আমেনা আক্তার
আপডেট: ১৩:০৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩
ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভূমিকা
ডেঙ্গু জ্বর একটি এসিড মশা বাহিত ভাইরাস জনিত রোগ। এসিড মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যাথা, বমি ও গাঁটেব্যাথা এবং গায়ের চামড়ায় ফুসকুড়ি।
মূলত, এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্যতম প্রধান উপায়। এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়। ফলে দিনের বেলাতেই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দিনের বেলায় বেশিরভাগ শিশুরা তাদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করে থাকে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ সম্পর্কে যদি প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতন করা যায় তবে এর প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
রোগটি যেভাবে ছড়ায়
এই ভাইরাসের প্রাথমিক ধারক হচ্ছে মানুষ। তবে অন্য প্রাণীদের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। স্ত্রী মশা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এমন মানুষের রক্তপান করে নিজে সংক্রমিত হয় এবং পেটে ভাইরাস বহন করে। প্রায় ৮-১০ দিন পর ভাইরাসটি মশার দেহের অন্যান্য কোষে ছড়িয়ে যায়, এরমধ্যে অন্যতম হলো মশার লালাগ্রন্থি আক্রান্ত হয়ে পড়া। আর এই সংক্রমিত মশা মানুষের রক্ত বেশি পছন্দ করে। ফলে এই সংক্রমিত মশা যে ব্যক্তিকে কামড় দিবে সেই অক্রান্ত হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বরের বিশেষ কোনো ঔষধ বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কিৃত হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু সংক্রমিত রোগীরা ঘোরোয়া চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেয়ে জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রন রাখা যায়।
শিশু বা ছোট বাচ্চাদের মধ্যে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাবল্য দেখা যায়। অপরদিকে পুরুষদের তুলনায়
মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতাও বেশি দেখা যায়। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গু অক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোনো উপসর্গ দেখা যায় না।
ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ উপসর্গগুলো হলো:
- জ্বর (হালকা/উচ্চমাত্রা);
- তীব্র মাথাব্যাথা;
- মাংসপেশী বা অস্থিমজ্জাতে ব্যাথা হওয়া;
- বমিবমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং;
- ত্বকে বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি ইত্যাদি।
এই উপসর্গগুলো সংক্রমণের ৪-১০ দিনের মধ্যে দেখা যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের গুরুতর উপসর্গগুলো হলো:
১. ক্রমাগত বমি;
২. দাঁতের গোড়া বা নাক দিয়ে রক্তপাত;
৩. প্রচণ্ড পেটে ব্যাথা;
৪. ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ;
৫. রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা দ্রুত হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীরে গুরুতর উপসর্গগুলোর যেকোনো একটি দেখা দিলে অতিদ্রুত ডাক্তরের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন অথবা রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা:
ডেঙ্গু জ্বরের বিশেষ কোনো ঔষধ বা প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কিৃত হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেঙ্গু সংক্রমিত রোগীরা ঘোরোয়া চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেয়ে জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রন রাখা যায়।
এছাড়াও, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা কিছু পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে উপকার পেতে পারেন। যেমন, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, শাকসবজি, জিংক (সামুদ্রিক মাছ, মটুশুটি, বাদাম) ইত্যাদি। একইসঙ্গে আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার যেমন, মাংস, মটরশুটি, সহজপাচ্য কার্বহাইড্রেড, পেপে, ডাবের পানি, সেইসঙ্গে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা প্রয়োজন। ডেঙ্গু রোগীদের ক্ষেত্রে সহজে হজম হয়না এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন, আমিষযুক্ত খাবার, চর্বি/ তৈলাক্তযুক্ত খাবার ইত্যাদি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়:
ডেঙ্গু যেহেতু একটি মশাবাহিত রোগ তাই মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচাতে হলে প্রয়োজন ডেঙ্গু সম্পর্কিত সচেতনতা। এসিড মশার জন্ম হয় স্বচ্ছ-জলাবদ্ধ পানির মাঝে। তাই বাড়ির চারপাশে পানি জমতে দেয়া যাবে না। যেমন, ফুলের টব, নারকেলের মালা, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদির মধ্যে জমে থাকা পানি ফেলে দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে।
এছাড়াও ফুলদানি, পড়ে থাকা গাড়ির টায়ার, অব্যবহৃত হাই-কমোডের পানি, এসিতে ব্যবহৃত পানি জমে থাকতে দেয়া যাবে না। এসব স্থানে পানি জমে থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে নিতে হবে। যথাসম্ভব ফুলহাতা জামা এবং ফুলপ্যান্ট পরিধান করে থাকতে হবে।
যেহেতু এডিস মশা ভোর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে বেশি কামড়ায় তাই দিনের বেলা বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দিনে বা রাতে যেকোনো সময় ঘুমানোর আগে মশারি টাঙিয়ে নিয়ে ঘুমাতে যেতে হবে। সম্ভব হলে মশা নিরোধক ক্যামিকেল পারমেথ্রিল ব্যবহার করতে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষকরা এ-বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেন। বিদ্যালয় পর্যায়ে সম্ভব হলে অভিভাবক সমাবেশে ডেঙ্গু জ্বরের কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার-প্রতিরোধ সম্পর্কিত কিছু ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা যেতে পারে। শিক্ষক কর্তৃক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিটি শ্রেণিতে ডেঙ্গু সম্পর্কিত কিছু ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করতে পারেন। এবং ভিডিও প্রদর্শনের পর শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের প্রদর্শিত ভিডিও সম্পর্কে বুঝিয়ে বলবেন। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত সচেতনতার অবস্থাটি দীর্ঘস্থায়ী ও ফলপ্রসু হবে।
এছাড়াও প্রতিদিন সমাবেশের পরে শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিদ্যালেয়ের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরা বাস্তাবিক অর্থে কাজের মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে পারবে এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হয়ে ওঠবে। সর্বোপরি, স্থানীয় পর্য়ায়ে সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে মশা প্রতিরোধক ঔষধ স্প্রে করার মাধ্যমে এসিড মশার বংশবিস্তার রোধে শিক্ষকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ। কিন্তু অবহেলা বা অসচেতনতার কারণে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এনমকি ডেঙ্গু জ্বরের কারণে মৃত্যুও ঘটতে পারে। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সকলের এ-বিষয়ে সতর্ক থাকা অতীব জরুরী। প্রাথমিক পর্যায়ে একমাত্র সচেতনতাই পারে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা থেকে আমাদের রক্ষা করতে। ব্যক্তি সুরক্ষিত থাকলে সুরক্ষিত থাকবে পরিবার, এলাকা, গ্রাম, শহর তথা গোটা দেশ। তাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিকের সচেতনতার মাধ্যমেই ডেঙ্গুর ভয়াবহতার বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে হবে। ফলশ্রুতিতে সুস্থ ও সুরক্ষিত জীবন পাবে দেশ ও দেশের মানুষ।
আমেনা আক্তার, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, মৌলভীবাজার
আই নিউজ/এইচএ
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর