ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
আপডেট: ১৮:২১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
ভ্রমণে বমি হয় কেন?
অনেকেই আছেন গাড়িতে উঠলেই জার্নির সময় বমি করেন বা বমি বমি ভাবের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকেন।
মোশন সিকনেস সাধারণত বাস/কার/ট্রেন/ উড়োজাহাজে যাত্রাকালীন অসুস্থতাকে বোঝায়। একারণে যারা এই সমস্যায় ভোগেন তারা আতংকে লম্বা জার্নি করতে চান না বা পরিবারের অন্যান্যদের কাছে বিব্রত বোধ করেন। যদিও বাচ্চাদের মাঝে এই সমস্যা তুলনামূলক বেশী দেখা যায়, তবে বড়দের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা কমবেশি সব পরিবারেই দেখা যায়। আসুন সহজে জেনে নেই এই সমস্যার কারণ এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়।
ভ্রমণে কেন বমি হয়?
বমির জন্য দায়ী আমাদের অন্তঃকর্ণের সমন্বয়হীনতা। চলন্ত বাসের ঝাঁকুনিতে আমাদের কানের ভেতরের ফ্লুইড নড়াচড়া করে। যার কারণে অন্তঃকর্ণ ব্রেইনকে ইনফরমেশন দেয়, বডি মুভ করে, কিন্তু এদিকে আমাদের চোখ আবার ব্রেইনকে ইনফরমেশন দেয় যে বডি স্থির আছে। শরীর নড়াচড়া করছে না। দুই রকম ইনফরমেশনের জন্য মস্তিষ্কের সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়! আর এ ধরনের অবস্থাকে ব্রেইন বিষ হিসেবে শনাক্ত করে! তাই বিষ কে বডি থেকে বের করে দেয়ার জন্য যাত্রাকালে বমি হয় বা বমি বমি ভাব হয়। ভ্রমণকালীন অসুস্থতার উপসর্গগুলি পরিলক্ষিত হয় যখন কান, চোখ এবং জয়েন্টগুলির মতো সংবেদনশীল অঙ্গ থেকে মস্তিষ্ক অসংলগ্ন বার্তা পায়।
চলন্ত বাসের ঝাঁকুনিতে আমাদের কানের ভেতরের ফ্লুইড নড়াচড়া করে। যার কারণে অন্তঃকর্ণ ব্রেইনকে ইনফরমেশন দেয়, বডি মুভ করে, কিন্তু এদিকে আমাদের চোখ আবার ব্রেইনকে ইনফরমেশন দেয় যে বডি স্থির আছে। শরীর নড়াচড়া করছে না। দুই রকম ইনফরমেশনের জন্য মস্তিষ্কের সমন্বয়হীনতার সৃষ্টি হয়! আর এ ধরনের অবস্থাকে ব্রেইন বিষ হিসেবে শনাক্ত করে! তাই বিষ কে বডি থেকে বের করে দেয়ার জন্য যাত্রাকালে বমি হয় বা বমি বমি ভাব হয়।
মোশন সিকনেস/জার্নিতে বমির সমস্যা প্রতিরোধে করণীয় :
১. বাসে বসে ঘুমিয়ে গেলে আর বমি আসে না কারণ চোখ তখন ইনফরমেশন দেয় না ফলে ব্রেইনে কোনো কনফিউশন তৈরি হয় না!
ঘুম না আসলেও হালকাভাবে দুচোখ বন্ধ করে রাখুন। অথবা একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব নিয়ে আসুন। উপকারে আসবে।
২. চলন্ত অবস্থায় যানবাহনের ভেতরে দৃষ্টি নিবদ্ধ না রেখে জানালা দিয়ে বাইরে তাকান! এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে সামনের দিকে বা জানালার কাছে আসন নিন। জানালাটা খুলে দিন, ঠান্ডা বাতাস লাগবে শরীরে। ভালো লাগবে।
৩. যাদের জার্নির সময় বমির সমস্যা আছে তারা চলন্ত গাড়িতে বই, পত্রিকা ইত্যাদি পড়তে থাকলে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
৪. গাড়িতে আড়াআড়িভাবে বা যেদিকে গাড়ি চলছে, সেদিকে পেছন দিয়ে বসবেন না। সিটে উল্টো হয়ে বসবেন না কখনও। এতে বমি বা বমি বমি ভাবের আশংকা থাকে। অনেকে বন্ধু বান্ধব বা পরিবারের সাথে জার্নিতে আড্ডা দেয়ার জন্য ঘুরে বসেন সিটে। কিন্তু গাড়ি যেদিকে মুখ করে আগাচ্ছে তার বিপরীত দিকে মুখ করে থাকা শুধু মোশন সিকনেসই দিবে না, তা বিপজ্জনকও অনেক। এছাড়া অনেক গাড়িতে বিপরীতমুখী সিট থাকে, আপনার যদি ঘন ঘন মোশন সিকনেস হয় তাহলে সেসব সিটে বসবেন না। এছাড়া পিছনের সিটে বসা থেকেও বিরত থাকতে হবে। যানবাহনের পিছনের অংশই বেশি ঝাঁকি খায়, তা থেকে মোশন সিকনেস হতে পারে।
৫. যাদের এই সমস্যা আছে তারা যাত্রা শুরুর আগে ভরপেট খাবেন না ।
৬. কিছু ওষুধ আছে (Vestibular Sedative), যেগুলো বমি বা বমি বমিভাব বন্ধ করতে পারে, চিকিৎসকের পরামর্শমতো বমিভাব দূর করার জন্য বাহনে উঠার আগেই এই জাতীয় ঔষধ খেয়ে নিতে পারেন। যদি আপনার যাত্রাকালে ঘন ঘন এই সমস্যা হতে থাকে তাহলে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাবেন। এই ওষধগুলো সাধারণত ভ্রমণের ২০-৩০ মিনিট পূর্বে খেতে হয়।
৭.গাড়িতে বসে আদা কিংবা চুইংগাম চিবালেও উপকার পাওয়া যায়। তবে ভ্রমণের সময় ধূমপান করবেন না।
৮."গাড়িতে উঠলেই আমার বমি হবে"—এমন চিন্তা জার্নির সময় কখনই মনে আনা যাবে না। যাদের এই সমস্যা আছে তারা ব্যাগে কয়েকটা লেবু পাতা রাখতে পারেন ও গাড়িতে চড়ে তা নাকের কাছে ধরতে পারেন মাঝে মাঝেই।
জার্নির আতংক কাটিয়ে উপভোগ করুন ভ্রমণকে।
ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী, বিসিএস (স্বাস্থ্য), নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা। প্রাক্তন সহকারী রেজিস্ট্রার, সিওমেক হাসপাতাল। [email protected]
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর