আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আইনিউজ
ইরানে হিজাববিরোধী আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন তেল শ্রমিকরাও
এ পর্যন্ত এ আন্দোলনে অন্তত ১৯৩ জন নিহত হয়েছে
পুলিশি হেফাজতে মাআশা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে ইরানে শুরু হওয়া নারীদের হিজাববিরোধী পোশাকের স্বাধীনতার আন্দোলনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে যত দিন যাচ্ছে বড় আকার ধারণ করছে আন্দোলন।
স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পর এবার আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন দেশটির তেল শ্রমিকরাও। আন্দোলন ধীরে ধীরে দেশটির শাসকগোষ্ঠীর পতনের আন্দোলনে পরিণত হচ্ছে। গত ৮ অক্টোবর, শনিবার পর্যন্ত এ আন্দোলনে অন্তত ১৯৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস (এফআইডিএইচ) এবং লিগ ফর দ্য ডিফেন্স অব হিউম্যান রাইটস ইন ইরান (এলডিডিএইচআই)।
পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর নারীদের নেতৃত্বে চলা বিক্ষোভে সবশেষ শ্রমিক সংগঠনগুলোও যোগ দিতে শুরু করেছে। এর আগে বিক্ষোভে যোগ দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্কুলছাত্রীরাও। বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল গত ১৭ সেপ্টেম্বর।
প্রতিবাদকারীদের দমনে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের পথ বেছে নিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ব্লকসহ ইন্টারনেটে ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবে এর পরও থামছে না বিক্ষোভ-সহিংসতা।
দেশটির দক্ষিণের বুশেহের প্রদেশের তেল পরিশোধন কেন্দ্র বুশেহের পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির (বিইউপিসি) শ্রমিকরা সোমবার বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে ধর্মঘট শুরু করেন। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ‘খামিনির মৃত্যু চাই’ স্লোগান দিয়ে মিছিলও করেন শ্রমিকরা। এর আগে স্কুলছাত্রীরাও খামিনির মৃত্যু চেয়ে স্লোগান দিয়েছিল।
বুশেহের পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির (বিইউপিসি) যাত্রা শুরু ২০১৫ সালে। দেশটির বৃহত্তম পেট্রোকেমিক্যাল প্ল্যান্ট হিসেবে পরিচিত এই বিইউপিসির বছরে ৬৬ লাখ টন পেট্রোকেমিক্যাল (অপরিশোধিত তেলের উপজাত) উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।
ইরানে চলমান বিক্ষোভে এর আগে আরও কয়েকটি খাতের শ্রমিকরা সংহতি জানিয়েছেন। তবে এই প্রথম তেল শ্রমিকরা সরাসরি ধর্মঘট শুরু করলেন।
ইরানের অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে পাওয়া অর্থ দেশটির জিডিপির ১৮ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে সরকারি রাজস্বের এক-চতুর্থাংশ এসেছে এই দুই খাত থেকে। এ কারণে তেল শ্রমিকদের ধর্মঘট পেট্রোলিয়ামনির্ভর দেশটির দুর্বল অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করে দিতে পারে।
চলমান বিক্ষোভ ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ দমনপীড়ন অব্যাহত রাখলে ধর্মঘটে নামার হুঁশিয়ারি কয়েক দিন আগেই দিয়েছিল ইরানের তেল শ্রমিকদের সংগঠন।
তেল কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের সংগঠন সোমবার বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আগে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলাম, আমাদের সচেতন এবং সাহসী কর্মীরা জনগণের ওপর দমনপীড়ন ও হত্যার মুখে নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকবেন না। তারা জনগণের সঙ্গে ঐক্যৈবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। এটি শুরু হয়ে গেছে। আমরা সারা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এই বিক্ষোভে এরই মধ্যে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও। তাদের ডাকা ধর্মঘটে ইরানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দোকানপাট, ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হলে ইরানের কর্তৃপক্ষ বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সহায়তায় কঠোরভাবে তা দমন করে। সে সময় দেড় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।
এরপর শ্রমিকদের পক্ষ থেকে বড় আকারের কোনো বিক্ষোভের ঘটনা না ঘটলেও সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া এবং সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
মাহসা ইস্যুতে প্রথম দুই সপ্তাহ ইরানের তেল শ্রমিকরা নিশ্চুপ থাকলেও পরে তারাও রাস্তায় নামার ইঙ্গিত দেন। রেডিও ফারদাকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তেল শ্রমিকদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা নারীর বিরুদ্ধে সংগঠিত ও দৈনন্দিন সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং সমাজে বিস্তৃত দারিদ্র্য ও দোজখের পরিবেশের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন করি।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের জন্য আশা হয়ে দাঁড়াতে পারে আন্দোলনে দেশটির সংগঠিত শ্রমিকদের সংহতি। কারণ এতদিন যারা রাস্তায় প্রতিবাদমুখর ছিলেন তাদের বেশির ভাগই তরুণ ও বেকার। তাদের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো যুক্ত হলে আন্দোলন নতুন মাত্রা পাবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, কর্তৃপক্ষের কঠোর অবস্থান উপেক্ষা করে তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ চলছে। হাই স্কুলের শত শত ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববারও সরাসরি গুলি, কাঁদানে গ্যাস উপেক্ষা করে রাস্তার প্রতিবাদে যোগ দেন। কয়েকটি ভিডিওতে দক্ষিণ তেহরানের কয়েকটি রাস্তা অবরোধ করতেও দেখা গেছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিক্ষোভ দমনে তাজা গুলি ব্যবহার করছে। কয়েকটি ভিডিওতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সরাসরি গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
ইরান কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য শত্রু দেশের চক্রান্ত হিসেবে অভিহিত করছে। হতাহতের ঘটনার জন্য ভিন্নমতাবলম্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে তারা। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত চলা বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর ২০ সদস্য নিহত হয়েছেন।
কুর্দি নারী মাহসা আমিনিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করে। ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে তেহরানে ঘুরতে আসা মাহসাকে একটি মেট্রো স্টেশন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি সঠিকভাবে হিজাব করেননি।
পুলিশ হেফাজতে থাকার সময়েই মাহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এরপর তিনি কোমায় চলে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়। পুলিশ মাহসাকে হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরিবারের অভিযোগ গ্রেপ্তারের পর তাকে পেটানো হয়।
মাহসার মৃত্যুর পর রাস্তায় বিক্ষোভের পাশাপাশি ফেসবুক ও টুইটারে #mahsaamini এবং #Mahsa_Amini হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চলছে প্রতিবাদ।
মাহসা আমিনির মৃত্যুর সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে বালুচ কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের চাবাহার শহরের পুলিশ প্রধানের হাতে ওই কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে সেখানেও চলছে প্রবল বিক্ষোভ। কেবল ওই প্রদেশেই এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৯০ জন।
ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পরই নারীদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করা হয়। দেশটির ধর্মীয় শাসকদের কাছে নারীদের জন্য এটি ‘অতিক্রম-অযোগ্য সীমারেখা’। বাধ্যতামূলক এই পোশাকবিধি মুসলিম নারীসহ ইরানের সব জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মের নারীদের জন্য প্রযোজ্য।
হিজাব আইন আরও কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য চলতি বছরের ৫ জুলাই ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি একটি আদেশ জারি করেন। এর মাধ্যমে ‘সঠিক নিয়মে’ পোশাকবিধি অনুসরণ না করা নারীদের সরকারি সব অফিস, ব্যাংক এবং গণপরিবহনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত জুলাইয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #no2hijab হ্যাশট্যাগ দিয়ে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেশটির নারী অধিকারকর্মীরা ১২ জুলাই সরকারঘোষিত জাতীয় হিজাব ও সতীত্ব দিবসে প্রকাশ্যে তাদের বোরকা ও হিজাব সরানোর ভিডিও পোস্ট করেন।
১৭ সেপ্টেম্বর কুর্দি অধ্যুষিত সাকেজ শহরে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির শেষকৃত্যের পর শুরু হওয়া বিক্ষোভ এরই মধ্যে ইরানি শাসকগোষ্ঠীর জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা এখন শুধু পোশাকের স্বাধীনতাই চাইছেন না, ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধারী ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামিনির পতনও চাইছেন।
আইনিউজ/এইচএ
আইনিউজে আরও পড়ুন-
- ২০ হাজার গানের জনক গাজী মাজহারুল আনোয়ার ও তার কীর্তি
- প্রেম-ভালোবাসার ১০ উপকারিতা : শ্রেষ্ঠ কিছু প্রেমের গল্প
- কোমরে বাশি, হাতে তালি — গানই মদিনা ভাই’র জীবন-মরণ
দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি
সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের দেশ ।। Most beautiful woman in the world ।। Eye News
যে গ্রামে পুরুষ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা হচ্ছেন নারীরা | Women are pregnant without men | Kenyan Girls | Eye News
চুল বেঁধে ঘুমিয়ে নিজের যে ক্ষতি করছেন ।। Hair loss problems
পায়খানা ও প্রস্রাব দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখলে যে ক্ষতি হয়??
- আইয়ুব খানের পদত্যাগের দিন আজ
- টাই পরা বাদ দিয়ে জ্বালানি সাশ্রয় করতে চান স্পেনের প্রধানমন্ত্রী
- যুদ্ধবন্দী কারাগারে বোমা হামলা, পরস্পরকে দোষছে রাশিয়া-ইউক্রেন
- মাঙ্কিপক্স ঠেকাতে পুরুষদের সেক্স পার্টনার কমানোর পরামর্শ
- আবারও মক্কায় কালো পাথর স্পর্শ-চুম্বনের সুযোগ পাচ্ছেন মুসল্লিরা
- ভারতের স্বাধীনতা দিবস শনিবার
- সুখবর! অক্সফোর্ডের তৃতীয় ট্রায়ালও সফল, ভ্যাকসিন আসছে জুলাইতেই
- চীনা ভূখণ্ডে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রবেশ
- মালিতে সন্ত্রাসী হামলায় ৪২ সেনার মৃত্যু
- টাইমস স্কোয়ারে ‘ট্রাম্প ডেথ ক্লক’