আই নিউজ ডেস্ক
আপডেট: ২০:৫০, ১৩ মার্চ ২০২৪
সোমালিয়া জলদস্যু ইতিহাস
একজন সোমালিয়ান জলদস্যু ও একটা জিম্মিকৃত পুরোনো জাহাজ।
সোমালিয়া জলদস্যু কতৃক বাংলাদেশের একটি জাহাজ জিম্মির ঘটনার পর থেকে আলোচনায় সোমালিয়া জলদস্যুরা। কে এই সোমালিয়া জলদস্যু, কীভাবে এরা তাঁদের কাজ করে, ভারত মহাসাগরে কোন কোন দেশের জাহাজগুলো তাঁদের নিশানায় থাকে এসব নানা বিষয় নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। অনেকে আবার জানতে চাইছেন সোমালিয়ার ধর্ম সম্পর্কেও।
শুরুতেই জানিয়ে রাখা দরকার সোমালিয়া জলদস্যুরা বাংলাদেশের যে জাহাজটি জিম্মি করে রেখেছে সেখানে ২৩ জন নাবিক ও ক্রু রয়েছেন। যাদের অধিকাংশই বাঙালি। সোমালিয়া জলদস্যু মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ লাখ ডলার চেয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অপরদিকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যেকোনো মূল্যে সোমালিয়া জলদস্যুদের কাছ থেকে জাহাজ ও নাবিকদের ফিরিয়ে আনা হবে। তবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সবশেষ জানিয়েছেন, জিম্মিকারীদের সাথে এখনো যোগাযোগ করা যায়নি।
সোমালিয়া জলদস্যু কারা?
সোমালিয়া উত্তর আফ্রিকার একটি গরীব দেশ। এই দেশের বেশিরভাগ মানুষই মৎসজীবীতার সাথে জড়িত। মাছ শিকার তাঁদের প্রধান আয়ের উৎস। কিন্তু, বর্তমান বিশ্বের হিসেবে সোমালিয়া একটি অত্যন্ত গরীব দেশ। অপরদিকে সাগরবেষ্টিত হওয়ায় সোমালিয়ায় মাছ শিকার করতে অনেক বিদেশি জাহাজও এসে ভিড়ে।
ভারত সাগরকে ঘিরে মূলত সোমালিয়া জলদস্যুদের দস্যুবৃত্তি বিস্তৃত। তাঁরা সুযোগ পেলেই বিদেশী মাছ ধরার জাহাজ, ট্রলারগুলোতে হামলা চালায়। সোমালিয়া দস্যুদের উত্থান ধরা হয় ১৯৯১ সালের পর।
সোমালিয়ায় দস্যুবৃত্তির সূচনা যেভাবে
দেশটির জন্ম হয় ১৯৬০ সালে। কিন্তু, ১৯৯১ সালে সামরিক শাসনের উৎখাতের পরে নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে দেশটি। পরের দুই দশকের বেশি সময় যুদ্ধবিগ্রহে বিধ্বস্ত সোমলিয়াতে কার্যকর কোন সরকার ছিল না।
এতে করে সোমালিয়ার সাধারণের জীবনে নেমে আসে এক বিপর্যয়কর অবস্থা। তাঁরা ক্রমশ দ্ররিদ্র জাতিতে পরিণত হতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে স্থানীয় সংঘাত, সহিংসতা। তাছাড়া, বিদেশি যেসব জাহাজ এ অঞ্চলে মাছ শিকার করতে আসতো তাঁদের কারণে সোমালিয়ানরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং দস্যুবৃত্তিতে নেমে পড়ে।
২০০৫ সাল থেকে, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, জলদস্যুতা ঘটনা বৃদ্ধির উপর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি
ওসানস বিয়ন্ড পাইরেসির এক জরীপ অনুসারে, জলদস্যুতার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলোকে অতিরিক্ত খরচসহ বছরে প্রায় ৬.৬ থেকে ৬.৯ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে যা বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব ফেলছে।
জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইকনমিক রিসার্চ এর এক জরীপে বলা হয়, জলদস্যুতার বৃদ্ধির ফলে জলদস্যুতার সাথে সম্পর্কিত লাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। বীমা কোম্পানিগুলো জলদস্যু আক্রমণ থেকে মুনাফা অর্জন করছে, জলদস্যুতার প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য বীমার প্রিমিয়ামের পরিমাণও বেড়ে গিয়েছে।
সোমালিয়া ধর্ম
সোমালি সমাজের একক হচ্ছে `রের' তথা বৃহৎ পরিবারভিত্তিক গোত্র। যাদের সদস্যরা একই পুরুষ পূর্বসূরীর রক্ত থেকে উদ্ভূত। একজন সোমালি তার নিজস্ব গোত্র ও গোত্রটি যে বৃহত্তর গোষ্ঠীর অন্তর্গত, তার প্রতি অনুগত। সোমালি সমাজব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক।
সোমালিরা মূলত যাযাবর প্রকৃতির। সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে এদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রখর এবং প্রায়ই প্রতিবেশী গোত্রে গোত্রে রক্তাক্ত সংঘর্ষ বাঁধে। ইসলাম সম্পর্কে এদের ধারণা স্বচ্ছ নয় এবং মূলত প্রাচীন সাধু-সন্ন্যাসীদের পূজাতেই সীমাবদ্ধ।
তবে যেসব সোমালি উপকূলীয় শহরগুলিতে বসবাস করে ও কৃষিকাজের সাথে জড়িত, তারা দীর্ঘদিন ধরে আরবদের সান্নিধ্যে একটি সংহত সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এরা মূলত আরব বহির্বিশ্ব ও অভ্যন্তরীণ যাযাবর সোমালিদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
যাযাবর সোমালিয়
ঊষর উপকূলীয় অঞ্চল বাদে বাকী সব স্থানেই যাযাবর সোমালিদের দেখা মেলে। সোমালিরা সোমালি ভাষায় কথা বলে, যেটি আফ্রো-এশীয় ভাষাপরিবারের কুশিটীয় শাখার একটি ভাষা। রক্তক্ষয়ী ও দীর্ঘস্থায়ী সোমালি গৃহযুদ্ধের কারণে বিপুল সংখ্যক সোমালি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমিয়েছেন।
ধারণা করা হয় আরবেরা লোহিত সাগর পার হয়ে এসে সোমালিদের ইসলামে দীক্ষিত করে। ১৪শ শতকের দিকে সোমালিরা উপকূলীয় শুষ্ক সমভূমি অঞ্চল ছেড়ে দক্ষিণে তাদের বসতি সম্প্রসারণ করা শুরু করে। যদিও সোমালীয়দের উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ এই তিন ধরনের সম্প্রদায়ে ভাগ করা যায়, সোমালিরা অত্যন্ত একতাবদ্ধ একটি জাতি এবং নিজেদের জাতিসত্তা নিয়ে গর্বিত।
আই নিউজ/এইচএ
- কেএফসির মালিকের জীবন কাহিনী
- প্রজাপতি: আশ্চর্য এই প্রাণীর সবার ভাগ্যে মিলন জোটে না!
- মা-শাশুড়িকে হারিয়েও করোনার যুদ্ধে পিছিয়ে যাননি এই চিকিৎসক
- বিশ্বের অদ্ভুত কিছু গাছের ছবি
- সোনার দাম এত কেন : কোন দেশের সোনা ভালো?
- যেখানে এক কাপ চা পুরো একটি পত্রিকার সমান!
- তিন রঙের পদ্মফুলের দেখা মিলবে এই বিলে
- রহস্যময় গ্রামটি লাখো পাখির সুইসাইড স্পট
- ২০২৩ সালে পৃথিবীর শক্তিশালী ১০টি দেশ!
- বায়েজিদ বোস্তামি: মাতৃভক্তির এক অনন্য উদাহরণ