স্বাস্থ্য ডেস্ক
আপডেট: ১৫:২১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০
অতিরিক্ত ইলিশ খেলে যেসব ক্ষতি হয়
চলছে ইলিশের মৌসুম। বাজারে খুব সহজেই এখন ইলিশ পাওয়া যায়। খেতে দারুণ সুস্বাদু এই মাছ সবারই প্রিয়। কিন্তু যারা নিয়মিত ইলিশ খান তাদের জন্য কিছুটা উদ্বেগের বিষয় রয়েছে।
সম্প্রতি ভারতীয় গবেষণায় জানা গেছে যে, ইলিশ বেশি খেলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ 'ফুড সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অব ইন্ডিয়া' (এফএসএসআই), তাদের সাম্প্রতিক নোটিফিকেশনে তালিকাভুক্ত করেছে ১২০ রকমের সামুদ্রিক মাছকে। যাদের অতিরিক্ত উদরস্থ করলে হিস্টামিন-বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই তালিকায় সার্ডিন, টুনা, ম্যাকরেল-এর মতো সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি রয়েছে ইলিশও।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা (যিনি এফএসএসআই-এর দায়িত্বপ্রাপ্তও) রাকেশ শর্মা প্রথমেই একটি বিষয় স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। সেটি হলো, ইলিশের ছিদ্র খুঁজতে কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হয়নি। ঘটনা হলো, অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে গোটা দেশে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার প্রবণতা গত কয়েক বছর ধরে অনেকটাই বেড়েছে। যা আগে ছিলো না। সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখতে পাচ্ছেন, এই ধরনের কিছু মাছে হিস্টিডিন নামে একটি অ্যামিনো অ্যাসিডের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত রকম বেশি। যা থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়ে মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়।
বিষক্রিয়ার ধরনটা কী?
অ্যালার্জি অ্যান্ড অ্যাজমা নেটওয়ার্ক ইন্ডিয়া (এএএনআই)-এর প্রেসিডেন্ট বৈয়াকারনাম নাগেশ্বরের ব্যাখ্যা, শ্বাসের সমস্যা, গায়ে গোটা বেরনো, নাক দিয়ে জল, অবিরল হাঁচি, পেটে খিঁচ ধরা, গায়ে জ্বালা-ভাব তৈরি হওয়া, ফোড়া বেরোনোর মতো ঘটনা ঘটে। ওই সামুদ্রিক মাছগুলোতে বেশি হিস্টামিন থাকায় এমন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়।
এফএসএসআই সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, মূল সমস্যাটার জন্য আদতে দায়ী ডিস্ট্রিবিউশন চেন-এর অবহেলা এবং যথাযথ ফ্রিজিং-এর অভাব। মৎস্যজীবী জল থেকে মাছটি তুললেন, তার পর সেটি মহাজনের কাছে এলো, সেখান থেকে আড়তদার হয়ে বিভিন্ন প্রদেশের বাজারে পৌঁছাচ্ছে। সেখানে আবার আড়তদারের হাত ঘুরে তা চলে যায় ছোট ছোট বাজারের মাছওয়ালাদের কাছে। তাদের কাছ থেকে কিনে বাড়িতে নিয়ে এসে তার পর রান্নায় বসানো হয়। কখনো বা ফ্রিজে রেখে দেয়া হয়। এই যে সুদীর্ঘ পথপরিক্রমা, তার মধ্যে আগাগোড়া যে তাপমাত্রায় মাছটি থাকার কথা সেটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থাকছে না বলে নজর করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বহু ক্ষেত্রেই যে বাক্সগুলোতে মণ মণ মাছ চালান হয়, তাতে হিমায়নের ব্যবস্থা ঠিক মতো থাকে না। অভাব রয়েছে সচেতনতারও।
বাঁকুড়া ক্রিশ্চান কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বিশদে জানালেন, যেকোনো সামুদ্রিক মাছে কমবেশি হিস্টিডিন থাকে। সমস্যা হলো, ডিকার্বোস্কিলেজ নামে একটি উৎসেচকের প্রভাবে এই হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরি হয়। সেটিই আসলে ক্ষতিকারক। কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া এই উৎসেচকটিকে সংশ্লেষ করতে বা বানাতে সাহায্য করে। সমুদ্র থেকে যখন নদীতে মাছ আসে তখন তাদের শরীরে হিস্টিডিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। জলের ভেতর হিস্টিডিন থেকে হিস্টামিন তৈরির বিক্রিয়াটি হয় না, কিন্তু ডাঙায় তোলার পরে ১৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় মাছ থাকলেই ওই ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে সঠিকভাবে বরফজাত না থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই হিস্টামিন তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। যদি আগাগোড়া ১৫ ডিগ্রির নিচে মাছকে রাখা যায় তাহলে ব্যাকটেরিয়াগুলো অকেজো হয়ে থাকে, বিষক্রিয়ার সমস্যাও হয় না।
তাহলে পানি থেকে ধরার পরে কতক্ষণ পর্যন্ত সামুদ্রিক মাছ খাওয়া নিরাপদ? এর কি কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা রয়েছে? চন্দ্রনাথবাবু জানাচ্ছেন, পানি থেকে তোলার পরে এই সামুদ্রিক মাছগুলোর শরীরে হিস্টামিন সংশ্লেষ হতে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অন্তত ৫ ঘণ্টা লাগে। ফলে এই সময়সীমার মধ্যে খেলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে নদী বা সাগর মোহনা সন্নিকট ছাড়া এমন সুযোগ তো বড় একটা পাওয়া যায় না!
আরো একটি প্রয়োজনীয় তথ্য, এই সামুদ্রিক মাছগুলোতে যে হিস্টিডিন থাকে তা মানুষের শরীরের জন্য ভালোই। এই অ্যামিনো অ্যাসিড (হিস্টিডিন) শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ফলে টাটকা এই সব সামুদ্রিক মাছ খাওয়া বরং ভালো।
হিসেব অনুযায়ী ১৮০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হিস্টামিন শরীর নিতে পারে কোনো সমস্যা ছাড়াই। তাই খাওয়ার সময় একটু সতর্ক থাকলেই হলো। একসঙ্গে ছয়-আটটি টুকরো পাতে না ফেললে, আপনি নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন সুস্বাদু ইলিশ!
আইনিউজ/এসপি
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর