আই নিউজ প্রতিবেদক
যে ব্যায়ামে মানুষের আয়ু বাড়ে
ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখে।
ব্যায়াম, একজন সুস্থ মানুষের নিত্যদিনের রুটিনে যা অবশ্যই থাকা উচিৎ। ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখে। শরীর সুস্থ থাকলে মানসিকভাবেও উৎফুল্ল থাকা যায়। তাই চিকিৎসক থেকে শুরু করে সব ধরনের স্বাস্থ্য সচেতন মানুষই ব্যায়ামের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। কেননা, সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে দীর্ঘদিন বাঁচার সুযোগ পাওয়া যায়। কিছু ব্যায়াম আছে, যে ব্যায়ামে মানুষের আয়ু বাড়ে।
আই নিউজের আজকের এই প্রতিবেদনটি ব্যায়াম বিষয়ক। কেননা, ব্যায়াম একটি প্রয়োজনীয় চর্চা হলেও বেশিরভাগ মানুষই জানেন না ব্যায়াম করার সঠিক নিয়ম। কোন ব্যায়াম কখন কীভাবে করা উচিৎ তা জানা না থাকলে অনেকসময় হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই ব্যায়াম সম্পর্কে প্রত্যেক মানুষেরই সঠিক ধারণা থাকা উচিৎ এবং প্রত্যেকেরই দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম চর্চা করা উচিৎ।
ব্যায়াম করার সুফল
সাধারণভাবে আমরা স্কুলের বইয়ে পড়ে এসেছি ব্যায়াম আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তবে, ব্যায়ামের কাজ শুধুই শরীরকে সুস্থ রাখা নয়। বরং, ব্যায়াম চর্চার প্রভাব পড়ে মানসিকভাবেও। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সঠিকভাবে ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে একজন মানুষের মানসিক বিষন্নতা দূর করা সম্ভব। অর্থাৎ, ব্যায়াম শুধু আমাদেরকে শারিরীকভাবেই সুস্থ সবল করে না; এর রয়েছে একটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপকারি দিকও।
গবেষকরা দেখেছেন কেউ যদি নিয়মিত ব্যায়াম চর্চা করেন তাহলে তার মনের বিষন্নতা কেটে যায়। মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষ ব্যায়াম চর্চা শুরু করলে তাদের অবসাদ কেটে কাজের উদ্যম জাগে। নতুন উদ্যমে কোনোকিছু শুরু করতে যে মানসিক অবস্থার প্রয়োজন পড়ে তা একজন মানুষ নিয়মিত ব্যায়াম চর্চার মাধ্যমে পেতে পারেন।
‘জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিন’ নামক একটি জার্নালে একটি ব্যায়াম বিষয়ক গবেষণাপত্র বের হয়েছে। ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ব্যায়াম আয়ু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আর সেই ব্যায়ামটি হলো সাইকেল চালানো। কিন্তু সাইকেল চালালে কেন আয়ু বাড়ে?
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, যারা নিয়মিত সাইকেল চালায়, তাদের ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগের মতো সমস্যাগুলো কম হয়। ডায়াবেটিস এমন এক অসুখ, যা ধীরে ধীরে আয়ু কমিয়ে দিতে থাকে। নিয়মিত সাইকেল চালালে সেই রোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। ফলে আয়ু বেড়ে যায়।
‘জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিন’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হওয়া গবেষণাপত্রটি বলছে, শুধু শরীরচর্চা হিসেবে নয়, যারা কাজের প্রয়োজনেই রোজ সাইকেল চালান, তাদের আয়ু বাড়ে।
যারা সাইকেল চালাতে জানেন না তারা কী করবেন?
অনেকে ভাবছেন গবেষণাপত্রে তো বলা হয়েছে যারা রোজ সাইকেল চালান তাদের আয়ু বেড়ে যায়। কিন্তু, যারা সাইকেল চালাতেই জানেন না, তাদের আয়ু বৃদ্ধির জন্য কী কোনো ব্যায়াম নেই? হতাশ হবার কিছু নেই। আসলে, গবেষণাপত্রে এমন ব্যায়ামগুলোকে আয়ু বৃদ্ধিকারক বলা হয়েছে যে ব্যায়ামের ফলে ডায়াবেটিস বা হৃদ্রোগের মতো সমস্যাগুলো মানুষ এড়াতে পারে। এই সমস্যাগুলো এড়াতে আপনি নিয়মিত কয়েক মাইল দৌড়ার ব্যায়াম করতে পারেন। নিয়মিত দৌড়ালেও মানুষের ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।
বর্তমান সময়ে এসে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই অধিক সংখ্যক মানুষ ডায়াবেটিস বা হৃদরোগজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এই দুইটি সমস্যা মোকাবিলায় ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এর জন্য আপনাকে এমন ব্যায়াম বেছে নিতে হবে যা ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের নাশক হিসেবে কাজ করবে।
ডাক্তাররা বলেন- একজন মানুষ আধা ঘণ্টা সাইকেল চালালে বা এক ঘণ্টা ধীরে ধীরে কয়েক মাইল দৌড়ালে শরীর থেকে ২৯৮ থেকে ৩৭২ ক্যালোরি পর্যন্ত ঝরতে পারে। এই ক্যালোরি ঝরার ফলে হৃদযন্ত্রেরও লাভ হয়, ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
ব্যায়ামের পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম
তবে, ব্যায়ামের সাথে সাথে আরও কিছু ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিয়ম মেনে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠা। আপনি যদি মধ্য বয়সে এসে পৌঁছান তাহলে প্রতি রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া ভীষণ জরুরি। সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম হলো আদর্শ। এর চেয়ে কম ঘুম বা এর চেয়ে বেশি ঘুম আমাদের মস্তিষ্ক ও হার্টের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, প্রতি রাতে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার কম ঘুমলে প্রাথমিক মৃত্যুর ঝুঁকি ১২ শতাংশ বেশি, যেখানে প্রতি রাতে আট থেকে নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমলে আপনার আয়ু ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ঘুমের সময় আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইনট্রিগ্রেন নামে এক ধরনের আঠালো পদার্থ নিঃসরণ করে। এই ইনট্রিগ্রেন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে টি সেলসকে সাহায্য করে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন ঘুম আয়ু বাড়াতে কতো সাহায্য করে। এটা ঠিক যে বয়সের সাথে সাথে ঘুম বিপর্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু ঘুমের সাইকেল ঠিক করার নানা পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো অনুসরণ করে যে করেই হোক ঘুমের রুটিন ঠিক করুন।
ব্রিটেনের এক্সারসাইজ ক্লিনিক্যাল ফিজিওলজিস্ট হিথার মিল্টন জানিয়েছেন যারা মধ্য বয়সে পৌঁছেছেন তাদের উচিত নিয়মিত হার্ট, ফুসফুস ও পেশির সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যায়াম করা। সেটা হতে পারে নিয়মিত দ্রুত হাঁটা এবং ভারোত্তোলন। কার জন্য কতোটুকু মাত্রার ব্যায়াম দরকার সেটি একজন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ বলতে পারবেন। যদিও একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির উচিত সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করা।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা সপ্তাহে মাত্র ৭৫ মিনিট ব্যায়াম করেছেন অর্থাৎ প্রতিদিন হয়তো ১০ মিনিটের কিছু বেশি, তাদের ব্যায়াম না করাদের তুলনায় এক বছর আট মাস এবং যারা সপ্তাহে পাঁচ থেকে আট ঘণ্টা ব্যায়াম করেছেন তাদের আয়ু অন্তত চার বছর বেড়েছে।
যারা ব্যায়াম করেন না তাদের নানান রোগে ভোগার আশঙ্কা যেমন বেশি, তেমনি তারা বেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। অন্যদিকে কর্মঠ মানুষেরা বেশিদিন তো বাঁচেনই তাও সুস্থ ও স্বাধীনভাবে।
আই নিউজ/এইচএ
- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো?
- দামী নাকি কমদামী কোন সিগারেটে ক্ষতি বেশি?
- ডিম ভাজি না সেদ্ধ, কোনটা বেশি উপকারী?
- প্রোটিন জাতীয় খাবার কোন খাদ্যে বেশি-কোন খাদ্যে কম?
- হার্টের ব্লক খোলার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় রিং বা স্ট্যান্ট
- বডিবিল্ডিং: সাপ্লিমেন্টের গুরুত্ব এবং যেভাবে শুরু করবেন
- কানের ভেতর হঠাৎ পোকা বা কিছু ঢুকে গেলে
- ওসিডি কী? জেনে নিন লক্ষণ
- বাচ্চাদের গুড়াকৃমি প্রতিরোধে কী খাওয়াবেন?
- ফার্মেসি রাত ১২টায় বন্ধের সিদ্ধান্তে বিস্ময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর