মো. রওশান উজ্জামান রনি
ডার্ক ওয়েবসাইট কি?
ডার্ক ওয়েব । ছবি অনলাইন
বর্তমান সময়ে আমরা ইন্টারনেটের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। ভার্চুয়াল এই জগতের এত বিস্তার ঘটলেও সমগ্র ইন্টারনেটের মাত্র দশ শতাংশেরও কম অংশে আমরা বিচরণ করি। এই অংশকে বলা হয় সার্ফেস ওয়েব। ইন্টারনেটের বাকি নব্বই শতাংশেরও বেশি অংশ জুড়ে রয়েছে অজানা নানান রকমের ওয়েবসাইট। ইন্টারনেটের এই অজানা অংশকে বলা হয় ডিপ ওয়েব। ডিপ ওয়েবের আবার আরেকটি বিশেষ অংশ রয়েছে যা ডার্ক ওয়েব নামে পরিচিত।
ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব এর থাকা তথ্য গুগল এর মত সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। ডিপ ওয়েবে অনলাইন ব্যাংকিং ব্যক্তিগত সেবা সহ বিভিন্ন অফিস আদালতের তথ্য থাকলেও ডার্ক ওয়েবের বিষয় খানিকটা ভিন্ন। ডার্ক ওয়েব হল সত্যিকারের অপরাধ জগতের চেয়েও ভয়ঙ্কর এক জায়গা। আই নিউজের আজকের প্রতিবেদনে ইন্টারনেটের কালো অধ্যায় ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন শপিং বা ইলার্নিং এর মত বিভিন্ন জরুরী কাজে আমরা সারফেস ওয়েব ব্যবহার করি। এই সারফেস ওয়েব এর আবার বিভিন্ন অংশ ডিপোয়েবের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। যেমন ধরুন আপনি যে ব্যাংকে লেনদেন করেন তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যাংক সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য সহজেই জানা যায়। কিন্তু আপনি ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইটে সকল গ্রাহকের তালিকা ব্যাংকের লেনদেনের পরিমাণ বা অর্থনৈতিক স্পর্শকাতর অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে কিছুই জানতে পারবেন না। এই তথ্যগুলোও কোনো না কোনোভাবে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তথ্যগুলো গোপন রেখেছে। সেকারণে সার্চ ইঞ্জিন দিয়ে খুঁজে এই তথ্যগুলো পাওয়া সম্ভব নয়। ইন্টারনেটের এমন গোপন অংশকেই বলা হয় ডিপওয়েব।
এবার আসা যাক ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে। ডার্ক ওয়েব হল ডিপ ওয়েবের এমন এক অংশ যা অত্যন্ত গোপনে সংরক্ষণ করা হয়। ডার্কয়ে ব্যবহারকারীরা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রেখে নানা ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। যেমন হ্যাকিং, মাদক বিক্রি, অস্ত্র বিক্রি, কপিরাইট লঙ্ঘন, চোরাচালান, গুপ্তহত্যা, অবৈধ পর্নোগ্রাফি বিক্রি এমনকি মানব পাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ। তবে ডার্ক ওয়েব এর সকল কাজই অপরাধমূলক নয়। কিছু কাজ আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও তা জনকল্যাণকরও হতে পারে। যেমন উইকিলিক্স এর মত ডার্ক ওয়েবসাইট যারা বিভিন্ন দেশের সরকার বা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির দপ্তরিক নথি প্রকাশ করে।
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ডার্ক ওয়েব আসলে কি? ডার্কয়েব হল পাইরেসির স্বর্গ। প্রিমিয়াম মিউজিক থেকে শুরু করে শদ্ব মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা, best seller book থেকে শুরু করে বহু দামি দামি সফটওয়্যার সকল কিছুর পায়রেটেড কপি ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যায়। পরিচয় গোপন রেখে এসব কপিরাইট লঙ্ঘন করা হয় বলে দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া যায় না। তবে সত্যি কথা বলতে কপিরাইট লঙ্ঘন ডার্ক ওয়েবের সবচেয়ে কম ক্ষতিকর দিক। এখানকার সবচেয়ে বাজে দিক হল নানান ধরনের ব্ল্যাক মার্কেট। সস্তায় বিভিন্ন ধরনের মাদক থেকে শুরু করে ভয়ঙ্কর সামরিক অস্ত্র, চোরাই ক্রেডিট কার্ড থেকে শুরু করে মূল্যবান ধাতুর মতো দেখতে নকল পাথর সবই পাওয়া যায় এখানে।
ডার্ক ওয়েবের ব্ল্যাক মার্কেটে এ বিভিন্ন দেশের জাল টাকা, নকল পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন সহ যাবতীয় নকল কাগজপত্র তৈরি করা যাই। ডার্ক ওয়েবের ব্ল্যাক মার্কেট সম্পর্কে বলতে গেলে সিল্ক রোডের কথা না বললেই নয়। এটা হলো ডার্ক ওয়েবের প্রথম আধুনিক ডার্ক মার্কেট। যা চোরা কারবারীদের সুপার শপ হিসেবে বিবেচিত হতো। সকল ধরনের ভয়াবহ মাদক, অস্ত্র, ক্ষতিকর, এসিড, নকল গহনা, নকল check, নকল credit কার্ড সহ ক্ষতিকর সকল কিছু পাওয়া যেত এখানে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বহু চেষ্টার পর এই সাইটটিকে বন্ধ করা গেছে। ডার্ক ওয়েবে এসবের চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো এখানে পেশাদার খুনিও ভাড়া করা যাই। যারা ক্রিপ্ট কারেন্সির বিনিময়ে যে কাউকে খুন করতে পারে। এছাড়া সন্ত্রাসীরা কিভাবে বাড়িতে বোমা তৈরি করতে পারবে, কিভাবে কোন হামলার পরিকল্পনা করতে পারবে এরকম নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের টিউটোরিয়াল ভিডিও আছে ডার্ক ওয়েবে।
এ ছাড়াও ডার্ক ওয়েব হল বিকৃত রুচির বিনোদনের বিশাল ভান্ডার। এমন এমন সব ভিন্ন বিষয় ডাকবে বিনোদনের সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়। যা আই নিউজের আজকের প্রতিবেদনে লিখাও অনুপযুক্ত। ডার্ক ওয়েবে বিচরণ করা surface wave এর মত সহজ নয়। এই অন্ধকার জগতে প্রবেশের জন্য বিশেষ software configuration বা authorization এর দরকার হয়। অনেক ধরনের প্রাইভেট কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ডার্ক ওয়েবে ঢোকা যায়। যেমন friend to friend নেটওয়ার্ক, পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক, আই টুপি নেটওয়ার্ক এবং টর্নেটয়ার্ক। ডার্কোয়েভে ঢোকার জন্য যেসব টুল ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো টর ব্রাউজার। এই ব্রাউজারের বিশেষত্ব হলো ডার্কয়ে লুকিয়ে রাখা ওয়েবসাইটে সহজে এক্সেস করা যায়। তবে ডার্কয়ে কাঙ্খিত ওয়েবসাইট খুঁজে বের করাও বেশ কঠিন।
প্রথম কারণ হলো এখানে সার্চ ইঞ্জিন কোনো কাজে আসে না। দ্বিতীয় কারণ হলো ডার্ক ওইয়েবের ঠিকানা গুলো খুবই উদ্ভট রকমের হয়ে থাকে। সাধারণ ওয়েব সাইটের এর নাম মনে রাখার জন্য ডোমেইন গুলো সহজ করা হয়। যেমন ইউটিউব ডড কম। কিন্তু ডার্ক ওয়েবে তার ঠিক উল্টোটা। এখানে ওয়েবসাইট এর ঠিকানা এমন ভাবে তৈরি করা হয় যা সহজে মনে রাখা সম্ভব নয়। যেমন (xh4544dbgfjkv150672kjd.onion) এরকম উল্টোপাল্টা অর্থহীন বর্ণ ও সংখ্যার মিশ্রণ। এখানে ডড অনিয়ন হলো একটি বহুল ব্যবহৃত এক্সটেনশন। সাধারণ ওয়েবসাইট এর ঠিকানার শেষে dot com, dot net, dot org, dot info এরকম এক্সটেনশন থাকে। কিন্তু ডার্কয়েব অ্যাড্রেসের শেষে থাকে ডট অনিয়ন। ডট অনিয়ন হলো হাইলি এনক্রিপটেড ডোমেনের নাম। অর্থাৎ এগুলো একাধিক পরতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত। পেঁয়াজ যেমন একের পর এক আবরণ দ্বারা সুরক্ষিত। ডট অনিয়ন ওয়েবসাইটগুলোও তেমনি একের পর এক ইনক্রিপশন দ্বারা সুরক্ষিত।
ডার্ক ওয়েবের মূল ভিত্তিই হল গোপনীয়তা। আর সে কারণেই এখানে সবচেয়ে বেশি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ডার্ক ওয়েবে কোন অপরাধীকে খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব এর কাছাকাছি। ডার্ক ওয়েব ব্ল্যাক মার্কেটে ক্রেতা বিক্রেতা কাউকেই ট্র্যাক করা যায় না। কারণ এখানকার সকলের লেনদেন ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষ নয় এমন ব্যক্তির জন্য ডার্ক ওয়েবে প্রবেশ করাও অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। ডার্ক ওয়েবের কোনায় কোনায় অত্যন্ত দক্ষ হ্যাকাররা ফাদ পেতে রেখেছে। ডার্ক ওয়েবে কোন লিংকে ক্লিক করলে অথবা কোন ফাইল ডাউনলোড করলে নিজের অজান্তেই আপনার কম্পিউটার ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। বহু হ্যাকার কোন ধরনের ভাইরাস ছাড়াও ব্যবহারকারীদের রিমোট এডমিনিস্ট্রেশন টুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এর ফলে হ্যাকার আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের ওয়েবক্যাম থেকে শুরু করে সকল ধরনের কার্যক্রমের নজরদারি করবে কিন্তু আপনি টেরও পাবেন না। সেজন্য এই অপরাধ জগতের শুধু ঘুরে আসতে চাইলেও আপনার কয়েকবার ভেবে দেখা উচিত। ডার্ক ওয়েবে একটি ভুল পদক্ষেপ মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
আই নিউজ/আর
আরও পড়ুন
- আমেরিকান ডিভি লটারি ২০২৪ বাংলাদেশ
- ফেসবুক মনিটাইজেশন আপডেট ২০২৩
- বাংলাদেশে কম দামে ভালো মোবাইল ফোনের দাম
- অনলাইনে কানাডা ভিসা চেক করার নিয়ম ২০২৩
- মোবাইল নাম্বার দিয়ে লোকেশন বের করার নিয়ম
- অনলাইনে বিধবা ভাতা আবেদন করার নিয়ম ২০২৩
- পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম ২০২৪
- সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস ডেলিভারি চার্জ
- মৌলভীবাজারের যুবকের কৌশল উদ্ভাবন রেললাইন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
- দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম করার উপায় ২০২৩