মোহাম্মদ আবদুল খালিক
আপডেট: ১৬:২৬, ২৬ অক্টোবর ২০২১
কবি দিলওয়ার ও উদ্ভিন্ন উল্লাস: প্রসঙ্গ প্রকৃতি (পর্ব ২)
উদ্ভিন্ন উল্লাস (১৯৬৯) কবি দিলওয়ারের প্রকাশিত চতুর্থ গ্রন্থ। জিঞ্জাসা (১৯৫৩) ও ঐক্যতান (১৯৬৪) কবিতা গ্রন্থের পর পূবাল হাওয়া (১৯৬৫) নামের তাঁর পল্লীগীতি ও আধুনিক গানের একটি সংকলন প্রকাশিত হয়। জিঞ্জাসা থেকে উদ্ভিন্ন উল্লাস, সময়ের বিবেচনায় দূরত্ব ষোল বছরের। ভাবে-ভাষায়, উপাদান-উপকরণ সংগ্রহে এবং চিন্তা-চেতনা ও প্রকরণগত দিক দিয়ে এ সময়টাতে কবির মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন অবশ্যই এসেছে।
তবে এ পর্যায়েও কবি তাঁর আদি অবস্থান, কবিতার মূল সুর-গণমানুষের সম্পৃক্ততা থেকে দূরে সরে আসেননি। পাশাপাশি বলা যায় বিস্তৃততর হয়েছে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাস চেতনা, দেশাত্ববোধ এবং প্রকৃতি পরিবেশ ও নৈশর্গিক ভাবনা। উদ্ভিন্ন উল্লাস কাব্যের উৎসর্গপত্রের কবিতাটির মধ্যেও শ্রমজীবী মানুষের প্রতি আন্তরিক দৃষ্ঠিভঙ্গি বা মনোভাব আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে-
যাদের চোখের মণি জ্বলে উঠে
রাত পোহাবার আগে
পৌঁছিয়ে দিতে পৃথিবীর কথা
সূর্যের পুরো ভাগে
শ্রমজীবী সেই মহামানবের
রক্ত গোলাপী হাতে
ছড়িয়ে দিলাম আমার কবিতা
নিদ্রাবিহীন রাতে।
রচনাসমগ্র ১ম খন্ডে গ্রথিত উদ্ভিন্ন উল্লাস গ্রন্থের মুখবন্ধে কবি উল্লেখ করেন-
‘এই গ্রন্থের সাথে জড়িয়ে আছে ধ্রুবতারা ও শুকতারার মতো দুটি স্মৃতি। প্রথম স্মৃতির মধ্যমনি গ্রন্থটির প্রকাশক অনুজপ্রতিম আব্দুল কাদির মাহমুদ। কবি দিলওয়ার ও তাঁর সাহিত্যকর্মকে যুগপৎ ভালোবেসে যারা অনুপম উত্তরাধিকার সৃষ্টি করেছে আব্দুল কাদির মাহমুদ তাদেরই একজন। নৈতিক, হার্দিক ও আর্থিক এই ত্রয়ী শক্তি নিয়ে মাহমুদ গ্রন্থটির প্রকাশনার ব্যাপারে যে শ্রম দিয়েছে এক কথায় তার তুলনা বিরল। তার উদ্যোগে সুরভী প্রকাশনী, মৌলভীবাজার, সিলেট থেকে আগস্ট ১৯৬৯ এ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।’
এই দীর্ঘ উদ্ধৃতিটি এ কারনে যে, তখন থেকে এখন পর্যন্ত দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া কবি দিলওয়ারের প্রায় সব বইয়ের প্রকাশনার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এরকম কারো না কারো ব্যক্তিগত অথবা সমষ্টিগত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা। কোনো নামকরা বা বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে জীবদ্দশায় তাঁর বই প্রকাশের ঘটনা খুব একটা চোখে পড়েনি। দ্বিতীয় স্মৃতিতে জড়িয়ে আছে- ‘দুর্বার তরঙ্গমুখর উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।’ তাঁর এ কবিতার বইয়ের মধ্যেও এর ছাপ লক্ষণীয়।
গ্রন্থভুক্ত মোট চল্লিশটি কবিতার শরীরে সাদামাটা ভাবে চোখ বুলালে আমাদের মনে হবে এখানেও কবি নিজেকে অতিক্রম করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন নানা দিক থেকে। যদিও আমরা জানি এবং মানি যে ‘কাব্যের নন্দনতাত্ত্বিক বিচারই প্রচলিত রীতি। কিন্তু কবিতার একটা সামাজিক বিচারও সম্ভব এবং প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ কবিতার মধ্যে কোন ধরণের সামাজিক চিন্তা চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে তাও বিশ্লেষণ করে দেখা দরকার। কেননা সাহিত্যের অন্যান্য রূপকল্পের মতো কবিতাও একটি সামাজিক সৃষ্টি।
কবিও সামাজিক মানুষ, কাজেই তিনি তাঁর অবস্থান থেকে প্রতিনিয়ত সমাজকে দেখেছেন ও মূল্যায়ন করেছেন। এই দেখার ও মূল্যায়নের সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে।’ [নাজমা জেসমিন চৌধুরীঃ সাহিত্যের সামাজিকতা- সাম্প্রতিক কবিতা:বিষয় ও বিষয়ী, বাংলা একাডেমী-১৯৮৫, পৃ. ৯৯] কাজেই সামাজিক দৃষ্টিকোণ ও তাৎপর্যের দিক থেকে আমরা এ পর্যায়ে কবি দিলওয়ারের ‘উদ্ভিন্ন উল্লাস’ কবিতাগ্রন্থের আলোকে তাঁর প্রকৃতি ও নিসর্গ ভাবনার প্রসঙ্গটি কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
[আইনিউজে এই আলোচনাটি ধারাবাহিকভাবে চলবে...]
মোহাম্মদ আবদুল খালিক, সাবেক অধ্যক্ষ, মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজ।
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা