Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৮ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আইনিউজ

প্রকাশিত: ১৭:২৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

ইরানের হিজাববিরোধী আন্দোলনে আমেরিকার সমর্থন

হিজাববিরোধী বিক্ষোভের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

হিজাববিরোধী বিক্ষোভের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

ইরানে ঠিকমতো হিজাব না পড়ার অপরাধে পুলিশের হেফাজতে মাআশা আমিনি (২২) নামের এক তরুণীর মৃত্যুর পর ফুঁসে ওঠেছে গোটা ইরান। ইরানের রাজপথগুলোতে হাজারো নারী আওয়াজ তোলেছেন হিজাবের বিরুদ্ধে। দেশটিতে চলমান বিক্ষোভের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্যের সময় এ একাত্মতার প্রকাশ করেন তিনি। অবশ্য এসময় তিনি ইরানের সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করে পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার কথাও বলেন।

সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, ‘আজ আমরা সাহসী নাগরিক ও ইরানের সাহসী নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। যারা এই মুহূর্তে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত করার জন্য বিক্ষোভ করছে’।

টানা ৭ দিন ধরে চলমান বিক্ষোভে অন্তত ১৫টি শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, বিক্ষোভকারীদের পুলিশকে ধাওয়া করা, গুলির শব্দ এবং মেয়েদের হিজাবে আগুন লাগানো- ইত্যাদি দৃশ্য দেখা গেছে। বিক্ষোভে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯ জন নিহত হয়েছে।

বিক্ষোভে একেবারে সামনের কাতারে রয়েছেন ইরানের নারীরা। আজ টানা ৭ম দিনের মতো বিক্ষোভ চলছে। প্রতিবাদের ঝড় সামাল দিতে ব্যাপক শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে।

কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাকেজ থেকে ভাইয়ের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।

পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসার হার্ট অ্যাটাক হয়, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। ২২-বছর বয়সী কুর্দি নারী মাহসা আমিনি কোমায় তিন দিন কাটানোর পর শুক্রবার হাসপাতালে মারা যান।

পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়। পুলিশ আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল যে তিনি নারীদের হিজাব বা চাদর দিয়ে চুল ঢেকে রাখা এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরার আইন ভঙ্গ করেছেন। পুলিশের একটি ডিটেনশন সেন্টারে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরপরই তিনি কোমায় চলে যান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নাদা আল-নাশিফ বলেছেন, পুলিশ মিজ আমিনির মাথায় লাঠি দিয়ে বাড়ি মারে এবং তাদের একটি গাড়ির সাথে আঘাত করার পর তার মাথা ফেটে যায়।

তবে পুলিশ তার সাথে দুর্ব্যবহারের কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে ‘হঠাৎ করে তার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া’ বন্ধ হয়ে যায়। তবে তার পরিবার বলেছে, তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন।

মাহসার মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল ইরান। ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ। দেশটির বিভিন্ন জায়গায় নারীর পোশাকের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে নিরাপত্তা বাহিনীর।

ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানায়, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন। তারা পুলিশের যানবাহনে আগুন দেয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী স্লোগানও দিচ্ছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা ‘স্বৈরশাসকের মৃত্যু’ ‘খামিনির মৃত্যু’, ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। কিছু নারী বিক্ষোভকারীকে হিজাব খুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতেও দেখা গেছে। প্রতীকীভাবে নারীদের চুল কেটে ফেলার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক-টুইটারে।

হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় গত জুলাইয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #no2hijab হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা ১২ জুলাই সরকার ঘোষিত জাতীয় হিজাব ও সতীত্ব দিবসে প্রকাশ্যে তাদের বোরকা ও হিজাব সরানোর ভিডিও পোস্ট করেন।

সে সময় খোলা মাথায় কয়েক সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ইরানি তরুণী মেলিকা কারাগোজলু। এ কারণে সম্প্রতি কারাগোজলুকে ৩ বছর ৮ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ইরানের আদালত। মাহসাকে নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যেই হিজাব না পরার কারণে মেলিকা কারাগোজলুকে কারাদণ্ড দেয়ার তথ্য জানা গেছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাহসা আমিনির মৃত্যুর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির নৈতিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্নেল আহমেদ মিরজাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

মাহসার মৃত্যু এবং বিক্ষোভ দমনে ইরানের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। ইরানের নারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কের ইস্তাম্বুলেও।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-


বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS

হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS

আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়