Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী

প্রকাশিত: ০২:২৬, ২৩ আগস্ট ২০২০

নাকের ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ এবং করোনার সাথে সম্পর্ক

হঠাৎ করে ঘ্রাণ চলে গেলে ধরে নিতে হবে আপনি করোনা আক্রান্ত।  কয়েকদিন আগে জ্বর হয়ে ভালো হয়েছে, কিন্তু এখনও নাকের গন্ধ পাচ্ছেনা না  তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই করোনার টেস্ট করা উচিত। টেস্ট যদি তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব না হয়, তবে আগে নিজেকে  পরিবারের বাকিদের থেকে আইসোলেশনে রাখবেন।

জন্মের সময় আমরা পাঁচটি বিশেষ অনুভূতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করি,সেগুলোকেই বলা হয় পঞ্চইন্দ্রীয়।তার মধ্যে অন্যতম হল গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা। আমাদের দেহের সবচেয়ে দৃষ্টিগোচর অংশ হলো মুখ এবং এই মুখের মাঝখানে থাকে নাক।  আমরা নাকে ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই অলফেক্টরি নামক  স্নায়ুর  মাধ্যমে। নাকের ভেতরে ওপরের দিকে এই বিশেষ স্নায়ুতন্ত্রটি ছড়িয়ে রয়েছে যা গন্ধ শনাক্ত করে। শ্বাস নেওয়ার সময় প্রবেশ করা বাতাস এসব স্নায়ুতন্ত্রে আঘাত করে,তখনই ঘ্রাণ বা গন্ধের উদ্রেক হয়। নাকের দুই দিকেই স্নায়ুতন্ত্র সমানভাবে থাকে, যাকে বলে গন্ধ গ্রহণের চিহ্নিত এলাকা। এই স্নায়ুতন্ত্র বা নার্ভ সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। কোনো কারণে এই নার্ভটি অকার্যকর হয়ে গেলে আমরা ঘ্রাণ বা গন্ধ পাই না। আর ঘ্রাণ না পেলে আমাদের জিহ্বার টেস্ট বাড যা স্বাদ পেতে সাহায্য করে, তাও অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে একই সাথে নাকে ঘ্রাণ না পেলে মুখে স্বাদও পাই না। তাই বলা হয় ঘ্রাণশক্তি এবং স্বাদ একে অন্যের পরিপূরক।

নাকের ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়ার কারণ গুলো নিম্নরূপ :

 

 ১. নাকের লোকাল/নিজস্ব কারণ

*সাধারণ ঠান্ডা থেকে সর্দির কারণে নাক বন্ধ হয়ে থাকা  *অ্যালার্জিজনিত নাকের হাচি জনিত সমস্যা, *সাইনুসাইটিস, *নাকের হাড় বাঁকা, *নাকের পলিপ, *নাকের বিভিন্ন  টিউমার,
*এট্রফিক রাইনাইটিস(যেটাতে রোগী নিজে ঘ্রান পাবেনা, কিন্তু পাশের লোকজন গন্ধ পাবে)।

২. মস্তিষ্কের সমস্যা
*বার্ধক্য জনিত, *পারকিনসন ডিজিজ,  *ব্রেইন টিউমার, *আলঝেইমার ডিজিজ, *মস্তিষ্কের অপারেশন, *মাথায় আঘাত পাওয়া। 

৩. অন্যান্য কারণ

* অনিয়ন্ত্রিত  ডায়াবেটিস,
* রেডিও থেরাপি, * জন্মগত সমস্যা, *মানসিক রোগ।

৪.কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু ওষধ
যেমন-  হৃদরোগিদের জিটিএন, ক্যাপট্রোপিল ইত্যাদি ড্রাগ এর  কারণে। এছাড়াও সবসময়  জীবাণুনাশক ওষুষের সংস্পর্শে আসলে। এছাড়া একটানা দীর্ঘদিন ধরে নাকের ড্রপ (এন্টাজল/রাইনোজল/আফরিন) চিকিৎসক এর পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করলে সাময়িক এনোসমিয়া দেখা দিতে পারে।

কোভিড-১৯ এর সাথে ঘ্রাণ শক্তি কমে যাওয়ার সম্পর্ক

আমরা জানি করোনা ভাইরাসের একটি অন্যতম প্রবেশপথ হচ্ছে নাক। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত বক্তির নাক দিয়ে প্রবেশ করে নাকের ভেতরে ওপরের দিকে পার্শ্ব দেয়াল বা নাকের ছাদে গন্ধ  নির্ণয়ের জন্য যে সেনসিটিভ নার্ভ রিসিপ্টর রয়েছে সেখানে ভাইরাস প্রাথমিক ভাবে বংশ বৃদ্ধি করতে পারে (যদিও আমরা জানি ভাইরাস এর বংশবৃদ্ধির প্রধান অংগ হলো ফুসফুস)। তখন ভাইরাস এই বিশেষ অলফ্যাক্টরি স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে,  নাকের ভেতরে শ্বাসের সঙ্গে নেয়া বাতাস বাঁধাপ্রাপ্ত হবে বা উল্লিখিত স্থানে পৌঁছতে পারে না।ফলে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ঘ্রাণ পাবেন না। গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা চলে যায় বলেই খাবার আমাদের কাছে যেমন গন্ধহীন হিসেবে ধরা দেয়, তেমনই আবার স্বাদহীনও হয়।

কখন ঘ্রাণ না পেলে করোনা সন্দেহ করবেন

উপরে উল্লেখিত নাকের নিজস্ব বা অন্যান্য কারণের কোনটির লক্ষণ যদি না দেখা যায় এবং নাকের রোগের ইতিহাস না থাকে, তাহলে হঠাৎ করে ঘ্রাণ চলে গেলে ধরে নিতে হবে আপনি করোনা আক্রান্ত।  কয়েকদিন আগে জ্বর হয়ে ভালো হয়েছে, কিন্তু এখনও নাকের গন্ধ পাচ্ছেনা না  তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই করোনার টেস্ট করা উচিত। টেস্ট যদি তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব না হয়, তবে আগে নিজেকে  পরিবারের বাকিদের থেকে আইসোলেশনে রাখবেন। তবে স্বস্তির খবর হচ্ছে গবেষণায় দেখা গেছে যেসব করোনা আক্রান্ত রোগীর নাকের ঘ্রাণ চলে যাওয়ার উপসর্গ ছিলো তারা বেশীরভাগই অল্পদিনের মধ্যেই নিয়ম মেনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ঊঠেছেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে আইসোলেশন এবং বিশ্রামে থেকে চিকিৎসক এর পরামর্শ মোতাবেক নিয়ম মেনে চলতে হবে।

গরম জলের ভাপও নিতে হবে অন্ততপক্ষে দিনে  পাঁচ বার।

​ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে কিছু ঘরোয়া টেকনিক

ঘ্রাণ শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করে ‌এমন কয়েকটি সহজলভ্য উপাদান এর ঘ্রাণ প্রতিদিন নিয়মিত ২-৩ বেলা  শুকতে পারেন। যেমন : লেবুর পাতা,লেবু, গোলাপ ফুল, গোলাপ জল, লবঙ্গ। যদি হাতের কাছে এসব কিছু না পাওয়া যায় তবে লেবু ও গোলাপ ফুলের গন্ধযুক্ত সাবানও কাজে আসতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার সাত থেকে ১৪ দিনের মধ্যে স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসছে। কিন্তু ১০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। তাদের ক্ষেত্রে এই ঘ্রাণশক্তি এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই ফিরে আসে। মনে রাখতে হবে, ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া স্নায়ুতন্ত্র পুনরায় তৈরী হতে কিছু সময়মতো লাগবেই। সাধারণত এর জন্য আলাদা করে কোনো ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে  কোন কোন চিকিৎসকরা ভিটামিন বি১,বি৬ এবং বি১২ ট্যাবলেট  এর কথা বলে থাকেন।
পরিশেষে বলি, আতংকিত না হয়ে সচেতন থাকি এবং সচেতন রাখি।

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফীবিসিএস (স্বাস্থ্য), নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা

[email protected]

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়