সুমাইয়া সিরাজী
আপডেট: ২২:৪৩, ৯ আগস্ট ২০২১
শিশুদের জন্য ব্যায়াম
শিশুদের জন্য ব্যায়াম। এই কথা শুনলে অনেকের কপালে চোখ উঠে যায়। বাচ্চারা আবার ব্যায়াম কি করবে ছোট মানুষ। নাদুস নুদুস বাচ্চা দেখলে খুব ভালো লাগে আমাদের কিন্তু একটা সময়ের পর এই নাদুস নুদুস বাচ্চাটাই যখন বড় হয় তখন আমরা বলি মোটা সোটা মেয়ে-ছেলে। শিশুরা ছোটবেলায় যখন হালকা পাতলা গড়নের হয় তখন আমরা বলি ওমুকের বাচ্চা কি মোটা আর আমার বাচ্চার স্বাস্থ্য নাই।
এই স্বাস্থ্য নাই কথাটায় আমার ঘোর আপত্তি আছে। আগে জানতে হবে আমাদেরকে স্বাস্থ্য কি। সুন্দর দেহ মানেই স্বাস্থ্য নয়। যখন কোন মানুষ শারীরিক ভাবে সুস্থ,নিরোগ, কর্মক্ষম থাকে ; মানসিক ভাবে ভালো থাকে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে, খেলাধুলায় অংশ নিতে পারে আমরা তখন তাকে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী বলি।
শিশুদের বয়স অনুযায়ী তার আদর্শ ওজন যত থাকা উচিত তার চেয়ে এক দুই কেজি কম হলেও সমস্যা নাই যদি সে হাসি খুশি ও এক্টিভ বাচ্চা হয়। এক্টিভ বাচ্চা কি? এক্টিভ মানে সে খেলাধুলা করে, যখম তখন শুয়ে পড়ে না ( মানে ক্লান্ত না), দৌড়াদৌড়ি করে, ঝিমিয়ে পড়ে না। খাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে, খেলছে কিন্তু তেমন ওজন বাড়ছে না। এরা এক্টিভ। এই বাচ্চা গুলো যা খাচ্ছে সেই খাবার থেকে প্রাপ্ত ক্যালরি খেলাধুলো আর ছোটাছুটির জন্য বার্ন হয়ে যাচ্ছে। আপনার আমার মতো ওদের ক্যালরি জমে যায় না।তাই অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চা পর্যাপ্ত খাওয়ায় পরেও ওজন একি রকম থাকে।
শিশুদের উচ্চতা বয়স অনুযায়ী অনেক কম কিনা সেটা খেয়াল রাখুন। যখন কোন শিশু অনেক দিন ধরে অপুষ্টিতে ভুগে মানে শাক সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবারগুলো প্রতিদিনের প্লেটে অনুপস্থিত থাকে তখন সেই শিশু ধীরে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং বয়সের তুলনায় উচ্চতা কম হয় এবং ওজন বিপদসীমার নিচে নেমে যায়। বিপদসীমা বলতে বুঝানো হচ্ছে তার আদর্শ ওজনের থেকে ৫-৬ কেজি কম।
অপুষ্টি বললে আমরা বুঝি কম ওজন। আসলে অপুষ্টি ২ রকমের হয়-
- অনেক কম ওজন
- অতিরিক্ত ওজন
ইদানিং সবচেয়ে এলার্মিং হলো শিশুদের এই "অতিরিক্ত ওজন"। শিশুদের এই শৈশবে মুটিয়ে যাওয়াটা ভয়ংকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ইঙ্গিত করে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ একটা জীবন ধারণ প্রণালি শিখিয়ে দিতে না পারলে সেই দায়ভার আমাদের কে নিতে হবে। সেদিন ১৬ বছরের এক ছেলেকে মা নিয়ে এসেছেন আমার চেম্বারে, ১০২ কেজি ওজন। অথচ বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী আদর্শ ওজন থাকার কথা ছিলো ৬০-৬৩ কেজি। আমার কাছে ১৬ বছরের এই ছেলেটা একটা বাচ্চাই। জিজ্ঞেস করলাম সারাদিন কি খাওয়া হয়। জানালো বেশি ভাত খায় না কিন্তু আইসক্রিম খেলে ২/৩ টা ব্যাপার না, বার্গার-পিজ্জা এগুলো প্রায় দিন। আর এখন ত ফুড ব্লগিং এর যুগ। একবার হাইপ উঠলে আর কথা নাই সেই খাবার খেতেই হবে তা সে যতই জাঙ্ক ফুড হোক না কেন। অনলাইনে অর্ডার করলেই চলে আসে খাবার হাতের মুঠোয়।
খাবার খাচ্ছে কিন্তু যা খাচ্ছে তা জমে যাচ্ছে কিছুই বার্ন হচ্ছে না। শারীরিক পরিশ্রম নেই বললেই চলে। আমরা আমাদের জীবন যতই সহজ করে তুলে দিচ্ছি ততই জীবন অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ছে। জীবন সুন্দর করার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। শিশুরা মাঝে মধ্যে ফাস্ট ফুড খেতে চাইলে বাসায় করে দিন খাবে। দুই-তিন মাসে একবার বাইরে খাওয়া হতে পারে কিন্তু সেটা প্রতি সপ্তাহে হলে সমস্যা। অতিরিক্ত সুগার ব্রেইনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। খেলাধুলা ব্রেইনকে এক্টিভ রাখে। ছোট থেকে বাচ্চাকে বুঝান এই খাবার খাওয়া যাবে না খেলে কি কি হবে বলুন তাকে। তার ভেতর একটা ইমোশনাল এরিয়া গড়ে তুলুন সেখানে আপনার সাথে এমন সুক্ষ্ম একটা কানেকশন করে দিন যাতে আপনার কথা গুলো কে সে মেনে চলে, আমলে নেয়, গুরত্ব দেয়। অনেক মাকে দেখেছি বাচ্চাকে এতো সুন্দর করে মাইন্ড সেট আপ করে দিয়েছেন যে সেই বাচ্চাকে কোক অফার করলে উল্টো সে উপদেশ দেয় এগুলো না খেতে। এমন মা দেখলে আমি দাঁড়িয়ে মা টাকে স্যালুট করে আসি।
আমাদের খেলার মাঠ নেই আগের মতো জায়গা নেই সুযোগ নেই। তবুও আমরা থেমে থাকতে পারি না। শিশুদের খাবারে সামান্য নিয়ন্ত্রণ এনে পাশাপাশি একটা নির্দিষ্ট সময়ে তাকে নিয়ে হাঁটতে নিয়ে যেতে পারেন। অথবা খোলা জায়গায় নিয়ে সাইকেল চালাতে দিবেন। এটা বেশ ভালো ব্যায়াম। সপ্তাহে একদিন সুইমিং এ নিতে পারেন। স্কেটিং এটা আরেকটা কার্যকরী ব্যায়াম। এতে শিশুদের ব্যালান্স ভালো থাকে, মনোযোগ বাড়ে, আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
ঘর থেকে একদম বের না করা গেলে ঘরেই একটা প্লে জোন রেডি রাখবেন। বড় আর্ট পেপারে রঙ করা। টব দিবেন গাছ লাগাবে বারান্দায়। প্রতিদিন ওর গাছে পানি দিতে বলবেন। লিফট এর চেয়ে সিঁড়ি ব্যবহারে উৎসাহিত করবেন। মা কাপড় তুলি তুমি একটু ভাজ করে রাখো। মায়ের অনেক কষ্ট হয় তুমি হেল্প করলে হয় না। এভাবে ইমোশনালি টাচ করে ছোট ছোট কাজ দিয়ে ওকে এক্টিভ রাখুন। ঘরের ছোট ছোট কাজে ওকে দিয়ে করাবেন। বাজার আনলে সবজি আলাদা করতে দিবেন। সপ্তাহে ১ দিন সহজ কিছু বানাতে দিবে যেমন সালাদ, শরবত, স্যান্ডউইচ এই রকম কিছু। এগুলো এক রকমের ব্যায়াম। বুঝতে শিখলে নিজের কাপড়, বই, ব্যাগ, বিছানা গুছাতে দিবেন।
খেলাধুলায় এক্টিভ থাকলে শিশুর ভালো ব্যায়াম হয়ে যায়। কিন্তু মুটিয়ে যাওয়া শিশুর জন্য আপনাকে খাবার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এক্সারসাইজ যাতে হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে আর সেটা ছোট থেকেই। বড় হলে এরপর কমাবেন এই চিন্তা থেকে সরে আসুন। দাদা-দাদি, নানা-নানি মানছেন না? খাবার নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না ? সমস্যা নাই ওনাদের কে ডাক্তার নিউট্রিশনিস্টদের কাছে নিয়ে যান আমরা বুঝাবো। হাসপাতাল গুলো ঘুরে দেখাবো বেশিরভাগ স্ট্রোক এর পেশেন্ট ২৫/২৬ বছরের ছেলেগুলো। জুভেনাইল ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ১৪/১৫/১৮ বছরের বাচ্চাগুলো! লাইফস্টাইল পরিবর্তন না করলে এই সংখ্যা এক সময় মহামারীর চেয়ে বড় আকার ধারণ করতে পারে।
সুমাইয়া সিরাজী, নিউট্রিশনিস্ট এন্ড স্পেশাল এডুকেটর প্রয়াস, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর