Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৬ ১৪৩২

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
আপডেট: ১৬:৪৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

আফসোস সঙ্গী করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হার

স্পোর্টস প্রতিবেদক.

আফগানিস্তানকে হারাতে হলে নিখুঁত ফুটবল খেলতে হত বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় খুঁতটা বের হলো ২৭ মিনিটে। সেটাতেই শাস্তি পেতে হলো। ফারশাদ নূরকে দুই ডিফেন্ডার ডিবক্সের ভেতর পাহারায় রেখেও আটকাতে পারেননি, গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাও ভুল শুধরাতে পারেননি। উলটো নিজেও ভুল করেছেন। গোল হজমের হাত থেকেও রেহাই মেলেনি বাংলাদেশের। ওই গোলটাই শেষ পর্যন্ত তাজিকিস্তানে ফল নির্ধারক হয়ে গেল। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ বাছাইয়ে গ্রুপ ‘ই’-তে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হারল ১-০ ব্যবধানে।

এক গোলে পিছিয়ে ছিল বলেই বাংলাদেশের সামনে ফেরার সুযোগ ছিল একেবারে শেষ পর্যন্ত। ইনজুরি স্ট্রাইকার সময়ে নাবিব নেওয়াজ জীবন প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারতেন বাংলাদেশকে। সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় জটলার ভেতর বল পেয়েছিলেন, তার পেছনে ছিলেন আফগান ডিফেন্ডার আব্বাসিন আলখিল। শট নিতে গিয়ে জীবন গেলেন পড়ে, বাংলাদেশও করেছিল পেনাল্টির আবেদন। কিন্তু রেফারি সেটা এড়িয়েই গেলেন। শেষে তাই আর কোনো রূপকথার গল্প লেখা হয়নি বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের হারের ব্যবধানটা বড় হতে পারত। আবার দুশানবে সেন্ট্রাল স্টেডিয়ামে ম্যাচের গল্পটা পুরোপুরি ভিন্নও হতে পারত। আত্মবিশ্বাসী শুরুর পর ম্যাচের ৩ মিনিটেই দারুণ এক সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন বিপলু আহমেদ। ডিবক্সের মাথায় পেয়েছিলেন বল, সামনে ছিলেন শুধু আফগান গোলরক্ষক। কিন্তু বিপলু বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে হাতে বল লাগিয়ে সম্ভাবনাটাই নষ্ট করে দিলেন।

এরপর সময়ের সাথে মিলিয়ে যায় বাংলাদেশ। নিজেদের অর্ধেই সময় পার করতে হয় লাল-সবুজদের। আর আফগানিস্তান তখন জেঁকে বসে আরও। গোল খাওয়ার পাঁচ মিনিট আগে অবশ্য রানা ভাল একটি সেভকরে জুবায়ের আমিরিকে আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৭ মিনিটে আর শেষ রক্ষা করতে পারেননি। মিডফিল্ডে ফ্রি কিক পেয়েছিল আফগানিস্তান। মিডফিল্ডার অমির পোপালযে ফ্রি-কিক থেকে শট ফেলেন ডিবক্সের ভেতর। আফগান অধিনায়ক ফারশাদ নূর এরপর গ্ল্যান্সিং হেডারে গোল করে এগিয়ে নেন দলকে।

গোলের বর্ণনাটা সহজ হলেও তাতে মিশে থাকল বাংলাদেশ ডিফেন্ডারদের অমার্জনীয় ভুল। দুইজন মিলে পাহারাত রেখেছিলেন নূরকে। একজন অবশ্য থমকে গেলে, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলেন শুধু। উচ্চতায় এগিয়ে থাকার পুরো ফায়দা নিয়ে নূর করলেন হেড, সেটা ঠেকানোরও সুযোগ ছিল রানার। বাংলাদেশ গোলরক্ষক ঠেকালেন ঠিকই, কিন্তু শক্ত হাতে নয়। দুর্বল সেভের পর বল বারপোস্টে লেগে আফগানদের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানাতেই পৌঁছে যায়।

এগিয়ে যাওয়ার পর প্রথমার্ধে বাংলাদেশকে নিয়ে একরকম ছেলেখেলা করেছে আফগানিস্তান। ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ ৩২ মিনিটে আরেকটু হলেও আত্মঘাতী গোল করে গ্নানি বাড়াতে পারতেন। রানা অবশ্য পরে কোনোমতে বল থামিয়েছেন সেটা গোললাইন পার করার আগেই। এর ভেতর আফগান রাইট উইঙ্গার ফয়সাল শায়েস্তে হয়ে ওঠেন আরও ভয়ঙ্কর। বিরতির আগ পর্যন্ত মোট তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন তিনি শেষ দশ মিনিটে। একবার ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান ক্রস ক্লিয়ার করেছেন, আরেকবার ফয়সাল নিজেই সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথা থেকে হেডে লক্ষ্য মিস করে গেছেন। আর প্রথমার্ধের ইনজুরি সময়ে জাবের শারজাকে ভালো জায়গায় বল পাঠিয়েও অ্যাসিস্ট হাতছাড়া হয়েছে তার। শারজা ডিবক্সের ভেতর থেকে বল মেরেছেন অনেক ওপর  দিয়ে।

এদিন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে মিডফিল্ডে জামাল ভুঁইয়া, মোহাম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে সোহেল রানা ও মামুনুল ইসলামের ওপর ভরসা রেখেছিলেন। বাংলাদেশের মিডফিল্ড অবশ্য কার্যত অকার্যকরই ছিল প্রায় পুরোটা সময়। তাতে ডিফেন্ডারদের ওপর চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ, আর নাবিব নেওয়াজ একঘরে হয়ে দিশেহারার মতো ঘুরেছেন এদিক ওদিক। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য বাংলাদেশের খেলায় কিছুটা শ্রী ফিরেছিল। তবে এরপরও রানা স্বস্তিতে থাকতে পারেননি। ৪৭ মিনিটে আমিরিকে নেয়ার পোস্টে ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে টিকিয়ে  রাখেন গোলরক্ষক।

গোলের সুযোগ তৈরির জন্য বাংলাদেশ নির্ভর করেছে সেটপিসের ওপর। কিন্তু আফগান খেলোয়াড়দের উচ্চতা মোটেই সুবিধা করতে দেয়নি বাংলাদেশকে। অন্যপ্রান্তে গোলরক্ষক ওভাইস আজিজি তাই অবসর সময় পার করেছেন। ৫২ মিনিটে প্রথমবার তাকে সেভ করতে হয়েছে বিপলুর শট। সেটাও ছিল রুটিন সেভ।

এর কিছুক্ষণ পরই রবিউল হাসানের বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন বিপলু। জেমি ডের প্রথম বদলির আগেই অবশ্য দুইটি বদলি করিয়ে ফেলেছিলেন আফগানিস্তান কোচ আনুশ দস্তগির। এর মধ্যে একবার মিডফিল্ডার বসিয়ে ডিফেন্ডারও নামিয়েছিলেন তিনি।

অবশ্য বদলিরাও বদলাতে পারেননি বাংলাদেশের ভাগ্য। দ্বিতীয়ার্ধের আফগানিস্তানের আক্রমণে ধার কমে এলে বাংলাদেশ গোলের জন্য চেষ্টা করেছিল। জামালের ফ্রি-কিক ফারপোস্টে নাগাল পাননি জীবন, আরও দুইবার সেট পিস থেকে অনেকটা একই ঢংয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

শেষে গিয়ে সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া করেন জীবন। নইলে তাজিকিস্তান থেকে একেবারে খালি হাতে ফিরতে হত না বাংলাদেশকে। খালি হাতের সঙ্গে অবশ্য যোগ হচ্ছে আফসোসও। চার ম্যাচ পর হার বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পরবর্তী পরীক্ষাটা আরও কঠিন, প্রতিপক্ষ কাতার। বাস্তবতা এখন বাংলাদেশের জন্য কঠিনই।

বাংলাদেশ  আশরাফুল ইসলাম রানা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়াঁ, ইয়াসিন খান, টুটুল হোসেন বাদশা, জামাল ভুঁইয়া, বিপলু আহমেদ (রবিউল হাসান ৫৬'), সোহেল রানা, মামুনুল ইসলাম, মোহাম্মদ ইব্রাহিম (মাহবুবুর রহাম, ৭৬'), সাদ উদ্দিন, নাবিব নেওয়াজ আফগানিস্তান  অভিয়াস আজিজি, আমিন, নাজেম হায়দারি, শরিফ মোহাম্মদ, অ্যাডাম নাজেম, নুর হোসেন, জুবায়ের আমিরি, ফারশাদ নূর, জাবের শারজা, ফায়সাল শায়েস্তে, অমিদ পোপালাজি

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়