Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

ডা. মো: আব্দুল হাফিজ শাফী

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৫ জানুয়ারি ২০২১
আপডেট: ২৩:০৪, ৫ জানুয়ারি ২০২১

নাকের পলিপজনিত সমস্যা : অপচিকিৎসা রুখতে হলে জানতে হবে

নাকের ভিতরে যে মাংসপেশি এবং মিউকাস-এর আবরণ আছে, সেগুলো অনেক সময় ইনফেকশন বা এলার্জির কারণে সংবেদনশীল হয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া করতে শুরু করে। অনেক দিন ধরে যদি বিনা চিকিৎসায় থাকা হয়, তাহলে তখন এগুলোতে পানির মতো করে ফুলে শেষ পর্যন্ত নাকে পলিপ তৈরি হয়।

অনেকেই নাকের মধ্যে মাংসপিণ্ডের মতো দেখায় সেটাকে পলিপ বলে ভুল করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো পলিপ নয়, এগুলোকে টারবিনেট বলে। ইনফিরিয়র টার্বিনেট দুই পাশে বড়। এই ইনফিরিয়র টার্বিনেটকে পলিপ বলে বিভিন্ন অপচিকিৎসা করা হয়।

লক্ষণ দেখে পলিপ কিভাবে ধারণা করা যায়?

হাঁচি, সর্দি, নাক থেকে পানি পড়া—এগুলো তো হবেই, এসব সমস্যায় অনেক দিন ধরে ভুগতে ভুগতে দেখা যাবে নাক বন্ধের সমস্যা হচ্ছে। নাক দিয়ে শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে। সংক্রমণ বা ইনফেকশন হয়ে নাক থেকে সর্দি পড়ে। অনেক সময় সর্দি পেকে নাক থেকে পুঁজের মতো তৈরি হওয়া শুরু হয়। এই জিনিসগুলো চলতে চলতে এক পর্যায়ে স্থায়ী ভাবে নাক বন্ধ হয়ে যায়। এই লক্ষণগুলো সচরাচর নাকের পলিপ আক্রান্ত সব রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়।

নাকের পলিপের প্রকারভেদ এবং পার্থক্য

চিকিৎসা বিজ্ঞানে নাকের পলিপকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটিকে ইথময়ডাল পলিপ বলি। আরেকটিকে এনট্রোকোয়ানাল পলিপ বলি। ইথময়ডাল পলিপ, এগুলোর ক্ষেত্রে নাকের যে ওপরের অংশ, যাকে নাকের সেতু বলা হয়, এখানে অনেক কোষ থাকে। কোষের দেয়াল পাতলা থাকে, এগুলো ফুলে মাংসপেশি হিসেবে ঝুলে পুরোটাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ এলার্জি। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এই ধরণের পলিপ বেশি দেখা যায়। ইথময়ডাল পলিপ নাকের দুই পাশেই একসাথে হয়।

এনট্রোকোয়ানাল পলিপ, যেটা মেক্সিলা নামক বায়ুকুঠুরি থেকে আসে, সাধারণত একদিকেই হয়। এনট্রোকনাল পলিপ যেটা, সেটা সাধারণত নাকের পেছনের দিকে গিয়ে গলায় গিয়ে বড় হয়ে নাকের আকৃতিটাই বন্ধ করে দেয়। তখন শ্বাস নিতে পারে না। এই ধরণের পলিপ এর মূল কারণ ইনফেকশন। এনট্রোকোয়ানাল পলিপ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাধারণত বেশি হয়।

যে ভূল/ভ্রান্ত ধারণা অপচিকিৎসার জন্ম দেয়

অনেকেই নাকের মধ্যে মাংসপিণ্ডের মতো দেখায় সেটাকে পলিপ বলে ভুল করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো পলিপ নয়, এগুলোকে টারবিনেট বলে। ইনফিরিয়র টার্বিনেট দুই পাশে বড়। এই ইনফিরিয়র টার্বিনেটকে পলিপ বলে বিভিন্ন অপচিকিৎসা করা হয়। পলিপটা হবে সাদা, আঙ্গুর ফলের মতো। এটা যদি আমরা কিছু দিয়ে স্পর্শ করি এর কোনো সেন্স থাকবে না। অপরদিকে টার্বিনেট হবে একটু লালচে। আর পলিপের চারপাশে দেখা যায় ঝুলন্ত থোকার মত।

নাকের পলিপের যথাযথ চিকিৎসা কি হতে পারে?

পলিপ হয়ে থাকলে দেখতে হবে এটি প্রাথমিক অবস্থায় ছোট রয়েছে নাকি। প্রাথমিক অবস্থায় যদি খুব ছোট থাকে তাহলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা অ্যান্টি অ্যালার্জিক মেডিসিন দেই এবং একই সাথে লোকাল স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এতে নিয়ম মেনে চললে অনেক সময় নাকের ওই পলিপ ছোট হয়ে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর যদি পরীক্ষা করে দেখা যায়, নাকের পলিপ বেশি বড় হয়ে গিয়েছে; সে ক্ষেত্রে বড় পলিপ ওষধ দ্বারা নাক থেকে দূর করা যায় না। সে সব ক্ষেত্রে অপারেশন করে নাকের পলিপ সম্পূর্ণ সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর পলিপ অপারেশনের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে আধুনিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে ফেস (FESS) খুবই কার্যকর এবং জনপ্রিয়। সহজ কথায়, নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা পলিপের উৎপত্তিস্থল, আকার, সংখ্যা ইত্যাদি দেখে অপারেশন এর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফীএমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), নাক-কান-গলা বিভাগ, বিএসএমএমইউ (প্রেষণে), ঢাকা।

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়