ধনেই হামাস এমন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার করা প্রস্তাব বাতিল
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার করা একটি প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধে প্রস্তাব উত্থাপন করে এর পক্ষে সমর্থন আশা করেন। পরে এতে অনেক দেশ সাড়া না দেওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান হয়।
বৈঠকে রাশিয়ার প্রস্তাবটি উত্থাপনের পর নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী ১৫ সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ৪টি রাষ্ট্র এটির পক্ষে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অপর ৪টি রাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দেয়; আর ভোটদান থেকে বিরত থাকেন বৈঠকে উপস্থিত অপর ছয় সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩
ইসরায়েলের গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে হামাসের সাম্প্রতিক হামলাটি ছিলো সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। কিন্তু, গোপনে হামাস-ইসরায়েলের এই অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থায় বিপাকে পড়েছে আরেক বিশ্ব মোড়ল দেশ আমেরিকা। সহজ করে বললে, আসন্ন নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীল অবস্থা ফেরাতে আমেরিকার এতোদিনের চেষ্টাটি হুমকিতে পড়েছে ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যকার এই দন্ধের ফলে। এতে করে চিন্তার ভাজ হয়তো দেখা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কপালে।
-
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে ভেস্তে যাবে আমেরিকার দাবার চাল?
-
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত, আরব বিশ্বের ফাটল ভাঙবে কি?
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসলে বিশষ করে, সুন্নিপ্রধান আরব দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেলে এটি হবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। যা তাকে আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনে আরো জনপ্রিয় করে তোলবে। বাইডেন প্রশাসন সে লক্ষ্যেই সৌদি আরব ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তির বন্দোবস্ত করেছে। উদ্দেশ্য, সুন্নীপ্রধান আরব বিশ্বের 'পিতা' সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের গরম সম্পর্ক শীতল করে মধ্যপ্রাচ্যে আপাতত শান্তি ফিরিয়ে আনা। এবং নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের পথ আরো সহজ করা।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক
ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুতে বাংলাদেশে ২১ অক্টোবর সারাদেশে রাষ্ট্রীয় ভাবে শোক দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সারাদেশে জুমা'র নামাজে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়া ও মাহফি
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শনিবার বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
ফিলিস্তিন ইসরায়েলের যুদ্ধ ২০২৩ এখনো শেষ হয়নি। কবে শেষ হবে তা নিয়েও সঠিক কোনো ধারণা নেই বিশ্ব নেতাদের। তবে বিশ্ব জুড়ে ইসরায়েল ও হামাসের প্রতি এ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানানো হচ্ছে। যদিও জাতিসংঘ কিংবা বিশ্বনেতাদের এসব বার্তা কানে তুলছে না ইসরায়েল। তারা ধারাবাহিকভাবে অবরুদ্ধ গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আই নিউজ/এইচএ
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ