Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩২

হেলাল আহমেদ

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ২৬ নভেম্বর ২০২২
আপডেট: ১৭:১৫, ২৬ নভেম্বর ২০২২

তেহারি এবং বিরিয়ানির মাঝে তফাৎ কী?

বিরিয়ানি এবং তেহারি। ফাইল ছবি

বিরিয়ানি এবং তেহারি। ফাইল ছবি

একবার মুমতাজ মহল মুঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গেলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখলেন সৈনিকদের স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাই মিলেটারি মেসের বাবুর্চিকে তিনি স্বয়ং নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে যেটা সৈনিকদের ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে দিতে পারবে। সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে পরিচিত।

তেহারি এবং বিরিয়ানি চেনেন না বা খান নি এরকম ভোজনরসিক মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে এই বিশ্বলোকে। বিরিয়ানি, তেহারি নাম শুনেই অনেকের জিবে জল আসে। তবে কেউ বিরিয়ানি পছন্দ করেন আবার কেউ কেউ তেহারি পছন্দ করেন। দুই ধরনের পছন্দ থেকেই বুঝা যায় বিরিয়ানি এবং তেহারির মাঝে তফাৎ একটা আছে বৈকি। কিন্তু তেহারি এবং বিরিয়ানির মাঝের সেই তফাৎটা আসলে কী? আজকে আইনিউজের এই প্রতিবেদনে জানাবো সেই বিষয়গুলোই।

প্রথমেই একটা শোনা কথা বলে শুরু করি। গ্রামের বৃদ্ধ দাদু, ঠাম্মা, নানীদের মুখে শুনেছি যে তেহারি তিন হাড়িতে রান্না করতে হয় বলে এর নাম নাকি তেহারি। তবে তেহারির নামকরণের এই গল্প কতোখানি সত্য তাও বিচার্য বিষয়। কারণ, আধুনিক সময়ে এসে তেহারি রান্না করতে তিন হাড়ি নয় বরং একতী হাড়িতেই দিব্যি তেহারি তৈরি করা যায়।

বিরিয়ানির সাথে তেহারির দৃশ্যগত প্রথম তফাৎ যদি বলতে হয় তাহলে সেটা এই দুই খাবারে ব্যবহৃত মাংস। লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে তেহারিতে সাধারণত গরুর মাংস কিংবা খাসির মাংস ব্যবহার করা হয়। গরু-খাসির মাংস ছাড়া তেহারির আসলে ততোটা স্বাদও হয়না। তেহারি রান্নায় গরুর মাংস, আর না থাকলে খাসির মাংস অবশ্যই লাগে।

বর্তমানে কেউ কেউ মুরগির মাংস দিয়েও তেহারি রান্না করেন। তবে মুরগির মাংস দিয়ে তৈরিতে আসল তেহারির রসগন্ধ কিছুই মিলেনা। তেহারির স্বাদের ষোলকলা পূর্ণ হয় তেহারিতে গরু কিংবা খাসির মাংস থাকলে। আর তেহারির মাংসগুলোর আকার থাকে ছোট ছোট।

অন্যদিকে বিরিয়ানি সাধারণত মসলাজাত এবং ক্ষেত্রেবিশেশে ঝুল দিয়ে খেতে হয়। তাছাড়া, মাংসের ক্ষেত্রে বিরিয়ানি মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি করলে ভালো হয়। সাধারণত বিরিয়ানির যেসব প্যাকেট বাজারে পাওয়া যায় সেগুলোতে বড় এক পিস মুরগির মাংস দিয়ে দেওয়া হয়, সাথে ডিম। কেউ কেউ গরুর মাংস দিয়েও বিরিয়ানি খেয়ে থাকেন।

বিরিয়ানির সাথে তেহারির পার্থক্য আছে পরিবেশনের সময়েও। বিরিয়ানি আপনি দুপুরে, বিকেলে, রাতে বা সকালে যেকোনো সময়ই খেতে পারবেন যদি আপনার হজমশক্তি ভালো হয়। কিন্তু তেহারির মজা পাবেন সাত সকালে গরম গরম তেহারি খেলে।

তেহারি এবং বিরিয়ানির উপকরণগত পার্থক্যও আছে। তেহারি তৈরি করতে এমন কিছু জিনিস লাগে যা বিরিয়ানির ক্ষেত্রে লাগেনা। আবার বিরিয়ানির সব উপকরণও তেহারি রান্নার সময় লাগেনা। মজার বিষয় হলো- একটি মূল উপকরণ ছাড়া এই দুই উপকরণের কোনোটিই রান্না করা যাবে না। আর তাহল চাল। ভালো মানের বাসমতী চাল, চিনিগুড়া চাল (যার যা পছন্দ) না হলে তেহারি বা বিরিয়ানি যার যা-ই পছন্দ তা রান্না করা সম্ভব হবে না।

একারণে দেশের ভালো ভালো বিরিয়ানি-তেহারির শপগুলো তাদের তৈরিকৃত বিরিয়ানি-তেহারির স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ভালো মানের চাল সংগ্রহ করেন। এজন্য তাদেরকে ছুটে যেতে হয় প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের কাছে।

বিরিয়ানির ঐতিহাসিক মূল্যও একেবারে কম নয়। সেই চারশ বছর আগের মুঘল আমল থেকে আজ অবধি এতটুকুও কমেনি বিরিয়ানির আবেদন। বিখ্যাত রম্যসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় বলতে হয় “একি ভানুমতি! একি ইন্দ্রজাল”। হাজারো ভাষা, বর্ণ, গোত্র, জাতি ও ধর্মে বিভক্ত ভূ ভারতবাসীকে এক টেবিলে বসাতে পারে বোধ হয় দুটি জিনিস। তার মধ্যে একটি হল ক্রিকেট আর অন্যটি বোধহয় বিরিয়ানি।

বিরিয়ানির উৎপত্তি হয়েছিল রাজা বাদশাদের হাত ধরেই। তাজমহল ছাড়াও ভারতবর্ষের মানুষ আরও যে একটি আশ্চর্য জিনিস সম্রাট শাহজাহানের স্ত্রী মুমতাজের সুবাদে লাভ করেছে  তাহল বিরিয়ানি।

জনশ্রুতি আছে একবার মুমতাজ মহল মুঘল সৈন্যদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে ব্যারাকে গেলেন। কিন্তু সম্রাজ্ঞী অত্যন্ত দুঃখের সাথে দেখলেন সৈনিকদের স্বাস্থ্যের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। তাই মিলেটারি মেসের বাবুর্চিকে তিনি স্বয়ং নির্দেশ দিলেন চাল ও গোশত সমৃদ্ধ এমন একটা পুষ্টিকর খাবার তৈরি করতে যেটা সৈনিকদের ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার করে দিতে পারবে। সম্রাজ্ঞী মুমতাজ মহলের আদেশে বাবুর্চি যে খাবারটি তৈরি করলেন সেটাই আজকের দিনের বিরিয়ানি নামে পরিচিত।

পরে অবশ্য ভোজন রসিক মুঘলদের খাবার টেবিলে জয়গা পেতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি সুস্বাদু বিরিয়ানির। মুঘলরাই ভারতে যেখানে যেখানে গিয়েছেন সেখানেই জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিরিয়ানির স্বাদ। সেটা আবার স্থানীয়দের হাতে পেয়েছে এককটি নতুন মাত্রা। আর তাই তো পূর্বে ঢাকা থেকে পশ্চিমে পেশোয়ার অবধি বিরিয়ানির এত রকমফের! এত বৈচিত্র্য!

আইনিউজ/এইচএ

আইনিউজে আরও পড়ুন-

বিশ্বের মজার মজার গল্প আর তথ্য সম্বলিত আইনিউজের ফিচার পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দেখুন আইনিউজের ভিডিও গ্যালারি

দিনমজুর বাবার ছেলে মাহির বুয়েটে পড়ার সুযোগ || BUET success story of Mahfujur Rhaman || EYE NEWS

হানিফ সংকেত যেভাবে কিংবদন্তি উপস্থাপক হলেন | Biography | hanif sanket life documentary | EYE NEWS

আশ্চর্য এন্টার্কটিকা মহাদেশের অজানা তথ্য | Antarctica continent countries | facts। Eye News

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়