হেলাল আহমেদ, আই নিউজ
মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ : কীভাবে মানবদেহে কাজ করবে এই চিপ ?
মানব মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপন।
মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপন; বর্তমান বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এই বিষয়টি। সম্প্রতি মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক এই চিপটি মানব মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করে ট্রায়ালের অনুমোদ পেয়েছে। এতে করে আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে মানুষের সংমিশ্রণের যাত্রায় আরও একধাপ এগিয়ে গেল বিশ্ব- এমনটা মনে করছেন সাইন্স এন্ড টেকলোজি নিয়ে কাজ করা গবেষক, বিজ্ঞানীরা।
নিউরালিংক দাবি করেছে এই চিপটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে মানুষের অবভ্যন্তরীণ অনেক জটিল রোগ সনাক্ত করণ ও নিরাময়েও অনেক আগাম সুবিধা পাওয়া যাবে।
বুঝতেই পারছেন পাঠক আই নিউজের আজকের আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে মানব মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রস্তিস্থাপন এবং এর বিস্তারিত নিয়ে। আজকের এই লেখার আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করবো কীভাবে বসানো হবে এই মাইক্রোচিপটি এবং কোন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কাজ করবে এই টেকনোলজি। তাছাড়া, মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপনের পর এর সুবিধা-অসুবিধা সম্ভাবনা এবং শঙ্কা সব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা থাকবে এই লেখায়।
মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ নিয়ে যা বলা হচ্ছে
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রেইন চিপ ইন্টারফেসের মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও শারীরিক কারণে যোগাযোগের প্রতিবন্ধকতার শিকার মানুষদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে যুগান্তকারী উদ্যোগ।
মানুষের উপর এখনো এই চিপের ট্রায়াল যদিও এখনো করা হয়নি তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণীর ওপর এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছে নিউরালিংক। আর এসব পরীক্ষার ফলাফলেও সন্তুষ্ট নিউরালিংক। তারা এসব পরীক্ষা থেকে সফলতার ফলাফলই পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন খোদ ইলন মাস্ক।
নিউরালিংক কতৃপক্ষ দাবী করেছে- এই চিপের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা অনেকটাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন। অনেক আগে থেকেই এই চিপ নিয়ে কাজ করছিল ‘নিউরালিংক’। এর আগে শূকর ও বানরের মস্তিষ্কে নিউরালিংক ডিভাইস সফলভাবে স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলেও দাবি করেছে নিউরালিংক।
মাইক্রোচিপ ব্যাপারটা আসলে কী?
মাইক্রোচিপ কী এই ব্যাপারটা পরিষ্কার না হলে এটি কীভাবে মস্তিষ্কে স্থাপনের পর কাজ করবে তা বুঝতে সমস্যা হবে। তাই আগে মাইক্রোচিপ কী তা জানা দরকার। মাইক্রোচিপ এমন একটি মাইক্রোচিপ; যাকে চিপ, কম্পিউটার চিপ বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটও বলা হয়।
IC হল ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট্রির একক যা একটি মাইক্রোস্কোপিক স্কেলে সিলিকন বা কম মাত্রায় জার্মেনিয়াম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়।
নিউরালিংকের মাইক্রোচিপটি দেখতে কেমন?
নিউরালিংকের ডিভাইসটি মূলত কয়েন আকৃতির। রোবোটিক সার্জারির সাহায্যে মস্তিষ্কের খুলি কেটে এটি প্রতিস্থাপন করা হয় এবং এর তারগুলো মস্তিষ্কের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। এটি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা এতোটাই সহজ আর কম সময় সাপেক্ষ যে ইলন মাস্ক বলেন, ‘এটি আপনার চুলের নিচে এমনভাবে স্থাপিত হবে আপনি বুঝতেও পারবেন না। আর আপনি ধরুন দুপুর ১২টায় হাসপাতালে আসলেন চিপটি প্রতিস্থাপনের জন্য, দুপুর ১টায় আবার স্বাভাবিক মানুষের মতো নিজের বাড়িতে চলে গেলেন।’
চিপটি মোবাইলের সিম কার্ডের মতোই, তবে তা মাথায় ছিদ্র করে সরাসরি মস্তিষ্কে বসানো হবে। চিপগুলি ইতিমধ্যেই বানরের দেহে পরীক্ষা করা হয়েছে। মস্তিষ্কের পাঠানো সংকেতগুলিকে ডিকোড করে যাতে ব্লুটুথের মাধ্যমে ডিভাইসগুলিতে সেই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া যায়, সেই ভাবেই নকশা করা হয়েছে মাইক্রোচিপগুলি।
মস্তিষ্কে এই চিপ স্থাপনের ফলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে
৩৬ বছর বয়সী এক জার্মান ব্যক্তি যিনি ২০১৫ সালে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান। তাঁর মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ স্থাপনের পর তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে সম্পূর্ণ বাক্য দিয়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন।
প্যারালাইসিস এবং অন্ধত্বের মতো অবস্থার চিকিৎসা করতে এবং প্রতিবন্ধীদের কম্পিউটার এবং মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সাহায্য করতে মাইক্রোচিপ ব্যবহার করে নিউরালিঙ্ক। এর মাধ্যমে এই সব রোগে আক্রান্ত মানুষের জীবন আর পাঁচজন মানুষের মতোই স্বাভাবিক পথে ফিরে আসতে পারে বলে আশা রাখে টেসলার কোম্পানি নিউরালিংক।
নিউরালিংকের হয়ে ইলন মাস্ক এটিও দাবী করেছেন- এই চিপটি প্রতিস্থাপনের একজন অচল লোকও স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটাচলা করতে পারবেন এমনটাই আমাদের আশা। এবং নিউরালিংক সেসব লক্ষ্যেই এই চিপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এই ধনকুবের উদ্যোক্তা।
মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ স্থাপনের ঝুঁকিসমূহ
মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপনের ফলে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে এই সুবিধাগুলোর বাইরেও এই চিপ ব্যবহারে আপাতত কিছু ঝুঁকির বিষয়ও সনাক্ত করেছেন চিকিৎসক, গবেষক, বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ প্রতিস্থাপনের ফলে তিন ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এগুলো হল-
- চিপটি প্রতিস্থাপনের পর ক্ষণকালীন শারিরীক সমস্যা
- দীর্ঘকালীন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- এবং নৈতিক নিরাপত্তা।
এর মধ্যে বিজ্ঞানীরা নৈতিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মোটা দাগে আলাপ করছেন। তারা বলছেন- এই চিপটি প্রস্তিস্থাপনের পর এটি যিনি ব্যবহার করবেন তাঁর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবার বিশেষ দরকার রয়েছে। তানাহলে এই চিপটি ব্যবহারের ফলে উপকারের চাইতে অপরাধের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
তাছাড়া, চিপটি প্রতিস্থাপনের পর এর পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়েও এখনো বিস্তারিত ভাবে কিছু জানায় নি নিউরালিংক। যদিও তারা বলছে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে তাদের চিন্তা আছে এবং তারা সে অনুযায়ীই এই প্রজেক্টটি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সর্বোপরি মানব মস্তিষ্কে মাইক্রোচিপ স্থাপনের বিষয়টি আধুনিক বিজ্ঞানের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এতোদিন হলিউডের সিনেমাগুলোতে সাধারণত মানুষের শরীরে চিপ প্রতিস্থাপনের দৃশ্য দেখে আসলেও ধীরে ধীরে মানুষের বাস্তব জীবনেও প্রবেশ করতে চলেছে বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার।
আই নিউজ/এইচএ
- আমেরিকান ডিভি লটারি ২০২৪ বাংলাদেশ
- ফেসবুক মনিটাইজেশন আপডেট ২০২৩
- বাংলাদেশে কম দামে ভালো মোবাইল ফোনের দাম
- অনলাইনে কানাডা ভিসা চেক করার নিয়ম ২০২৩
- মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার নিয়ম
- অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম ২০২৩
- পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪
- সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ডেলিভারি চার্জ
- মৌলভীবাজারের যুবকের কৌশল উদ্ভাবন রেললাইন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
- দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম করার উপায় ২০২৩