বিজিৎ দেব
আপডেট: ২৩:৩৭, ২০ ডিসেম্বর ২০২১
জফির সেতুর কবিতার ইন্দ্রজাল ও কবিতার শিল্পবিকাশ
কবি জফির সেতু
‘কবিতায় কবি যখন একটা বর্শা ফলক বা একটা গমের বীজের উল্লেখ করেন তখনও তা মিথিক্যাল হয়ে ওঠে। কবিতায় ‘বর্শা’ ও ‘গম’ উভয়ই জাদু প্রতীক হতে পারে।’-জফির সেতু
২১ ডিসেম্বর কবি জফির সেতুর পঞ্চাশতম জন্মদিন। জন্মদিনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের নিবেদনপূর্বক তাঁর কবিতাবিষয়ক ভাবনাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেতে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
জফির সেতুর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গবেষণা এবং সর্বোপরি ভ্রমণ-আখ্যানে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যে নিজের স্থানকে করেছেন সাবলীল। একজন খ্যাতিমান শিক্ষক হিসেবে তাঁর আছে যথেষ্ট সুনাম। বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে কর্মরত অধ্যাপক ডক্টর জফির সেতু একজন আদর্শ শিক্ষক।
কবিতাই একমাত্র সংবেদনশীল শিল্পমাধ্যম। ভুলিয়ে দেয় আপনাকে-আমাকে স্মৃতি-বিস্মৃতির কিনারায়। সমুদ্র মন্থন করে আনে অমৃতবারি। তখন সুখ-দুঃখের দেয়াল হয়ে উঠে সাদাকালো আর রঙিন। কবিতা প্রতীকধর্মীতার মর্মরসে ভেস্তে নিয়ে যায় পাললিক স্রোতে। তখন কবি-জীবনের সাধ-শব্দের মাঝে খেলে যায় দূর বহুদূর । এখান থেকে উঠে আসে মানবিক সত্ত্বার আকিঞ্চন। তাই অবিনশ্বর আনন্দ-বেদনার জৈবনিক আলাপনে কবির অনুভূতি হয়ে যায় সকল কালের সকল দেশের আত্মীয়। এর জন্য রিচার্ড রাওয়েল বলেন হৃদয় যার সঠিক স্থানে নেই, শত চেষ্টা করেও কবি হতে পারবে না।
প্রকৃত অর্থেই, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের যোগ না হলে ব্যর্থ হয় তবে প্রাণের স্পন্দন। বিকাশ ঘটে না প্রকৃত সত্ত্বার। কোনও শিল্প সত্ত্বাবিহীন নয়। তবে এই সত্ত্বার স্তরে কবিতা এমন এক শিল্পবাক যা থেকে প্রভূত জায়মান সমুদ্রের মতন বিশাল, আকাশের মতন রহস্যময়, পর্বতের মতন শিকরস্পর্শী, ফুলের মতন আপনি বিকশিত...। এরই ধারাবাহিকতায় কবি ও প্রাবন্ধিক জফির সেতুর ( জন্ম-২১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ) প্রকাশিত কবিতার ইন্দ্রজাল (২০১৭) কবিতার নন্দনতত্ত্ব ও শিল্প বিষয়ক প্রবন্ধগ্রন্থ নিয়েই সম্যক আলোচনায় অগ্রসর হচ্ছি।
কবিতা কী? আসলে এভাবে জিজ্ঞেস করলে কোনও সমাধান পাওয়া যায়? কারণ এক অর্বাচীন কবিকে একজন পাঠক প্রশ্ন করেছিলেন কবিতা কী? তখন কবির প্রতিউত্তর এক অর্বাচীন কবির- ‘If you asked me what is the definition of poem, I don’t know ; if you not asked me what is poem, then I know everything about poem.’ প্রাবন্ধিক জফির সেতু কবিতার প্রতিমূর্তির স্তর উপলব্ধির মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন তাঁর কবিতার ইন্দ্রজাল-এ।
আরও পড়ুন- কবি দিলওয়ার ও উদ্ভিন্ন উল্লাস: প্রসঙ্গ প্রকৃতি (পর্ব ১)
‘কবির আত্মস্বীকার’ প্রবন্ধে জফির সেতু বলেছেন-‘কবিতা জীবন চেতনারই একটা অংশ। যেহেতু জীবনের মূল অস্তিত্ব শরীরই।...জীবনানন্দের বহু বিখ্যাত উক্তিটি কবিতার ক্ষেত্রে বেদবাক্যতুল্য। তার মতে, কবিতা ও জীবন আসলে একই জিনিসের দুই রকম উৎসারণ। এর অর্থ দাঁড়ায়, জীবন ও কবিতা আসলে একই প্রতুৎউপাদান থেকে উদ্ভুত ও লীলায়িত। এখন ভাবনার বিষয় হতে পারে এই মূল উপাদানটা আসলে কী?
জীবনের রহস্যাটাও ওইখানে, কবিতারও’ ( পৃ.৯)। কবি জফির সেতু কবিতার নন্দনজিজ্ঞাসায় জীবন ও শিল্পকে এক দেখেছেন। কারণ জীবনের জন্যই শিল্প। তাঁর মতে কবিতা প্রতœউপাদান থেকে ডালপালা মেলে নিত্য চালিত হচ্ছে আত্মবোধের পথে। হ্যাঁ, আত্মবোধ কবিতার শিল্পের বড় কমিন্টমেন্টের জায়গা। একজন কবির অস্তিত্বে যখনই বিনর্মাণের প্রশ্ন চলে আসে তখন কবির শিল্প মিতবাক থাকে না।
বুচার আরিস্তল শিল্পজিজ্ঞাসা হলো এরকম--‘He makes a beauty a regulative principle of art but he never says or implies that the manifestation of beautiful is the end of art.’ তাঁর বক্তব্য হলো শিল্পের লক্ষ্য সুন্দরকে রূপদান নয়, সত্যকে প্রকাশ করা।
কবি জফির সেতুর সৃজনকর্মে প্রত্যক্ষ এই বোধ। তিনি সত্য উচ্চারণ করেছের এভাবে ‘কবি তার আত্মপ্রকৃতি নির্মাণ করে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতেই।’ তা-ই আল্লামা ইকবাল বলেন ‘কবিরা সমাজদেহের চক্ষু, বাগানের মুক্ত পাখি এবং সত্যের দর্পন।’
কবিতায় অনুভূতির ব্যাখ্যার শেষ নেই। কবিতা ‘তোমার আনন্দ আর দুঃখ চিরকাল ভাগ করে নেয়ার এবং চিরকাল একা বইবার’ ডিলান টমাসের এই বক্তব্যের সাথে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘সাহিত্যের মূল্য’ প্রবন্ধে কবি-প্রতিভার স্পর্শ পুলকিত কাব্যের উদাহরণ দিয়েছেন এভাবে ‘তোমার ওই মাথার চূড়ায় যে রঙ আছে উজ্জ্বলি/ সে রঙ দিয়ে রাঙ্গাও আমার বুকের কাঁচুলি’।
কবিতার ইন্দ্রজাল প্রবন্ধে বিভিন্ন কবির কবিতা নিয়ে নন্দনতাত্তি¡ক বিশ্লেষণ হয়েছে। এতে জফির সেতুর নিজস্ব শৈলী বিদ্যমান। এখানে জফির সেতু তুলনামূলক আলোচনায় নন্দনতত্ত্ব ও শিল্পতত্ত্ববিদদের মত-পার্থক্যের সাথে নিজের বিচার-বিশ্লেষণের স্থানকে পরিষ্কার করেছেন। মোট পনেরোটি প্রবন্ধ আছে আলোচ্য প্রবন্ধগ্রন্থে। এগুলো হলো-‘কবির আত্মস্বীকার’, ‘শব্দের সংক্রাম’, ‘মিথের মুখোশ’, ‘কবিতার জাদুবাস্তব’, ‘নৃত্যের জমজ’,‘ অশোকের জগৎ’, ‘ভাবুকের মন’, ‘পৃথিবীর এক কবি’, মগ্নচৈতন্যের কবিতা’, ‘কবিতার অন্যমন্ত্র’,‘ টান টান ছিলা’, ‘ স্মৃতি-নিসর্গের পরিব্রাজক’, ‘তুমি পুনরায় চলে গেছ’,‘ সে এক পাথর আছে’, প্রেম, এবং স্বীকারোক্তি’।
আরও পড়ুন- কবি দিলওয়ার ও উদ্ভিন্ন উল্লাস: প্রসঙ্গ প্রকৃতি (পর্ব ২)
ভাষা আছে জীবনে-মরণে। এই স্বাধীকার প্রত্যয়ের বীজ সৃষ্টির আদি থেকেই চলে আসছে। ‘তবুও হৃদয় ছুটে চলে যায় জলের মতন সহজ আশ্বাসে’-কবি অসীম সাহার কবিতাকে যদি আমরা একটু ভাবি বিনয়ের খাতায়-‘তবুও কেনো আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু/ মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়’ অথবা কবি জফির সেতুর কবিতায়-‘প্রত্যেক নারীর ভেতর থাকে সাম্রাজ্যবাদী শাসন’-এসব শব্দ এবং ভাষা কখন যে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ লাভ করে, তা আসলেই বোধের পরম্পরা। শব্দ এবং ভাষা শাশ্বতী হয়ে ওঠে যখন তা বিশেষণের রূপ পরিগ্রহ করে।
জফির সেতু ‘শব্দের সংক্রাম’ প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন ‘আসলে শব্দকেই কবিতা করে তোলেন কবি। [...] কবি শব্দের জমজ ও ঈশ্বর।’ জফির সেতু তাঁর বক্তব্যে স্বীকার করেন শব্দই কবির আত্মা। তবে এই অনুষঙ্গের মাঝে কবিই তাঁর প্রয়োজনে আবেগের সুপ্তস্তরে নির্মাণ-বিনির্মাণ করেন সৃষ্টির শ্লোগান। কারণ ‘কবি মুখের ভাষা থেকে যেমন কবিতায় শব্দ জুড়ে দেন; জীর্ণ শব্দে যৌবনের শক্তি দান করেন, তেমনি মৃত শব্দকে বাঁচিয়ে তুলেন’-জফির সেতুর এই বক্তব্যে শামসুর রাহমানের ‘খেলা’ কবিতা মনে পড়লো-‘আমিওতো এই শিশুটির মতো রয়েছি খেলায়/ মেতে সারাক্ষণ, শব্দ নিয়ে খেলি শব্দের মেলায়’। শব্দ মাত্রেই বিজ্ঞান। কবিও এক অর্থে বৈজ্ঞানিক। আবেগের জৈব-অজৈব রসায়নে ভৌতিক সমীকরণে কবি কবিতাকে বিজ্ঞানে নিয়ে যান সময়ের অলি-গলিতে।
‘পদার্থ মাত্রই কিছু না কিছু জায়গা জুড়ে। ঐ একটা শব্দ দিয়ে কোটি কোটি শব্দ বাঁচানো গেল। অভ্যাস হয়ে গেছে ব’লে এ সৃষ্টির মূল্য ভুলে আছি। কিন্তু ভাষার মধ্যে এই-সব অভাবনীয়কে ধরা মানুষের একটা মস্ত কীর্তি’-রবীন্দ্রনাথের এই শব্দবিজ্ঞানচিন্তা কবিতার কবি ও কবিতার ক্ষেত্রেও একই গতিক। কবি এবং তার শব্দযোজনায় কবিতার শব্দাবয়ব নির্মাণপ্রসঙ্গে আমরা সান্তায়ানার ভাবদর্শনকে তুলে ধরতে পারি।
তাঁর বক্তব্য- ‘কবি হলেন মূলত কথার স্বর্ণকার; কথার সোনা দিয়ে তিনি কাব্যের অলংকার গড়েন। শব্দের যে ইন্দ্রিয়জ আবেদন কবিকে আকর্ষণ করে কবি তাঁর পাঠককে সেই শব্দের আমন্ত্রণটুকু পাঠান।’
আরও পড়ুন- কবি দিলওয়ার ও উদ্ভিন্ন উল্লাস: প্রসঙ্গ প্রকৃতি (শেষ পর্ব)
কবিতায় মিথ নিয়ে ভাবনায় জফির সেতু বলেন-‘কবিতায় কবি যখন একটা বর্শা ফলক বা একটা গমের বীজের উল্লেখ করেন তখনও তা মিথিক্যাল হয়ে ওঠে। কবিতায় ‘বর্শা’ ও ‘গম’ উভয়ই জাদু প্রতীক হতে পারে।’ তা-ই জফির সেতু ‘কবিতার জাদুবাস্তব’ প্রবন্ধে কবি ও কবিতার ইন্দ্রজাল উপলক্ষে কবি মোহাম্মদ সাদিকের কবিতা তুলে ধরেছেন মিথীয় র্যাডিক্যাল ভাবের দ্যোতক হিসেবে। কবি সাদিকের কবিতা-‘ মন্ত্র পড়ো আজ মন্ত্র দাও!/ ওড়াও দুইহাতে, লালচে গামছার তুমুল নাচ;/হিরালী, হুঙ্কারে দোহাই পাড়ো, এই যে শিলা, এই তীব্র বৃষ্টি ও সর্বনাশ, / ফেরাও তুমি।’ মিথের প্রয়োগ ও শক্তিকে চিহ্নায়িত করেছেন কবি সাদিক লোকজ আচার-সংস্কৃতির সাধারণ মানুষের বিশ্বাস থেকে।
মিথের শক্তিকে জফির সেতু কালিদাসের মেঘদূত কাব্যগ্রন্থের মেঘরূপী দূতের কথাও বলেছেন। জফির সেতু কবিতার ইন্দ্রজাল গদ্যগ্রন্থে নতুনত্ব সৃজন করেছেন কবিতা ভাবনায়। বাংলাদেশের সাহিত্যে কবিতা নিয়ে ভাব-ভাষার ভাবনায় অমূল্য গ্রন্থ অবশ্যই। একটা বিষয় লক্ষণীয় জফির সেতু ইজমের মধ্যে আটপৌরে না রেখে তাঁর আলোচনাকে সার্বজনীন করেছেন। তাঁর একান্ত ভাবনায় তিনি কৌশলী হয়েছেন নিজস্ব গদ্যশৈলী নির্মাণে। অনেকক্ষেত্রেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনা পরিহার করে গল্পের মতোই শব্দ এবং বিষয়বৈভবকে নির্মাণ করেছেন। গ্রন্থটি পড়তে পড়তে মনে হয় কেউ গল্প করছেন, আর আমরা শুনছি। কবিতা আর জীবন। এখানে কোনও বিরোধ নেই। জীবনের যতই সংঘার্থ হউক। এর প্রতিটি খন্ড খন্ড গল্পভাষ্যের শেষ যবনিকা অখন্ড সত্ত্বার অভিন্ন স্রোত। এই অভিন্ন স্রোতে কবিতা বহুমুখী ধারায় বিভাসিত। জফির সেতু কবিতা এবং নৃত্যের মাঝে জীবনের পল্লবকে বিকশিত হতে দেখেছেন এভাবে ‘নৃত্যের জমজ’ প্রবন্ধে-‘নৃত্য ও কবিতার মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আমি প্রায়ই ভাবি। ভাবি এবং আমি নিশ্চিত না-হয়ে পারি না যে দুটোরই উৎস এক ও অভিন্ন; যদিও প্রকাশে এরা স্বতন্ত্র ও ভিন্ন।...নিঃসন্দেহে নৃত্য প্রাচীন আর কবিতা অর্বাচীন শিল্পপ্রকরণ; এবং দুটোই এক উদ্দেশ্যে সৃষ্টি’। নৃত্যের জগতে কবিতা পরম্পরা।
সাংগীতিক মূর্ছনায় সহজ অভিব্যক্তির সাধারণ তর্জমার প্রকাশ নৃত্যের মুদ্রায় জ্ঞাপিত। কিন্তু কবিতার কথার মাঝে বাণী ও ধ্বনির প্রলেপ লাগানো থাকে নৃত্যমুদ্রায়। নৃত্য জীবনসংকেত, কবিতাও জীবনসংকেতের উপলব্ধজাত ক্রিয়া-মিথস্ক্রিয়ার ফসিল। হাসন রাজাকে নিয়ে জফির সেতু হাসন রাজার সৃজনশীল সত্ত্বার বিশ্লেষণ করেছেন। মরমি কবি হাসন রাজার বিস্তার নিয়ে জফির সেতু বলেন-‘হাসন রাজার ভাব-ভাবনার বুনিয়াদ হচ্ছে আত্মমুখীনতা। আমি কে? এই চির ভাবুকতার প্রথম প্রশ্ন (‘ আমার মাঝে কোন জন, তারে খুঁজল না’) এবং পরের জ্ঞিাসা হচ্ছে তারা কেন এই আমি? (‘ হাসন রাজা ভাবিয়া দেখমনে/ এভবে আমলায় ওরে তুমি কেনে?)।’
জফির সেতুর মত হলো এই আত্মাজজ্ঞাসার স্রোতই হাসন রাজাকে বাউল করেছে। কবি অবশ্যই পরিব্রাজক। বলতে গেলে চারণ। তার চারুমুখো দিলখোলা হাসির কলতানে প্রকৃতি আপনি জেগে উঠে খাঁচাবন্দি বিহঙ্গের মতন। তখন পক্ষীধূর্ত বায়স পাখিকেও মনে হয় প্রকৃতির সুন্দরের আধার। তা-ই কবি পরিব্রাজক। কারণ তার স্মৃতির রস একবার জাগে একটি মনকেই কেন্দ্র করে। নেশা কেটে গেলে তিনি আবার বায়সকে অসহ্য অশুভ যন্ত্রণার প্রতীকরূপে ভাবেন। এটা স্বাভাবিক। কারণ তিনি পরিব্রাজক না হলে ভাঙ্গা-গড়ার ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না।
আরও পড়ুন- গণমানুষের কবি দিলওয়ার
কবি শামীম রেজার কবিতা নিয়ে জফির সেতু ‘স্মৃতি- নিসর্গের পরিব্রাজক’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ সৃজন করেছেন। আসলে কবি শামীম রেজাকেই তিনি স্মৃতি-নিসর্গের পরিব্রাজক কবি বলেছেন। জফির সেতু শামীম রেজার কবিতার পোষাকে দেখেছেন মিথ এবং লোকজ কাহিনীর সাথে চলতি ভাষার গন্ধ। কবিতা, কবি, শিল্প ও নন্দনের বৈঠকখানা কবিতার ইন্দ্রজাল। শিল্পের কাছে আমরা প্রত্যাশা করি না, করি শিল্পের স্রষ্টার কাছে। নিকটে এলে যাতে করে প্রকৃত সারস উড়ে না যায়। শিল্পের দাবি আছে, তা স্বীকার্য। এই দাবি কবিকেই পূর্ণ করতে হয়। যদিচ সীমাবদ্ধতার বিভাজন আছেই। জফির সেতুর নান্দনিক বয়ানে তত্ত্বকথা কঠিনের মতন গলে গিয়ে তরল হয়েছে-কবি ও কবিতাভাবনার জারকরসধারা।
জফির সেতু স্বয়ং কবি, তা-ই বোধকরি কবিতার মর্মকথাকে আরও সহজলভ্য করেছেন-পাঠকের জন্য। এটা সমান্তরাল শিল্প। গদ্য লেখকের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে সঙ্কর বা অদ্বৈতবাদ আসতে পারে, কারণ শিল্পের স্বাধীনতা আগে বিচার্য, যদি তা জীবনের জন্য হাজির হয়। কবি ত আকাশ থেকে আসেন নি। এই পৃথিবীর আলো- জল-হাওয়ায় বেড়ে জীবনের মাঝে কবিতাকে শিল্পের কাছে নিয়ে যান। আবুল হাসান, শহীদ কাদরী, বিনয় মজুমদারসহ অনেক কবির কবিতার ভাবরস জফির সেতুর গ্রন্থে আলোচিত হয়েছে। বেহুলাবাংলা প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত কবিতার ইন্দ্রজাল গদ্যগ্রন্থ কবি ও কবিতার মধ্যকার ভাবনার ব্যঞ্জনাকে জানার একটি সহজ মাধ্যম বলা যেতে পারে।
আইনিউজ ভিডিও
প্রকৃতির সন্তান খাসি - খাসিয়া জনগোষ্ঠী
মৌলভীবাজারের বিস্ময় বালিকা : ১৯৫ দেশের রাজধানীর নাম বলতে পারে
- কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ: বাঙলা ভাষার প্রথম বই
- জীবনানন্দ দাশের কবিতা: বৃক্ষ-পুষ্প-গুল্ম-লতা (শেষ পর্ব)
- জীবনানন্দ দাশের কবিতার পাখিরা
- দুঃখের নাগর কবি হেলাল হাফিজ
- সমরেশ মজুমদার এবং ২টি কবিতা
- মাকে নিয়ে লিখা বিখ্যাত পঞ্চকবির কবিতা
- সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৯ দিনব্যাপী অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা
- হ্যারিসন রোডের আলো আঁধারি
- পিকলু প্রিয়’র ‘কবিতা যোনি’
- গল্পে গল্পে মহাকাশ
মেজোমামা খুব বোকা