আহমেদ হেলাল সাকাফি
আপডেট: ০০:২৯, ২৪ জুলাই ২০২১
আমরা কেন চিনি খেতে নিষেধ করি?
রোনালদো কিছুদিন আগে প্রেস কনফারেন্সে কোকাকোলার বোতল সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছিলো। এটা নিয়ে সারা দুনিয়ায় হৈচৈ পড়ে গিয়েছিলো। কেন রোনালদো এটা করলেন? এর উত্তর আছে, আপনারা যদি কোকাকোলার বোতলের লেবেলটা পড়েন তাহলে দেখবেন ওখানে চিনি আর সামান্য লবণ ছাড়া কিছুই নেই। কোকাকোলার বোতল সরানো মানে আসলে চিনি সরানো।
হৃত্তিক রোশনের একটা ইন্টারভিউ দেখেছিলাম। সেখানে সে বলছিলো, তার খুব দুঃখ লাগে যখন বাবা মা বাচ্চাদের ক্যান্ডি কিনে দেয়। ক্যান্ডি তৈরির মূল উপাদান চিনি। হৃত্তিক চিনিকে বলেছে জ্যাহের, যার বাংলা বিষ। প্রশ্ন আসতেই পারে কেন?
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের সাজেশন হলো দিনের কার্বোহাইড্রেটের চাহিদার ১০% এর বেশি কোন মতেই চিনি থেকে নেয়া যাবে না। অভিজ্ঞজনদের মতে এটা আরো কম।
• ডেইলি ১৬০০ ক্যালরির জন্য ৬ চা চামচের বেশি চিনি খাওয়া নিষেধ।
• ডেইলি ২০০০ ক্যালরির জন্য ১০ চা চামচের বেশি চিনি খাওয়া নিষেধ।
• ডেইলি ২৪০০ ক্যালরির জন্য ১৪ চা চামচের বেশি চিনি খাওয়া নিষেধ।
• ডেইলি ২৮০০ ক্যালরির জন্য ১৮ চা চামচের বেশি চিনি খাওয়া নিষেধ।
( ১ চা চামচ = ৫ গ্রাম চিনি)
এতক্ষণে যারা নিজেদের সেইফ জোনে ভাবছেন অর্থাৎ যারা এই চার্টের তুলনায় কম চিনি খান তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা কি জানেন এক গ্লাস অরেঞ্জ জুসে আপনার সারা দিনের চিনির কোটা শেষ। এক ক্যান কোকাকোলায় থাকে ৩৯ গ্রাম সুগার। একটা মিল্ক সেকে থাকে ৮৪ গ্রাম সুগার ( ১৬ আউন্সের সার্ভিং এ)। এক সার্ভিং দই এ থাকে ৩৫ গ্রাম সুগার। এভাবে সারা দিন আপনি যে কেক, পেস্ট্রি, ডোনাট, ব্রেড, বিস্কিট খান ওর সব কিছুতেই আছে সুগার। সবচেয়ে অবাক কান্ড হলো আপনি যে বিরিয়ানি খান, বোরহানি খান, সস খান ওর সব কিছুতেই চিনি আছে।
রেস্টুরেন্ট ও বেকারি আইটেমে চিনি থাকেই। চিনি শুধু স্বাদের জন্য না বরং প্রিজার্ভেটিভ, টেকচার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।
চিনি কিভাবে কিভাবে আপনার খাদ্য তালিকায় ঢুকে পড়ে তাতো দেখলেন। এখন দেখি ঢুকে কি করে। প্রথমেই এটি আপনার মুখে তার কাজ শুরু করে দেয়। আমাদের দাঁতের উপরে আঠালো ও কালারলেস এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া সারাক্ষণই জন্মাতে থাকে। চিনি ঐ ব্যাকটেরিয়ার খাবার হয় এবং তা থেকে একটা এসিড ফর্ম করে। ব্যাক্টেরিয়া চিনির সংস্পর্শে আসার বিশ মিনিটের মধ্যে মুখের এসিডিটি প্রায় ১০০ প্রস্থ বাড়িয়ে তোলে। যা আমাদের দাঁত ক্ষয় করে ফেলে। এ জন্য চিনি দেয়া খাবার খাওয়ার সাথে সাথে আমাদের দাঁত ব্রাশ করে ফেলতে হবে। শুধু তাই না, ন্যাচারাল সুগারও একই কাজ করে। ফলে যে কোন মিল নেবার পরেই আমাদের দাঁত ব্রাশ করা উচিৎ।
অতিরিক্ত চিনি খাওয়া কোলোন ক্যানসারের জন্য দায়ী। এর কারণ হলো, যখন আমরা হোল গ্রেইন বা ফলের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট নেই তখন গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজের সাথে সাথে আমরা প্রচুর ফাইবারও গ্রহণ করি। ফাইবার আমাদের হজমে দারুণ সহায়ক ভূমীকা পালন করে। রিফাইন সুগারে ফাইবার থাকে না অথচ আমাদের ক্যালরির চাহিদা ঠিকই পূরণ হয়ে যায়।
একটা উদাহরণ দেই, ধরেন একটা টিনএজ মেয়ে রাতে ফ্রিজ খুলে কোলা খেয়ে নিল। ৩৯ গ্রাম সুগার শরীরে গেলে তার আর ক্ষুধা লাগবে না। সে দুধ খেল না। এতে করে সে হারালো ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও প্রোটিন। যা তাকে নিয়ে যাবে হাঁড় ক্ষয়ের রুগির কাতারে। অথচ দুধটাই তার দরকার ছিলো নিজের হাঁড়কে সুগঠিত করা ও সন্তান ধারণের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য।
এভাবে চিনি আপনার সব দরকারি ও সত্যিকারের পুষ্টিকর খাবার যাতে রয়েছে প্রচুর মিনারেলস ও ভিটামিনস তার কোটা ক্ষতম করে ফেলে।
চিনি আমাদের হার্টের রোগ বাড়ায়। চিনি আমাদের রক্তে স্টার্চের চেয়ে বেশি ট্রাইগ্লিসারল বাড়ায়। যা রক্তনালীতে প্ল্যাক জমে ব্লক তৈরি করে।
ফ্যাট পার্সেন্টেজ বেশি এমন কেউ যখন অতিরিক্ত চিনি খায় তখন তার টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়াওকে তরান্বিত করে।
উপরের এই সব কথার যদি একট সামারি করি তাহলে দাঁড়ায়, অতিরিক্ত চিনি সব ভাল ও দরকারি খাবারকে আমাদের খাদ্য তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলে ধীরে ধীরে আমাদেরকে দূর্বল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন, রোগা, স্থুলকায় করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
এর থেকে বাঁচার সহজ উপায় হলো:
১) তরল ক্যালরি মানে কোলা, জুস খাওয়া বন্ধ করতে হবে। জুস না খেয়ে ফল খান।
২) মিষ্টি, চকলেট, কেক, বিস্কিট, পাই, ডোনাটস ইত্যাদি খাওয়া বন্ধ করুন বা কমান।
৩) সকালের ব্রেকফাস্টে এক সার্ভিং এ দশ গ্রামের বেশি সুগার আছে এমন সিরিয়াল খাওয়া যাবে না।
৪) ফ্রোজেন সুইটনার তথা আইস্ক্রিম, মিল্ক সেক, কোল্ড কফি খাওয়া বন্ধ করেন।
৫) রেস্টুরেন্টে খাওয়া শেষে ডেজার্ট নিবেন না।
৬) কেচাপ, সস, বারবিকিউ সস, জেলি এই সবের তিন ভাগের এক ভাগই চিনি সুতরাং সাবধানে খাবেন।
সব শেষে সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি।
আহমেদ হেলাল সাকাফি, পুষ্টিবিদ
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর