শাহরিয়ার অভি
আপডেট: ১৭:২৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
অ্যালবিনিজম : তানজানিয়ার গ্রামাঞ্চলের ‘সাদা ভূত’ রোগ
অ্যালবিনিজম মূলত একটি জেনেটিক্যাল সমস্যা।
আপনি যদি তানজানিয়ার গ্রামাঞ্চলগুলোতে ঘুরে বেড়ান তখন হঠাৎ একদিন এমন কারো সঙ্গে হয়ে যেতে পারে যার পুরো শরীর সাদা; চুল, গায়ের চামড়া, পশম সবকিছু সাদা! দেখলে ভয় পেয়ে যেতে পারেন এইসব মানুষদেরকে। এদেরকে একারণে সেসব অঞ্চলে ‘সাদা ভূত’ এর মতো অবমাননাকর নাম ধরে ডাকা হয়। জেনেটিক এই সমস্যার রোগীরা পড়ে থাকেন সমাজ থেকে একাবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে। তাদেরকে অনেকটাই বন্দিজীবন কাটাতে হয়।
ডাক্তারি বিজ্ঞানে এই সমস্যা বা রোগের নাম অ্যালবিনিজম। এটি মূলত একটি জেনেটিক্যাল সমস্যা। জিনগত কারণে এটি ছড়ে পড়তে পারে বংশ থেকে বংশ পরম্পরায়। আই নিউজের আজকের পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনে লিখনো বিরল রোগ অ্যালবিনিজম নিয়ে কিছু কথা।
অ্যালবিনিজম একটি জেনেটিক সমস্যা। এ সমস্যার কারণে ত্বকের মেলানিন পিগমেন্টের অভাব থাকে। যার কারণে তারা রোদে যেতে পারে না এবং সামান্য সূর্যের আলোও তাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত করার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। রৌদ্রের আলোতে তারা ঠিকমতো দেখতেও পারে না।
চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, অ্যালবিনো জিন OCA2-এর একটি মিউটেশন; যা ত্বককে সাদা করার জন্য দায়ী। তানজানিয়ার মতো রৌদ্রোজ্জ্বল জলবায়ুতে অ্যালবিনিজম বিশেষত বিপজ্জনক, কারণ মেলানিনের অভাব অ্যালবিনো গুলিকে অতিবেগুনী এক্সপোজার থেকে ত্বকের মারাত্মক ক্ষতির প্রবণতা দেয়।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে হলেও সত্যি যে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অ্যালবিনো আক্রান্ত মানুষ তানজানিয়াতেই বসবাস করেন। প্রায়শই রোদে পোড়া, ফোসকা এবং সৌর কেরাটোসিসের পাশাপাশি মায়োপিয়ার মতো চাক্ষুষ সমস্যায় ভোগতে হয় তাদেরকে।
ত্বক, চুল বা চোখে জৈব রঞ্জক পদার্থ বা পিগমেন্টের সম্পূর্ণ বা আংশিক অনুপস্থিতিতেও অ্যালবিনিজম হয়। এই রোগটি শুধু মনুষ্য সমাজেই হয়ে থাকে এমনটিও নয়। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করে দেখেছেন মানুষ সহ আরও কিছু প্রাণীও এই রোগের শিকার হয়। যেমন বাঘ, সিংহ, কুমির, পাখির আরও নানা প্রজাতির প্রাণীর মধ্যেও অ্যালবিনিজম দেখা যায়।
তানজানিয়ার গ্রাম অঞ্চলের অ্যালবিনো আক্রান্ত মানুষরা সামাজিক ভাবে বিচ্ছিন্ন থাকে এবং কালো চামড়ার মানুষের কারো সাথে কথা বলার তাদের অনুমতি সাধারণত তাদের থাকে না। তাদের প্রায়ই ভূত এবং সাদা ছাগল- এর মতো অবমাননাকর শব্দ দিয়ে ডাকা হয়। তারা সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন না বা প্রয়োজনীয় সামাজিক পরিষেবাগুলি অংশগ্রহণ করতে পারে না। একারণে তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা সীমিত বা তাদের কিছু করার স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। তাদেরকে দাস বানিয়ে রাখা হয় এবং তাদের সাথে সেভাবেই আচরণ করা হয়।
অ্যালবিনোরা শুধু অ্যালবিনোদের বংশধররায় ইন্টিমেট করতে পারবে অন্য কালো চামড়াদের সাথে ইন্টিমেট করার অনুমতি নেই কারণ তাদের অভিশপ্ত মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের শিক্ষার কোন ভালো ব্যবস্থা নেই, বহু অ্যালবিনো বাচ্চাদের চিকিৎসা পর্যন্ত করা হয় না।
ওই শিশুরা চর্ম রোগ, ডেঙ্গু, পোলিও রোগে মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। আরেকটি বিষয় হলো যে দুর্ভিক্ষ, খরা ও পঙ্গপালের আক্রমণের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য অ্যালবিনোদের দায়ী করা হয়। কারণ, কালো চামড়ার মানুষরা বিশ্বাস করে যে, অ্যালবিনো একটি অভিশপ্ত রোগ।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো- অ্যালবিনিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের শরীরের অঙ্গগুলোর জন্য মূল্যবান! একজন গোপন অনুসন্ধানী সাংবাদিকের মতে অ্যালবিনোর অবৈধ বাণিজ্যকে বিশ্বব্যাপী মানব পাচারের সবচেয়ে লাভজনক এবং ক্ষতিকারক রূপগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।
অ্যালবিনোদের অপরাধমূলক নেটওয়ার্ক এর মধ্যে রয়েছে জাদুকরী ডাক্তার/কবিরাজ, কালা জাদু, অপহরণকারী, পাচারকারী এবং খুনি। অ্যালবিনোদের স্বাধীনতা নেই বলে তাদের অপহরণ করা যেতে পারে, অন্য গ্রাম বা দেশ থেকে পাচার করা হতে পারে, হত্যা করা যেতে পারে এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা যেতে পারে বিক্রি করার জন্য।
কিছু ডাইনি ডাক্তারের কাছে অঙ্গগুলি উপস্থাপন করে ওষুধ এবং মন্ত্র তৈরির জন্য কিন্তু কিভাবে তারা ওষুধ বানায়? অ্যালবিনো শিশুদের বেআইনি ভাবে তাদের হাতের অংশ কেটে সিদ্ধ করা হয় কারণ কবিরাজদের মতে এই সিদ্ধ হাত খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবে ও ঈশ্বরীও ক্ষমতা পাবে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে, কবিরাজরা তারা এমনটি করে এমনটা করতে পেরেছে বলে দাবি করে।
কিন্তু মূল সত্য হলো অ্যালবিনিজম ত্বক, চুল এবং চোখে মেলানিন পিগমেন্টের অভাব দ্বারা চিহ্নিত একটি জেনেটিক ব্যাধি। আফ্রিকার কিছু অংশে এর প্রকোপ বৈশ্বিক গড় থেকে অনেক বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪,০০০ জনে প্রায় একজন এবং নাইজেরিয়ায় সম্ভবত ৫,০০০ জনের মধ্যে একজন অ্যালবিনো রয়েছে।
এই প্রতিবেদনটির লেখক: শাহরিয়ার অভি
আই নিউজ/এইচএ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর