মো. রওশান উজ্জামান রনি
খাবার স্যালাইন
শুধু ব্যবহারের ভুলে খাবার স্যালাইন হচ্ছে প্রাণ ঘাতক
খাবার স্যালাইন । ছবি সংগৃহীত
শুধু ব্যবহারের ভুলে প্রাণদায়ক খাবার স্যালাইন পরিণত হচ্ছে প্রাণ ঘাতকে। অল্প পানিতে স্যালাইন মেশানো কারণে অকারণে পরিমান না জেনে স্যালাইন গ্রহণে মস্তিষ্কের ক্ষতি, হৃৎপিণ্ড ও কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া সহ মৃত্যু ঘটছে অনেক শিশুর। চিকিৎসকদের পরামর্শ এক প্যাকেট স্যালাইন আধা লিটার পানিতেই মেশাতে হবে। শিশুকে খাওয়াতে হবে যত কেজি তত চামচ করে।
ডায়রিয়া পানি শুন্যতায় অপরিহার্য ওর স্যালাইন। দেহে পানি স্বল্পতা পূরণের এটি বিকল্প নেই। স্যালাইন তৈরি থেকে সেবন সবকিছুতেই নিয়ম মানার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। কিন্তু অনেকেই স্যালাইন তৈরি থেকে শুরু করে কখন কিভাবে খাওয়াতে হবে তা জানেন না বা জানলেও নিয়ম না মানলে প্রাণদায়ক ওর সেলাইন প্রাণ ঘাতকে পরিণত হতে পারে সেটা উপলব্ধি করতে পারেন না।
অল্প পানিতে স্যালাইন মিশিয়ে খাওয়ালে শরীরে লবণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসে বিশেষ করে মস্তিষ্ক থেকে। শিশু হাসপাতালে ২০২২ সালে কিডনি বিকল হয়ে আইসিইউতে ছিল একশো নয় শিশু। এর মধ্যে ঊনচল্লিশ জন ওর স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার না করায় ভর্তি হয়। চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত আইসিইউতে ছিল ছয় শিশু এর মধ্যে দুজন মারা যায়।
মুগদা মেদিকেল কলেজ হাস্পাতাল এর ডা. আবু সাইদ চৌধুরী শিমুল বলেন, কিডনি এমন অকেজো হয়ে যায় যে তাদেরকে ডায়ালাইসিস পর্যন্ত লাগতে পারে। আবার দেখা যাচ্ছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম বেড়ে গেলে এটা হার্ট বা শরীরের অন্যান্ন অঙ্গের উপর কিন্তু এটা এফেক্ট করে। সুতরাং এটা কিন্তু খুবই ভয়ঙ্কর। অসংখ্য বাচ্চা কিন্তু ডায়ালাইসিস বা কিডনি অকেজো হয়ে যাচ্ছে এবং সেটা কিন্তু প্রতিবছরই হচ্ছে। অনেকেই কম পানিতে পুরো স্যালাইন মিশিয়ে অথবা একটু একটু করে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ান। এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে এই শিশুটি। চিকিৎসকরা বলছেন এক প্যাকেট স্যালাইন মেশাতে হয় আধা লিটার পানিতে। একবার মেশানোর পর রাখা যাবে সর্বোচ্চ বারো ঘণ্টা পর্যন্ত। বয়স বেঁধে খাওয়ার নিয়মও আলাদা। পাতলা পায়খানা হওয়ার পরে দুবছরে কম বয়সে হলে দশ থেকে বিশ চামচ। দু বছর থেকে পাঁচ বছর হয়ে গেলে বিশ থেকে চল্লিশ চামচ। সহজ ভাবে বলি যত কেজি তত চামচ খাওয়াবে।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট এর উপ-পরিচালক ডা. প্রদীব কুমার সরকার বলেন, এই ব্যপারে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। এটা যেমন একটা জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে আবার এটা প্রাণঘাতী ও হতে পারে। বিধি মোতাবেক প্রস্তুত না করার কারণে বেশ কিছু এরকম জটিল পেশেন্ট আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লবণের এত বৈষম্য যে এই বাচ্চা গুলোকে বাচাতে আমাদের ডায়ালাইসিস করার মত ব্যবস্থাও নিতে হয়েছে।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল এর পরিচালক আধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন বলেন, ইদানিং আমরা লক্ষ্য করছি যে শিশুরা আসছে তাদের স্যালাইন খাওয়ার পরে খিচুনি হচ্ছে, কিডনি ইঞ্জুরি হচ্ছে এবং যারা বেচে যাচ্ছে তাদের পরবর্তীতে ব্রেইনে সমস্যা হচ্ছে অথবা পতিবন্ধি হয়ে যাছে।
শুধু ডায়রিয়া বা কলেরা নয় ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায়ও কার্যকর খাবার স্যালাইন। স্যালাইন খেলে ঠান্ডা লাগবে তাই গরম করেন অনেকে। স্তন্যদান কারী মা স্যালান খেলেই হয় শিশুর খেতে হয় না। প্রচলিত এমন সব ভুল ধারণাও ভাঙতে হবে। তাই গণমাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরামর্শ চিকিৎসকদের।
আই নিউজ/আর
আরও পড়ুন
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর