আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে এই শাহবাজ শরিফ? জানুন বিস্তারিত
পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর গদি থেকে ইমরান খান সরে যেতেই সেখানে কে বসবেন পরবর্তীতে তা নিয়ে শুরু হয়েছিলো বিতর্ক। কিন্তু সে দৌড়ে জিতে গেছেন পিএমএল-এন নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
শাহবাজ শরিফ যদিও গত সাড়ে তিন বছর ধরে বিরোধী দলের নেতা, তারপরও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাকে একজন নবাগত হিসেবেই মনে করা হয়। পাঞ্জাব প্রদেশের স্থানীয় রাজনীতির একজন নেতা হিসেবেই তার পরিচয় বেশি উজ্জ্বল।
কেননা, শাহবাজ শরিফ রাজনীতিতে তিন দশকেরও বেশি সময় তার ভাই নাওয়াজ শরিফের প্রভাবের ছায়াতেই ছিলেন।
শাহবাজ শরিফের রাজনৈতিক জীবন
১৯৫১ সালে জন্ম নেয়া শাহবাজ শরিফ রাজনীতিতে যোগ দেন আশির দশকে, যখন তার ভাই নাওয়াজ শরিফ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি তিন দফায় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে তের বছরে অনেকবারই আবেগপ্রবণ আচরণ ও ভিন্ন ধারার কাজের কারণে তিনি মিডিয়া ও বিরোধীদের আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন।
কখনো তাকে দেখা গেছে নৌকায় চড়ে বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে যেতে। কখনোবা তার সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠানেই চালিয়েছে 'আকস্মিক অভিযান'।
এসব ঘটনায় বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া হতো - 'এ সবই লোক দেখানো কাজ, নইলে মিডিয়া কেন তার সঙ্গে থাকবে'?
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তার কাজ তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতি ও আইনি জটিলতার মধ্যেই ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শাহবাজ শরিফ তার দলের নির্বাচনী তফসিল উপস্থাপন করেন।
রাজনীতির আগে তিনি একজন ব্যবসায়ী
লেখাপড়া শেষে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের এই ছোট ভাই।
লাহোরের একজন সিনিয়র সাংবাদিক সালমান গনি বহুদিন ধরে শরিফ পরিবার ও তাদের দল নিয়ে রিপোর্টিং করছেন। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট হন শাহবাজ শরিফ।
মি. গনির বক্তব্য, শাহবাজ শরিফ তার ভাই নওয়াজ শরিফ এবং দলের রাজনীতির প্রচারে কাজ করেছেন।
"তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। প্রথম থেকেই তার পরিবারের কাছে নিজেকে পরিশ্রমী এবং দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তুলে ধরেছেন তিনি। ব্যবসায় সাফল্যের পর তিনি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার মনস্থ করেন"।
উনিশশো আটাশি সালে নির্বাচনে জিতে তিনি প্রথমবারের মত পাঞ্জাব অ্যাসেম্বলির একজন সদস্য হন। উনিশশো নব্বই ও তিরানব্বই সালেও তিনি পুনঃনির্বাচিত হন।
তিরানব্বই সালেই প্রাদেশিক পরিষদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন মি. শরিফ।
পরের সাধারণ নির্বাচনে পিএমএল-এন জেতার পর ১৯৯৭ সালে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ।
ওই সময়ের রাজনীতির সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল একজন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মুজিব-উর-রহমান শামি। বিবিসিকে তিনি বলেন, "তিনি (শাহবাজ শরিফ) পাঞ্জাবে একটি ভাল টিম গঠন করেছিলেন"।
মি. শরিফ বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে কাজ করছিলেন পাঞ্জাবে, কিন্তু তার সরকারের অকাল-পতন ঘটে যখন ১৯৯৯ সালে সামরিক আইন জারি করে জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও শাহবাজ শরিফকে গ্রেপ্তার করেন।
চীনের সাথে রয়েছে শাহবাজ শরিফের ঘনিষ্ঠতা
দুই হাজার তের সালের ভোটে জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মত পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন শাহবাজ শরিফ। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার সময়েই তিনি 'কঠোর প্রশাসক' হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
সাংবাদিক সালমান গনি বিবিসিকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে "শাহবাজ শরিফের রুটিন ছিল প্রতিদিন ভোর ছটায় ঘুম থেকে ওঠা। সব দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ওপর নির্দেশ ছিল ওই সময়েই অফিসে যাওয়ার"।
"আমার মনে আছে, তখন ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান চলছিল এবং সব ডাক্তারদের উপর নির্দেশ ছিল ছটার মধ্যে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার। কারোরই দেরি করার কিংবা গরহাজির থাকার জো ছিল না। আর শাহবাজ শরিফ কাজ করতেন গভীর রাত পর্যন্ত"।
সাংবাদিক মুজিব-উর-রহমান শামির বর্ণনায়, শাহবাজ শরিফ নিজের জন্য পাঁচ বছরের একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল দেশের বিদ্যুতের ঘাটতি দূর করা। এজন্য তিনি চীনের সাহায্যে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর প্রকল্পে হাত দেন। এই প্রকল্প নির্ধারিত মেয়াদের আগেই শেষ করা হয়।
এই কারণে ওই সময়ে 'পাঞ্জাবের গতি' কথাটি প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে।
"বিশেষ করে সময়ের আগে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কারণে চীনারা খুবই খুশি ছিল"
সালমান গনি মনে করেন, পাকিস্তানের বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করার কৃতিত্ব ছিল শাহবাজ শরিফের এবং ২০১৩ সালের নওয়াজ শরিফের দলের জয়ের পেছনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সালমান গনি বলেন, চীনাদের কাজে মুগ্ধ হয়েছিলেন শাহবাজ শরিফ। একারণেই তিনি বহুবার চীন সফর করেছেন।
"তিনি চীনাদের পছন্দ করতেন। এবং চীনারা তাকে পছন্দ করতো। তার গতিতে মুগ্ধ ছিল চীনারা এবং তারা এর প্রশংসা করতো"।
শাহবাজ শরিফ নিয়ে এসেছিলেন মেট্রো বাসের আইডিয়া
স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের কিছু প্রকল্প নিয়েও কাজ করেছেন শাহবাজ শরিফ, কিন্তু তার সময়ের দুটো বড় প্রকল্প নিয়ে মারাত্মক সমালোচনা হয়েছিল।
লাহোরে যানজট কমাতে মেট্রো বাস চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
ওই সময়ে বিরোধী নেতা ছিলেন ইমরান খান। ওই প্রকল্পকে মি. খান সমালোচনা করতেন 'জঙ্গল বাস' বলে।
সাংবাদিক সালমান গনি বলেন, "সকল সমালোচনা উপেক্ষা করে মেট্রো বাস প্রকল্প সমাপ্ত করেছিলেন মি. শরিফ। এবং তিনি সফল হয়েছিলেন"।
এর পর মুলতান, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদেও একই রকম প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এমনকি ইমরান খানের প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়াতেও এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়।
অরেঞ্জ লাইন ট্রেন চালু করতে গিয়েও বিরোধীদের কাছ থেকে একইরকম সমালোচনার মুখে পড়েন শাহবাজ শরিফ। বিরোধীদের বক্তব্য ছিল, এই প্রকল্পটি এতই ব্যয়বহুল যে ভর্তুকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত এটিকে টিকিয়ে রাখা মুশকিল হবে। যাইহোক, পরে ইমরান খানের পিটিআই সরকারের অধীনেই প্রকল্পটি সমাপ্ত হয় এবং এখনো তা অব্যাহত আছে।
আইনিউজ/এসডি
আইনিউজ ভিডিও
রমজানেও ব্যবসায় ডাকাতি, শ্রীমঙ্গলের ২-৩ টাকার লেবু ঢাকায় হয়ে যায় ২০ টাকা
রোজার বাজারে ২ কেজি মাংসে ৪০০ গ্রাম কম দিলেন ব্যবসায়ী, ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
নয় বছরের মেয়েটি কিভাবে নেভায় একের পর এক আগুন?
- আইয়ুব খানের পদত্যাগের দিন আজ
- টাই পরা বাদ দিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় করতে চান স্পেনের প্রধানমন্ত্রী
- যুদ্ধবন্দী কারাগারে বোমা হামলা, পরস্পরকে দোষছে রাশিয়া-ইউক্রেন
- মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে পুরুষদের সেক্স পার্টনার কমানোর পরামর্শ
- আবারও মক্কায় কালো পাথর স্পর্শ-চুম্বনের সুযোগ পাচ্ছেন মুসল্লিরা
- ভারতের স্বাধীনতা দিবস শনিবার
- সুখবর! অক্সফোর্ডের তৃতীয় ট্রায়ালও সফল, ভ্যাকসিন আসছে জুলাইতেই
- চীনা ভূখণ্ডে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবেশ
- টাইমস স্কোয়ারে ‘ট্রাম্প ডেথ ক্লক’
- মালিতে সন্ত্রাসী হামলায় ৪২ সেনার মৃত্যু