হৃদয় হক
জেমিনিডস উল্কাবৃষ্টি সমাচার
জেমিনিডস উল্কাবৃষ্টি নিয়ে প্রথম হদিস মেলে সম্ভবত ১৮৩০ দশকে। তখন দুটো রিপোর্ট পাওয়া যায় এ নিয়ে। তারমধ্যে প্রথমটি আসে জ্যোতির্বিদ L. F. Kämutz থেকে। তিনি ১৮৩০ সালের ডিসেম্বর মাসের ১২/১৩ তারিখ কম সময়ের মধ্যে ৪০টির মতো উল্কা দেখার কথা জানান।
১৮৪০ দশকেও এদের নিয়ে কয়েকটি রিপোর্ট আসতে দেখা যায়। ১৮৪৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর রাতে জ্যোতির্বিদ E. J. Lowe রিপোর্টে লেখেন, “Many falling stars noticed in the constellations Orion, Taurus, Gemini, and Auriga.”
তবে, ১৮৫০ দশকের দিকে এই উল্কাবৃষ্টিকে ভালোই এক্টিভ থাকে দেখা যায়। এটি যে বার্ষিক উল্কাবৃষ্টি সেটি সবার আগে ১৮৬২ সালে B. V. Marsh নামের একজন জ্যোতির্বিদ বুঝতে পারেন। শুধু তাই না, তিনি এই উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান্ট বিন্দু যে, মিথুন রাশির বিষ্ণু (Castor) এবং সোমতারার (Pollux) আশেপাশে অবস্থিত সেটিও লক্ষ্য করেন।
কিন্তু, একই সময়ে জ্যোতির্বিদ R. P. Greg ও স্বাধীনভাবে এই উল্কাবৃষ্টি আবিষ্কার করেন। তবে, তিনি এই উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান্ট হিসেবে মিথুন রাশির বিষ্ণুতারা (Castor) এবং আগিরা মণ্ডলের উরঃ (Menkalinan) তারার মধ্যবর্তী অঞ্চলকে নির্ধারণ করেন।
তবে, উল্কাবৃষ্টিটির রেডিয়ান্ট আরো সঠিকভাবে সর্বপ্রথম নির্ধারণ করেন জ্যোতির্বিদ A. S. Hershel। তিনি বলেন, বেশিরভাগই বিষ্ণুতারার নিকট থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে।
পরবর্তীতে একে নিয়ে আরো পর্যবেক্ষণ হয় এবং ১৯৮৯ সালে আই.এম.ও. (IMO) বা "The International Meteor Organization" এর ZHR বের করেন। তা হলো, ঘন্টায় ৫০ থেকে ১২০টি। বলা বাহুল্য, আই.এম.ও. গঠিত হয়েছিলো ১৯৮৮ সালে এবং উক্ত সালেই সেখানকার সদস্যবৃন্দরা মিলে ১৪,১৯৩টি জেমিনিডস উল্কা দেখেছিলেন। আর, প্রতিবছর এই উল্কাবৃষ্টির ZHR বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই উল্কাবৃষ্টির জননী হলো, ১৯৮৩ সালে আবিষ্কৃত "3200 Phaethon" নামের একটি গ্রহাণু। হ্যাঁ, ধূমকেতু না গ্রহাণু। ব্যাপারটি নিয়ে জ্যোতির্বিদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। কোনো জ্যোতির্বিদ বলতেন এটা ধূমকেতু, তো অন্য জ্যোতির্বিদরা বলতেন এটা গ্রহাণু। পরিশেষে দেখা যায়, এটি বর্তমানে একটি গ্রহাণু তবে, এরমধ্যে ধূমকেতুর কিছু বৈশিষ্ট্য এখনও বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি এককালে ধূমকেতু ছিল। তবে, আজ সর্বহারা হয়ে একশ্রেণির গ্রহাণুতে পরিণত হয়েছে। গ্রহাণুটির বার্ষিক গতি মাত্র প্রায় ১.৪ বছর। এটি আবিষ্কারের আগে মনেকরা হতো, প্রতিটি উল্কাবৃষ্টিই ধূমকেতুর কক্ষপথের সাথে জড়িত এবং এসব ধূমকেতুর কক্ষপথ বেশ বড় হতো, অর্থাৎ বার্ষিক গতি অনেক বেশি হতো। কিন্তু এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীদের এই ধারণা পাল্টে যায়৷ ফলে, এই আবিষ্কারটি ধূমকেতুর সাথে উল্কাবৃষ্টির সম্পর্ক আবিষ্কারের মতোই একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।
যাহোক, বর্তমানে এই বার্ষিক উল্কাবৃষ্টির সময়সীমা ৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে, ১৩ই ডিসেম্বর রাত থেকে ১৪ই ডিসেম্বর ভোরবেলা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উল্কার দেখা মেলে। এটা হলো এই উল্কাবৃষ্টির পিক টাইম।
এই উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান্ট বিন্দু হল বিষ্ণুতারার (Castor) ১° উপরেই এবং তা বের করাও সহজ। আমাদের ছায়াপথে এর অবস্থানের ফলে, এই উল্কাবৃষ্টির উল্কাগুলোর উজ্জ্বলতা কেমন হবে তার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা হল লুব্ধক (Sirius), অনেক উল্কাই এর মত উজ্জ্বল হবে। অনেকেই আবার কালপুরুষ মণ্ডলের বাণরাজা (Rigel) তারার মত উজ্জ্বল হবে। তবে, বেশিরভাগই এদের চেয়ে কম উজ্জ্বল হবে। আর, উল্কাগুলো হবে হলুদ, নীল, লাল অথবা সবুজ রঙে রাঙা!
আকাশ পটে মিথুন রাশি
তারা দেখার জন্য শীতকাল সেরা একটি সময়। আকাশ বেশ পরিষ্কার থাকে, সাথে আঁধার নেমে আসে তাড়াতাড়ি। ফলে, তারা দেখার সময়ও হয় বেশি। মিথুন মণ্ডলটি শীতকালের মন্ডল। রাতের আকাশে সবচেয়ে জনপ্রিয় তারামণ্ডল হল কালপুরুষ। কালপুরুষকে পাওয়ার পর মিথুন কে সহজেই পাওয়া যায়৷
রাত ৮:৩০ বা ৯টা থেকে এই উল্কাবৃষ্টি দেখা শুরু করা যায়। কালপুরুষ তখন থাকবে দক্ষিণ-পূর্ব দিকের তুলনামূলক পূর্বে৷ সময় যত গড়াবে, কালপুরুষ আস্তে আস্তে আসবে ঠিক দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং ১২টার দিকে থাকবে দক্ষিণের দিগন্তের বেশখানিকটা উপরে। ১২টার পর সময় যত গড়াবে, কালপুরুষ যেতে থাকবে দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং ভোর হবার সময়ের ভেতর পশ্চিম দিগন্ত ছুই ছুই অবস্থানে চলে যাবে৷
রাত ১২টার পর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে মুখ করে দাড়ালে, দক্ষিণের দিগন্তের বেশখানিকটা উপরে বা ডান দিকে উপরে তাকালেই দেখবেন, ৩টি প্রায় একই রকমের উজ্জ্বল তারা একই সরল রেখার অবস্থান করছে। এটিই কালপুরুষের বিশেষত্ব। অন্য কোথাও এভাবে ৩টি তারা একই সরলরেখায় এত সহজে ধরা দেয় না। গ্রামের ভাষায় এদের বলা হয় তিন তারা। এখানে কালপুরুষের কোমড়ের বেষ্টনী কল্পনা করা হয়। এ তিন তারার, মধ্যখানের তারাটির নাম অনিরুদ্ধ (Alnilam) অনিরুদ্ধের বামে বা পূর্বের তারাটির নাম ঊষা (Alnitak) এবং ডানে বা পশ্চিমের তারাটির নাম চিত্রলেখা (Mintaka)।
এবার, এ তিন তারা থেকে কিছুটা বামদিকে, উত্তর বা উত্তর-পূর্বে তাকালেই দেখবেন, হালকা লাল রং এর উজ্জ্বল একটি তারা — এটি মূলত কালপুরুষের বাম কাঁধ নির্দেশ করে, এর নাম আর্দ্রা (Betelgeuse)। এই আর্দ্রা থেকে একটি ছোট সরলরেখা টেনে আরেকটু বামে গেলেই পাবেন মিথুন মণ্ডলের তৃতীয় উজ্জ্বলতম তারা "হলবলা ৫" (Alhena)।
তারপর, হেনা থেকে আবারো বামে আরেকটি সরলরেখা টানলে দেখবেন, দুটি প্রায় সমান এবং কাছাকাছি তারার মধ্য দিয়ে যায়। এ তারা দুটিই আমাদের প্রধান অতিথি। এ তারা দুটির স্থানে মিথুন রাশির দুই ভাইয়ের মাথা কল্পনা করা হয়।
এই দুটি তারার মধ্যে তুলনামূলক বামে বা উত্তরে বা আপেক্ষিক কম উজ্জ্বল তারাটি হলো বিষ্ণুতারা (Castor)। এটি মিথুনের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা। আগেই বলেছি, জেমিনিডস উল্কাবৃষ্টির রেডিয়ান্ট বিন্দু হল বিষ্ণুতারার একটু (১°) উপরেই। বিষ্ণুতারার নিচের তারাটি হলো, মিথুন রাশির সবচেয়ে উজ্জ্বলতম তারা, সোমতারা (Pollux)।
ইতিপূর্বেই বলেছিলাম, এর জননী এখন আর ধূমকেতু নেই। ফলে, আগামী ১০০ বছর পর এই উল্কাবৃষ্টিটি, হয়তো আর হানা দেবে না। আমাদের এই বিশেষ মূহুর্তের জন্য মহাবিশ্বের নিকট কৃতজ্ঞ থাকা উচিত!
আর কথা না বাড়াই। উল্কাবৃষ্টি দেখার ৩০-৬০ মিনিট আগে মোবাইল, টিভি ও কম্পিউটার ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। অথবা, অন্ধকার রুমে থেকে চোখকে আঁধারে অভ্যস্ত করুন। ডিসেম্বর মাস, রাতে ভালোই শীত পড়ে। তাই, উল্কাবৃষ্টি দেখার সময় শীতের পোশাক নিতে ভুলবেন না। আপনার উল্কাবৃষ্টি দেখা শুভ হোক।
তথ্যসূত্র:
২. Jonathan Powell, Cosmic Debris, Springer International Publishing (2017)
৪. মোহাম্মদ আবদুল জব্বার, তারা-পরিচিতি, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন (২০০৬)
- আমেরিকান ডিভি লটারি ২০২৪ বাংলাদেশ
- ফেসবুক মনিটাইজেশন আপডেট ২০২৩
- বাংলাদেশে কম দামে ভালো মোবাইল ফোনের দাম
- অনলাইনে কানাডা ভিসা চেক করার নিয়ম ২০২৩
- মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার নিয়ম
- অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম ২০২৩
- পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪
- সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ডেলিভারি চার্জ
- মৌলভীবাজারের যুবকের কৌশল উদ্ভাবন রেললাইন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
- দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম করার উপায় ২০২৩