স্বাস্থ্য ডেস্ক
আপডেট: ১০:৫০, ২৬ মে ২০২১
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস: কীভাবে ছড়ায়, সংক্রমণ রোধে করণীয় কী?
একদিকে করোনার প্রকোপ, তার ওপরে আতঙ্ক বাড়াতে যুক্ত হয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ। ভারত এই ইনফেকশনটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশেও পাওয়া গেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রান্ত রোগী। শুধু কি তাই, এরই মধ্যে একজন মারাও গেছেন।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ইনফেকশন অবহেলা করলে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। এটি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, ত্বক থেকে ফুসফুস এবং মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি এই ধরনের রোগীদের অনেকে তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।
ভারতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করা হতো। দেশটির চিকিৎসকেরা বলেন, এই স্টেরয়েড চিকিৎসার সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের যোগসূত্র রয়েছে।
তবে সতর্ক থাকলে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই এই রোগ সম্পর্কে সবারই জানা প্রয়োজন।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?
এটি ফাঙ্গাস বা ছত্রাকসৃষ্ট রোগ। এক ধরনের বিশেষ ছত্রাক পরিবার থেকে মানুষের শরীরে রোগটি বাসা বাঁধে। মিউকোর ছত্রাকসৃষ্ট এ রোগের নাম 'মিউকোর-মাইকোসিস'। এতে আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ তৈরি হয়। আক্রান্তদের নাক থেকে শ্লেষ্মা মিশ্রিত কালো শক্ত পদার্থ বের হয়। এ কারণেই একে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক রোগ বলা হয়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বায়ুবাহিত রোগ। ছত্রাকের বীজগুটি বা স্পোর বাতাসে ভেসে বেড়ায়। শ্বাসগ্রহণের সময় নাসারন্ধ্র দিয়ে সাইনাস ও ফুসফুসে প্রবেশ করে। এ কারণে এ দুটি স্থান বেশি আক্রান্ত হয়।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কীভাবে ছড়ায়?
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি থাকে, এমনটা নয়। চিকিৎসকদের মতে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড’ ইনফেকশন হতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোগীরা অপরিচ্ছন্ন থাকলে, এর সংক্রমণের শঙ্কা বেড়ে যায়।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ‘পার্সন টু পার্সন’ অর্থাৎ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। বিরল ছত্রাকজনিত এই রোগ থেকে বাঁচতে হলে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। এমনকি দরকার না হলে স্টেরয়েড ও অক্সিজেন না দেয়ার মতো কাজগুলো করতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে!
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ডায়াবেটিস আক্রান্তদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির বিষয়। করোনা চিকিৎসায় ব্যবহার হওয়া ডেক্সামেথাসনের মতো স্টেরয়েড ডায়াবেটিসও বাড়িয়ে দেয়। স্টেরয়েড করোনা আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে।
ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ
১. ফুসফুসের লক্ষণ- জ্বর, কাশি, বুকব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
২. নাক ও মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত লক্ষণ- মুখের একপাশ ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা, একদিকের নাক বন্ধ, নাকের ভেতর কালো ক্ষত ও জ্বর।
৩. ত্বকের লক্ষণ- চামড়ায় ফুসকুড়ি বা ক্ষত। আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যাওয়া ও জায়গাটিতে ব্যথা হবে এবং গরম থাকবে। ক্ষতের চারপাশ ফুলে যাবে।
৪. আন্ত্রিক লক্ষণ- পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণ হলে পেটব্যথা, বমিভাব ও বমি হয়। পরিপাকপ্রণলীতে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যার কারণে কালো পায়খানা ও কফি রঙের বমি হতে পারে।
৫. শরীরে বিস্তৃতির লক্ষণ- করোনায় আক্রান্ত, ডায়াবেটিক রোগী বা যাদের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা কম তাদেরকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রমণ করলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। তখন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ বোঝার উপায় থাকে না। এই ছত্রাক দ্বারা মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে রোগী কোমায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে ও শেষতক মৃত্যু ঘটতে পারে।
করণীয়
১. হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
২. নাক থেকে পুঁজ বের হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মাপা। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও তাই।
৩. সঠিক পরিমাণে এবং ঠিক সময় স্টেরয়েড নেয়া।
৪. অক্সিজেন থেরাপির সময় পরিষ্কার, স্টেরিলাইজ করা জল ব্যবহার করা (হিউমিডিফায়ারে)।
৫. প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধ খাওয়া।
তবে এ বিষয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সর্তক থাকতে হবে সবাইকে। ফাঙ্গাস ইনফেকশন দ্রুত চিহ্নিত করে ঔষধ প্রয়োগ করার মাধ্যমে ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে, এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস থাকা করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আইনিউজ/এসডিপি
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর