সীমান্ত দাস
আপডেট: ২১:২৬, ৮ জানুয়ারি ২০২২
ওজন কমানোর উপায়
অনেকেই ওজন কমাতে চান। কিন্তু পাচ্ছেন না সঠিক গাইডলাইন। এই সঠিক গাইডলাইনের অভাবে নিজের ওজন নিয়ে নিজেই নিজেকে অপছন্দ করা শুরু করেন, যেটি মোটেও কাম্য নয়। তাই আপনার জানা উচিত কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ওজন কমানো সম্ভব। ওজন কমাতে ব্যায়াম কি হবে, ওজন কমাতে হলে খাবারে যেসব পরিবর্তন আনতে হবে, ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমানোর পদ্ধতি, প্রাকৃতিক ঔষধ ওজন কমানোর এসব বিষয়ে জানা উচিত।
যদি আপনি ওজন বেশি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারেন তাহলে ওজন আপনি ধীরে ধীরে কমাতে পারেন, আবার অনেকের দরকার হয়ে পড়ে দ্রুত ওজন কমানোর। অনেকেই লকডাউনে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে শরীরে ১০-১৫ কেজি ওজন বাড়িয়ে নিয়েছেন, যেটা নিয়ে অফিসে আর ফিরতে লজ্জাবোধ করছেন। তাই ওজন কমানো দরকার।
তবে দীর্ঘসময় নিয়ে ওজন কমানো সম্ভব। অসম্ভব আসলে কোনওকিছুই নেই। পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ধৈর্য্য যে কোনও মানুষকে তাঁর কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। সেটা হতে পারে সঠিক ওজনে ফেরত যাওয়াও।
তাই ওজন কমাতে হলে ফলো করতে পারেন এই আর্টিকেলটি। আশা করা যায় যথেষ্ট সহায়ক হবে আপনার ওজনে পরিবর্তন আনতে।
খেয়েদেয়েই কমানো সম্ভব ওজন
পুষ্টিবিদরা বলছেন, দেড় মাসে ৪-৫ কেজি কমানো এমন কোনও বড় টার্গেট নয়৷ নিয়ম মেনে ডায়েটিং ও একটু হাঁটাচলা বাড়ালে, ঘরের সব কাজ নিজে হাতে করলে খুব ভাল ভাবেই কমানো সম্ভব৷ তার উপর যদি ব্যায়াম করতে পারেন, তা হলে তো কথাই নেই৷ ভাবছেন খিদে পাবে কি না? পাবে না৷ বুঝেশুনে খেলে এখন যা খাচ্ছেন, তার চেয়ে ১০০০ ক্যালোরিও যদি কম খান, খিদে পাবে না৷ ডায়েটিং করতে পারবেন বেশ পেটপুরে খেয়েই।
কম খেয়ে ডায়েটিং করার কথা ভুলে যান৷ কারণ, কম খেলে খিদে পাবে সর্ব ক্ষণ৷ খিদে চেপে রাখলে এক দিকে যেমন মন খাই খাই করবে, তাতে অনেক সময় ভুলভাল খেয়েও নেবেন। অন্যদিকে খিদে পেটে ঘুম আসবে না, মেজাজ খিটখিট করবে, ক্লান্ত লাগবে, অপুষ্টি হবে৷ সবে মিলে ওজন যদিও বা দু-এক কেজি কমেও, চেহারায় পড়বে ক্লান্তির ছাপ। ফিটনেসে ঘাটতি হবে৷ অপুষ্টি ও অনিদ্রার ফলে কমতে পারে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও। যা এই মুহূর্তে খুবই বিপজ্জনক৷ অতএব ও পথে না হেঁটে খাবারে কিছু পরিবর্তন আনুন৷ ভাজা, মিষ্টি ও অন্যান্য হাই ক্যালোরি খাবার ও মিষ্টি পানীয়ের পরিবর্তে খান ফাইবারসমৃদ্ধ পুষ্টিকর ঘরোয়া খাবার৷ খাবারে পর্যাপ্ত ফাইবার থাকলে কম খাবারেই পেট ভরে যাবে ও বেশি ক্ষণ ভরে থাকবে৷ তার সঙ্গে মাপ মতো কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও উপকারি ফ্যাট খেলে তৃপ্তি যেমন হবে, পুষ্টিও হবে তেমন৷ সবে মিলে ওজন কমবে পেটপুরে খেয়েও৷
ডায়েটে হালকা কাটছাট
রাতারাতি খাবারের রুটিন বদলে ফেলার কোনও দরকার নেই৷ এখন যেভাবে যা খাচ্ছেন, তার মধ্যে থেকেই একটু কাটছাট করে নিন৷
ডিম খেতে ভাল লাগলে খাওয়া বন্ধ করার দরকার নেই৷ শুধু কুসুমটা বাদ দিয়ে দিন৷ আগে হয়তো একটা আস্ত ডিম খেতেন, এখন ৩-৪টে ডিমের সাদা অংশও খেতে পারেন৷ সেদ্ধ করে৷
চর্বি-মিষ্টি-পানীয় খেতে সবাধান
রেডমিট পছন্দ হলে ভাল করে চর্বি কাটছাট করে নিয়ে কম তেলে রান্না করুন৷ সেদ্ধ করা জলটা ফেলে দিলে চর্বি আরও কিছুটা কমবে৷ এভাবে রান্না করা মাংস সপ্তাহে এক দিন দুইটুকরো খেলে ক্ষতি নেই৷
ফল ছাড়া কোনও মিষ্টি খাবার খাবেন না৷ ফলও খুব বেশি খাওয়ার দরকার নেই৷ দিনে একটা বা দুটো গোটা ফল খেতে পারেন৷ তার মধ্যেও যেটা কম মিষ্টি সেটা বেছে নিন৷
কোনও মিষ্টি পানীয় খাবেন না৷ ফলের রসও নয়৷ এসব খেলে পেট তো ভরেই না বরং একসঙ্গে অনেকটা ক্যালোরি ও চিনি শরীরে এসে বাড়িয়ে দেয় ভুঁড়ির আশঙ্কা৷ মাঝেমধ্যে স্মুদি খেতে পারেন৷ ফল দিয়ে রায়তা বানিয়েও খেতে পারেন৷
ভাত পছন্দ হলে কষ্ট করে রুটি খাওয়ার দরকার নেই৷ বরং একমুঠো করে ভাত কমিয়ে সে জায়গায় কম ক্যালোরির সব্জি সিদ্ধ খান৷ যেমন, পটল, ঢেড়শ, করলা, বেগুন ইত্যাদি৷ কম তেলে রান্না করা এক হাতা শাক বা পাঁচমিশালি সব্জিও খেতে পারেন৷ অর্থাৎ ভাত-রুটির পরিমাণ কমিয়ে, দরকার হলে আগের অর্ধেক করে শাক-সব্জি খাওয়া দ্বিগুণ করে দিন৷ এক ধাক্কায় নয়, ধাপে ধাপে করবেন৷ না হলে পেটের গোলমাল হতে পারে৷ হতে পারে অতৃপ্তিও৷ সাদা ভাতের বদলে ব্রাউন রাইস খেতে পারলে বেশি ফাইবার পাবেন, তবে তার স্বাদ ভাল না লাগলে সাদা ভাতই খান৷ সঙ্গে নানা রকম সবজি৷
বেশির ভাগ সবজির খোসা ছাড়াবেন না৷ বেশি ফাইবার পাবেন৷ তাতে কম খাবারেই বেশি ক্ষণ পেট ভরা থাকবে৷ অন্যান্য পুষ্টিও পাবেন বেশি৷
মূল খাবার খাওয়ার আগে মাখন না দেওয়া একবাটি ক্লিয়ার সু্প, সবজি বা চিকেন ব্রথ, ডাল সেদ্ধ বা ড্রেসিং না মেশানো এক প্লেট স্যালাড খেলে কম খাবারেই পেট ভরবে৷
মাছ, মাংস, ডিম আগের চেয়ে একটু কম খেয়ে সে জায়গায় খান ফাইবারসমৃদ্ধ উদ্ভিজ্জ প্রোটিন৷ যেমন, বিন, সয়াবিন, রাজমা, ছোলা, মটর, ডাল৷ উপকার যেমন হবে, পেটও ভরা থাকবে বেশিক্ষণ৷
ময়দাজাত খাবার একেবারে বাদ দিন৷ ন-মাসে ছ-মাসে এক আধবার পরোটা খেতে ইচ্ছে হলে হয় ময়দার মধ্যে সবজির পুর মেশান নয়তো আটা দিয়ে বানান৷ সবচেয়ে ভাল হয় বিভিন্ন ধরনের সবজি মেশানো রুটি খেলে৷
তেল-ঘি-মাখনের উপকার থাকলেও এ সময় যত কম খাওয়া যায় তত ভাল৷ তবে একেবারে বাদ দিয়ে দেবেন না৷ ভিটামিন ডি ও ই-এর শোষণ বাড়াতে একটু তেল-ঘি এর প্রয়োজন আছে৷ এর পাশাপাশি সব রকম বাদাম, বীজ, অ্যাভোক্যাডো, অলিভ অয়েল, তৈলাক্ত মাছ অল্প করে খান৷ এতে ক্যালোরি কিছুটা বাড়লেও উপকার পাবেন প্রচুর৷ পেট বেশিক্ষণ ভরা থাকবে৷ তৃপ্তি হবে বলে একটু পরে পরেই খাওয়ার ইচ্ছাও উদয় হবে না, যেটা আপনার এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে যথেষ্ট সহায়ক।
বাইরের খাবার পরিহাস করুন
বাজারের লো-ফ্যাট খাবার একেবারে খাবেন না৷ তাতে ফ্যাট কম থাকলেও চিনি থাকে প্রচুর৷ তাতে অপকারের পাল্লাই ভারি হয়৷ ওজন কমারও সুরাহা হয় না৷ ফাস্ট ফুড ও প্রসেস করা খাবার খাবেন না৷ কারণ তাতে তেল-ঘি-লবণ-মিষ্টি সবই বেশি থাকে৷
টুকটাক খাওয়ার অভ্যাস বদলাতে হবে৷ দিনে ৫-৬ বার খাবেন৷ সকালে মোটামুটি পেটভরে ব্রেকফাস্ট৷ মাঝসকালে ফল বা ঘোল কি সালাদ৷ দুপুরে ডাল, সালাদ, সবজির সঙ্গে অল্প ভাত বা রুটি ও মাছ/চিকেন/ডিম/দই৷ ডেজার্ট এখন না খাওয়াই ভাল৷ খুব ইচ্ছে হলে অল্প খেজুর খেতে পারেন৷ বিকেলে মুড়ি-বাদাম বা হালকা অন্য কিছু৷ রাতে আবার দুপুরের মতো খেয়ে আধ ঘণ্টা একটু হাঁটাহাটি করে ঘণ্টা দুয়েক পরে ঘুমোতে যাওয়া৷ খেয়াল রাখবেন, দিনের প্রতিটি খাবারে যেন প্রোটিন, ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ ঠিক থাকে।
দই-কালোজিরার মিশ্রণ উপকারী
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে ওজন কমানোর নতুন একটি পদ্ধতি নিয়ে এসেছেন। তারা বলছেন, দই-কালোজিরার মিশ্রণ নিয়মিত খেলে এক মাসে ১৫ কেজির মতো ওজন কমবে।
মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের প্রকাশ করা সমীক্ষা-রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪৪ জন মেদযুক্ত মানুষের ওপর এই মিশ্রণের প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, প্রতিদিন যদি দই-কালোজিরার এই মিশ্রণ খাওয়া যায় তাহলে এক মাসে অন্তত ১৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে একটি পাত্রে এক চা চামচ কালোজিরাগুঁড়ো আর এক গ্লাস পাতলা টক দই ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে রাতে শোওয়ার আগে খেতে হবে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, এই মিশ্রণ শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে কমে যায় মেদের পরিমাণ এবং দ্রুত হ্রাস পায় শরীরের ওজন।
ওজন কমানোর ব্যায়াম
হাঁটা
স্বাভাবিকভাবে আপনি যতটা জোরে হাঁটেন, তার চেয়ে একটু বেশি দ্রুত পা চালালেই সেটা ব্যায়ামের পর্যায়ে পৌঁছবে। ধীরে ধীরে গতিবেগ বাড়ান, হালকা জগিং করতে পারলে খুব ভালো হয়। একেবারে শুরুতে আধ ঘণ্টা হাঁটুন, তার পর ধীরে ধীরে সময়টা বাড়াতে হবে। ঘণ্টাখানেক সমান গতিতে হাঁটতে পারলে ওজন তো কমবেই, জোর বাড়বে ফুসফুসেরও।
দৌড় বা স্প্রিন্ট
হাঁটার রুটিনে কিছুদিনের মধ্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে আপনার শরীর, তখন শুরু করুন স্প্রিন্ট বা শর্ট ডিসট্যান্স দৌড়। 100 মিটার খুব দ্রুত ছোটার চেষ্টা করুন। তার পর ব্রেক নিন কয়েক সেকেন্ড, আবার ফিরে আসুন স্টার্টিং পয়েন্টে। আবার বলছি, খুব ভালো রানিং শ্যু পরে তবেই দৌড়বেন। প্রথমদিকে 15 মিনিট বা আধ ঘণ্টা বরাদ্দ রাখুন দৌড়ের জন্য। তার পর প্রতি সপ্তাহে পাঁচ-সাত মিনিট করে সময় বাড়াতে হবে।
শীতের ভোরে বা বিকেলে এই ব্যায়াম আপনাকে মুহূর্তে চাঙ্গা করে তুলবে। যাঁরা কখনও দৌড়োননি, তাঁদের পায়ে ব্যথা হওয়াই স্বাভাবিক প্রথম দিকে – তবে অভ্যেস চালিয়ে গেলে ধীরে ধীরে পা আর আপার বডি শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
পুশ আপ আর ডিপস
দু’টি ব্যায়ামের ক্ষেত্রেই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন মাটিতে। ডিপসের ক্ষেত্রে কাঁধ বরাবর হাত রাখুন, পা দুটো একটু ফাঁক করে রাখতে হবে। তার পর হাতের তালু আর পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে শরীরটাকে ওঠানামা করান।
পুশ আপের ক্ষেত্রে কাঁধের পাশে হাত থাকবে, পা থাকবে জোড়া। একইভাবে শরীরটাকে মাটির দিকে নামিয়ে আনুন, আবার উপরে তুলুন। পুরো পদ্ধতির সময় গ্লুটসটা ভিতর দিকে টেনে রাখতে হবে। কাঁধ, ছাতি, পেট আর ট্রাইসেপস একইসঙ্গে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
ক্রাঞ্চেস
ক্রাঞ্চেস আপনার কোর মাসলকে দারুণ শক্তিশালী করে তোলে, ফলে কোমর আর পেট হয়ে ওঠে নির্মেদ। মাটিতে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ে পা ভাঁজ করে ক্রাঞ্চেস করা যায়, পুরো পা ছড়িয়ে করতে পারেন।
বিছানা বা কোনও চেয়ারের উপর পা তুেল দিয়েও ক্রাঞ্চেস অভ্যেস করা যায়।
স্কোয়াটস
স্কোয়াটস হচ্ছে ওঠ-বোস। পা সামান্য ফাঁক করে সোজা দাঁড়ান। শরীরটা সোজা রেখেই যতটা নিচে নামতে পারেন ততটা নেমে বসুন। আবার উঠে দাঁড়ান। পিঠ যেন বেঁকে না যায়। গ্লুটস আর পেটের মাসল ভিতরদিকে টেনে রাখবেন।
একসঙ্গে অন্তত 20 টি স্কোয়াটস করার চেষ্টা করুন।
ব্যায়াম ছাড়াই কমাবেন ওজন?
পরিশ্রমী হোন
ব্যায়ামের কাজটি প্রতিদিন কাজের মধ্যেই সারতে পারেন। অনেকভাবেই কাজটি করা যায়। দুপুরে খাওয়ার পর রেস্টরুমে ঝিমানো বন্ধ করুন। সিঁড়ি বেয়ে উঠুন। হাঁটার অভ্যাস করুন। এটি উপকারী ব্যায়াম।
রেসিপিতে কম উপকরণ
খাবার তৈরির জিনিসপত্রের বেশির ভাগই প্যাকেটজাত উপকরণ। আপনাকে এই প্যাকেটের ধোঁয়াশা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অর্থাৎ খাবার তৈরিতে প্যাকেটজাত উপকরণের সংখ্যা যতো কমে আসবে, তত বেশি উপকার মিলবে।
পানির পরিমাণ
পর্যাপ্ত পানি না খেলে দেহের বিপাকক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এতে হজমপ্রক্রিয়া নষ্ট হতে থাকে। যারা খাদ্য গ্রহণে উদার, তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। আর তা করতে পারেন পানির মাধ্যমে। যাতে মনোযোগ দেয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে শুরু করুন। এতে সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুধা অনেক কমে যাবে।
ঘুমে মন দিন
ঘুম ঠিক না থাকলে ওজন বেড়ে যাবে হু হু করে। ‘আমেরিকান জার্নাল অব হেলথ প্রমোশনের গবেষণা অনুযায়ী, যারা প্রতি রাতে সাড়ে ছয় ঘণ্টা থেকে সাড়ে আট ঘণ্টা ঘুমান, তাদের দেহে একেবারেই চর্বি জমে না। তাই ঘুমের বিষয়টাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।
গ্রিন টি
যদি ডায়েট ছাড়া ওজন কমাতে চান তবে গ্রিন টি পান করুন। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে মেদ কাটাতে সাহায্য করবে।
চিনিকে না বলুন
চিনি ও চিনি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য আপনাকে মুটিয়ে দেয়। সাথে আপনার ব্লাড সুগার বৃদ্ধি করে দিয়ে থাকে। প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকা থেকে চিনি জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে দিন। হঠাৎ করে চিনি খাওয়া একদম বাদ দিতে না পারলে, আস্তে আস্তে করে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিন।
ওজন কমানোর ঔষধ
এই ঔষধগুলো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং আমাদের নিত্য দিনের ব্যবহৃত খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত। তাই এসবে কোন পার্শ প্রতিক্রিয়া নেই এবং যে কেউ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই এগুলো খেতে পারবেন। চলুন ওজন কমানোর প্রাকৃতিক ঔষধগুলো দেখে নেই।
মধুর সাথে আদার রস
মধুর উপকারিতা সবার জানা। আরো জেনে আশ্চার্য হবেন যে, মধু আদার রসের মিশ্রণে তৈরি ঔষধ ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী। দিনে দুইবার করে এই মিশ্রণ গ্রহণ আপনাকে ওজন কমাতে অনেক সাহায্য করবে। মধুতে থাকা ফলশর্করা (Fructose) যা যকৃতের চালিকা শক্তি দ্রাক্ষা-শর্করা বা গ্লুকোজ তৈরি করে এবং দেহে ওজন কমানোর হরমোনগুলোকে ছড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে আদা পরিপাক যন্ত্রের জার্মগুলো কে মেরে ফেলে, বার বার ক্ষুদা লাগা দূর করে এবং এটা মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ৩ টেবিল চামচ মধুর সাথে ২ টেবিল চামচ আদা হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে দিনে দুইবার পান করুন।
মধু এবং দারুচিনী
মধু এবং দারুচিনীর কার্যক্ষমতা বলে শেষ করা যাবে না। মধু খেতেই শুধু সুস্বাদু নয়, এটা দেহের হজমক্রিয়ার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। দারচিনী রক্তচাপকে স্থির রাখে। দেহে ওজন কমানোর হরমোনের রস বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্ককে ওজন কমানোর বার্তা পাঠায়। দারচিনী দেহকে সক্রিয় করে মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পানিতে ১ চলা দারচিনী নিয়ে চুলায় দিন। ১৫ মিনিট ফুটন্ত পানিতে রাখুন। এরপর নামিয়ে পানি ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হওয়ার পর ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
লেবু, মধু এবং গোল মরিচের মিশ্রন
ওজন কমাতে লেবুর গুনাগুণ খুব প্রসিদ্ধ। লেবু, মধু এবং গোল মরিচের মিশ্রণ ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক চিকিৎসা। কেননা এসব উপাদানই রান্নাঘরে সবসময় পাওয়া যায়। লেবুতে এক ধরনের যৌগ-পদার্থ আছে সেটা বার বার ক্ষুদা লাগা দূর করে। গোল মরিচ দেহে নতুন চর্বি কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে এবং রক্তকণিকায় থাকা চর্বি কমিয়ে ফেলে। ১ গ্লাস কুসুম পানির সাথে ১ টেবিল চামচ পানি, ১ টেবিল চামচ গোল মরিচের গুঁড়া, ৪ টেবিল চামচ লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে পান করুন।
ভিনেগার
ভিনেগার বা সিরকা ওজন কমাতে দারুণ কার্যকরী। লেবুর মত ভিনেগারও রক্তকণিকায় থাকা চর্বি দূর করে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটা দেহের চর্বি কোষগুলোকে মেরে ফেলে এবং মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। ভিনেগারের সাথে লেবুর রস যোগ করলে সেটার কার্যকারিতা বাড়ার পাশাপাশি স্বাদও বাড়িয়ে দেয়। এক গ্লাস পানির সাথে ১ টেবিল চামচ ভিনেগার এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিনে ২ বার পান করুন।
কপি জাতীয় সবজি
ওজন কমানোর খাদ্য তালিকায় ফলমূল এবং শাকসবজির স্থান সবার উপরে। সবজির মধ্যে কপি জাতীয় সবজি সব চেয়ে বেশি কার্যকরী। দৈনন্দিন খাদ্যে নিয়মিত ফুলকপি ও বাঁধাকপি রাখুন। সালাদের মধ্যেও ফুলকপি কুচি করে দিতে পারেন। এ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং খুব সামান্য ক্যালরি আছে। এতে থাকা টারটারিক এসিড চিনি এবং কার্বহাইড্রেডকে চর্বিতে রূপান্তরিত হতে দেয় না। কপিতে থাকা ভিটামিন এ এবং সি হৃদরোগ এবং ক্যান্সার সাড়াতে খুব কার্যকরী।
শসা
শসা দেহের চর্বি কমাতে অনেক পরিচিত এবং প্রসিদ্ধ একটু ঔষধ। একটি শসায় ৯০ শতাংশ পানি এবং ১৩.২৫ ক্যালরি থাকে। যা দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং তরল পদার্থের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দেয়। শসায় থেকে ভিটামিন এ, সি এবং ই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং সুস্থ সবল রাখে।
লাউ জাতীয় সবজি
লাউয়ে পুরোটাই ফাইবার এবং পানি দিয়ে ভরা। এতে সামান্য ফ্যাটও নেই। এটা অনেকক্ষণ পেটকে ভরিয়ে রাখে ফলে তাড়াতাড়ি ক্ষুদা লাগে না। তরকারিতে নিয়মিত লাউ খাওয়ার পাশাপাশি লাউয়ের জুস করেও খেতে পারেন।
উপসংহার
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই নিজে ফিটফাট না থাকলে ব্যাংকে কোটি টাকা আর বাড়ির পার্কিংলটে মার্সিডিজ থাকলেও মন শান্ত হবে না। আবার নিজে ফিটফাট থাকলে খালি পকেটেও রাস্তায় হাঁটতে সুখ। তাই সবার আগে নিজের খেয়াল রাখুন, আশেপাশের মানুষের জন্য হলেও। আপনি অসুস্থ্য বা আনফিট হলে আপনার পরিবারও অস্বস্থিতে পড়বে, অনেকক্ষেত্রে ব্যাপারটি আর্থিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আপনার ভালোবাসার মানুষের জন্য হলেও ফিট থাকা দরকার।
আইনিউজ/এসডি
মানসিক চাপ কমাবেন যেভাবে
চিনির কারণে প্রতিবছর সাড়ে তিন কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে
বয়স পঞ্চাশের আগেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা
সহবাসে পুরুষের অক্ষমতা, সেক্স এডুকেশনের অভাব?
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর