Bilas Moulvibazar, Bilas

ঢাকা, রোববার   ২০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ৭ ১৪৩২

স্বপন নাথ

প্রকাশিত: ১৫:২৪, ২১ আগস্ট ২০২০

চন্দ্রপুরে বিরহী নেকলেস

চন্দ্রপুরে বিরহী নেকলেস

স্বপন নাথ

ছায়ার নিরিখ নাই শবরের দেশে

বারবার ফিরে আসে নকল ডেরা

তোতাবিদ্যার সুরে বেদনার ঘাম

বিলাপ ছায়া হারানোর

হিজল বিলের বুকে লালশাপলা আজও

গান তোলে বিচ্ছেদের,

গাঙ্গেয় পলির বাঁকে পার্বনে

চরকা নাচ,

অবশেষ হাতছানি পটের কঙ্কাল

 

নিরাগ শূন্যে চোখ মেলে

বোঝা যায় বামনকাল

অহঙ্কারী পূণ্যবানদের উৎসব,

স্পর্শহীন উৎসবায়ন

 

খিল লাগানো ভাঙা কবাটে,

চোখগুলো কেমন ডুবে আছে

পানার ইদারায়

কেবলই লাবণ্যে ছুটে যাওয়া ঝাঁক

অদ্ভুত জিনাঙ্ক,

বিশদ যুদ্ধকথা পার হয়ে গেলে

দেখা মেলে

পাঁচালি, পুথিপাঠ; সাতালি পাহাড়,

কিষাণের বিবর্ণ শ্রম;

 

সহস্র রূপকথার গল্পের আসর

তারাপদ রায়ের বাগান

আমলকি তবে কী ক্যালিপটাস

কদম আর নাগেশ্বরের সুগন্ধি

নিয়ে গেলো ক্যাকটাস

তুঁতেপাতার উলটো পিঠে তস্কররেখা,

শিকার কাহিনি;

কেবলই রূপান্তর দেখি

দিনান্তে কত রঙ দোল খায়

উত্তরায়নে বানরলাঠির চাষাবাদ,

দুণ্ডুক ঘেরা পথে নির্বাক পরেশ পাল

ফিরে আর আসবে না ইয়েতিকাল;

লুকানো গন্ধি-ধুনার খুঁজে

আরণ্য তাবুতে নিঃসঙ্গ ডালটন হুকার

 

ভ্রমণ শাল্মলি বাগিচায়

মৃগয়া ছিলো একদিন

কুইয়া ছড়ায় বীতশোক নৃমুণ্ড সংকেত

পুরীর পাথরগুলো পুড়ে হলো ছাই

গাণ্ডীবও হাতছাড়া,

ঝরা ছাউনি, কুঠিরের মাঝখানে

দেয়াল,

দেয়ালের

পর দেয়াল

অবরুদ্ধ আভা;

ভঙ্গুর পচা খাড়লে

পেঁচার স্বর, তার ঠোঁটের কোণে

রক্তখাউরির স্বেদ, লাল

দাঁতাল বাতাসের লহরে ভাসে

ঘাট থেকে ঘাটে অস্থির উড়াল

দেনুয়া চক্কর

ছড়ানো কান্না সাঁতার,

ড্রাম আর খইফোটার শব্দে লীন

 

সমর্পণের নাইওরি নৌকা

ভুলে যাওয়া গীতল মাঠ

কৃত্রিম করোটির সিন্দুকে বিন্যাস

মগজে মগজে আরও সারাংশ ধুলার

তিড়িং-বিড়িং, তেজালো বিচ্যুতির ইঙ্গিত

অচেনা রাগে তবু চিৎকার

 

ঘাই মেরে ওঠে জংলি ঝরনার স্রোত

বেগানা জিভ তবে কুঞ্চনে বধির মুখ

স্তব্ধ ছায়া ভাসতে ভাসতে চলে

দস্যু সংক্রান্তির জলে;

পুরনো ঘরে যাই, কুমারশালায়

যেখানে তিজেল তাম্রলিপির গাথা,

প্রভাসনগর বা কোথায় গান্ধার

ক্রম শূন্যপর্ব, শীলাদেবীর ঘাট

শেওলার পুটলি বাধা সে- সিন্ধুলিপি,

এলাহি সনের পরম্পরা,

বিকট হাতুড়ির শব্দে - ভাঙছে,

অসরল বেকাতেড়া

খোয়ারি আবছায়া

 

টুংটাং শব্দ কী আর ডুবোকথা বলে

সাপকাঁটা ঘর থেকে পাতিলার ঘোর

ক্ষতচিহ্ন বাসনমাজায় বিলীন;

দোনা-মনা বিদ্যার পাঠশালায়

রতিক্রিয়া এঘর-ওঘর

সংশয়ের চোরাবালি

মনোবিষ্ঠার চাষে মাতাল লোকশ্রুতি,

পুড়ে যাওয়া নক্ষত্রগুলো ঝরতে থাকে

নর্দমায়, পঞ্চেন্দ্রীয়

ভুতের গল্পে এলোকেশী পথ

নেমে গেছে পদ্মবিলে,

আলহীন মোহনায়, অজানায় বহুদূর

শিকল পরতে শিকল, চাপা স্বর

লোকে বলেআদিবিদ্যার নতুন পাঠ,

চাকার ছলে রক্তচিহ্ন বেদনার

শোভিত দহনের জাদুঘর

চাপান গন্ধময় রক্ত, চুঁয়ে পড়া

স্মৃতির ভগ্নস্তূপ,

আবাদে ছড়িয়ে দেয়া অন্ধকার

 

পাখিময় শত স্মৃতি উড়ে যায়

হাজার গেরাম পার হয়ে

দীর্ঘ পথের বিসর্জন;

চোখ কচলাতে কচলাতে

পিচুটি সরিয়ে দেখা পাথরভূমি

অর্কিডে ঢাকা অথবা মেঘাচ্ছন্ন ঢিবি

হঠাৎ মাথা তুলে

শব্দের ছায়া দেখে ভীত নেউল

 

নির্জন ফসিল, জলতরঙ্গের ঝকঝক

ফিনকি দেয় আলোর আভাসে

নির্বাণ মন্ত্রপাঠ, এই মণ্ডলের ইতিহাস

যক্ষপুরীর ওপারে চন্দ্রাসন,

উজানে চলা, জঠর খুঁজে ইন্দেশ্বর নদী

 

কুয়াশায় ভেজা অংশুমালা

ম্রিয়মান আলোকরেখায় ঝিরাধান

খলার নীরবতা ভাঙে

অশ্বত্থের লিলুয়া ঢুফি,

বিষামৃত মিলন জাগরী;

ঘুঙ্গিছড়ার তলানিতে ঝাপসা

লবঙ্গ দানার সাথী

গড়িয়ে আসা ফেনার বুদবুদ,

বাকপতির কঙ্কাল

 

তবুও উপাড় বাঁশপাতা নম্র অবসাদে

ভেসে যায় সাগরের দিকে,

স্মৃতিভরা সিকড়মাটি

ইকড় বাগান, রঙ্গমালা আনন্দ নাচঘর;

অবহেলার সাতনরি

কোনও এক সন্ধ্যায়

ডাহুকের পালকে উড়েছিলো

 

চন্দ্রপুরে আম্রপালি, বিরহী নেকলেস

 

Green Tea
সর্বশেষ
জনপ্রিয়