মোহাম্মদ আবদুল খালিক
আপডেট: ১৯:২০, ২৪ আগস্ট ২০২১
মাহফুজুর রহমান ও তাঁর আপন ভূবন

মাহফুজুর রহমান (১৯৫৭-২০১৮) ছিলেন পাঠে, সৃজনে ও মননে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। নিজস্ব আগ্রহ ও প্রচেষ্ঠায় তিনি নির্মাণ করতে পেরেছিলেন তাঁর একটা নিজস্ব ভূবন। যে ভূবন ছিল সাহিত্যের-সঙ্গীতের নিরলস চর্চা, সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে ভাবনা এবং জানা ও জানানোর এক নিরন্তর প্রচেষ্টা- যা তিনি লালন ও ধারণ করে সমাজে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন আমৃত্যু।
পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য-উপাত্ত। কীর্তিমান ব্যক্তিদের জীবনের নানা দিক এবং সংগ্রাহক হিসেবে চোখের আড়ালে থাকা, হারিয়ে যেতে বসা লোক সংস্কৃতির নানা বিষয় আশয়কে তুলে এনেছেন পাকা জহুরির মতো।
বিভিন্ন স্তরের ও পেশার মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করা ও তাঁদের মহৎ চিন্তা ভাবনার সঙ্গে অন্যকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা ছিল তাঁর একটা প্রশংসনীয় দিক। পথে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য-উপাত্ত। কীর্তিমান ব্যক্তিদের জীবনের নানা দিক এবং সংগ্রাহক হিসেবে চোখের আড়ালে থাকা, হারিয়ে যেতে বসা লোক সংস্কৃতির নানা বিষয় আশয়কে তুলে এনেছেন পাকা জহুরির মতো।
তিনি কাজ করেছেন আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর মানুষের জীবন যাত্রা নিয়ে। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর রচিত এবং সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা পনেরো ষোলোটির মতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
১. বিপিন চন্দ্র পাল (জবিনী), ২. সৈয়দ মুজতবা আলী (জীবনী), ৩. হাওর করাইয়ার কৃষক আন্দোলন (প্রবন্ধ), ৪. মুক্তিযুদ্ধে হবিগঞ্জ (মুক্তিযুদ্ধ), ৫. সিলেট অঞ্চলে নৃ-তাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী (আদিবাসী), ৬. সুরমা উপত্যকায় লোক সঙ্গীত অন্বেষণ ও অন্যান্য প্রবন্ধ। ৭. গণ-সংস্কৃতির শঙ্খচিল হেমাঙ্গ বিশ্বাস (সম্পাদনা), ৮. বাউল গান (সংগ্রহ ও সংকলন), ৯. কিশোর মুক্তিযুদ্ধে মৌলভীবাজার (ইতিহাস) ইত্যাদি।
মাহফুজুর রহমান ১৯৫৭ সালের ১ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলাস্থ বাদে সোনাপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। গ্রামেই কেটেছে তাঁর শৈশব। পরবর্তীতে পড়াশোনার প্রয়োজনে গ্রাম থেকে বের হয়ে শহরমুখি হয়েছেন। পেশাগত কারনে বাংলাদেশের নানা অঞ্চলে ঘুরে বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন।
সাহিত্য-সমাজ-লোকসংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণা এবং প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পৃক্ত ছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। ঘুরে বেড়িয়েছেন কক্সবাজার, পঞ্চগড়, কুস্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জ্ঞানান্বেষণ এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে একজন পরিব্রাজকের মতো। দেশের বাইরে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চার প্রয়োজনে ভারতেও তাঁর যাতায়াত ছিল। ২৩ আগস্ট ২০১৮ সালে তিনি পরপারে পারি জমান।
বয়স আর কতই বা হয়েছিল? ষাট বা একষট্টি। বলতে গেলে বড় বেশি দ্রুততার সঙ্গে আকস্মিকভাবেই হারিয়ে গেলেন মাহফুজুর রহমান। তাঁর এ চলে যাওয়ায় পৃথিবী থেমে থাকেনি থাকবেও না। তবে একমাত্র সন্তান পৃথু ও তাঁর পরিবার পরিজনদের জন্য এটা যেমন খুবই বেদনদায়ক ও ক্ষতির কারন তেমনি বন্ধু-বান্ধব ও সমাজের নানা স্তরের মানুষের জন্যও অনেক কষ্টের। মৃত্যুর তৃতীয় বছরে এসেও আমাদের কাছে মাহফুজুর রহমানের অনুপস্থিতি তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। এ শুন্যতা কখনোই পূরণ হবার নয়।
আজকের এই দিনে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। পরপারে ভালো থাকুন মাহফুজুর রহমান।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল খালিক, লেখক ও শিক্ষাবিদ
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা