সাহিত্য সম্পাদক
রণেশ দাশগুপ্তের ২৩তম প্রয়াণদিবস আজ
একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী এবং দেশের স্মরণীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রণেশ দাশগুপ্তের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের আজকের ৪ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার কতৃক মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।
রণেশ দাশগুপ্তের পিতা অপূর্বরত্ন দাশগুপ্ত ছিলেন খ্যাতনামা খেলোয়াড়। কাকা নিবারণ দাশগুপ্ত ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ও পেশায় শিক্ষক। আরেক কাকা ছিলেন গান্ধীবাদী স্বদেশী। পারিবারিক পরিমণ্ডল এমন হওয়ার ফলে ছোটবেলা থেকেই দেশ, পরাধীনতা, বৃটিশবিরোধী রাজনীতি ইত্যাদির সঙ্গে রণেশ দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ পরিচয় ঘটেছিল এবং পরবর্তী জীবনে এই রাজনৈতিক সচেতনতা তাকে চালনা করেছিল।
১৯২৯ সালের রাঁচির (বিহার) স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বাঁকুড়ার কলেজে ভর্তি হন। এ সময় অনুশীলন দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে ও তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বাঁকুড়া কলেজ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলে তিনি কলকাতায় এসে সিটি কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পুলিশের উৎপাতে লেখাপড়ায় বিঘ্ন হওয়ায় বরিশালে এসে ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন তার মাতুল সত্যানন্দ দাশের বাড়িতে, ইনি কবি জীবনানন্দ দাশের পিতা। ১৯৩৪ সালে তার পিতা অবসর গ্রহণ করলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের গাউরদিয়া গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে সবাই বসবাস করতে শুরু করেন, পরে ওই গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। তখন সবাই ঢাকা শহরে চলে আসেন এবং সংসার চালানোর জন্য বাধ্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে রণেশ দাশগুপ্তকে সাংবাদিকতার চাকরি নিতে হয়।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রাজনৈতিক কারণে তাকে কারারুদ্ধ করা হয়। গোটা পাকিস্তানি আমলে তিনি বহুবার কারাবাস করেছেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়ে তিনি জেলে ছিলেন এবং সেখানেই তিনি নাট্যকার মুনীর চৌধুরীকে ‘কবর’ নাটক লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ‘কবর’ নাটকটি তাদের চেষ্টায় কারাগারে মঞ্চস্থ হতে পেরেছিল। কারামুক্তির পর ১৯৫৫ সালে তিনি ‘সংবাদ’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার চাকরি গ্রহণ করেন। তার সাহিত্যিক খ্যাতি ঘটে এ সময়েই, ‘উপন্যাসের শিল্পরূপ’ (১৯৫৯) নামে একটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ রচনার জন্য। এছাড়াও 'শিল্পীর স্বাধীনতার প্রশ্নে' নামক বইয়ে তিনি তাঁর অসাধারণ জ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবর্ষ পালনের সময়ে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়, ১৯৬২ সালে ছাড়া পান, আবার কারারুদ্ধ করা হয় ১৯৬৫ সালে, ছাড়া পান ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সুবাদে। ১৯৬৮ সালের ২৯ অক্টোবর বিপ্লবী কথাশিল্পী সত্যেন সেন, রণেশ দাশগুপ্ত, শহীদুল্লাহ কায়সারসহ একঝাঁক তরুণ মিলে উদীচী গঠন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন, পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হলে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৭৫ সালের ১ নভেম্বর কলকাতায় একটি সভায় যোগ দিতে গিয়ে সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হন, কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর দেশে সামরিক শাসন চালু হয়েছিল। তারপর বাংলাদেশ নানা বিপর্যয় ও উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়। তিনি আর ফিরে আসেন নি, স্বেচ্ছানির্বাসিতের জীবন বেছে নিয়েছিলেন।
আইনিউজ/এইচএ
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা