শিল্প ও সাহিত্য ডেস্ক
পারস্যের কবি জালাল উদ্দিন রুমির প্রেম দর্শন
পারস্যের কবি জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ছিলেন ১৩ শতকের স্বনামধন্য মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যাক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রবাদী এবং সুফি সাধক। তবে তিনি রুমি নামেই সর্বাধিক জনপ্রিয়। এই সুফি সাধক ১২০৭ সালে জন্মগ্রহন করে ১২৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর পরলোক গমন করেন।
তার লিখা কবিতা বিশ্বব্যাপি ব্যাপকভাবে অনূদিত হয়েছে। মুসলিম গন্ডি পেরিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন সকলের ধর্মের মানুষের মনে। রুমি(র) এর বানী অনুপ্রেরনা জুগিয়েছে অসংখ্য মানুষকে এবং আজো জুগিয়ে চলেছেন।
রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের “সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি” এবং “সর্বাধিক বিক্রীত কবি” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রীক ভাষায়ও রচনা করেছেন। তার লেখা মসনবী-কে ফার্সি ভাষায় লেখা সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বৃহত্তর ইরান এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষী জনগোষ্ঠী এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে। অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়। তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে।
শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজানি সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দী সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানীয়, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পশতু এবং বাংলা সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে।
জালাল উদ্দিন রুমি তাঁর দর্শন থেকে প্রেমকে কেন্দ্র করে যা লিখেছেন তা মানুষের প্রেম সংক্রান্ত ভাবনাকে একটি উচ্চতর পর্যায়ে নিতে যেতে সাহায্য করে। রুমি ঐশ্বরিক বা প্রভুর প্রেমের সঙ্গে মিলিয়েছেন মানব মনের প্রেমকেও। প্রেম নিয়ে জালাল উদ্দিন রুমির উক্তি গুলো অবিস্মরণীয় আছে কালে কালে। প্রেম ভালোবাসা নিয়ে তার বানীতে তিনি বলেছেন –
- ‘প্রেমই মুক্তি, প্রেমই শক্তি, প্রেমই পরিবর্তনের গুপ্তশক্তি, প্রেমই দিব্য সৌন্দর্যের দর্পন স্বরুপ!’।
- 'যেখানে মন কেবল সীমানাই দেখতে পায়, সেখানেও প্রেম গোপন পথ খুঁজে বের করে।'
- 'আমি আমার জন্য মোড়ে গেছি, বেঁচে আছি তোমার কারণে'।
- 'বিদায় শুধু তারাই বলে যারা শুধু চোখ দিয়ে ভালোবাসে, যারা মনে করে চোখের দেখাই হলো একমাত্র ভালোবাসা। যারা আত্মা আর হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে তাদের কাছে কোন বিদায় নেই, কারণ আত্মা আর হৃদয় থেকে দূরে যাওয়া সম্ভব নয়।'
- 'তুমি চলে গেলে আমার চোখ দিয়ে রক্ত বাহিত হলো। আমি কেঁদে কেঁদে রক্তের নদী বহালাম। দুঃখগুলো শাখা প্রশাখা বেড়ে বড় হলো, দুঃখের জন্ম হলো। তুমি চলে গেলে, এখন আমি কিভাবে কাঁদবো। শুধু তুমি চলে গেছো তাই নয়, তোমার সাথে সাথে তো আমার চোখও চলে গেছে। চোখ ছাড়া এখন আমি কিভাবে কাঁদবো প্রিয়!'
- 'প্রেমই মুক্তি, প্রেমই শক্তি, প্রেমই পরিবর্তনের গুপ্তশক্তি, প্রেমই দিব্য সৌন্দর্যের দর্পন স্বরুপ!'
- 'বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা হলো তোমার হৃদয়ের গভীরতম স্থান, যেথা হতে জীবনের সূত্রপাত হয়।'
- 'তুমি তোমার হৃদয়ের কোমলতাকে খুঁজে বের করো, এরপর তুমি সব হৃদয়ের কোমলতাকেই খুঁজে পাবে!'
- 'অন্ধকার হয়তো দৃষ্টিসীমা থেকে বৃক্ষ বা ফুলকে লুকিয়ে ফেলতে পারে, কিন্তু হৃদয়ে প্রস্ফুটিত সত্য ভালোবাসাকে আড়াল করতে পারে না।'
- 'ভালোবাসায় পরিপূর্ণ হৃদয় ঠিক যেন আগুন পাখির মত, যাকে কোন খাঁচায়ই বন্দি করা সম্ভব নয়।'
- 'যদি তুমি চন্দ্রের প্রত্যাশা কর, তবে রাত্রি থেকে লুকিয়োনা। যদি তুমি একটি গোলাপের আশা কর, তবে তার কাঁটা থেকে পলায়ন করোনা। যদি তুমি প্রেমের প্রত্যাশা কর, তবে আপন স্বত্তা থেকে লুকিয়োনা।'
- 'প্রভুর কাছে পৌছানোর অনেক পথ আছে; তার মাঝে আমি প্রেমকে বেছে নিয়েছি।'
আইনিউজ/এইচএ
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা