ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
আপডেট: ১২:৪৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ইসরায়েলের গবেষকদের মিথ্যা শনাক্তকরণ যন্ত্র আবিষ্কার
মিথ্যা শনাক্তকরণ যন্ত্রের পরীক্ষামূলক ব্যবহার
ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হানেইন এবং তার সহযোগী অধ্যাপক দিনো লেভির নেতৃত্বে একটি গবেষক দল মিথ্যা শনাক্তকরণের একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
তাদের দাবী, মিথ্যাবাদী আছে দু'রকম । এক দল আছেন মিথ্যা বলার সময় নিজের অজান্তেই যাদের চোখের ওপরের ভ্রু নড়াচড়া করতে থাকে। আরেক দল আছেন, মিথ্যা বলার সময় যাদের ঠোঁটের খুব সামান্য একটা নড়াচড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না - যে সময় তাদের ঠোঁট তাদের গাল স্পর্শ করে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধ্যাপক হানেইন বলছেন, তারা যে সফটওয়্যার এবং এ্যালগরিদম তৈরি করেছেন তা ৭৩% মিথ্যা শনাক্ত করতে পারে এবং এখন তারা কাজ করছেন এ পদ্ধতিকে আরো উন্নত করার জন্য। "আপনি যখন মিথ্যে বলছেন এবং তা লুকানোর চেষ্টা করছেন, তখন আপনি চেষ্টা করেন যাতে আপনার শরীরে কোন প্রতিক্রিয়া না হয়।"
"কিন্তু এই প্রযুক্তির হাত থেকে একটা মিথ্যাকে গোপন রাখা খুবই, খুবই কঠিন" - যোগ করলেন অধ্যাপক লেভি।
- আরও পড়ুন - নিরাপত্তাজনিত কারণে রাজধানী ছাড়লেন ট্রুডো
মিথ্যা ধরার নানা কায়দা প্রাচীন যুগেও ছিল। সম্ভবতঃ কারও মিথ্যা ধরার চেষ্টার ইতিহাস মানুষের মিথ্যা বলার মতই পুরোনো। এই প্রয়াসের সবচেয়ে পুরোনো দৃষ্টান্তগুলোর একটি পাওয়া যায় চীনে প্রায় ১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। পদ্ধতিটি হলো, কেউ মিথ্যা বলেছে কিনা তা ধরার জন্য তার মুখ ভর্তি করে শুকনো চাল ঢুকিয়ে দেয়া হতো। কিছুক্ষণ পরে সেই চালের দানাগুলো পরীক্ষা করা হতো। যদি দেখা যেতো যে চালগুলো শুকনো রয়ে গেছে - তাহলে ধরে নেয়া হতো যে সে মিথ্যা বলেছে।
এ পেছনের তত্ত্বটা হলো - কেউ যদি সত্যি মিথ্যা বলে থাকে তাহলে ধরা পড়ার ভয়-উৎকণ্ঠায় তার মুখের ভেতরটা শুকিয়ে যাবে - যা বোঝা যাবে শুকনো চাল থেকে।
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে আবিষ্কৃত হয় প্রথম মিথ্যা ধরার যন্ত্র বা লাই-ডিটেকটর মেশিন। একে বলা হয় পলিগ্রাফ। সবচেয়ে পরিচিত যন্ত্রটি হচ্ছে "এ্যানালগ পলিগ্রাফ" - যাতে তিন-চারটি কালি-ভরা সূঁচ থাকে যা একটি চলন্ত কাগজের ওপর দাগ-কাটতে থাকে। অন্য প্রান্তে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির হাতের আঙুল, বাহু ও শরীরে লাগানো থাকে সেন্সর। তাকে অনেকগুলো প্রশ্নের জবাব দিতে হয় এবং সেই সময় তার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ কত এবং তার ঘাম হচ্ছে কিনা - এগুলো মাপা হয়।
তবে এসব মেশিন কতটা নির্ভুল এবং একে ফাঁকি দেয়া সম্ভব কিনা - এ নিযে অনেক দিন ধরেই উদ্বেগ আছে। সেকারণেই সারা বিশ্বের গবেষক এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে যাচ্ছে আরো উচ্চ প্রযুক্তির পলিগ্রাফ তৈরির জন্য।
নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরের ইরাসমুস বিশ্ববিদ্যালয়ে ড. সেবাস্টিয়ান স্পিয়ার এবং তার দল ব্যবহার করছেন একটি এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন । কেউ মিথ্যা বলছে কিনা বা প্রতারণা করছে সেটা এই যন্ত্র দিয়ে ধরাটাই ছিল উদ্দেশ্য। তারা যেটা করছেন তা হলো - একজন লোক যখন বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, তখন তার মস্তিষ্কের স্ক্যান করা হলে তাতে রঙের কোন পরিবর্তন ধরা পড়ে কিনা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের কনভেরাস নামে একটি প্রতিষ্ঠান আইডিটেক্ট নামে একটি উচ্চ-প্রযুক্তির পদ্ধতি বের করেছে - যা ইতোমধ্যেই অনেকে ব্যবহার করছেন। এটা মিথ্যা ধরার জন্য চোখের অনৈচ্ছিক নড়াচড়াকে ধরতে পারে। এতে একজন ব্যক্তিকে এমন কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে বলা হয় - যার উত্তর "সত্য বা মিথ্যা" অথবা "হ্যাঁ বা না" দিয়ে দেয়া যায়। তারা যখন এই জবাবগুলো দিচ্ছেন তখন একটি সফটওয়্যার তাদের চোথের নড়াচড়ার ওপর নজর রাথে, এবং তাদের জবাবগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে। এর পর পাঁচ মিনিটের মধ্যে ফলাফল জানানো হয়। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই ফলাফল ৮৬ থেকে ৮৮ শতাংশ সঠিক।
কনভেরাস বলছে, তাদের এই আইডিটেক্ট এখন ৫০টি দেশে ৬০০-রও বেশি গ্রাহক ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫টি এবং সারা বিশ্বের শতাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এটি ব্যবহার করছে।
কনভেরাসের প্রধান নির্বাহী টড মিকেলসন বলছেন, এই পরীক্ষাটিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষ নানা কাজে ব্যবহার করছে।
"যেমন, অনেক আগে ঘটে গেছে এমন অপরাধ, অতীত বা বর্তমানে মাদক সেবন, কারো বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পদক্ষেপ নেয়া হয়ে থাকলে তা গোপন রাখা হয়েছে কিনা, চাকরির আবেদনে মিথ্যে বলা, বা সন্ত্রাসবাদের সাথে যোগাযোগ - এরকম নানা ক্ষেত্রে এটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে" - বলেন তিনি।
- আরও পড়ুন - ইউক্রেন-রাশিয়া উত্তেজনা গড়াচ্ছে কোন দিকে
যুক্তরাজ্যে যৌন অপরাধ এবং পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে পলিগ্রাফকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এর ফলাফলকে ফৌজদারি মামলায় ব্যবহার করা যাবে কিনা - সে প্রশ্নে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডের নিয়ম আলাদা। তা ছাড়া যুক্তরাজ্যে নিয়োগদাতারাও তাদের স্টাফদের ক্ষেত্রে লাই ডিটেকটর পরীক্ষার প্রস্তাব দিতে পারেন, তবে তা বাধ্যতামূলক হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রেও লাই ডিটেকটর সংক্রান্ত আইন একে অঙ্গরাজ্যে একেক রকম। যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল আইনে কোন প্রতিষ্ঠানই চাকরির আবেদনকে লাই ডিটেকটর পরীক্ষা করাতে পারে না। সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার বার্জেস সতর্ক করে দিচ্ছেন - কোন গুপ্তচর বা অপরাধীর দোষ প্রমাণের অবিসংবাদিত উপায় হিসেবে লাই ডিটেকটরকে দেখা ঠিক হবে না।
তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মনে করেন, এক সময় এ ক্ষেত্রে ভিডিও ক্যামেরার জায়গা নেবে ইলেকট্রোড। তারা বলছেন, একসময় এমন সফটওয়্যার আসবে যার ফলে দূর থেকে বা এমনকি ইন্টারনেটে লিংকেও একজন মিথ্যাবাদীকে চিহ্নিত করা যাবে - তার মুখের পেশীর নড়াচড়া থেকে।
অধ্যাপক লেভি বলছেন, "ব্যাংকে, বিমান বন্দরে, অনলাইনে চাকরির ইন্টারভিউ বা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময়, শক্তিশালী ক্যামেরা থাকবে যা মুখমণ্ডলের পেশীর নড়াচড়া দেখেই ধরা যাবে কোনটি সত্য বক্তব্য এবং কোনটি মিথ্যা।"
আইনিউজ/এমজিএম
- আইয়ুব খানের পদত্যাগের দিন আজ
- টাই পরা বাদ দিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় করতে চান স্পেনের প্রধানমন্ত্রী
- যুদ্ধবন্দী কারাগারে বোমা হামলা, পরস্পরকে দোষছে রাশিয়া-ইউক্রেন
- মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে পুরুষদের সেক্স পার্টনার কমানোর পরামর্শ
- আবারও মক্কায় কালো পাথর স্পর্শ-চুম্বনের সুযোগ পাচ্ছেন মুসল্লিরা
- ভারতের স্বাধীনতা দিবস শনিবার
- সুখবর! অক্সফোর্ডের তৃতীয় ট্রায়ালও সফল, ভ্যাকসিন আসছে জুলাইতেই
- চীনা ভূখণ্ডে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবেশ
- মালিতে সন্ত্রাসী হামলায় ৪২ সেনার মৃত্যু
- টাইমস স্কোয়ারে ‘ট্রাম্প ডেথ ক্লক’