স্বাস্থ্য ডেস্ক
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে দশ ভুল ধারণা
স্বাভাবিক রক্তচাপ হল সেই বল, যার সাহায্যে রক্ত শরীরের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছায়। রক্তচাপের কোনো একক নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। বিভিন্ন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে একেকজন মানুষের শরীরে রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন এবং একই মানুষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক এ রক্তচাপও বিভিন্ন রকম হতে পারে। উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অধিক পরিশ্রম ও ব্যায়ামের ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে। ঘুমের সময় এবং বিশ্রাম নিলে রক্তচাপ কমে যায়। রক্তচাপের এ পরিবর্তন স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যে পড়ে।
অধিকাংশ সময় রক্তচাপটা স্বাভাবিক মাত্রার ভেতরই থাকে। সাধারণত বয়স যত কম, রক্তচাপও তত কম হয়। যদি কারো রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং অধিকাংশ সময় এমনকি বিশ্রামকালীনও বেশি থাকে, তবে ধরে নিতে হবে, তিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে আমাদের অনেকের নানা ধরনের ভুল ধারণা রয়েছে। যা অনেক সময় মারাত্মক বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সচেতনতা বাড়াতে আমাদের উচিত সেই ভুল ধারণাগুলো দূর করা। তবেই সঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্তটি নেয়া সম্ভব হবে।
জেনে নেয়া যাক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে সেই ভুল ধারণাগুলো সম্পর্কে-
তেঁতুল গুলে খেলে রক্তচাপ কমে
রক্তচাপের পরিমাণ বেশি দেখলে কেউ কেউ পানিতে তেঁতুল গুলে খান বা টক খান। এতে রক্তচাপ কমে না। বরং লবণ মিশিয়ে এসব খেলে রক্তচাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। তার ওপর হতে পারে গ্যাস।
বয়স বাড়লে তো রক্তচাপ বাড়বেই
বয়স হলে রক্তচাপ একটু বেশিই থাকে, এ জন্য চিন্তার কিছু নেই—এমন ধারণাও সঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপ যে বয়সেই ধরা পড়ুক, তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবেই গণ্য করা উচিত। উচ্চ রক্তচাপকে স্বাভাবিক না ভেবে নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সহজ হয়।
উপসর্গ তো নেই, কেন চিকিৎসা নেব
আমার কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, মাথাব্যথা বা ঘাড় ব্যথা নেই, মাথা ঘোরে না বা ঝিমঝিমও করে না। আমার উচ্চ রক্তচাপ থাকতেই পারে না। এটা কিন্তু ভুল ধারণা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কোনো উপসর্গ থাকে না। নিয়মিত রক্তচাপ মাপা ছাড়া শনাক্ত করার উপায় নেই।
ঘাড়ে ব্যথা মানে রক্তচাপ বেশি
ঘাড়ে ব্যথা হলে কেউ কেউ মনে করেন, নিশ্চয়ই রক্তচাপ বেড়েছে। এই ধারণা অমূলক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্তচাপ বৃদ্ধির কোনো উপসর্গ বোঝা যায় না। তবে, রক্তচাপ খুব বেড়ে গেলে (১৮০/১২০ মিলিমিটার পারদের ওপরে উঠলে) দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, বুকে ব্যথা বা বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট, লালচে প্রস্রাব, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মাথাব্যথা, শরীরের অংশবিশেষের বা একাংশের দুর্বলতা কিংবা অবশ হওয়া এবং অন্তঃসত্ত্বা মায়ের খিঁচুনি হতে পারে।ডিম, দুধ ও মাংস খাওয়া নিষেধ
অনেকের ধারণা, উচ্চ রক্তচাপ হলে ডিম, দুধ ও মাংস খাওয়া নিষেধ। এসব খাবার খেলে রক্তচাপ বাড়ে। এটা ঠিক নয়। লবণ খেলে রক্তচাপ বাড়ে বটে, কিন্তু দুধ ডিমের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে, হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে ঘি, মাখন, ডালডা এবং এগুলো দিয়ে তৈরি খাবার, দুধের সর, ভাজা পোড়া খাবার, লাল মাংস যেমন গরু বা খাসির মাংস, ট্রান্সফ্যাটসমৃদ্ধ বেকারির খাবার, লবণ ও অধিক লবণজাত খাবার এবং কোমল পানীয় এড়িয়ে চলতে বলা হয়। সরবিহীন দুধ রোজই খাওয়া যায়। ডিম, মুরগির মাংস নিয়মিত খেতে কোনো মানা নেই।
লবণ ভেজে খাওয়া যাবে
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে খাবারে বাড়তি লবণের ব্যবহারে বারণ। উচ্চ রক্তচাপের রোগীর দৈনিক এক চামচের বেশি লবণ খাওয়া ঠিক নয়। অনেকের ধারণা কাঁচা লবণ নিষেধ তো লবণ ভেজে বা টেলে খাওয়া যাবে। আসলে লবণ যেভাবেই খান, উচ্চ রক্তচাপ বাড়াবেই।
রক্তচাপ স্বাভাবিক, ওষুধ কেন চলবে
বাড়িতে বা দোকানে গিয়ে রক্তচাপ মেপে দেখলেন স্বাভাবিক। একটু নিচের দিকেই। কেউ হয়তো বলল আপনি তবে কেন শুধু শুধু ওষুধ খাবেন? এটি গুরুতর ভুল। কোনো কারণে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে কমে না গেলে (৯০/৬০ মিমি পারদের কম) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ বন্ধ করা ঠিক নয়। উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, এমনকি জীবন ঝুঁকিতেও পড়তে পারে।
ওর ওষুধ খুব ভালো
উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বন্ধু, স্বজন বা পরিবারের কারো ব্যবস্থাপত্র দেখে ওষুধ খান। অমুকের ওই ওষুধে নিয়ন্ত্রণ হয়েছে বলে আমার জন্যও এটি প্রযোজ্য, তা নাও হতে পারে। কোন ওষুধ আপনার জন্য প্রযোজ্য, তা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। আনুষঙ্গিক হাঁপানি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্য কোনো রোগ থাকলে সে অনুযায়ীই হবে আপনার ওষুধের ধরন। সে জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ নির্বাচন করতে হবে।
কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হয় না
অনেকে ভাবেন, উচ্চ রক্তচাপ বুড়োদের রোগ। আসলে তা নয়। অল্প বয়সেও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে। অতি লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ওজন বৃদ্ধি, খেলাধুলা, ব্যায়াম বা কায়িক শ্রমের অভাবে অল্প বয়সীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বাড়ছে। আবার বিভিন্ন ধরনের অসুখ, যেমন বংশগত কিডনি রোগ, কিডনির প্রদাহ, ত্রুটিপূর্ণ কিডনি, কিডনির রক্তনালির সমস্যা বা কিডনির টিউমার হলে রক্তচাপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে পারে। হরমোনজনিত সমস্যা, মস্তিষ্কের টিউমার, লুপাস, রক্তনালির প্রদাহ বা জন্মগত রক্তনালির সংকোচন এবং দীর্ঘদিন স্টেরয়েড–জাতীয় ওষুধ সেবনের ফলে কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে।
রক্তচাপ বাড়তি, তবে ওষুধ বাড়িয়ে খাবেন?
আবার উল্টোটাও হতে পারে। কাউকে দিয়ে রক্তচাপ মাপিয়ে দেখলেন একটু বাড়তির দিকে। অমনি নিজে নিজে ওষুধ বাড়িয়ে নিলেন, এক বেলার জায়গায় দুই বেলা খেয়ে নিলেন বা মাত্রা দ্বিগুণ করে নিলেন। এটাও ভুল। নানান কারণে একদিন রক্তচাপ বাড়তেই পারে। তাই বলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধের মাত্রা নিজে নিজে বাড়ানো ঠিক নয়।
আইনিউজ/এসডিপি
আইনিউজ ভিডিও
মানসিক চাপ কমাবেন যেভাবে
বয়স পঞ্চাশের আগেই বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা
খালি পেটে ঘুমালে যেসব ক্ষতি হয়
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর