ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী)
আপডেট: ১৬:২৮, ৯ আগস্ট ২০২৩
কানে ছত্রাক সংক্রমণ কেন হয় এবং হলে করণীয় কী?
প্রায়ই কানের সমস্যা নিয়ে চেম্বারে এসে রোগীরা বলে থাকেন যে, কানে চুলকানি হচ্ছে খুব বেশী। সাথে অনেকে বলেন যে চুলকানির সাথে কানে প্রচণ্ড ব্যথা করছে এবং পানির মত কালো ময়লা কানের ভিতর থেকে বেরুচ্ছে যা আগে কোনদিন বের হয়নি।
এসব সমস্যা নিয়ে আসাদের মধ্যে বয়স্ক রোগীদের অনেকে ডায়াবেটিক রোগীও থাকেন। তখন অটোস্কোপ নামক যন্ত্র দিয়ে রোগীর আক্রান্ত কান পরীক্ষা করে দেখা যায় যে কানে ছত্রাক সংক্রমণ অটোমাইকোসিস হয়েছে।
অটোমাইকোসিস রোগের জন্য কোন ধরনের জীবাণু দায়ী?
কানের এই ধরণের চুলকানি হয় ছত্রাকজাতীয় জীবাণুর সংক্রমণ থেকে। এদের মধ্যে অ্যাসপারজিলাস নাইজার দায়ী ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ যেখানে কালো ময়লার মত ফাংগাস এর দলা কানে জমা হয় এবং ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দায়ী ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে যেখানে ভেজা পত্রিকার পাতার মতো সাদা দলা কানের ভিতরে দেখা যায়।
কান অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হলে কী কী সমস্যা হয়?
১)অতিরিক্ত কানে চুলকানির সাথে কানে অস্বস্তি।
২)কানে অসহ্য ব্যথা (যদি এর সাথে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ যুক্ত হয়)।
৩) কানের ভিতর কিছু জমা হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূতি। কান ভারী ভারী লাগতে পারে।
৪)কান থেকে ধূসর, হলুদ বা সাদা রঙের তরল পদার্থ বেরিয়ে আসতে পারে।
৫) কানে শুনতে সমস্যা হওয়া।
কাদের ক্ষেত্রে কানের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে?
১) রোগটা তাঁদেরই ভেতর বেশি হয়, যাঁরা কোনো কারণবশত দীর্ঘ সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন। অথবা কান পাকা রোগের কারণে অনেকদিন ধরে স্টেরয়েড সম্বলিত কানের জীবাণুনাশক ড্রপ ব্যবহার করে থাকেন।
২) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি অথবা যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব রয়েছে।
৩) রোগটা আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখা যায়; কারণ এখানকার আবহাওয়া উষ্ণ ও আর্দ্র। এই ধরণের পরিবেশ ছত্রাকের জন্য অনুকূল।
৪) কান পরিষ্কারের নামে যারা ঘনঘন পরম আয়েশে কানে কটনবাড দিয়ে কান থেকে যাবতীয় ময়লা বের করে আনার চেষ্টা চালাতে থাকেন।
৫) রাস্তায় ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যারা কান পরিষ্কার করেন তারাও অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
অটোমাইকোসিসে আক্রান্ত হলে করণীয়:
রোগীরা কানের উপরিউল্লিখিত সমস্যা নিয়ে আসলে নাক-কান-গলার চিকিৎসকরা কারণ জানতে একটা অটোস্কোপ (কানের ভেতরটা পরীক্ষা করবার যন্ত্র) ব্যবহার করে কানের পরীক্ষা করে থাকেন। কানের রোগ নির্ণয়ের উপর নির্ভর করে চিকিৎসার ধরণ।
অটোমাইকোসিস হলে চেম্বারে মাইক্রোইয়ার সাকার মেশিন এর সাহায্যে অথবা ড্রাই মপিং এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে কানের ভিতর থেকে ছত্রাকের দলা বের করে এনে কান শুকনো করেন।
তারপর বাজারে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন রকমের ছত্রাকরোধী মলম বা ড্রপ পাওয়া যায়; সেগুলো রোগের ধরণ দেখে দিয়ে থাকেন। পুরো মাত্রায় পুরো মেয়াদে যথাযথভাবে ওষুধ ব্যবহার করলে পুরোপুরি রোগমুক্ত হওয়া সম্ভব।
- কানে চুলকানি কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের এন্টিহিস্টামিন থেকে সঠিক ওষুধটি বেছে নিতে হবে।
- এ ছাড়া কানে যদি ব্যথা শুরু হয়, তা হলে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের চিকিৎসা করণীয় হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক দেয়া হয়। সাথে প্রয়োজনবোধে ব্যথানাশক দেয়া হয়ে থাকে।
- এর পাশাপাশি রোগীর ডায়াবেটিক থাকলে তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- ওষুধ ব্যবহার শেষে শিডিউল অনুযায়ী পুনরায় কান পরীক্ষা করাতে হবে।
জটিলতা প্রতিরোধে চাই সতর্কতা:
কান চুলকানির এই সমস্যা খুব সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা না করলে কানের পর্দায় অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। অটোমাইকোসিস রোগটি যদিও বহিঃকর্ণের, কিন্তু কানপাকা রোগীদের কানেও এই জীবাণু দিয়ে মিশ্র সংক্রমণ হতে পারে।
কানে প্রায়ই কটনবার্ড, দিয়াশলাই এর কাঠি, মুরগির পালক, চুলের ক্লিপ ঢোকানোর কারণে চুলকানোর সমস্যা হতে পারে। ঘন ঘন এ ধরনের বস্তুর সংস্পর্শে আসার কারণে হিতে বিপরীত হয়ে কানে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। তাই সতর্ক হই, সুস্থ্য থাকি।
লেখক: ডা. মো. আব্দুল হাফিজ (শাফী), এফসিপিএস (ইএনটি); নাক-কান-গলা গলা রোগ বিশেষজ্ঞ এবং হেড-নেক সার্জন, রেজিস্ট্রার, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট।
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর