মো. রওশান উজ্জামান রনি
আপডেট: ১৩:২১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
সকালের শপথ ভোরে ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব ও বিশেষ মর্যাদা
ভোরে ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব । ছবি লিখক
কোরআনে অনেক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দিন এবং রাতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটা বিশেষ সময়ের গুরুত্ব এবং মর্যাদা বিভিন্নভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। ফজরের আগে এবং ফজরের পরে যে সময়টা। বিশেষ করে সূর্য ওঠার আরো পর পর্যন্ত বা চাশতের সালাতের আগ পর্যন্ত। এই সময়টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা অনেক সময়ের নামে শপথ করেছেন এবং অনেক বস্তুর নামের শপথ করেছেন। আল্লাহতালা তিনি কোথাও কোন কথা বলার জন্য শপথ করার কোন দরকার নাই। কিন্তু তিনি ভোরে ঘুম থেকে উঠার গুরুত্ব ও বিশেষ মর্যাদা বুঝাতে শপথ করেছেন।
আমরা সাধারণত শপথ করি যেন আমার কোন কথা যদি কেউ বিশ্বাস না করে। অবিশ্বাস্য কোন কথা বলতে হলে আমরা শপথ করে বলি ‘আল্লাহর শপথ’ এর মানে আমার কথাটা সত্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথার ব্যপারে কোন সন্দেহ করার সুযোগ নাই। তারপরও তিনি শপথ করে মাঝেমধ্যে অনেক কথা কোরআনে বলেছেন। যেনো আমরা বুঝতে পারি যে, যে কথা আল্লাহতালা শপথ করে বলেছেন ওই কথাটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা সাধারণত বললে শপথ করা ছাড়া বলতাম না। এটার গুরুত্ব বোঝাবার জন্য শুধুমাত্র তিনি শপথ করেছেন। তা না হলে শপথ তার করার কোন প্রয়োজন ছিল না। দ্বিতীয়ত দ্বিতীয়ত আল্লাহতালা যে বস্তুর নামে তার যে সৃষ্টির নামে শপথ করেন ওই সৃষ্টি তারও বিশেষ মর্যাদা তার কাছে আছে। এটি প্রমাণিত হয় ওই বস্তুর নামের শপথ করার মাধ্যমে। কারণ আল্লাহতালা ওই বস্তুর নামের শপথ করার মানে হল সেই বস্তুর বড়ত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রমাণ করতে চাইছেন। এজন্য তার নাম ধরে আল্লাহ তায়ালা শপথ করছেন। আমাদের জন্য শপথ করতে হলে আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নামে কোন ব্যক্তি বা কোন বস্তুর নামে শপথ করা জায়েজ নাই। নবী কারীম সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি শপথ করতে চায় বা যে ব্যক্তি কসম কাটতে চায় সে আল্লাহর নামে কসম করবে আর না হলে চুপ থাকবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করবে না।
আবার যারা দোকানদার অনেক দোকানদার আছে ক্যাশ বাক্স ছুয়ে শপথ করে। অনেকে আছে নিজের সন্তানের মাথা ছুঁয়ে শপথ করে। অনেকে আছে নিজের মাথা ছুয়ে শপথ করে। অনেকে আছে দেশের মাটি ছুঁয়ে শপথ করে। এরকম বহু তালের শপথ আমাদের দেশে আছে। অথচ এগুলো কোনটাই কুরআন এবং হাদিসের আলোকে বিশুদ্ধ কোন শপথ নয় বরং এগুলো নিষিদ্ধ। শপথ শুধুমাত্র হবে আল্লাহর নামে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বিভিন্ন সৃষ্টির নামে শপথ করেছেন। সেটি একমাত্র আল্লাহর জন্য আল্লাহর বিষয়। কিন্তু আল্লাহ নিজেই বিধান দিয়েছেন আমাদেরকে তার নবীর মাধ্যমে। যে আল্লাহ ছাড়া কারো নামে আমরা শপথ করব না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমের বেশ কয়েকটি জায়গায় সকালের সময়টার নামের শপথ করেছেন। আপনি অবাক হবেন কুরআনুল কারীমের এক দুই জায়গা নয় বেশ অনেকগুলো জায়গায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই একটি সৃষ্টির নামের শপথ করেছেন। অন্য কোন বিষয়ে এরকম সচরাচর পাওয়া যায় না। যে গোটা কোরআন জুড়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই একটি বিষয়ের নামে অনেক জায়গা শপথ করেছেন। কিন্তু সকাল বেলার যে সময়টা বা ভোরবেলার যে সময়টা এটা এত গুরুত্বপূর্ণ আল্লাহর কাছে যে আল্লাহতালা কোরআনে কারীমে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে অসংখ্য বার এই সময়টার নাম ধরে শপথ করেছেন। তার মানে এই সময়টার বিশেষ গুরুত্ব আল্লাহতালার কাছে।
কোথাও আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘সকালের শপথ’ যখন সে সকাল বিকশিত হয় উদ্ভাসিত হয় আস্তে আস্তে আলোকিত হতে হতে দিনের দিকে পরিপূর্ণভাবে চলে যায় সেই সকালের শপথ। অর্থাৎ দিনের প্রথম অংশের শপথ। আল্লাহ বলেছেন অন্য জায়গায় ‘ওয়ালফাজ’ ফজরের শপথ বা ভোরের শপথ। অন্য জায়গায় বলেছেন, তোমরা তাসবিহ বর্ণনা করো, পবিত্রতা বর্ণনা করো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সকালে এবং সন্ধ্যায়। এই যে সকালে তাজবি বর্ননা করার নির্দেশ করেছেন। অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেছেন, আর তুমি তোমার রবের প্রশংসা মাখা তাসবিহ বর্ণনা করো সকাল এবং সন্ধ্যা। অর্থাৎ দিনের শুরু এবং দিনের শেষ। এই সময় গুলো আল্লাহর কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। নবী করীম (সাঃ) নিজে বরকতের দোয়া করেছেন আমাদের জন্য। আল্লাহ আমার উম্মতকে আপনি সকালের এই সময়টাতে বারাকা দান করেন। অতএব একজন ঈমানদারের কাছে দিন এবং রাত ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সময় হল সকালের সময়টা। এজন্য এই সকালের সময়টাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে অনেকগুলো কর্মসূচি দিয়েছেন। তার ভিতরে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হল ফজরের সালাত জামাতের সাথে পুরুষরা আর মহিলারা বাসায় ওয়াক্ত মত সুন্দর করে আদায় করা। এটা হল সকালের সবচেয়ে প্রধান কর্মসূচি। অথচ সকালের এই আমলটা আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মুসলমানদের জান্য করাটা কঠিন হয়ে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফজরের নামাজ পড়াটা আমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এই ফরজটা শুধু সাধারণ ফরজ নয়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন ফজরের নামাজে উপস্থিত হতে পারা এটা মুনাফিকদের জন্য খুব কষ্টকর হয়। যাদের ফজর নামাজ জামাতের সাথে পড়া হয় না বা চেষ্টা করাও হয় না তারা মাহরুম তারা বঞ্চিত। ফজর নামাজ যারা জামাতের সাথে আদায় করতে পারেন না এই লোকগুলো মুনাফিকের মার্কা তাদের মধ্যে আছে। তাদের ইস্তেগফার করে দ্রুততার সাথে নিজেকে পরিবর্তন করার সংকল্প করতে হবে।সকালের সময়টা আল্লাহতালার কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য এই সময়ের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হলো ফজরের সালাত আদায় করা। ঘুম থেকে উঠে ফজর নামাজ যে পুরুষরা মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায় করে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন এই ব্যক্তিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এত ফ্রেস করে দেন যে দিনটা তার হাসিখুশিতে যায়, ফ্রেশ মোডে থাকে, বরকত তাঁর জীবনের লাভ করে। কারণ নবী করীম (সাঃ) বরকতের দোয়া তার জন্য করেছে।
আপনি যদি একটা সমাজের এলিট শ্রেণীর মুসলমান দেখতে চান, যারা অনেক উঁচু শ্রেণীর মুসলমান অনেক উন্নতমানের মুসলমান এবং জান্নাতি হিসেবে যাদের মর্যাদা অনেক উপরে এরকম পিওর এবং খাঁটি মুসলমান যদি দেখতে চান তো দেখবেন ফজরের নামাজের জামাতে কারা হাজির হয়। নবী করীম (সাঃ) সকালের এই সময়টাকে এত গুরুত্ব দিতেন যে প্রিয় নবী সাঃ ফজরের পরে নিজ জায়গায় বসে জিকির-আজকার তাজবিহ তেলাওয়াত করার জন্য উৎসাহ দিতেন। সকাল সন্ধ্যায় অনেকগুলো তাসবীহ আছে। কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা বলেছেন সকালে তাজবি পেশ করার জন্য জিকির করার জন্য আল্লাহ স্মরণ করার জন্য। ফজর নামাজের পরে কেউ যদি জায়নামাজে বসে থাকে এবং এশরাকের সময় হওয়া পর্যন্ত ব বা সূর্য উঠার ১৫-২০ মিনিট পর পর্যন্ত বসে বসে জিকির-আজগার, তাজবিহ, তেলাওয়াত করে এবং দুই রাকাত এশরাকের নামাজ যদি সে আদায় করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে একটা পূর্ণাঙ্গ হজের সাওয়াব দান করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই বিশাল বড় নেয়ামত এবং পুরস্কার লাভের জন্য নবী করীম (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম ফজরের পরে বসে বসে জিকির-আজকার করতেন। এরপর নবী করীম (সাঃ) সাধারণত সাহাবীদেরকে নিয়ে বিভিন্ন দরকারই প্রয়োজনীয় কথা বলতেন, অন্যান্য আমল করতেন, নামাজ পরতেন কিন্তু ঘুমাতেন না। আমাদের সমাজে আজ বেশিরভাগ মানুষ শহরে তো বটেই গ্রামেও আজকাল বদভ্যাস হয়ে গেছে ফজরের পরে না ঘুমালে হয় না।
যে সময়ে আপনার জীবনে বরকতের দোয়া নবী করীম (সাঃ) করেছেন সেই সময়টা কাজে লাগাতে হবে। আপনি একজন কর্মজীবী ফজর নামাজ পড়ে দোয়া জিকির আজকার তেলাওয়াত এরশরাকের পরে আপনি দ্রুত কাজে নেমে যান। আপনি একজন কৃষক আপনি মাঠে নেমে যান। আপনি যেই কোন পেশার মানুষ হন সময়টা কাজে লাগাতে হবে। সকালের এই সময়টাতে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করেন। নবী করীম (সাঃ) দোয়া করেছেন, আল্লাহ আমার উম্মতকে সকালবেলার সময়টাতে বরকত দিয়েন। যে সময় আল্লাহর নবী বরকতের দোয়া করেছেন ওই সময় আপনি ব্যবসা করলে ব্যবসায় বরকত হবে। আপনি কৃষি কাজ করলে সেখানে বরকত হবে। আপনি পড়ালেখা করলে সেখানে বরকত হবে। আপনি আমল করলে জিকির আজগার বা তেলাওয়াত করলে সেখানে বরকত হবে। আপনি সকালের এই সময়টাতে যাই করবেন সেখানে বরকত হবে কারণ সেটা বরকতের দোয়া করেছেন নবী করীম (সাঃ)। আমাদের অনেকের জীবনে কোন বারকত নাই। জীবনে বারাকা না থাকার অন্যতম একটা কারণ হলো এই সকালের সময়টাকে অলস ঘুমিয়ে কাটানো। বরকতের সময়টাই যদি আমি অলস ভাবে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেই তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার জীবনে বারাকাহ কিভাবে আসবে। এজন্য আমাদের লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করতে হবে। তাই সকালে আমরা ঘুমাবো না। আমাদের বাচ্চাদেরকে ছেলেমেয়েদেরকে পরিবারের সদস্যদেরকে আমাদের সবাইকে আমরা অভ্যস্ত করব উৎসাহ দিব। যে নবী করীম (সাঃ) সকালের সময়টার জন্য দোয়া করেছেন। ওই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে। ওই সময়টা ঘুমিয়ে কাটানো যাবে না। আর ঘুমাতে হবে রাতে। রাতের ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। সকাল বেলার ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সকালবেলার নির্মল বাতাস আপনি যদি ঘুমান তাহলে সে বাতাস থেকে আপনি মাহরুম হবেন। তাই এই সময়টাকে কাজে লাগতে হবে।
আই নিউজ/আর
আরও পড়ুন
- ছেলেদের ইসলামিক আনকমন নাম অর্থসহ শিশুর নাম
- ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম ২০২২
- মেয়েদের ইসলামিক নাম ২০২৩
- সুন্দর বাচ্চা পিক ডাউনলোড
- মাথা ন্যাড়া করার এই অপকারিতা জানেন কি?
- শুভ সকাল রোমান্টিক মেসেজ | শুভ সকাল স্ট্যাটাস
- ছেলেদের কষ্টের স্ট্যাটাস বাংলা
- ডিম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- কাউনের চালের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
- অনেকেই জানেন না, সিগারেটের বাংলা অর্থ কী?