কাশ্মীর ভ্রমণে এক সপ্তাহের পূর্ণাঙ্গ সফরসূচি

আপনি কি ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত ভারতের কাশ্মীর রাজ্যে বেড়াতে যাওয়ারকথা ভাবছেন? যদি প্রশ্নটির জবাব হ্যাঁ-সূচক হয়ে থাকে তাহলে হয়তো আপনি সেখানকার জন্য একটি সঠিক সফরসূচি তৈরি করা নিয়ে কিছুটা চিন্তামগ্ন আছেন যাতে অবশ্যই দেখার মতো কোনো জায়গা মিস না হয়।

যেহেতু কাশ্মীর ভারতে এবং ভারতের বাইরে দারুণ জনপ্রিয় একটি জায়গা তাই এখানে বেড়ানোর সফরসূচি নিয়ে একটু মাথা ঘামানো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনাকে সহায়তা করার জন্য এই লেখায় সাতদিনের একটি পূর্ণাঙ্গ সফরসূচি দেওয়া হলো যাতে আপনি নজরকাড়া কোনো জায়গা মিস না করেন।

প্রথম দিন- শ্রীনগরে উপস্থিতি:

শ্রীনগরে পৌঁছার জন্য আকাশপথই হচ্ছে সেরা ও সহজতম মাধ্যম। এটি খুব বেশি ব্যয়বহুল নয় এবং আপনার অনেক সময়ের সাশ্রয় হবে। শ্রীনগরে পৌঁছার পর কিছুটা সময় বিশ্রাম নিন এবং দিনের বাকি সময় কাছের কিছু এলাকা ঘুরে দেখুন। সম্ভব হলে বিখ্যাত ডাল লেকের ওপর শিকারা (একধরনের নৌকা) রাইডের মাধ্যমে একটি দৃষ্টিনন্দন সূর্যাস্ত উপভোগ করুন।

দ্বিতীয় দিন- সোনামার্গ: 
সকালের নাস্তা সেরে সোনামার্গের পথে রওনা হোন। একটি প্রাইভেট কারে করে সোনামার্গে পৌঁছতে আড়াই ঘন্টার মতো সময় লাগবে। সোনামার্গ নামের অর্থ হলো স্বর্ণভূমি এবং জায়গাটি ভালোভাবেই এই নামের সার্থকতা প্রমাণ করে। সোনামার্গে যখন পৌঁছবেন তখন দুর্দান্ত সব দৃশ্যাবলী আপনার দুচোখে মুগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেবে যা একথায় জাদুকরী। এখানে আপনার চোখ ও মনকে প্রশান্তি দিতে পারবেন চারপাশের দৃশ্যাবলী উপভোগের পাশাপাশি কিছু রোমাঞ্চকর কর্মকান্ডের মাধ্যমে। এরপর আবার শ্রীনগরে।

তৃতীয় দিন- গুলমার্গ: 
আপনি শ্রীনগরেই থাকুন আর সোনামার্গেই থাকুন আপনার পরবর্তী আদর্শ গন্তব্য হবে গুলমার্গ। স্কিয়িং করার জন্য এটি শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গাগুলোর একটি। প্রকৃতিপ্রেমী, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের এবং ফটোগ্রাফারদের জন্যও এক স্বর্গ হলো গুলমার্গ। এখানে ভ্রমণকালে চেষ্টা করবেন গনডোলা রাইড ও মাউন্টেন বাইকিং মিস না করতে।

চতুর্থ দিন- পাহালগাম: 
আপনার ভ্রমণসূচিতে পরবর্তী গন্তব্য হবে আরেকটি চোখধাঁধানো জায়গা পাহালগাম যেটিকে চাইলেও বাদ দিতে পারবেন না। ‘দ্য ভ্যালি অব শেফার্ডস’ নামে পরিচিত পাহালগাম বিখ্যাত তার ঘন সবুজ বনভূমি এবং নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর জন্য যা এটিকে চমৎকার একটি ভ্রমণ গন্তব্য বানিয়েছে। সম্ভব হলে জায়গাটিতে একরাত থাকুন।

পঞ্চম দিন- বেতাব ভ্যালির সৌন্দর্য উপভোগ এবং আরও কিছু:
বেতাব ভ্যালি ঘুরে দেখুন এবং তৈরি থাকুন এর সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হওয়ার জন্য। এরপর চন্দনওয়াড়িকে মিস করবেন না যেটি নজরকাড়া এবং অমরনাথ যাত্রা আর অরু ভ্যালিতে যাওয়ার সূচনাস্থল। ঘন সবুজ বৃক্ষরাজিতে আচ্ছাদিত জায়গাটি আপনাকে বিস্ময় উপহার তো দেবেই, এর পাশাপাশি প্রকৃতি আপনাকে বানিয়ে দেবে একজন ফটোগ্রাফার। হাতে সময় থাকলে ঘুরে দেখতে পারেন লিডার নদী।

ষষ্ঠ দিন- তৈরি হোন শ্রীনগরে ফেরার জন্য: 
আপনি যদি শ্রীনগরের বাইরের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে যান এবং আরও থাকতে চান তাহলে পাহালগামে কিছুটা বাড়তি সময় কাটাতে পারেন এবং বিকেলে শ্রীনগরে ফিরতে পারেন। শ্রীনগর ফেরার পথে নেমে যেতে পারেন অবন্তিপোরাতে এবং পরিদর্শন করতে পারেন নবম শতাব্দীর স্মৃতিবিজড়িত অবন্তীস্বামী মন্দির যা মহাপ্রভু শিব ও বিষ্ণুকে নিবেদিত। দিনের শেষবেলায় শ্রীনগরে পৌঁছে বিশ্রামের পাশাপাশি মুখরোচক কিছু কাশ্মিরি খাবারের স্বাদ পরখ করুন।

সপ্তম দিন- শ্রীনগরের সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করুন: 
শ্রীনগরের সৌন্দর্য উপভোগ করে সারাদিন কাটান এবং প্রয়োজনমতো বিশ্রাম নিন। আপনি যদি শহরটির প্রধান আকর্ষণগুলো নিয়ে খুব কৌতূহলী থাকেন তাহলে শুরু করুন শাহজাহানের তৈরি মুঘল গার্ডেনস দিয়ে। 

এরপর আপনি যেতে পারেন নিশাত গার্ডেনস, পরী মহল গার্ডেনস, শালিমার গার্ডেনস প্রভৃতি জায়গায়। শ্রীনগরের ইন্দিরা গান্ধী টিউলিপ গার্ডেনও দেখার মতো একটি জায়গা। এর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে যান এবং কিনুন জাফরান, ভেড়ার পশমের তৈরি চমৎকার কাশ্মিরি শাল এবং স্যুভেনির হিসেবে কিছু স্থানীয় জিনিস।

লেখক: সাইফুর রহমান তুহিন, সাংবাদিক ও ফিচার লেখক