বাংলাদেশের আকাশে জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আগামী ২৯ জুন (বৃহস্পতিবার) দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে জিলহজ মাস বিশেষ তাৎপর্যময়। এই মাসে রয়েছে বিশেষ এবাদত করার বিধানও। 

জিলহজ মাসের মর্যাদা

জিলহজ মাস আরবি হিজরি সনের সম্মানিত চার মাসের একটি। পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাস ১২টি, আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত’। (সূরা: তাওবা, আয়াত: ৩৬) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে, ওই চারটি সম্মানিত মাস হলো- জিলকদ, জিলহজ, মহররম ও রজব।

জিলহজের প্রথম ১০ দিনের আমল ও ফজিলত

জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা কসম করে বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ ১০ রাতের’। (সূরা: ফাজর, আয়াত: ১-২) তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে যে ১০ রাতের কথা বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে জিলহজের প্রথম দশককেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৩৫)

জিলহজের প্রথম দশকের আমল সর্বশ্রেষ্ঠ

এই ১০ দিনের আমলের ফজিলত সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়’। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসূল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না’। (আবু দাউদ: ২৪৩৮; বুখারি: ৯৬৯)।

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহান আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই’। (সহিহ ইবনে হিববান: ২৮৪২)

অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় অন্য কোনো দিনের আমল নেই। এ দিনগুলোর এক দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং এক রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদততুল্য’। (তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা-১৫৮)

জিলহজের প্রথম দশকের জিকিরের গুরুত্ব

এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবর), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এসব দিনে জিকিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এই সময় তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবর) ও তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ৩৪৭৪)

জিলহজ মাসে রোজা

জিলহজ মাসে রোজার গুরুত্বও অনেক বেশি। বিশেষ করে প্রথম ৯ দিনের মধ্যে নবম দিনের রোজা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের (৯ তারিখের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গুনাহ মাফ করবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২; আবু দাউদ: ২৪২৫)

জিলহজের বিশেষ আমল কোরবানি

মনে রাখা দরকার, জিলহজ মাসের বিশেষ আমল হলো কোরবানি করা। এটি সামর্থ্যবানদের ওপর ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো’ (সূরা: কাউসার: ২)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে’। (সহিহ বুখারি: ৬৪৯০; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩)

হজের মাসের পবিত্রতা

জিলহজ মাস হচ্ছে হজের মাস। হজের সময়ের পবিত্রতা রক্ষায় মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হজ নির্ধারিত মাসগুলোতে (অনুষ্ঠিত হবে)। অতঃপর কেউ এ মাসগুলোতে হজের ইচ্ছা করলে সে যেন হজের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৯৭)

মর্যাপূর্ণ আমল হজ-ওমরা

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরপর হজ ও ওমরা করো। কেননা, হজ ও ওমরা দারিদ্রতা ও গুনাহ মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপরের আগুনে লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর হয়। কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়’। (তিরমিজি: ৭৫৭)

• মদিনা ও কাবা শরিফে জুমা পড়াবেন শায়খ বালিলাহ ও হুজাইফি

তাকবিরে তাশরিক

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরে নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের শেষে একবার করে বিশেষ তাকবির বলা ওয়াজিব। যাকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। এই তাকবিরটি হলো- ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ 

উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’।

অর্থ: ‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য’। (দারু কুতনি: ১৭৫৬; ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪)

ইয়া আল্লাহ! সব মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের ফজিলত বুঝার এবং সে অনুযায়ী বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আই নিউজ/এইচএ