Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শুক্রবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৫ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১০:২২, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২
আপডেট: ১০:২৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

দীর্ঘসময় বসে থাকা কতোখানি ক্ষতিকর?

ছবি- আইনিউজ

ছবি- আইনিউজ

মানুষ নিঃসন্দেহে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে এক ঘণ্টা বসে থাকতেই পছন্দ করবে বেশি। তবে দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে নানা সমস্যার দেখা দিতে পারে তা খোদ চিকিৎসা বিজ্ঞান-ই আজকের যুগে হাঁকিয়ে বলে যাচ্ছে।

কালের বিবর্তনে মানুষের শরীরটি কিন্তু বসে থাকার গড়ে ওঠেনি। মানব শরীরের প্রতিটি অংশই তৈরি হয়েছে নড়াচড়া অর্থাৎ চলমান থাকার জন্য; থেমে থাকার জন্য।

তাই স্বাভাবিকভাবেই আমরা যখন বসে থাকি তখন কিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদেরকে। যে বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আইনিউজের আজকের এই প্রতিবেদনে জানানোর চেষ্টা করবো দীর্ঘসময় সময় এক জায়গায় বসে থাকা আসলে কতোখানি ক্ষতিকর।

মানব শরীরের ক্ষুদ্র-হিসাব নিকাশ
এ তথ্য আমরা সকলেই জানি আমাদের শরীরে আছে ৩৬০টি জয়েন্ট এবং ৭০০ পেশির হাড়। আর এই বৃহৎ যন্ত্রাংশের কাজই হলো শরীরকে ইচ্ছে মতো যেদিকি খুশি সেদিকে মুভমেন্টের ক্ষেত্রে সহায়তা করা।

মানুষের শরীরের অসাধারণ এই গঠনশৈলীর কারণেই কিন্তু আমরা গ্র্যাভেটির বিপরীতেও আমরা সোজা হয়ে চলা ফেরা করতে পারি। ডাক্তাররা বলেন শরীরের সচলতার উপরই নির্ভর করে রক্তপ্রবাহ কতো ভালো হবে। 

এবারে মানুষের শরীরের চামড়ার দিকে লক্ষ্য করা যাক। খেয়াল করলে দেখবেন মানুষের শরীরের চামড়া কিন্তু ইলাস্টিকের মতো কাজ করে। মনে হয় এটা শ্রেষ্ঠ ইলাস্টিক। যা শরীর নড়াচড়া করতে যতোখানি প্রয়োজন ততোটা প্রসারিত এবং সংকুচিত হচ্ছে।

বুঝা যাচ্ছে দেহের প্রতিটি ইঞ্চিই গঠিত হয়েছে নড়াচড়ার জন্য। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন বসে থাকাটা মানবশরীরের স্বভাব বিরুদ্ধ; এতে ক্ষতিই হচ্ছে আপনার। ক্ষতিটা কী এবং কীভাবে দেখা যাক।

কোন বসার ভঙ্গিতে মেরুদণ্ডে কতো চাপ পড়ে?
বসার অনেক ধরনের ভঙ্গি বা পজিশন আছে। একেকজন ব্যক্তি একেক ভঙ্গিতে বসতে আরামবোধ করেন। ভঙ্গি বা পজিশন বিশেষে পার্থ্যক্য রয়েছে মেরুদণ্ডের উপর চাপেরও।

আপনি যখন আপনার অফিস বা কর্মস্থলের চেয়ারে ১১০ ডিগ্রী এঙ্গেলে বসছেন তখন আপনার মেরুদণ্ডে চাপ পড়ছে ১০৫ শতাংশ। আবার যখন আপনি ১০০ ডিগ্রী এঙ্গেলে বসেন তখন মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে বেশি ১১৫ শতাংশ। আর যখন চেয়ারে একেবারে সোজা হয়ে বসেন তখন মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে ১৪০ শতাংশ।

আর যখন চেয়ারে ঝুঁকে বসেন তখন শরীরে চাপ পড়ে ১৯০ শতাংশ। যা সবচেয়ে বেশি এবং সাধারণত অফিস-আদালতে, কর্মস্থলে বেশিরভাগ কাজের ক্ষেত্রেই ঝুঁকে বসে থাকতে হয়। এখন চিন্তা করুন আপনি কোন ভঙ্গিমায় সারাদিন বসে থাকেন এবং আপনার মেরুদণ্ডে কতোটা চাপ পড়ছে।

মেরুদণ্ডে চাপ পড়লে কী হয়?
আমরা জানি যে মেরুদণ্ডের মূল দুটি অংশ হচ্ছে বোন এবং ডিস্ক। যা মেরুদণ্ডের ছবিতে সাধারণত আমরা দেখে থাকি। এগুলো সারা শরীরের পেশির হাড় এবং জয়েন্টের সাথে সংযুক্ত থাকে। তো কারো মেরুদণ্ডে যখন চাপ পড়ে তখন মেরুদণ্ডের বোন এবং ডিস্কগুলো ক্ষয় হয়ে যায়। এতে পেশির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দেখা দেয় মেরুদণ্ডের সমস্যা।

বক্ষ খাঁচায় গণ্ডগোল!
তাছাড়া কেউ একজন যখন বসে থাকেন তখন তার বুকটি সংকুচিত হয়ে থাকে। এতে কমে যায় ফুসফুসের প্রসার ক্ষমতা। এতে অক্সিজেন সাপ্লাই কমে রক্তপ্রবাহে গণ্ডগোল বাধে।

বিকল হতে পারে স্নায়ু, ধমনী, শিরা
হাড়ের চারপাশে আছে স্নায়ু, পেশি, ধমনী এবং শিরা। এনিয়েই তৈরি দেহের নরম টিস্যু লেয়ার। বসলে চিন্তা করুন কতোটা চাপ পড়ছে নরম এই টিস্যু লেয়ারে। বলা যায় বেকায়দা অবস্থা। কিন্তু এই বসার ফলেই বিকল হতে পারে আপনার স্নায়ু, ধমনী, পেশি এবং শিরা।

দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে স্নায়ু, ধমনী, পেশি বা শিরায় ব্লক সৃষ্টি হতে পারে। ফলে মস্তিষ্কে সাধারণত যেভাবে তথ্য পৌঁছায় সেই সার্ভিসটি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে মানব শরীরে অসাড়তা নেমে আসে। রক্ত প্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে হাত-পা ফুলে যায়।
ফ্যাট ধ্বংস কমে যায়

শরীরে কমে যায় ফ্যাট ধ্বংসের ক্ষমতা!

লম্বা সময় ধরে বসে থাকলে লাইপোপ্রোটিন লাইপেজ কমে যায়।  লাইপোপ্রোটিন লাইপেজ মূলত শরীরের এক বিশেষ এনজাইম; যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ফ্যাট ধ্বংস করতে সহায়তা করে। কিন্তু যেহেতু দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে শরীরের লাইপোপ্রোটিন লাইপেন নামক বিশেষ এনজাইমটি কমে যায় ফলে কমে যায় শরীরের ফ্যাট ধ্বংসের ক্ষমতাও।

ব্রেনের কর্মক্ষমতা কমছে রোজ!
লেখার শুরুতেই বলেছি দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে শরীরের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ কমে যায়। সেই সঙ্গে হৃদপিণ্ড সংকুচিত হয়ে থাকে। এর ফলে হৃদযন্ত্রে অক্সিজেনের সাপ্লাই কমে যায়। এই দুইটিই যথেষ্ট আপনার ব্রেইনকে অক্ষম বা অসাড় করে দেয়ার জন্য।

তো এখন ভাবুন, আমরা সাধারণত বসে কাজ করি ব্রেইনকে বেশি কাজে লাগানোর জন্য বা স্বস্তির সাথে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু অনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরের অভ্যন্তরে ঘটছে এর উল্টো ঘটনা। যা আমরা টের পাচ্ছি না। ভোগ করছে আমাদের মস্তিষ্ক, ধমনী, শিরা, পেশি, চামড়াসহ শরীরের আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসমূহ।

তাই এখন থেকে বসার আগে চিন্তা করে বসবেন যে ঠিক কতোখানি বসা শরীরের পক্ষ্যে ন্যায়সঙ্গত হবে। কেননা আজকের লেখায় তো জানলেনই দীর্ঘসময় বসে থাকাও যে আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-


দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

সৌদি আরবে মেয়েকে নির্যাতনের খবরে মায়ের আহাজারি-কান্না

গ্রিসের বস্তিতে বাংলাদেশীদের মানবেতর জীবন, অধিকাংশই সিলেটি

গ্রিসে পাঁচ বছরের ভিসা পাবে বাংলাদেশিরা

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়